#বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ৭
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি
শীত এসেছে তার শীতের পসরা নিয়ে।শৈত্যপ্রবাহে আজকাল সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে পরিবেশ।
গায়ে একটা অ্যাশ কালারের সোয়েটার পড়েছে ইমু।শীতের মধ্যে খিচুড়ি খেতে সেই লাগে।তাই ইমু জেদ ধরেছে আজ সে খিচুড়ি খাবে।তাই আম্বের নিজ হাতে খিচুড়ি রান্না করেছে।আহমেদ,রহিম সহ একসাথে বসে ওদের ঘরেই খাচ্ছে।শুধু যে তারা তা নয়।আম্বের প্রায় সবার জন্যই রান্না করেছে।অন্যান্য সার্ভেন্টদেরও দেয়া হয়েছে সাথে আলতাফ কেও।বাদ ছিলো শুদু মাহাদ।
আম্বের এর খাওয়া প্রায় শেষ।গামছায় হাত মুছে বসে আছে আর বাকিদের খাওয়া দেখছে।এমন সময় দরজায় করাঘাত পড়ে।আম্বের সবাইকে খেতে বলে দরজা খুলে দাঁড়ায়।আলতাফ বিষন্ন মুখে দাঁড়িয়ে আছে।আম্বের ঘরের ভেতর তাকিয়ে বাইরে বের হয়ে আসে।
আলতাফ থমথমে ভাব ধরে দাঁড়িয়ে আছে।মৌনতা ভাঙলো আম্বের।স্বাভাবিক গলায় বললো–
“কিছু বলবেন চাচা?
ঠান্ডায় অনেকটা কেঁপে উঠে আলতাফ।তবুও শান্ত ও আবেগী গলায় বললেন–
“আরেকবার ভাবলে হতো না!
আম্বের ঝট করে বললো–
“এখানে ভাবার কিছু নেই চাচা।আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
আজ দুপুরেই আম্বের কে আলতাফ মাহাদের জন্য খাবার বানানোর কথা বলেছে।সেদিন সেফ কে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।আর আম্বের যেহেতু মাহাদ থেকে কোনো কিছুর বিনিময় ছাড়া বাড়তি টাকা নিতে নারাজ তাই মাহাদ বলেছে এর বিনিময়ে আজ থেকে আম্বের মাহাদ এর জন্য রান্না করবে।কিন্তু আম্বের প্রথম শুনেই না করে দেয়।
আলতাফ গম্ভীর গলায় নম্রভাবে বললেন–
“মাহাদ বাবা সকাল হতে কিছুই খায় নি বউমনি।”
আঁতকে উঠে আম্বের।বউমনি!আলতাফ কেন তাকে বউমনি ডাকলো!আম্বের থমথমে গলায় বললো–
“বউমনি!
আলতাফ লজ্জিত গলায় অনুনয় করে বললো–
“মাফ করবেন।ভুলে বলে ফেলেছি।আসলে অনেক বছর পর এই বাড়িতে কোনো নারীর পা পড়েছে।তাই…।অনেক বছর আগে একজন কে বলেছিলাম।তার বদলে সে আমাকে একটা চড় মেরেছিলো।আমি অবশ্য তাতে কিছু মনে করিনি।আপনি চাইলেও মারতে পারেন।”
কথাগুলো বলতে বলতে গলা ধরে আসে আলতাফ এর।আম্বের খেয়াল করে আলতাফ এর চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো টুপ করে এক ফোঁটা অশ্রুজল।আম্বের এর বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।নিজের অজান্তেই লোকটাকে সে কষ্ট দিয়ে ফেললো নাতো!আম্বের ব্যগ্র গলায় বললো–
“আই এম রিয়েলী সরি চাচা।আপনার ভালো লাগলে বলেন আমার কোনো সমস্যা নেই।”
আম্বের আলতাফ এর আরেকটু কাছে গিয়ে দুষ্টামিমিশ্রিত গলায় বললো–
“শুধু কোনো হ্যান্ডসাম ছেলের সামনে বলবেন না।তাহলে ভাববে আমার বিয়ে হয়ে গেছে।আমার আর হ্যান্ডসাম হিরো বিয়ে করা হবে না।”
ঝুমঝুম করে হেসে উঠে আম্বের।আলতাফ নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে।মেয়েটার চেহারায় যেমন মায়া তেমন কথাতেও মায়া।হালকা হাওয়ায় দোদুল্যমান আম্বের এর চুল।
আম্বের নিরুদ্বেগ গলায় বললো–
“চলেন।আমি রান্না করে দিচ্ছি।কিন্তু আজকের জন্যই শুধু।”
আলতাফ ম্লান হাসলেন।স্বপ্নমহল এ আসলো আম্বের।সব নিরব,নিস্তব্ধ।আলতাফ সব বুঝিয়ে দিলেন।এতো রাতে বেশি ঝামেলা করবে না বলে আম্বের শুধু নুডলস রান্না করে।মাহাদ এর দরজার সামনে এসে দেখে তা ভেজানো।আম্বের হালকা করে ধাক্কা মেরে ভেতরে গিয়ে দেখে মাহাদ চুপচাপ কাউচে বসে আছে।হাতে তার বেন টেন অঙ্কিত পাজেল।সেইটা সলভ করছে।সামনে থাকা ছোট্ট টেবিলের উপর নুডলস রাখে আম্বের।দরজায় কাছে যেতেই গাঢ় গলায় মাহাদ বললো—
“বসেন প্রজাপতি।”
আম্বের ভ্রু কুঞ্চি করে শক্ত গলায় বললো—
“খেয়ে নিন।আমি যাবো।”
মাহাদ রাশভারী গলায় বললো–
“আমি আপনাকে বসতে বলেছি মিস সুগন্ধি।”
আম্বের ক্ষেপে গিয়ে বললো—
“আপনি বললেই কী আমাকে বসতে হবে!
মাহাদ ক্ষীপ্র গলায় ঝাঁঝিয়ে বললো—
“আমি আপনাকে বসতে বলেছি মিস আম্বের।”
মাহাদ এক ধাক্কায় নুডলস এর প্লেট ফেলে দেয়।আম্বের রাগি গলায় বললো–
“ফেললেন কেন আপনি!এতো কিসের রাগ আপনার!ভালো করেছেন।এখন সারারাত না খেয়ে থাকেন।”
আম্বের আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না।দপ দপ করে পা ফেলে নিচে নেমে এলো।আলতাফ আর আহমেদ সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো।আম্বের তপ্ত গলায় গমগম করে বললো—
“আপনার মাহাদ বাবা কে ডক্টর দেখান।আস্ত এক সাইকো।চলো বাবা।”
আম্বের কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আহমেদ এর হাত ধরে স্বপ্নমহল এর সদর দরজা পর্যন্ত আসে আর থমকে যায়।কেনো যেনো হঠাৎ করেই ওর বুকে চিনচিনে ব্যথা শুরু হলো।আম্বের ভাবলো,এমন কেন লাগছে আমার!নিঃশ্বাস কেন ভারী হয়ে আসছে!এতো কষ্ট কেন লাগছে আমার!মানুষটা কী সত্যিই সারাদিন না খেয়ে ছিলো!তাহলে তো সারারাতও না খেয়ে থাকবে!আম্বের ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে।আনম্র গলায় আহমেদ কে বললো—
“তুমি একটু দাঁড়াবে বাবা!আমি যাবো আর আসবো।”
আম্বের প্রশ্ন তো করলো কিন্তু তার উত্তরের আশা করলো না।সিড়ি ভেঙে আবার উপরে এলো।রান্না ঘরে গিয়ে আগের মতো নুডলস বানিয়ে তা নিয়ে মাহাদ এর ঘরে গেলো।মাহাদ এখনো স্থির বসে আছে।তাকে দেখে মনেই হচ্ছে না একটু আগে এখানে কিছু হয়েছে।আম্বের টেবিলের উপর নুডলস রেখে বিছানায় গিয়ে আসন পেতে বসে।
মাহাদ কোনো কথা বললো না।আম্বের এর দিকে তাকালোও না।হালকা হাতে নুডলস এর প্লেট টেনে নিয়ে তা খাওয়া শুরু করে।আম্বের অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।কিন্তু পরক্ষনেই ভাবে হয়তো একা বসে খেতে ভালো লাগে না তাই ওকে বসতে বলেছে।
প্রায় দশ মিনিট সময় লাগিয়ে খাওয়া শেষ করলো মাহাদ।এই দশ মিনিটে একবারের জন্য ভুল করেও আম্বের এর দিকে তাকালো না মাহাদ।খাওয়া শেষ করে হাত বাড়িয়ে বিছানা থেকে একটা বালিশ নিয়ে তা কাউচের এক মাথায় রেখে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে মাহাদ।শান্ত ও স্থির গলায় আম্বের কে বললো–
“এখন আপনি যেতে পারেন প্রজাপতি।”
আম্বের গটগট করে উঠে দাঁড়ায়।দাঁত কিড়মিড় করে বললো–
“এতোক্ষন আমাকে বসিয়ে রাখলেন কেন?
মাহাদ নিরুদ্বেগ গলায় বললো–
“আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করলো তাই।”
আম্বের হঠাৎ জ্বলে উঠা প্রদীপ শিখার মতো বললো—
“তাহলে দেখলেন কোথায়?শুধু তো খাচ্ছিলেন।”
মাহাদ হালকা পিঠ উঁচু করে আম্বের এর হাত টেনে ওকে নিজের পায়ের উপর বসায়।কোমর ভেঙে সোজা হয়ে বসে মাহাদ।মাহাদ এর বুকের সাথে লেগে আছে আম্বের এর শরীরের একপাশ।মাহাদ এর আচমকা এহেন কাজে থমকে যায় আম্বের।মাহাদ আম্বের এর হাত নিজের হাতে নিয়ে উল্টো পিঠে চুমু খায়।আম্বের তড়িৎ গতিতে হাত টেনে নেয়।কপট রাগ দেখিয়ে বললো—
“এইটা কী হলো?
মাহাদ বিগলিত গলায় বললো–
“আপনার হাতের রান্না খুব ভালো তাই।”
“তাই বলে হাতে চুমু খেতে হবে!
মাহাদ মিচকি হেসে দুষ্টুমিমিশ্রিত গলায় বললো–
“অন্য কোথাও খাবো!আপনার ঠোঁটে?যদি অভয় দেন।”
“বাজে কথা রাখেন।”
মাহাদ হেসে উঠে।মাহাদ ওর দুই হাত দিয়ে আম্বের কে নিজের সাথে আড়ষ্ট করে।মাহাদ এর এক হাত আম্বের এর পেট ছুঁয়ে অন্য হাত কোমর ছুঁয়ে আছে।আর এছাড়াও মাহাদ বুক ছুঁয়ে যাচ্ছে আম্বের এর একপাশ।আম্বের এর রাগ করার কথা,চিল্লাচিল্লি করার কথা।কিন্তু আম্বের তার কিছুই করলো না।কী এক অপার্থিব ভালোলাগা ভর করলো তার শরীরে।
মাহাদ স্মিত গলায় বললো–
“কখনো শাড়ি পড়েছেন?
“কেন?
“আপনার ফিগার সাইজ কতো!থার্টি টু নাকি থার্টি ফোর?
দেখেতো তো থার্টি ফোর মনে হচ্ছে।”
আম্বের ঝামটা মেরে বললো–
“ছিঃ!
এইসব কী বলেন আপনি!আপনার নজর কী আর কোথাও যায় না?
মাহাদ আম্বের এর বাজু তে নাক ঘষে ফিকে গলায় বললো—
“যায় তো।আপনার সর্বাঙ্গে।”
আম্বের দৃঢ় গলায় বললো—
“মেয়েদের সম্মান করতে শিখেন।মেয়েরা মায়ের জাত।তাদের বোনের চোখে দেখেন।”
মাহাদ ভ্রু কুঁচকে বললো—
“তাহলে বৌয়ের চোখে কাকে দেখবো!
আম্বের অক্ষিপল্লব প্রশস্ত করে অগ্নিঝরা চোখে তাকায়।মাহাদ হৃদয় গলানো হাসি হেসে বললো–
“এভাবে তাকান কেন!
মায়া লাগে তো।”
আম্বের মাহাদ এর পায়ের উপর বসায় মাহাদ এর মাথা থেকে আম্বের এর মুখমণ্ডল একটু উঁচুতে।তাই আম্বের এর তপ্ত নিঃশ্বাস ছুঁয়ে যাচ্ছে মাহাদ এর তৃষ্ণার্ত অধর জোড়া।
আম্বের ছোট্ট করে বললো–
“যেতে দিন আমায়।অনেক রাত হয়েছে।”
মাহাদ ম্নান হাসে।নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে আম্বের এর দিকে।আনম্র গলায় বললো—
“একটা কথা বলবো আপনাকে?
আম্বের অস্ফুটভাবে বললো–
“হু।”
মাহাদ তার মুখটা আম্বের এর আরেকটু কাছে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো–
” আজকের রাতটা আমার সাথে থেকে যান।আপনাকে অনেক ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে।”
আম্বের চোখ মুখ কুঁচকে ঝপাৎ করে উঠে দাঁড়ায়।শক্ত এবং ঝাঁঝানো গলায় বললো–
“আপনি আসলেই একটা নোংরা লোক।কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না বুঝলেন।অসভ্য,ইতর,জানোয়ার কোথাকার!
সিড়ি বেয়ে আম্বের কীভাবে নেমেছে সে জানে না।নিচে নেমেই নিজের বাবার হাত ধরে টেনে নিয়ে কয়েককদম এগিয়ে আবার দাঁড়ায়।থমথমে গলায় আলতাফ কে বললো–
“আপনার মাহাদ বাবা কে বলবেন তার চরিত্র ঠিক করতে।তা নাহলে যেই পোস্টারে মেয়েরা চুমু খায় সেই পোস্টার ছিড়ে মালা গেঁথে তার গলায় পড়াবে।চলো বাবা।”
আলতাফ কোনো প্রতিক্রিয়া করলেন না।আলতো পায়ে উপরে উঠে এলেন।মাহাদ এর রুমের সামনে এসে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলেন।তারপর ফিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ভেতর থেকে ভারী কন্ঠে মাহাদ ডেকে উঠলো–
“চাচা,
ভেতরে আসেন।”
আলতাফ নিঃশব্দে ভেতরে এলেন।ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেললেন।কিন্তু কোনো কথা বললেন না।মাহাদ মোবাইলে গেমস খেলছে।চোখ বাকিয়ে একবার তাকালো আলতাফ এর দিকে।শান্ত গলায় বললো—
“কিছু বলবেন চাচা?
আলতাফ সুদীর্ঘ শ্বাস ফেলে ম্লান গলায় বললেন–
“এইসব কী ঠিক হচ্ছে মাহাদ বাবা?
“কোন সব চাচা?
“আপনি যা নন তা কেন বারবার তুলে ধরছেন বউমনির সামনে।”
মাহাদ হাসলো,বললো—
“কে বললো আমি তা নই!
“তাহলে আপনি তাকে হারাবেন।”
মাহাদ স্মিত হাসলো।ফিকে গলায় বললো—
“আমি তো সবাইকে হারিয়েছি।এ আর নতুন কী!
আলতাফ গম্ভীর গলায় বললেন–
“তাহলে তাকে তার মতো থাকতে দিন।”
মাহাদ আবারো উচ্চ শব্দে হাসলো।হাসি থামিয়ে বললো—
“উহু।আমার প্রশ্নের জবাব না পাওয়া পর্যন্ত তাকে আমি ছাড়ছি না।”
“কিন্তু আপনি যা করছেন তাতে সে কখনো ফিরবে না আপনার কাছে।”
মাহাদ কাউচ ছেড়ে উঠলো।বিছানার সামনে গিয়ে ধপাস করে উপুর হয়ে শুয়ে পড়ে।সেভাবেই বললো—
“আমার খুব ঘুম পাচ্ছে চাচা।আপনি এখন যান।আর লাইট টা অফ করে দেন।”
আলতাফ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলেন।তিনি ভাবছেন।কিন্তু কী ভাবছেন তা তিনি জানেন না।আর জানতেও চান না।যা হচ্ছে ঠিক হচ্ছে না।লাইট অফ করে মাহাদ এর ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন আলতাফ।পুরো ঘর জুড়ে সুনসান নিরবতা।ইট,পাথরের শূন্য প্রাসাদ।
,
,
,
ঘুমের মধ্যে আম্বের টের পেলো তার গলার নিচটায় শীতল স্পর্শ।ঝট করে উঠে বসে আম্বের।প্রশ্বস্ত চোখ জোড়া ভয়ার্ত।আম্বের এর সামনেই বসে আছে মাহাদ।মাহাদ এর চোখে বিস্ময়কর নেশা।ঝমঝমিয়ে উঠে আম্বের এর শরীর।ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে দেখে তার বাবা নেই।ঘরের দরজাও ভেতর থেকে লাগানো।আম্বের এর শরীর হঠাৎই অজানা ভয়ে কাঁপতে থাকে।আম্বের একটু পিছাতেই আরেকটু এগিয়ে যায় মাহাদ।কম্পনরত গলায় আম্বের বললো—
“আআপপনিই??
মাহাদ শান্ত ও নির্বিকারভাবে বললো–
“জ্বী প্রজাপতি।আসলে আপনাকে ছাড়া ঘুম আসছিলো না।আর আপনাকে তো বললাম আমার আপনাকে খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে।আপনি চলে কেন আসলেন?
আম্বের এর ভয়ে মিইয়ে পরা চোখ থেকে জল নামতে শুরু করলো।প্রায় কেঁদেই ফেললো আম্বের। আর্দ্র গলায় বললো–
“প্লিজ আপনি চলে যান এখান থেকে।প্লিজ।”
মাহাদ হাসলো।স্নিগ্ধ গলায় বলল—
“তা কী করে হয় মিস সুগন্ধি !আপনার সুগন্ধ যে আমাকে পাগল করে দিয়েছে।এখন তো আপনাকে আমার চাই।”
“প্লিজ এমন করবেন না।আমাকে যেতে দিন।”
মাহাদ গভীর চোখে তাকিয়ে বললো–
“ভয় পাচ্ছেন কেন প্রজাপতি!
মাহাদ ধীর হাতে আম্বের এর ওড়না খুলে নেয়।ভয়ে যেনো আম্বের শব্দ করতেই ভুলে গেছে।এই মানুষটা এতোটা নোংরা সে কখনো ভাবতে পারেনি।তাহলে কি সত্যিই আজ তার সাথে খারাপ কিছু হতে চলেছে!
মাহাদ আবার হাসলো।তার হাসিতে পৈশাচিকতা।চোখে ক্রুরতা।ঝাঁপিয়ে পরে মাহাদ আম্বের এর উপর।
চিৎকার করে উঠে আম্বের।ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে বোঝার চেষ্টা করে সে কোথায়।
সে তার ঘরে বসে আছে।বাইরে আলো ফুটেছে।জানালা দিয়ে প্রবেশ করছে পিনপিনে হাওয়া।এই শীতেও তার কানের পাশ দিয়ে নেমে যাচ্ছে শীতল জলের স্মিত ধারা।কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।নিজের গায়ে চিমটি কাটলো আম্বের।হাত দিয়ে নিজের গাল,কপাল স্পর্শ করলো।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো আম্বের।সে স্বপ্ন দেখছিলো।কী বিদঘুটে স্বপ্ন।আম্বের নিজেই লজ্জিত হলো।মাহাদ কে সত্যিই সে এতোটা খারাপ ভাবে!
কারণ মানুষ যা ভাবে তাই অবচেতন মনে তার স্বপ্নে আসে।
,
,
বেশ কিছুক্ষন শীতের সকালের মৃদু রোদে দাঁড়িয়ে আছে আম্বের।পাশে ইমুও।ইমু দুষ্টুমির ছলে আম্বের এর চুল ধরে টান দেয়।আর ওকে ধরতে গিয়েই একটা ছোট পাথরের সাথে লেগে আম্বের এর পা কেটে যায়।মৃদু আর্তনাদ করে বসে পরে আম্বের।ইমু দৌড়ে এসে ব্যস্ত গলায় বললো—
“কী হয়েছে কেশবালা!ব্যথা পেয়েছো?
ইমু দেখে আম্বের এর পা কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।ছলছল করে উঠে ইমুর চোখ।ইমু কে সরিয়ে সেখানে হাঁটু গেড়ে বসে মাহাদ।উদ্বেলিত গলায় বললো—
“কী হয়েছে মিস সুগন্ধি?
আম্বের মাহাদ কে দেখে অপ্রস্তুত হয়।তার সকাল বেলায় সেই বিশ্রি স্বপ্নের কথা মনে পড়তেই গা গুলিয়ে উঠে।ছিঃ কী করে ভাবলো সে এইসব!
মাহাদ সেখানকার বেড়ে উঠা ঘাস কয়েকটা তুলে নিয়ে চিবিয়ে তা আম্বের এর আঙ্গুলে চেপে ধরে।চোয়াল শক্ত করে তাকায় আম্বের এর দিকে।আম্বের ঘাবড়ে উঠে।মানুষটা এমন করে তাকায়ে কেন!
মাহাদ ঘাস ফেলে নিজের পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে তা দিয়ে আম্বের এর আঙ্গুল বেঁধে দেয়।কোলে তুলে নেয় আম্বের কে।আম্বের পড়ে যাওয়ার ভয়ে দু হাতে আঁকড়ে ধরে মাহাদ এর গলা।মানুষটার মনে এতো মায়া আর সে কিনা কী সব ভেবেছে!
আম্বের কে ওদের ঘরে নিয়ে বিছানায় বসায় মাহাদ।ব্লেডিং বন্ধ হয়নি এখনো।মাহাদ জোরালো গলায় বললো–
“চাচা,আমার ঘরের ড্রয়ারে পেইন কিলার আছে নিয়ে আসেন আর সাথে ফাস্টএইড বক্স।”
আলতাফ স্বপ্নমহল এর সামনে থেকেই দেখেছে মাহাদ আর আম্বের কে।তাই কী হয়েছে তা দেখার জন্য দ্রুতই ওদের পিছনে আসে।ঘরের জানালার পাশে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আহমেদ।মাহাদ কে অনেক রূপেই দেখেছে কিন্তু আজকের এই রূপ তার বোধগম্য হচ্ছে না।এতোটা বিচলিত কেউ তার আপন মানুষের জন্য হয়।কিন্তু আম্বের!
আম্বের নিস্পলক তাকিয়ে আছে মাহাদ এর দিকে।কতোটা সঙ্কিত,ভয় আড়ষ্ট করে রেখেছে মাহাদ কে।রুমাল খুলে তা দিয়েই পরিষ্কার করছে আম্বের এর আঙ্গুল যাতে ধূলাবালি লেগে আছে।
আম্বের স্বাভাবিক গলায় বললো—
“প্লিজ আপনি শান্ত হোন।এইটা তেমন কিছু নয়।ঠিক হয়ে যাবে।”
মাহাদ ধমকে উঠে বললো–
“কী ঠিক হয়ে যাবে!আপনি কী বাচ্চা?
দেখে হাটতে পারেন না!কী অবস্থা করেছেন!কত রক্ত বের হয়েছে দেখেছেন!
আম্বের থমকে যায়।হঠাৎ করে এই মানুষটা এতোটা কী করে বদলে গেলো!
আলতাফ বক্স এনে দেয়।মাহাদ বেশ সময় নিয়ে তা ভালো করে পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দেয়।মাহাদ এর মোবাইল বেজে উঠে।তা রিসিভ করে কাঁধ দিয়ে তা কানের সাথে চেপে ধরে।ওপাশ থেকে কিছু একটা বলতেই মাহাদ বললো—
“ওকে ওকে আসছি আমি।পরে কথা বলছি।”
মাহাদ মোবাইল রাখে আবার পকেটে।আম্বের এর দিকে তাকাতেই দেকে কেমন নিথর ভাবে আম্বের তাকিয়ে আছে।মাহাদ স্মিত হেসে বিগলিত গলায় বললো—
“সরি প্রজাপতি।আমাকে এখন যেতে হবে।আজ সারাদিন আর আপনাকে দেখা হবে না।সরি।”
কথা শেষ করেই মাহাদ এক দম বন্ধকর চুমু খায় আম্বের এর অধরে।
মাহাদ বললো–
“আসি।”
আম্বের শ্বাসরুদ্ধ করে চেয়ে রইলো।আলতাফ মাথা নিচু করে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে চলে যায়।ইমু দরজায় দাড়িয়ে সবটা দেখলো।কেঁপে উঠে ওর মস্তিষ্ক।আম্বের এর লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।এইটা কী কোনো ফিল্ম নাকী!যে ইচ্ছে হলেই চুমু খাবে।তাও এইভাবে!
আম্বের হালকা চোখ ঘুরিয়ে তার বাবার দিকে তাকালো।আহমেদ তাকাতেই আম্বের এর মনে হলো,ধরনী দ্বিধা হও,আমায় তোমার বুকে আশ্রয় দাও।
চলবে,,,