বদ্ধ হৃদয়ের অনুভুতি পর্বঃ৩৭

0
3633

#বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ৩৭
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

“বকুলের মালা শুকাবে..
রেখে দিবো তার সুরভি
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে…মুছো না কো আমারই ছবি..
আমি মিনতি করে গেলাম……
এই মন তোমাকে দিলাম..
এই প্রেম তোমাকে দিলাম..

ভালোবেসে আমি বার বার..তোমার ওই মনে হারাবো…
এই জীবনে আমি যে তোমার..মরনেও তোমারই হবো…
তুমি ভুলোনা আমারই নাম……
এই মন তোমাকে দিলাম..
এই প্রেম তোমাকে দিলাম..

দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাহাদ।তার কাতর দুই নয়ন আবদ্ধ তার প্রজাপতির দিকে।মাহাদ এর কন্ঠের আওয়াজেও চোখ ফেরালো না আম্বের।এখনো এক নাগাড়ে কেঁদে চলছে।মাহাদ তার কাজ শেষ করে ফিরেছে একটু আগেই।সব জানতে পেরে বিনা সময় ব্যয়িত করে ফিরে আসে মাহাদ।বিড়ালপায়ে এগিয়ে আসে আম্বের এর কাছে।বিছানায় বসে ছিলো আম্বের।মাহাদ তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে।দু চোখ দিয়ে শ্রাবণের অঝোর ধারা ঝরছে আম্বের এর।মাহাদ ঘাড় কাত করে আম্বের এর গলার কাছে ওষ্ঠ ছোঁয়াতেই দুহাতে সজোরে ধাক্কা দেয় আম্বের।ছিটকে পরে মাহাদ।ক্ষীপ্র চোখে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায় আম্বের।রাগে আম্বের এর চোখ দিয়ে অগ্নিকণা নিক্ষিপ্ত হচ্ছে যেনো।মাহাদ দুর্বোধ্য হাসে।ধীর গতিতে উঠে দাঁড়ায়।আম্বের এর কাছে এসে নম্র গলায় বললো—

“এখনো রেগে আছেন?
বলেছিলাম তো জরুরি কাজ আছে তাই…।”

মাহাদ কথা শেষ করার আগেই জ্বলে উঠে আম্বের।গমগমে গলায় বললো—

“একদম ছোঁবেন না আপনি আমাকে।এইসব কিছু আপনার জন্য হয়েছে।ঠিক ই বলেছে উনি।আমি বেশ্যা,আমার সন্তান অবৈধ।আর এইসব কিছুর জন্য আপনি দায়ি।”

মাহাদ দাঁত দিয়ে দাঁত নিষ্পেষণ করে।চোয়াল শক্ত করে বললো—

“ভুল বললেন আপনি।”

আম্বের কড়া গলায় প্রতিবাদ করে বললো—

“নাহ।সত্যি বলছি আমি।হ্যাঁ,হ্যাঁ অবৈধ।আমার সন্তান অবৈধ আর আমি বেশ্যা।”

হাউমাউ করে কেঁদে উঠে আম্বের।মাহাদ ত্রস্ত পায়ে গিয়ে নিজ বাহুডোরে আবদ্ধ করে আম্বের কে।শক্ত করে জড়িয়ে রাখে তাকে নিজের সাথে।আশ্বস্ত গলায় বললো—

“আমাদের সন্তান অবৈধ নয় প্রজাপতি।আপনি আমার ভালোবাসা।আমার প্রজাপতি বউ।আমাদের সম্পর্ক বৈধ।আপনি আমার স্ত্রী।আমাদের বিয়ে হয়েছে প্রজাপতি।যেখানে আমাদের সম্পর্ক বৈধ সেখানে আমাদের সন্তান কী করে অবৈধ হয়!”

আম্বের চকিতে আড়ষ্ট করে মাহাদ কে।তার বুকে মুখ গুঁজে অস্ফুটভাবে বললো—

“আপনি মিথ্যে বলছেন।”

মাহাদ আম্বের কে সোজা করে দাঁড় করায়।আলতো হাতে বিছানায় বসিয়ে তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।আম্বের এর দুই হাতে ওষ্ঠাধর ছুঁইয়ে নির্বিকারভাবে বললো—

“আপনার মনে আছে আপনার বাবা কলেজ ফ্রম এর সাথে আরো দুটো পেপারে আপনার সাইন নিয়েছিলো।সেখানে আমাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার ছিলো।আর সেই পেপার আপনার বাবা সেফটির জন্য নিজের কাছেই রাখে।তার মারা যাওয়ার পর আমি আপনাদের পুরো ঘর সেই পেপার খুঁজেছি কিন্তু পাইনি।আর ওই পেপার ছাড়া আমাদের বিয়ের আর কোনো প্রমান এখন আমার কাছে নেই।”

আম্বের জড়ানো গলায় বললো—

“আপনি আগে কেন বলেন নি আমাকে?

“আপনি আমার কথা বিশ্বাস করতেন না।”

আম্বের গম্ভীর গলায় পাল্টা প্রশ্ন করে—

“তাহলে এখন কেন বলছেন?

মাহাদ পাশ ফিরে আম্বের এর শাড়ি ভেদ করে তার উন্মুক্ত পেটে চুমু খেয়ে আদুরে গলায় বললো–

“আমাদের সন্তান অবৈধ নয় তা আপনার জানা প্রয়োজন।বাহিরের মানুষ কে কী বললো তাতে আমাদের সম্পর্ক বদলে যাবে না আর আমাদের ভালোবাসাও না।”

মাহাদ টের পায় আম্বের এর কপোল বেয়ে টুপ টুপ করে ঠান্ডা জল পড়ছে তার মুখে।মাহাদ উঠে বসে।শুষে নেয় আম্বের এর অক্ষিযুগর হতে নির্গত সকল নোনা জল।মৃদু গলায় বললো—-

“আমি যা করেছি তার জন্য আই এম সরি।বাট আই প্রমিজ ইউ,আমি আপনার কাছ থেকে যা কেড়ে নিয়েছি তার দ্বিগুন ফিরিয়ে দিবো।ভরসা রাখেন আমার উপর মিস আম্বের।”

আম্বের ঝট করে ফিকে গলায় বললো—

“উঁহু।মিসেস আম্বের।”

মাহাদ দুর্বোধ্য হাসে।আম্বের এর অধর জুড়ে খেলে যায় তৃপ্তির হাসি।
,
,
,
রাত নেমেছে দিনের আলো সরিয়ে।সূর্যি মামাকে বিদায় জানিয়ে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে চাঁদ মামা।কাঁঠাল গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে রুপালি আলো মেলেছে ডানা।চাঁদের পাশে নীলাভ কালো আকাশ।আশেপাশে তারার ঝলকানি ততটা চোখের পড়ার মতো নয়।প্রায় কয়েক হাত দূরে জ্বলছে দুই একটি মিটিমিটি তারা।স্তব্ধ চারপাশ।আশেপাশের কোথাও হতে অজানা পোকার অদ্ভুত আওয়াজ ভেসে আসছে।থমথমে নিরাক পরিবেশ।

মাহাদ আর কথা বলেনি আলম বা তার পরিবারের কারো সাথে।বাইরে থেকে খাবার এনে খাইয়ে দেয় আম্বের কে।জানালার পাশে দাঁড়িয়ে রাতের স্নিগ্ধ সৌন্দর্য অবলোকনে ব্যস্ত আম্বের।সেই সাথে ভাবছে কী হচ্ছে তার জীবনে।আদৌ কী এইসব হওয়ার কথা ছিলো!নাকি এইসবের মাঝে তারই কোথাও দোষ আছে।নাকি সবই ভবিতব্য!

আম্বের এর কোমরে হাত রেখে কাঁধে চিবুক রাখে মাহাদ। স্মিত হেসে হালকা গলায় বললো—

“ঘুমাবেন না?

আম্বের ঘুরে দাঁড়ায়।মাহাদ এর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসে।লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বললো—

“আমরা কী এখানেই থাকবো?

“নাহ।কাল সকালেই চলে যাবো।”

আম্বের তার অধর প্রসারিত করে আবার প্রশ্ন করলো—

“কোথায় যাবো আমরা?

“কেন?
আমার সাথে কোথাও যেতে আপত্তি আছে আপনার?

আম্বের মাহাদ এর বুকে মুখ গুঁজে বললো—

“উঁহু।”

“মরতে পারবেন আমার সাথে?

আম্বের হালকা মাথা আলগা করে মাহাদ এর বুক থেকে।চক্ষুদ্বয় উর্ধ্বগামী করে মাহাদ এর দিকে নিস্পলক চেয়ে বললো—

“আপনি আমার নিঃশ্বাস মাহাদ।”

মাহাদ মৃদু হাসে।আম্বের গম্ভীর গলায় আবার বললো–

“উনারা কারা মাহাদ?আমরা কেন এখানে এসেছি?

মাহাদ ঝট করে আম্বের কে কোলে তুলে নেয়।বিছানায় শুইয়ে দিয়ে একটা পাতলা চাদর টেনে দেয়।নিজেও তার পাশে শুইয়ে আম্বের এর বুকে মাথা রাখে।নিষ্প্রাণ গলায় মাহাদ বললো–

“আমার আঁধার জীবনের একমাত্র জোসনা আপনি।আমি আমার অন্তিম নিঃশ্বাস পর্যন্ত আপনার সাথে থাকতে চাই।”

আম্বের নির্বিকারভাবে শুনছে।মাহাদ আম্বের এর বুক থেকে মাথা তুলে গভীর চুম্বন করে তার ললাটে।আম্বের এর গালের সাথে গাল চেপে বললো—

“আমি হাজার বছর বাঁচতে চাই না।আপনার সাথে কাটানো একদিন আমার কাছে হাজার বছরের চেয়েও মূল্যবান।আগামী চল্লিশ বছর আমার নিঃশ্বাস চলবে কি না আমি জানি না।কিন্তু আপনার সাথে নেওয়া প্রতিটি নিঃশ্বাস আমার জীবন সঞ্জারিণী।কাল,পরশু বা তারপর আমি বাঁচবো কি না জানি না।কিন্তু আমি চাই আমি যতদিন বাঁচবো তা যেনো আপনার সাথেই হয়।আপনিবিহীন এক একটি মুহূর্ত আমার কাছে মৃত্যুর চেয়েও যন্ত্রণাময়।আমি চাইনা সেই যন্ত্রণা কখনো পেতে আমার প্রাণেশ্বরী।আমার অন্তিম শ্বাস যেনো আপনার ভালোবাসার সাথেই প্রলীণ হয়।”

মাহাদ এর গলা ধরে আসে।অধর ছড়িয়ে প্রাণোচ্ছল হাসে মাহাদ।আম্বের নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে।তার চোখের কোন ক্ষীন হয়ে আসছে।মাহাদ লাইট অফ করে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দেয় আম্বের এর সারা শরীর।অধরপল্লব হতে অধরামৃত নিয়ে মিটিয়ে নেয় নিজের তেষ্টা।আম্বের মজার ছলে হালকা হাতে ধাক্কা মারে মাহাদ কে।চটপটে গলায় বললো—

“যাহ!
বেহায়া পুরুষ।”

আধো আলোছায়াতে নিজের দু হাতে ঝাঁপটে ধরে মাহাদ আম্বের কে।বললো—

“হায়াহীন মায়া
কাটেনা তার ছায়া
রাত পেরিয়ে দিনের ভোর
আধো আদর,আধো ঘোর।”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here