বদ্ধ হৃদয়ের অনুভুতি পর্বঃ৩৪

0
3512

#বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ৩৪
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

নিরবধি বয়ে চলছে নদীর স্রোত।তার উপর বিশাল ব্রীজ।গভীর রাত। এখনো চলছে গাড়ি।ফুটপাত ঘেঁষে বসে আছে মাহাদ আর আম্বের।নিচে নদী থাকায় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি হওয়ায় ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।নিজেকে যতটা সংকুচিত করা যায় তাই করেছে আম্বের।মাহাদ আম্বের এর পাশ ঘেঁষে বসে আছে।পেছন দিকে হেলান দিয়ে চোখ দুটো ভাসিয়ে দিয়েছে দূর আকাশে।
শান্ত ও শীতল গলায় বললো—

“মা আর বাবা দুজনই জুনিয়র আর্টিস্ট ছিলো।কাজের সুবাদেই দুজনের জানাশোনা এরপর ভালোলাগা তা থেকেই ভালোবাসা।আর সেই ভালোবাসার পরিণতি বিয়েতে গড়ায়।
মা বরাবরই উচ্চ বিলাসী।কিন্তু বাবার ভালোবাসায় অন্ধ হওয়া দুই চোখ শুধু তখন মায়ের সৌন্দর্যেই মুগ্ধ ছিলো।কিন্তু বাবার সাথে মা খুশি ছিলো না।
আর সে ভাঙা সম্পর্কেই জন্ম আমার।একসময় মায়ের পরিচয় হয় রাহাত শেখ এর সাথে।তার সাথে গোপন সম্পর্ক।চলে যায় বাবাকে ছেড়ে মা।মায়ের এই বিচ্ছেদ বাবা বেশিদিন সহ্য করতে পারিনি।তাই তিনিও চলে যান আমাকে ছেড়ে।এতিমখানায় থেকে পড়ালেখা করেছি।পড়ালেখাই বরাবরি ভালো ছিলাম।স্কলারশীপ আমার পড়ালেখার পথ আরো দৃঢ় করলো।মায়ের উপর জেদ থেকেই মিডিয়াপাড়ায় পদার্পন আমার।আর তা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

মাহাদ থামলো।তার শুষ্ক ঠোঁট দুটি জিভ দিয়ে ভিজিয়ে আবার বললো—

“আপনি চট্টগ্রাম থেকে আসার পর ফাহাদ আপনাকে অনেক খুঁজেছে।কিন্তু পায় নি।ফাহাদ ড্রাগ নেওয়া শুরু করে।ওর অবস্থা এতোটা খারাপ হয়ে যায় যে ও নিজেকে শেষ করে দিতে পর্যন্ত চেয়েছিলো।আর এইসব কিছুর জন্য ওকে রিহ্যাবে পাঠানো হয়।দীর্ঘ চার মাস তার ট্রিটমেন্ট চলে।আর এইসব কিছুর জন্য মিসেস শেখ দায়ী।ছোটবেলা থেকেই ফাহাদ এর সকল অন্যায় আবদার পূরন করতে করতে তাকে জেদি করে তুলেছিলো সে।”

মাহাদ ঘুরে তাকায় আম্বের এর দিকে।আম্বের নির্বিকারভাবে চেয়ে আছে।মাহাদ স্মিত হেসে বললো—

“আপনার মনে আছে আমি একদিন কলেজে গিয়েছিলাম আপনার সাথে!
সেদিন ফাহাদ আপনাকে দেখতে পায় আমার সাথে।আর তারপর…।”

মাহাদ তার মায়ের বলা শর্ত বলে আম্বের কে।আম্বের নিশ্চুপ।সে ভাবছে কোনো মা কী করে পারে এমনটা করতে!
আম্বের নাক টেনে টেনে বললো—

“তাই বলে আপনি আমাকে দিয়ে দিবেন তাদেরকে!

মাহাদ হাঁটু ভাঁজ করে আম্বের কে তার পায়ের উপর শোয়ায়।কপালে আলতো চুমু খেয়ে বললো—

“আপনাকে সেইফ রাখার জন্য এর থেকে ভালো সুযোগ আমার কাছে ছিলো না।”

আম্বের অভিমান করে বললো—

“যদি ওরা সত্যিই আমার বাবাইসোনা কে মেরে দিতো!

মাহাদ দীপ্ত হেসে বললো—

“এত্ত সোজা!

“যদি ফাহাদ আমাকে বিয়ে করে নিতো!আপনি তো আমাকে দিয়ে দিয়েছিলেন তাদেরকে।”

মাহাদ ফিচেল হাসে।সরস গলায় বললো—

“আমার প্রজাপতিকে আমার কাছ থেকে নিয়ে নিবে আর আমি বসে থাকবো!

আম্বের কপট রাগ দেখিয়ে বললো—

“ইশ!
দিয়েই তো দিয়েছিলেন।আপনার মা কে তো আপনি কথা দিয়েছেন।এখন যদি আমি প্রেগন্যান্ট না হতাম তাহলে তো আপনার মা ঠিকই আমাকে ফাহাদ এর সাথে বিয়ে দিয়ে দিতো।”

আওয়াজ করে হেসে উঠে মাহাদ।ফিচেল গলায় বললো—

“বোকা প্রজাপতি।
আপনার মনে আছে,লাস্ট টাইম যখন আমরা ইন্টিমেট হয়েছিলাম আমি কোনো প্রটেকশন ইউজ করিনি।আপনি তো একবারো কিছু বললেন না!

মাহাদ এর কথায় লজ্জায় মুখ লুকায় আম্বের তার বুকে।দু হাতে জড়িয়ে ধরে মাহাদ কে জোরালোভাবে।মাহাদ তার বুকে আবদ্ধ করে নেয় আম্বের কে।দুষ্টমিমিশ্রিত গলায় মাহাদ বললো—

“ইশ!
কী লজ্জা!আমাকে গিলার পর তো হুশ ই থাকে না আপনার।”

“যা শয়তান।”

হালকা ঠান্ডা বাতাসে মাহাদ এর শরীরের উষ্ণতায় বেশ লাগছে আম্বের এর।পাখির ছানার মতো গুটি মেরে ল্যাপ্টে আছে মাহাদ এর বুকের সাথে।মাহাদ এর শরীরের পুরুষালী মিষ্টি গন্ধে ঘোর লেগে আসে আম্বের এর।তার বুকেই নাক ঘষতে থাকে আম্বের।মাহাদ তার হাতের বাঁধন শক্ত করে।এতে আরো আড়ষ্ট হয়ে আসে আম্বের।হালকা মাথা উঁচু করে আম্বের বললো–

“যদি আমি প্রেগন্যান্ট হওয়ার আগেই তারা আমার বিয়ে দিয়ে দিতো?

দৃঢ় গলায় মাহাদ বললো—

“ফাহাদ এর বাবা কোথায় জানেন!

আম্বের অস্ফুটভাবে বললো–

“উঁহু।”

ঝলমলে হাসে মাহাদ।সরস গলায় বললো—

“রাহাত শেখ কে আমিই আমার ওয়্যারহাউজে আটকে রেখেছিলাম।”

আম্বের বিস্মিত গলায় বললো—

“কী?

“জ্বী বোকা প্রজাপতি।আমার জান।”

মাহাদ শক্ত চুমু খায় আম্বের এর গালে।আম্বের চোখ পিটপিট করে মাহাদ কে দেখে।নম্র গলায় বললো—

“আপনার মাথায় এতো কুটনা বুদ্ধি কেন?

মাহাদ শূন্যে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো–

“কুটনৈতিকদের কুটনামি দিয়ে হারাতে হয়।”

মাহাদ আম্বের এর দিকে নরম চোখে তাকায়।আম্বের এর পেটের উপর হাত রেখে শান্ত গলায় বললো—

“অনেক কষ্ট দিয়েছি আমি আপনাকে।কথা দিচ্ছি আর একটু কাঁদতে দিবো না আপনাকে।শেষবারের মতো বিশ্বাস করেন আমায়।”

“এইবার যদি আমাকে ধোঁকা দেন তাহলে মেরে ফেলবো আপনাকে।”

মাহাদ আম্বের এর কানে ফিসফিসিয়ে বললো–

“আপনার ভালোবাসার গহীন যমুনায় তো এমনি আমি ডুবে আছি এইবার তো শ্বাস নিতে দেন আমায়।”

আম্বের টুপ করে তার ঠোঁট বসিয়ে দেয় মাহাদ এর ঠোঁটে।দুবোর্ধ্য হাসে মাহাদ।
আম্বের কে কোল থেকে উঠিয়ে তাড়া দিয়ে বললো—

“তাড়াতাড়ি করেন।আমাদের এই শহর ছেড়ে যেতে হবে।”

আম্বের ভীত গলায় প্রশ্ন করলো—

“কেন?

“তা আমি আপনাকে পরে বলছি।গাড়িতে উঠেন।”

দুজন ত্রস্ত পায়ে গাড়িতে উঠে বসে।আম্বের আর কোনো প্রশ্ন করলো না।সিট বেল্ট লাগিয়ে সিটে হেলান দিয়ে দুচোখ বুজে নেয়।বড্ড ক্লান্ত লাগছে তার।
,
,
,
প্রায় ভোরের দিকে থামে মাহাদ এর গাড়ি।ঘুমে বিভোর আম্বের।আবছা ভোরের আলোয় আম্বের এর মুখটা দেখে প্রাণ ভরে আসে মাহাদ এর।আর আম্বের এর সেই সুগন্ধে অদ্ভুত মাদকতা আছে।মুহূর্তেই নেশা লাগিয়ে দেয় মাহাদ এর সারা শরীরে। মাহাদ এর বুকে ঝড় বয়ে যায়।খুশির ঝড়।খানিকটা উঁচু হয়ে আম্বের এর মুখে চুমুর বর্ষন শুরু করে।উষ্ণ আমেজে আর্দ্রতায় নিমিঝিমি করে উঠে আম্বের এর দু চোখ।চোখ খুলেই দেখেই মাহাদ ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।মাহাদ এর তপ্ত নিঃশ্বাস পড়ছে আম্বের এর চিবুক ছুঁইয়ে।হালকা হাতে ধাক্কা দেয় মাহাদ কে।দুর্বোধ্য হাসে মাহাদ।গাড়ি থেকে বের হয় তারা।অলসতা দূর করার জন্য হাত উঁচু করে ইয়া বড় হামি তুলে মাহাদ।

আম্বের নিভুনিভু চোখে তাকিয়ে আছে।একটা গ্রাম মনে হচ্ছে।পাশেই বড় বড় গাছ।পাখির ডাকও শোনা যাচ্ছে।ভোরের পাখি।আলোতে ধরণী তার প্রাণ ফিরে পাচ্ছে ধীরে ধীরে।পূর্ব দিকের আকাশে আলোর আভা ফুটতে শুরু করেছে।এক স্নিগ্ধ সকাল।হিম হিম চারপাশ।কেমন যেনো একটা অদ্ভুত আওয়াজ।আম্বের অভিনিবেশ করে সেদিকে।ঝিইইইই করে শব্দটা কানে আসে।আম্বের বুঝতে পারে না তা কিসের আওয়াজ।মুগ্ধ নয়নে দেখতে থাকে চারপাশ।অবর্নণীয় সৌন্দর্য তার।মাহাদ আম্বের এর পাশে এসে দাঁড়ায়।আম্বের এর পেটের উপর হাত রাখতেই ঝঁটকা মেরে সরায় আম্বের।সলজ্জ চোখে তাকিয়ে লাজুক গলায় আম্বের বললো—

“কী করছেন আপনি!

মাহাদ আম্বের কে নিজের বুকে টেনে নেয়।তার গলায় মুখ লুকিয়ে ফিসফিস করে বললো—

“কতোদিন আপনাকে কাছে পাইনা বলেন তো!ঘুম ই আসে না আমার আপনাকে ছাড়া।”

“হয়েছে হয়েছে আর আহ্লাদ করতে হবে না।”

আম্বের মাহাদ এর গলা জড়িয়ে ধরে।মাহাদ আম্বের এর কোমর জড়িয়ে আছে।থমথমে গলায় আম্বের প্রশ্ন করলো—

“আপনি সিগারেট কেন খেয়েছেন?কী অবস্থা করেছেন ঠোঁটের?

মাহাদ উজ্জ্বল হেসে ফিচেল গলায় বললো–

“বাহ!
আজকাল আপনার অনেক নজর আমার ঠোঁটের দিকে।”

আম্বের ঝলমলে গলায় বললো—

“একদম এই পোড়া ঠোঁট দিয়ে আমাকে চুমু খাবেন না।”

“আপনাকে চুমু কেন খাবো?
আমার বউ কে চুমু খাবো।আমার বাবাইসোনা মা কে।আই এম নট ইন্টারেস্টেড ইন এ্যানি আদার গার্লস।”

আম্বের উৎসুক চোখে তাকিয়ে বললো—

“বউ মানে?

“কিছু না।”

মাহাদ কোলে তুলে নেয় আম্বের কে। আম্বের ব্যস্ত গলায় বললো—

“কী করছেন!নামান আমাকে।”

“নো মাই ডিয়ার বাটারফ্লাই।ডোন্ট টক।”

মাহাদ আম্বের কে নিয়ে হেঁটে চলে।দিনের প্রথম প্রহর হওয়ায় মানুষের আনাগোনা নেই।আম্বের হাসি হাসি ঠোঁটে চেয়ে আছে মাহাদ এর দিকে।মাহাদ হেঁটে চলছে।খানিক দূর যেতেই আম্বের দেখে একটা কাঠের তৈরি দোতালা বাড়ি।গাঢ় বাদামি আর অ্যাশ কালারের সংমিশ্রণ।আম্বের গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অতি উৎসাহে মাহাদ কে প্রশ্ন করতেই ভুলে গেছে যে তারা কোথায় এসেছে।
মাহাদ এর দিকে তাকাতেই মৃদু হাসে সে।আম্বের কথা বলার আগেই নিজেই বললো—

“ডোন্ট টক বাটারফ্লাই।সব জানতে পারবেন।”

মাহাদ বাড়িটির সামনে এসে দাঁড়ায়।জমিন থেকে প্রায় কয়েক ফুট উঁচুতে অবস্থিত বাড়িটি।সামনেই কাঠের তৈরি সিড়ি।মাহাদ ধীরগতিতে এক পা এক পা করে সিড়ি বেয়ে উঠে।আম্বের কে নিচে নামায়।উৎসুক গলায় আম্বের বললো—

“এইটা কার বাসা মাহাদ?
আপনি আবারও আমাকে এখানে রেখে যাবেন?
এইবার যদি আপনি আমাকে রেখে যান….।”

মাহাদ আম্বের এর ঠোঁট আঁকড়ে ধরে।দীর্ঘ সময় নিয়ে চুমু খাওয়ার পর বললো—

“ছিঃ!
আপনার ঠোঁটের স্বাদ একদম বদলে গেছে।একদম চিরতার রসের মতো।”

ফিচেল হাসে মাহাদ।আম্বের মাথা নিচু করে আছে।তার মনে কু ডাকছে।মাহাদ আবারও তাকে ধোঁকা দিবে!

মাহাদ আস্তে করে পরম আবেশে আম্বের এর হাত নিজের হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে। কোমল গলায় বললো—

“বললাম তো আর কোথাও যাবো না আপনাকে ছেড়ে।ভরসা রাখেন।”

আম্বের কাতর চোখে তাকায়।ঘরের দরজায় ডান হাতের তর্জনী দিয়ে নক করে মাহাদ।কিছুক্ষন পর একজন অর্ধবয়সী লোক দরজা খুলে দাঁড়ায়।সন্দিগ্ধ গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লো—

“মাহাদ আবইয়াজ?

মাহাদ সম্মতিসূচক স্বরে বললো—

“ইয়েস।”

চলবে,,,

(বিঃদ্রঃ
লোকটা কে 😒😒😒)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here