বদ্ধ হৃদয়ের অনুভুতি পর্বঃ৬

0
4111

#বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ৬
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

ল্যাপটপে মুখ গুঁজে বসে আছে মাহাদ।তার মাঝেই অধর ছড়িয়ে হালকা হাসছে।মাহাদ ভাবছে,
ডেসটিনি!
আসলে ডেসটিনি বলে কিছু আছে!সব তো টাকার খেল!টাকা পারে সব বদলে দিতে।মানুষ শুধু খেলনা।টাকার কাছে সব মূল্যহীন।
এক সময় টাকা তার কাছ থেকে সব কেড়ে নিয়েছে।কিন্তু আজ!
আজ তার কাছে টাকা আছে কিন্তু সে শূন্য।একদম শূন্য।এক ইট,পাথরের দেয়ালের সম্রাট সে।কিন্ত হৃদয়পুরে সে শূন্য।এক মুকুটহীন সম্রাট।

ভাবতেই মাহাদ এর চোখ জ্বলে উঠলো।নাহ।তার কোনো অনুভূতি নেই।সে তার সব অনুভূতি কে হৃদয়ে বদ্ধ করে রেখেছে।তার #বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি কেউ হবে না।

প্রিন্টার থেকে একটা কাগজ বের করলো মাহাদ।তাতে চোখ বুলিয়ে একটু উঁচু গলায় আলতাফ কে ডাকলো।আলতাফ আসতেই তার হাতে কাগজটা দিয়ে আদেশের সুরে বললো–

“এইটা মিস আম্বের কে দিয়ে আসেন।”

মাহাদ আবার তার ল্যাপটপে মগ্ন হলো।আলতাফ কিছু সময় নিয়ে কাগজটি দেখলেন।এইটা একটা ফর্ম।আলতাফ মৃদু গলায় বললেন–

“তিনি কী রাজী হবেন! এইটাতো অনেক খরচের ব্যাপার।”

মাহাদ গম্ভীর মুখে চোখ তুলে তাকালো।শান্ত ও স্বাভাবিক গলায় বললো–

“সামনের মাস থেকে মি.আহমেদ এর সেলারি বাড়িয়ে দিবেন।আর ইমু আর মিস আম্বের এর যাতায়াত এর জন্য আমার পুরোনো গাড়ি ব্যবহার করতে বলবেন।”

আলতাফ দমকে গেলেন।তিনি কিছু আন্দাজ করতে পারলেন।কিন্তু আম্বের কে তিনি যতটুকু জেনেছেন সে কিছুতেই রাজী হবে না।আর মাহাদ না শব্দ মেনে নিতে পারে না।কিন্তু সব বুঝেও আলতাফ চান এই ব্যাপারটা নিয়ে ছোটখাট নয় ওদের মধ্যে বড় ধরনের কোনো ঝামেলা হোক।
,
,
আম্বের পড়াচ্ছে ইমু কে।দু বার ইমুর চুল টেনে দিয়েছে আম্বের।ছেলেটা অঙ্কে বড় কাঁচা।ইমুর মুখে উচ্ছল হাসি।আহমেদ বলেছে আম্বের কে আর হোস্টেলে পাঠানো হবে না।সে এখান থেকেই পড়ালেখা করবে।আম্বের ও বেশ খুশি।
ওদের দুজনকে হাসি ঠাট্টায় মাতোয়ারা দেখে খুব খুশি হলেন আলতাফ।স্মিত হেসে দরজায় কড়া নাড়লেন।আম্বের আর ইমুর কর্ণগোচর হলো সেই আওয়াজ।তাকিয়ে আলতাফ কে দেখে মৃদু হাসলো দুজন।আহমেদ পাশেই বসে আছে।আম্বের উঠে গিয়ে দরজার সামনে গিয়ে স্বাভাবিক গলায় বললো–

“দাঁড়িয়ে আছেন কেন?ভেতরে আসেন চাচা।”

আলতাফ ভেতরে এলেন।ইমুর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে নম্র গলায় বললেন–

“তোমার পড়া কী শেষ হয়েছে ইমু?

ইমু আম্বের এর দিকে তাকালো।আম্বের মুচকি হেসে বললো–

“পড়াতো অনেক আগেই শেষ।গাধাটা ম্যাথ টা একদম বুঝে না।”

আলতাফ নিরব ভঙিতে বললেন–

“তাহলে বাকি টা কাল হবে।এখন নিজের ঘরে যাও ইমু।আমার একটু জরুরী কাজ আছে আম্বের এর সাথে।”

ইমু কোনো কথা বললো না।সে বোধহয় জানতো এমন কিছুই হবে।সে তার বই খাতা গুছিয়ে বাইরে চলে গেলো।আম্বের বিচলিত গলায় বললো–

“কী হয়েছে চাচা!কোনো সমস্যা?

আলতাফ তার হাতের কাগজটা আম্বের কে দিলেন।আম্বের ফর্মে গভীর চোখ বুলিয়ে অবাক গলায় বললো–

“এটাতে একটা এডমিশন ফর্ম!
আপনি কোথায় পেলেন?

আলতাফ স্বাভাবিক গলায় বললেন–

“মাহাদ বাবা দিয়েছেন।তিনি চাইছেন আপনি এই কলেজেই ভর্তি হবেন।”

আম্বের ভ্রু কুঞ্চি করে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো।গাঢ় গলায় বললো–

“এতো অনেক খরচ!

“তা নিয়ে চিন্তা নেই।সামনের মাস থেকে আহমেদ কে তার সেলারি বাড়িয়ে দেওয়া হবে।”

আম্বের শক্ত গলায় প্রশ্ন করলো–

“এইসব কী আমার পড়ালেখার জন্য?

“হয়তো!

“তাহলে আপনার মাহাদ বাবা কে বলবেন আমাদের তার দয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।আমার বাবার যতটুকু সামর্থ্য আমি তেমন কলেজেই পড়বো।”

আলতাফ নিঃশব্দে হাসলেন।নরম গলায় বললেন—

“মাহাদ বাবা না শব্দ পছন্দ করেন না।আর এইটা দয়া কেন হবে!ইমুর জন্যও তিনি এই সুবিধা দিয়েছেন।”

আম্বের দৃঢ় গলায় বললো–

“সে যাই হোক।তার দানের কোনো প্রয়োজন নেই আমার।আর না শব্দের কথা বলছেন!
আমার বাবা তার এখানে বেতন ভুক্ত কর্মচারী হতে পারে আমি নই।তাই আমি তার কথা মানতে বাধ্য নই।”

আলতাফ কঠিন হাসলেন।শান্ত গলায় বললেন–

“আমি তাকে বলেছি এই বিষয়ে।তিনি আপনার জন্য লিভিং রুমে অপেক্ষা করছেন।আপনি নিজে গিয়ে আপনার সিদ্ধান্ত জানিয়ে আসেন।তাতেই বিষয়টা তার অন্তিম অধ্যায় পাবে।”

আম্বের গড়গড় করতে করতে ঘর থেকে বের হয়ে মূল ভবনে যাওয়া শুরু করলো।আম্বের এতোটাই উত্তেজিত ছিলো যে সে খেয়ালই করেনি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ইমু সব শুনেছে।
,
,
মাহাদ তার নিচের তলার লিভিং রুমে বসা।রণমূর্তি নিয়ে তার সামনে হাজির হয় আম্বের।আম্বের কে দেখেই স্মিত হাসে মাহাদ।নরম পায়ে উঠে আম্বের এর সামনে এসে দাঁড়ায়।অধর ছড়িয়ে শীতল শ্বাস ফেলে।মাহাদ শান্ত গলায় বললো–

“কেমন আছেন মিস সুগন্ধি?
আমি কিন্তু ভালো নেই।কেন বলেন তো!

মাহাদ ছোট্ট দম নিয়ে আবার বললো—

“সেই সকালে একবার আপনাকে দেখেছি।তারপর আর একবারো আমার সামনে এলেন না।আমার বুঝি কষ্ট হয় না!
দিস ইজ নট ফেয়ার প্রজাপতি।”

আম্বের মেঘের মতো গর্জন করে বললো—

“এইসব কী বলছেন আপনি?

মাহাদ বিগলিত হেসে স্নিগ্ধ গলায় বললো—

“আজকাল আমার কী হয়েছে বলেন তো!আগে আপনার সুগন্ধ এতো দুর থেকে পেতাম।কিন্তু এখন!
এই যে আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আমি শুধু আপনাকেই দেখছি কিন্তু আপনার সুগন্ধ কেন পাচ্ছি না?

আম্বের অরুনলোচন চোখে তাকিয়ে ফোঁস ফোঁস করতে থাকে।মাহাদ তার ডার্ক রেড অধরযুগল ছড়িয়ে ভুবন ভোলানো হাসি দেয়।আম্বের এর একদম কাছে এসে ঝুঁকে ওর কানের কাছে গিয়ে বললো—

“আপনার সুগন্ধ ছাড়া আজকাল আমার ঘুম ই আসে না।কি হয়েছে আমার বলেন তো!
আপনাকে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে।”

আম্বের দুম করে দু হাত দিয়ে সজোড়ে ধাক্কা মারে মাহাদ এর বুকে।কয়েককদম পিচিয়ে যায় মাহাদ।তার চোখে নির্মল হাসি।অধর জুড়ে তৃপ্ততা।ফুঁসলে উঠে আম্বের।গমগমে গলায় বললো–

“কী ভাবেন আপনি নিজেকে!ফিল্মস্টার বলে যা ইচ্ছে তাই করবেন!

মাহাদ বুকে হাত দিয়ে আহত হওয়ার ভান করে ফিচেল গলায় বললো–

“হায়,,
একদম এখানে গিয়ে লাগলো।কী বললেন!
ফিল্মস্টার!
আজ সত্যিই নিজেকে ফিল্মস্টার মনে হচ্ছে।”

আম্বের মাহাদ এর সামনে ফর্মটা তুলে ধরে তপ্ত গলায় বললো—

“এই নিন।”

মাহাদ ব্যস্ত পায়ে সামনে এসে ফর্মটা নিলেন।স্বাভাবিক গলায় বললো—

“কী হয়েছে প্রজাপতি !ফর্ম এ কোনো সমস্যা?

আম্বের তার গলা আরেকটু উঁচু করে বললো–

“এইসবের মানে কী?

মাহাদ ফর্মে চোখ বুলিয়ে স্মিত হেসে বললো—-

“ও আচ্ছা এই কথা।বুঝতে পারছেন না।আগে বলবেন তো।আমি যতটুকু শুনেছি আপনি এইস.এস.সি. কমপ্লিট করেছেন।তাও সমস্যা!
আচ্ছা বলেন কোন ইংলিশ টা বুঝতে পারছেন না?

আম্বের গাঢ় গলায় রাগ মিশ্রন করে বললো—

“আপনার দান এর কোনো প্রয়োজন নেই আমার।”

মাহাদ ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেললো।গলার স্বর খানিক নিচু করে বললো—

“দান কেন হবে প্রজাপতি!
কলেজ টা আপনার লেবেলের।তাই খোঁজ দিলাম।দ্যাটস ইট।”

আম্বের প্রদৃপ্ত গলায় বললো–

“তার প্রয়োজন নেই।আমারটা আমি নিজেই খুঁজে নিবো।
আর বাবার সেলারি আমার পড়ালেখার জন্য বাড়াতে হবে না।নিয়মানুযায়ী বাড়াবেন।”

মাহাদ পকেটে দু হাত গুঁজে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।শান্ত ও স্বাভাবিক গলায় বললো–

“আপনার কেন মনে হচ্ছে আমি আপনাকে দান করছি!
অন্য কিছুও তো হতে পারে!

আম্বের শক্ত গলায় বললো—

“কী বলতে চান আপনি?

মাহাদ ধীর পায়ে এগোতে লাগলো।আম্বের পিছিয়ে যায়।এক সময় কাউচে ধাক্কা খেয়ে তার উপর বসে পড়ে।মাহাদ নিচু হয়।আম্বের এর দুই পাশে হাত রেখে গভীর দৃষ্টিতে তার চোখের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বললো—

“একরাত কাটাবেন আমার সাথে?
আমার সব দান এর প্রতিদান।”

আম্বের ঘি ঢালা আগুনের মতো জ্বলে উঠলো।বিকট আওয়াজ করে বললো–

“সরেন এখান থেকে।কী ভাবেন আমাকে!বাজারের মেয়ে!
দেখুন মি.ফিল্মস্টার,আমি এমন মেয়ে নই যা আপনি ভাবেন।আমি সাধারণ।অতি সাধারণ।টাকার বিনিময়ে আপনার বিছানায় যাবো তেমন মেয়ে আমি নই।”

আম্বের ফোঁস ফোঁস করতে থাকলো।মাহাদ দুর্বোধ্য হাসলো।নাকের ডগা ফুলিয়ে গাঢ় গলায় বললো—

“সব দানের প্রতিদান হয় না মিস আম্বের।আরেকটা কথা,আপনি সাধারণ নন।আপনি অসাধারন।সেইটা আমার জন্য।”

আম্বের এর পিত্তি জ্বলে উঠে মাহাদ এর কথায়।দপদপ করে পা ফেলে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে।মাহাদ গা দুলিয়ে হাসে।রহস্য গলায় বললো—

“আমি আপনাকে ছাড়ছি না মিস সুগন্ধি ।আপনি আমার বদ্ধ হৃদয়ের সুগন্ধি প্রজাপতি।আমার জীবনের কালো অতীতের একমাত্র আলোকিত ডেসটিনি আপনি।তার শেষ যে আমাকে দেখতে হবে।আর তার জন্য আপনাকে আমার প্রয়োজন প্রজাপতি।বড্ড প্রয়োজন।”
,
,
,
সকাল বেলার মিষ্টি রোদে অবগাহন করছে আম্বের আর ইমু।ভোরের কুয়াশা তার চাদর সরিয়ে দিয়েছে।সেখানে এক ফালি মিষ্টি রোদ হয়ে উঁকি দিচ্ছে প্রভাকর।ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া থাকলেও সেই উষ্ণ রোদের ছোঁয়ায় এক অদ্ভুত উষ্ণতা শরীর,প্রাণ সবকিছুই আন্দোলিত করে।

নিজের ঘন কালো চুল সূর্যের অভিমুখে হালকা ছড়িয়ে বসে আছে আম্বের।বাধ্য হয়েই এই শীতের মধ্যে তাকে সকাল সকাল গোসল করতে হলো।
আহমেদ ফুল গাছে স্প্রে করবে বলে একটা বালতি তে মেডিসিন মিশিয়ে তা দরজার সামনে রেখে ঘরের ভেতর যায়।আম্বের সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো।কোনো একটা ব্যাপারে অতি উৎসাহের সাথে দৌঁড়ে আসছিলো ইমু।আর তার পায়ের সাথে লেগেই পুরো বালতির পানি ছিটকে পড়ে আম্বের এর গায়ে।তাই বাধ্য হয়ে সে সকালেই গোসল করে।ইমু কে অবশ্য কিছু বলে নি।তাকে শাস্তি স্বরুপ নিজের সাথে বসিয়ে রেখেছে আম্বের।ইমুর অবশ্য সোনায় সোহাগা।আম্বের এর সাথে দিব্যি সে আনন্দের সাথে বসে আছে।হঠাৎ ওদের উপর আবছা ছায়া পড়তেই তাকিয়ে দেখে মাহাদ পকেটে হাত পুরে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মাহাদ কে দেখেই রাগে গা রি রি করে উঠে আম্বের এর।আর ইমুর মাথায় কী চলছে সেইটা শুধু সেই ই জানে।

মাহাদ কে দেখেই নিরবে উঠে দাঁড়ায় দু’জন।ইমু আলতো হাতে আম্বের এর হাত চেপে ধরে।মাহাদ এর তীক্ষ্ম নজর সেদিকে।ভাবলেশহীন ভাবে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে সংবরণ করে মাহাদ।শান্ত গলায় বললো–

“এদিকে এসো ইমু।”

ইমু নড়লো না।সে এখনো আম্বের এর হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।বরং সে তার বাঁধন আরেকটু শক্ত করলো।মাহাদ আবারো গাঢ় গলায় বললো—

“এদিকে এসো ইমু।”

আম্বের ইমুর দিকে তাকিয়ে ওকে যাওয়ার জন্য ইশারা করে।ইমু মাথা হালকা নাড়িয়ে না সূচক সম্মতি দেয়।আম্বের চোখ শক্ত করে ওকে যাওয়ার জন্য বলে।ইমু বাধ্য হয়ে মাহাদ এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।মাহাদ ওর বামহাত পকেট থেকে বের করে ইমুর মাথায় রাখে।তৎক্ষণাৎ ইমু সরে দাঁড়ায়।মাহাদ এর স্পর্শ তো দূর তার ছায়াও ইমুর শরীরে কাটার মতো বিঁধে।মাহাদ দুর্বোধ্য হাসে।স্বাভাবিক ও শান্ত গলায় বললো–

“লেখাপড়া কেমন চলে তোমার?

ইমু কাঠখোট্টা গলায় বললো–

“ভালো।”

“কবে খুলবে তোমার স্কুল?

“সামনের সপ্তাহে।”

“গুড।স্কুল মিস করবে না।আর ভালো করে লেখাপড়া করবে যাতে করে তোমাকে তোমার বাবার মতো ড্রাইভার না হতে হয়।”

ইমু কী বুঝলো জানে না।কিন্তু মাহাদ এর কোনো কথাই তার পছন্দ নয়।কিন্তু আম্বের এর খুব রাগ হলো।লোকটার কথার শ্রী নেই।যা মুখে আসে তাই বলে।
মাহাদ গম্ভীর গলায় আবার বললো–

“এখন ঘরে যাও।”

ইমু কিছুই বললো না।ও সোজা আম্বের এর হাত ধরে তীক্ষ্ম গলায় বললো—

“চলো কেশবালা।”

মাহাদ শক্ত গলায় বললো–

“দাঁড়াও ইমু।তুমি একা যাবে।মিস আম্বের এর সাথে আমার কথা আছে।”

ইমুর কী হলো সে জানে না।মাহাদ এর কথায় সে পাল্টা উত্তর দিলো—

“কেন!কেন যাবো আমি?

মাহাদ নিরুত্তেজ গলায় বললো—

“আমি বলেছি তাই।গো নাউ।”

“কেন!আপনি বললেই যেতে হবে কেন!

আম্বের ইমুর কথা শুনে দিনে তারা দেখলো মনে হয়।মাহাদ কে ইমু চরম ভয় পায় সেক্ষেত্রে এভাবে তর্ক করা!আম্বের সরস গলায় বললো–

“ইমু,তুই ঘরে যা আমি আসছি।বড়দের মুখে মুখে তর্ক করতে নেই।ইটস ব্যাড ম্যানার।যা,আজ তোকে আমি পায়েষ রেঁধে খাওয়াবো।এখন গিয়ে পড়তে বস।”

ইমুর মুখভঙির কোনো পরিবর্তন হলো না।না তার চোখের।সে এখনো তেজি রশ্মিবিচছুরণ করছে তার চোখ থেকে যা মাহাদ কে জ্বালিয়ে দিবে।ইমু চলে যায় তার ঘরে।আম্বের রাগমিশ্রিত গলায় বললো—

“আপনার সমস্যা কী?
বাচ্ছাদের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?

মাহাদ গভীর শ্বাস ফেলে বললো–

“অপাত্রে পাত্র দান করতে নেই মিস সুগন্ধি।”

আম্বের উৎসুক চোখে তাকিয়ে ফিকে গলায় বললো–

“কী বলতে চান?

মাহাদ ছোট্ট দম নিলো।খেয়ালি গলায় বললো–

“আপনি ছোট নন যে আপনাকে সবকিছু হাতে কলমে বোঝাতে হবে।
ইমুর এখন বাড়ন্ত বয়স।এমন কিছু করবেন না যাতে আপনার সাহচর্য ওর মনে অন্য কিছুর দানা বাঁধে।”

আম্বের বিরক্তি গলায় বললো–

“আপনি কী কোনো কথা সোজা বলতে পারেন না!এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলেন কেন!

মাহাদ বিগলিত হাসে।আম্বের এর চুল থেকে এখনো পানি ঝড়ছে।মাহাদ হাসি বন্ধ করে স্বাভাবিক গলায় বললো—

“এতো সকালে গোসল করলেন কেন মিস সুগন্ধি?

আম্বের কটমটিয়ে উঠে।কী ধরনের লেইম কোয়েশ্চেন!
আম্বের শুকনো গলায় বললো—

“তাতে আপনার কী সমস্যা?

মাহাদ ছোট্ট করে হাসলো।ফিচেল গলায় বললো—

“না বলছিলাম আপনার তো এখনো বিয়ে হয়নি।অবেলায় গোসল!
ব্যাপারটা কেমন না।অবশ্য স্বপ্ন টপ্ন দেখলে অন্য কথা।”

আম্বের ঝাঁঝিয়ে উঠে ব্যস্ত গলায় বললো–

“ছিঃ!
এইসব কী বলছেন!

মাহাদ একটু ঝুঁকে দুষ্টু গলায় বললো—

“এই বয়সে এমন আকটু হয়।নাথিং আ বিগ ডিল।বিয়ের বয়স হয়েছে তো।আচ্ছা,আপনার বাবা আপনাকে বিয়ে দিচ্ছেনা কেন!
এই বয়সের মেয়েরা তো বিয়ের জন্য ছোঁক ছোঁক করে।কই আপনার মধ্যে তেমন কিছু তো দেখছিনা।
কাউকে পছন্দ করেন নাকি?

আম্বের তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।এই লোকটাকে একদম সহ্য হচ্ছে না।ইচ্ছে করছে বুড়িগঙ্গার পানিতে ফেলে একটু কেঁচে আনি।তাতে যদি এর মুখের ভাষার কোনো পরিবর্তন হয়।
গয়াল কোথাকার!

তেজে উঠা গলায় আম্বের বললো—

“যদি থেকেও থাকে তাতে আপনার কী?

“কিছুই না।আমার আবার কী!

মাহাদ গলার স্বর হালকা নিচু করে স্থির হয়ে আবার বললো–

“তবে আপনার সুগন্ধ আমি ছাড়া অন্য কাউকে নিতে দেবো না।”

আম্বের আর কথা বললো না।এই লোকটার সাথে কথা বলা বেকার।যতসব নোংরামি।আম্বের অস্ফুটভাবে বললো–

“ছ্যাঁচড়া কোথাকার!

মাহাদ চোখ পিটপিট করে আগ্রহী গলায় বললো—

“ছ্যাঁচড়া!
এইটা আবার কী!

আম্বের ধমকের সাথে বললো–

“আপনি।যত্তসব।”

আম্বের সবেই পাশ ফিরে পা বাড়াতেই মাহাদ তাকে হাত ধরে একটানে নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে নেয়।আম্বের দ্বিধাগ্রস্ত চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ আছে কিনা।লোকটা এইসব কী করছে!ব্যগ্র গলায় আম্বের বললো—

“কী করছেন !ছাড়েন আমাকে।ছাড়েন আমাকে।”

মাহাদ স্মিত হাসে।ডানহাত ধীরগতিতে আম্বের এর কোমরে চালান করে।হালকা চাপ দিয়ে নিজের সাথে আবদ্ধ করে নেয়।আম্বের এর অক্ষিকোটর থেকে মনি বেরিয়ে আসার উপক্রম।নিজেকে ছাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সে।কিন্তু মাহাদ ওকে কোমর সমেত এমনভাবে চেপে ধরেছে আম্বের একটুও নড়তে পারছে না।নিজের বেহাল দশায় আম্বের এর কান্না পেলো খুব।মাহাদ নিজের অধরযুগল ছুঁয়ে ধরে আম্বের এর কাঁধে।আম্বের শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যায় এক হিম শীতল স্রোত।কেঁপে উঠে আম্বের এর দেহপিঞ্জর।আম্বের নিরব,নিস্তব্ধ,বাঙহীন।
মাহাদ বেশ কিছুসময় নিজেকে হারিয়ে ফেলে আম্বের এর শরীরের সেই অদ্ভুত সুগন্ধে।আম্বের এর কাঁধ থেকে অধর সরিয়ে ওর কানে হিসহিসিয়ে বললো—

“কাল সারারাত আমি ঘুমাতে পারিনি প্রজাপতি।কেন বলেন তো!
কি হয়েছে আমার বলতে পারবেন?
আমি কী সত্যিই পাগল!কী হচ্ছে আমার সাথে!

কথা বলতে বলতে মাহাদ এর হাতের বন্ধন দুর্বল হয়ে আসে।আর সেই সুযোগে মাহাদ কে ধাক্কা মেরে সরায় আম্বের।তীক্ষ্ম গলায় আম্বের বললো–

“হ্যাঁ।আপনি আসলেই পাগল।নিজেকে ডক্টর দেখান।”

রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে কোয়াটার এর দিকে চলে যায় আম্বের।

মাহাদ নিরব,নিশ্চল,স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আজকাল সে নিজেকে চিনতে পারে না।কী সব করে সে!কী উদ্ভট আচরণ!গা দুলিয়ে হেসে উঠে মাহাদ।পাগল!সে সত্যিই পাগল।আর পাগলের পাগলামি কতোটা ভয়ংকর তা আম্বের জানে না।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here