বদ্ধ হৃদয়ের অনুভুতি পর্বঃ৯

0
4425

#বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ৯
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

পটপট করে পর্দা উড়িয়ে শীতের হিমেল বাতাস ঢুকছে ঘরে।দুজন মানুষ একে অপরের সামনে বসে আছে।পুরো ঘরে মৃদু বাতাসের ছন্দ।আর নিঃশ্বাসের স্বশব্দে একে অপরের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।

মাহাদ এর সামনে নিম্নমুখী হয়ে বসে আছে ইমু।থরথর করে কাঁপছে সে।কিন্তু তা ভয়ে নয় রাগে।মাহাদ এর প্রতি অব্যক্ত রাগ।অদ্ভুত শব্দ বের হচ্ছে ইমুর গলা থেকে।মাহাদ স্মিত হেসে স্বাভাবিক গলায় বললো—

“ডু ইউ হেট মি?

ইমু কোনো কথা বললো না।তার স্থির দৃষ্টি নিম্নমুখে।মাহাদ আবার বললো–

“আর ইউ হেট মি ইমু?
টেল মি ইমু।”

ইমু রক্তচক্ষু নিয়ে মাহাদ এর দিকে তাকায়।গরগর করে ইমুর গলায়।ক্ষুব্দ গলায় চিৎকার করে বললো–

“ইয়েস,ইয়েস।ইয়েস আই হেট ইউ।আই হেট ইউ।আই হেট ইউ।”

ফোঁস ফোঁস করতে থাকে ইমু।রাগে ওর পুরো শরীর কাঁপছে।ঘন ঘন তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলছে সে।মাহাদ স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষন কথা বললো না মাহাদ।ইমুর চাপা রাগ আগ্নেয়গিরি লাভার মতো উদগিরণ হতে লাগলো।মাহাদ শান্ত ও স্বাভাবিক গলায় বললো–

“ইয়েস আই এম ইমপ্রেসড।অলওয়েজ স্পিক দ্যা ট্রুথ।”
জীবনের সব ক্ষেত্রে সব সময় সত্য কথা বলবে।
আবদুল কাদের জীলানী(রাঃ)এর ঘটনা পড়েছো তুমি!
ডাকাত দলের সামনেও সে কিন্তু…..।”

ইমু শক্ত ও ভারী গলায় বললো–

“আমি জানি।আপনাকে বলতে হবে না।”

মাহাদ প্রশ্রয়ের হাসি হাসে।আর ভাবে এতোদিন এই ইমুই ভয়ে তার সামনে আসতো না আর আজ সে তার মুখে মুখে জবাব দিচ্ছে।মাহাদ শান্ত গলায় বললো—

“মাহাতাব স্যার কে চিনো?তোমাদের স্কুলের ম্যাথ টিচার।”

ইমু চুপ করে রইলো।কিছু সময় পর ঝট করে বললো–

“চিনি।হি ইজ আ গ্রেট ম্যান।সে আপনার মতো নয়।সে আমাদের সবাই কে ভালোবাসে।আমাদের সবাই কে আদর করে।”

“ইয়েস আই নো।”

মাহাদ ছোট্ট দম ফেললো।প্রসন্ন গলায় বললো–

“আমি তোমার কেশবালার বিয়ে ঠিক করেছি।মাহাতাব স্যার তোমার কেশবালা কে পছন্দ করে।আমি তার সাথেই মিস আম্বের এর বিয়ে ঠিক করেছি।”

ইমুর নাকের পাটা ফুলতে থাকে।তার চোখ দিয়ে এক উষ্ণ আভা নিঃসৃত হতে লাগলো।প্রদৃপ্ত গলায় দাঁতে দাঁত চেপে বললো–

“কেন বিয়ে দিবেন আপনি কেশবালার?কে হোন আপনি তার?
কেশবালার বিয়ে হবে না।আমি তার বিয়ে হতে দিবো না।কেশবালা কে আমি যেতে দিবো না।কোথাও যেতে দিবো না।”

শেষের কথা গুলো বলতে বলতে ইমুর গলায় কম্পন শুরু হয়।মাহাদ টুল ছেড়ে উঠে ইমুর পাশে গিয়ে বসে।এক হাতে ওকে বুকের একপাশে চেপে ধরে।ইমু ছোটার চেষ্টা করলেও মাহাদ শক্ত করেই ওকে ধরে রাখে।মাহাদ দৃঢ় গলায় বললো—

“শান্ত হও ইমু।আমার কথা শোনো।কোথাও যাচ্ছে না মিস আম্বের।প্লিজ ক্লাম ডাউন।”

ইমুর শরীর এখনো কাঁপছে।অক্ষিযুগল বেয়ে শ্রাবণের ধারা বইছে।ঘন ঘন নিঃশ্বাসের সাথে স্বরনালীও যেনো তার গতি বৃদ্ধি করেছে।
বেশ কিছু সময় পর শান্ত হয় ইমু।মাহাদ অধর ছড়িয়ে ফোঁস করে এক দম ফেললো।শান্ত গলায় প্রশ্ন করলো–

“চাঁদ ভালো লাগে তোমার?

ইমু বেশ কিছুসময় মৌনতা রেখে নিষ্কম্পন গলায় অস্ফুটভাবে বললো—

“হু।”

“তাহলে এক কাজ করি আকাশ থেকে চাঁদ কে নিয়ে আসি!

ইমু ঝট করে বললো–

“নাহ।”

মাহাদ কিঞ্চিৎ ভ্রু নাচিয়ে মৃদু গলায় বললো–

“কেন?

ইমু বুদ্ধিদীপ্ত সুরে বললো–

“তাহলে রাতে আমাদের আলো দিবে কে!

মাহাদ সহজ ও স্বাভাবিক ভাবে বললো–

“তাতে কী!
তোমার তো ভালো লাগে।আর যা তোমার ভালো লাগে তাতো তোমারই হওয়া উচিত।”

“নাহ।চাঁদ সবার জন্য।চাঁদের আলো না হলে মানুষ রাতে দেখবে কী করে!আল্লাহ তো সবার জন্য চাঁদকে দিয়েছেন।চাঁদকে সবাই ভালোবাসে।তাহলে আমি কেন তাকে আটকিয়ে রাখবো!

মাহাদ স্বাভাবিক হয়ে বসে।নম্র গলায় বললো–

“দ্যাটস গুড।তাহলে তুমি বলতে চাও চাঁদকে সবাই ভালোবাসে তাই সবাইকেই তার আলো পাওয়া উচিত।
তাহলে মিস আম্বের এর ক্ষেত্রে তার উল্টো কেন?

ইমু উৎসুক চোখে তাকালো।কিন্তু কোনো কথা বললো না।মাহাদ এর দিকে এক মায়াভরা চোখে তাকিয়ে রইলো।সে কিছু জানতে চায়।আজ সে মাহাদ কে শুনতে চায়।
মাহাদ দৃঢ় গলায় বললো—

“মিস আম্বের সবাইকে ভালোবাসে।তাহলে তুমি একা কেন তাকে আটকে রাখবে।কাউকে ভালোবাসার মানে এই নয় তার উপর শুধু সেই ব্যক্তির ই অধিকার থাকবে।তোমার বাবাও তোমাকে ভালোবাসে।কিন্তু সে কী কখনো তোমাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে রেখেছে!নাতো।
তুমিও তোমার বাবাকে ভালোবাসো।তাই না!
ভালোবাসা অনেক রকম হয় ইমু।এই যে তুমি তোমার বাবাকে ভালোবাসো,এটা হলো বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা।তোমার বাবা তোমাকে ভালোবাসে এটা হলো সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসা।মিস আম্বের কেও তোমার বাবা ভালোবাসে।তাই বলে কী তোমার প্রতি তার ভালোবাসা কমে গেছে!নাহ।বরং বেড়েছে।মিস আম্বের ও তোমাকে ভালোবাসে।সব ভালোবাসা এক হয় না।ভালোবাসারও রকম ফের হয়।
তুমি এখন ছোট।মিস আম্বের তোমাকে আর ভাইয়ের মতো ভালোবাসে।কিন্তু আমি জানি তুমি তাকে নিয়ে অন্য কিছু ভাবো।”

ইমু মাথা নিচু করে ফেললো।সে আর চোখ তুলে তাকালো না।মাহাদ স্মিত হাসলো।
নরম গলায় বললো—

“কাউকে ভালো লাগা দোষের কিছু নয় ইমু।ভালো তো যে কাউকেই লাগতে পারে।কিন্তু তার সঠিক সময় আর সঠিক মানুষের প্রয়োজন।
মিস আম্বের তোমার থেকে বয়সে বড়।এখন হয়তো তাকে তোমার ভালো লাগে।কিন্তু কিছুদিন পর যখন তার চুল ঝড়ে যাবে,চামড়া কুচকে যাবে,দাঁত পড়ে তখন তাকে তোমার ভালো লাগবে?
আমার তো একদম ই লাগবে না।তোমার বয়সে প্রতিনিয়ত পছন্দের পরিবর্তন হয়।এই যে বাবার সাথে দোকানে গিয়ে একটা কলম কিনতেও কতো দ্বিধাগ্রস্ত হতে হয়!কোনটা ছেড়ে কোনটা নিবো।ভালো না হলে আবার বদলে নিবো।কিন্তু মানুষ তো বদলানো যায় না ইমু।আর তোমার সে বয়স হয়নি যে জীবনের কঠিন বাস্তবতা তুমি উপলব্ধি করতে পারবে।আর একজন সঠিক সঙ্গি খুঁজে নেওয়ার মতো বয়স তোমার হয়নি।আগে বড় হও,লেখাপড়া শেষ করো।একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ হয়ে দেখো এইরকম হাজারো কেশবালা তোমার আশেপাশে থাকবে।তখন যাকে ইচ্ছে পছন্দ করে নিও।এখন পড়ালেখায় মনোযোগ দাও।
আর তোমার কেশবালা এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাচ্ছে না।আমি তাকে যেতে দিবো না।সো রিল্যাক্স।
চলি আমি।টেক কেয়ার।”

মাহাদ যাওয়ার পরও ইমু ধুম ধরে বসে থাকে।সত্যিই তো।তার এইসব কথা কেশবালা জানলে কী হবে!
কিন্তু!!!
,
,
নিজের ঘরে বিছানায় এক পা তুলে তাতে চিবুক রেখে মুখ গোমড়া করে বসে আছে আম্বের।ঘরে ঢুকেই আম্বের এর পাশেই মাথার নিচে দুই হাত দিয়ে শুয়ে পড়ে মাহাদ।গাঢ় গলায় মাহাদ প্রশ্ন করলো—

“কী ভাবছেন মিস সুগন্ধি !

আম্বের নিরাশ গলায় বললো—

“ইমু আমাকে নিয়ে এমনভাবে আমি ভাবতেও পারিনি।”

মাহাদ অধর কোণে হাসে।উঠে আম্বের এর মুখের সামনে এসে আশ্বাসের সুরে বললো–

“আপনাকে এইসব নিয়ে ভাবতে হবে না।রিল্যাক্স।ইমুর বয়সের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আম্বের মাহাদ এর দিকে সমাহিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।মাহাদ স্মিত হেসে স্নিগ্ধ গলায় বললো—

“এভাবে তাকান কেন!
প্রেমে পড়ে যাবেন তো।”

হেসে উঠে মাহাদ।আম্বের তীর্যক গলায় বললো–

“কোথায় ছিলেন কাল রাতে আপনি?

“শুট ছিলো।”

“মিথ্যে বলছেন।
তাহলে আপনার শরীরে মেয়েদের পারফিউম এর ঘ্রাণ কেন?

মাহাদ বিগলিত হাসে।ধীর গলায় বললো—

“নায়িকা ইপ্তিহা কে চিনেন।নবাগতা।একটা ফিল্ম ই করেছিলাম।কাল ডিনারের জন্য ইনভাইট করেছিলো।কিন্তু আমি তো ডিনার করে ফেলেছি।আর আপনি রাতে ঘুমিয়েও পড়লেন।আই ভাবলাম শুধু শুধু টাইম ওয়েস্ট করে কী লাভ!
চলে গেলাম তার বাসায়।”

মাহাদ আম্বের এর আরেকটু কাছ ঘেঁষে বললো–

“মেয়েটা কিন্তু ডেম হট।তাই মনেই ছিলো না।রোমান্স শুরু করার আগে শার্ট খুলতেই ভুলে গেছি।”

মাহাদ নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ইপ্তিহার বাসার আনাচে কানাচে কী আছে তার বর্ণনা দিতে লাগলো।আম্বের এর চোখ ভরে আসে।গলার স্বর আটকে আসে।বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়।ভীষন কষ্ট হচ্ছে শ্বাস নিতে।এক মুহূর্তের জন্য সে ভেবেছিলো মাহাদ সত্যিই তাকে ভালোবাসে।কিন্তু সে ভুলেই গিয়োছিলো যে আকাশের চাঁদ কে মাটিতে পা রেখেই দেখতে হয়।তাকে ছোঁয়ার কথা কল্পনাতেও আনতে হয় না।আম্বের এর কান্নাগুলো যেনো তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়তে চায়।কিন্তু আম্বের তাদের সেই অধিকার দিবে না।নিজেকে যথাসম্ভব দৃঢ় রেখে আম্বের জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

আলগোছে আম্বের এর কানে মোবাইল ধরে মাহাদ।চমকে উঠে আম্বের।ওপাশ থেকে মোটা কাঠখোট্টা গলায় একজন পুরুশের ভারী গলার আওয়াজ শুনতে পায় আম্বের,বলছে—

“কী হে নায়ক সাহেব!
একটু আগেই তো গেলেন।তা আমার প্রস্তাব টা মানা যায় না!পেমেন্ট না হয়….।

লোকটার কথা শেষ হওয়ার আগেই কল ডিসকানেক্ট করে দেয় মাহাদ।আম্বের কাতর চোখে তাকিয়ে রইলো।মাহাদ মৃদু হেসে বললো–

“এখন বুঝলেন কোথায় ছিলাম আমি!

আম্বের কপট অভিমানের সুরে বললো–

“তাহলে মিথ্যে বললেন কেন?

“আপনি আমাকে সন্দেহ করেন?

আম্বের ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেললো।গাঢ় গলায় বললো—

“সন্দেহের কিছু নেই।আপনি একজন সেলেব্রেটি। আপনার কাছে এইসব সামান্য ব্যাপার।কিন্তু….।

আম্বের এর কথা শেষ হওয়ার আগেই মাহাদ বিগলিত গলায় বললো—

“সেলেব্রেটি বলে কী আমাদের কোনো নিজস্ব স্বকীয়তা নেই,ভালো লাগা নেই না কী ভালোবাসা নেই!

আম্বের গোল গোল করে তাকায় মাহাদ এর দিকে।মাহাদ ঝরা হাসে।স্বাভাবিক গলায় প্রশ্ন করলো–

“আপনার বাবা কোথায়?

আম্বের নির্বিকার গলায় বললো–

“নেই।বাইরে গেছে।”

“তাকে আসলে আমার সাথে দেখা করতে বলবেন।”

আম্বের সন্দিহান গলায় প্রশ্ন করলো–

“কেন?

“কথা আছে তার সাথে আমার।আপনাকে বলা যাবে না।”

আম্বের দুষ্টুমির ছলে বললো—

“তাহলে আমিও বাবা কে বলবো না।”

“একদম খেয়ে ফেলবো আপনাকে।”

আম্বের ভেঙচি কাটে।মাহাদ দুর্বোধ্য হাসলো।স্মিত গলায় বললো—

“প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে আমার। শাওয়ার নিয়ে ঘুমাবো।আপনি রান্না হলে আমাকে ডেকে দিবেন।আসি প্রজাপতি।”

মাহাদ ঘর থেকে বের হতে গেলে তার চোখ আটকে আম্বের এর ছোট্ট ড্রেসিং টেবিলে।কালো রঙের একটা গ্লাসের ফ্রেমে পাঁচ কী ছয় বছরের একটা গলুমলু বাচ্চার ছবি।
মাহাদ ধীর পায়ে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে ফটো ফ্রেমটা হাতে নেয়।হা হা করে হেসে উঠে মাহাদ।ফিচেল গলায় বললো—

“এতো দেখি ছোটখাটো এক হাতির বাচ্চা।”

আম্বের ব্যস্ত পায়ে এসে ছোঁ মেরে ছবিটা নিয়ে নেয় মাহাদ এর হাত থেকে।মাহাদ এখনো উচ্চ স্বরে হাসতে থাকলো।আম্বের নরম গলায় হালকা রাগমিশ্রন করে বললো–

“এখানে হাসার কী আছে!

“এইটা আপনার ছবি?

“হ্যাঁ।তো?

“কোন গুদামের চাল খেতেন আপনি?

মাহাদ আবারো ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠে।আম্বের এর ইচ্ছে হচ্ছে একটা ঘুষি মেরে এই ফিল্মস্টার এর নাকটা ফাটিয়ে দেয়।ছোট বেলায় সবাই একটু গলুমলু থাকে।ও না হয় একটু বেশিই ছিলো তো এখানে হাসার কী!অসামাজিক লোক!
আম্বের তীক্ষ্ম গলায় বললো–

“আমার বাবার টা খেতাম।তাতে আপনার কী?

মাহাদ চট করে বললো–

“কোন বাবার!

আম্বের ধীর গলায় বললো—

“মানে!

মাহাদ সরস গলায় বললো–

“মানে আপনার বাবার না পাগলা বাবার।যেই তুলতুলে মাংস শরীরে বানিয়েছিলেন সাধারণ চালের ভাতে তো এমন হওয়ার কথা না।”

হা হা হা।মাহাদ আবার হাসে।আম্বের একদম চুপসে যায়।হতাশ গলায় ঠোঁট গুঁজ করে বললো—

“আমি না হয় একটু মোটু ছিলাম তাই বলে আপনি আমাকে অপমান করবেন!

মাহাদ আম্বের কে একটানে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।নাকে নাক ঘষে বললো–

“অপমান করবো কেন!
গলুমলু প্রজাপতি।ভাগ্যিস এখন আপনি তেমন নেই।তাহলে তো পুরো ছোটখাটো হাতি মনে হতো।”

মাহাদ স্বশব্দে আবার হাসা শুরু করে।হাসতে হাসতে তার চোখ পানি এসে জমা পরে।মাহাদ হাত নাড়িয়ে নিজেকেই শান্ত হওয়ার আশ্বাস দেয়।বড় বড় শ্বাস টেনে শান্ত হয় মাহাদ।মাহাদ তাকিয়ে দেখে আম্বের মাথা নিচু করে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মাহাদ আনমনেই হাসে।এই মেয়েটা কেন তার জীবনে এলো!আগলে রাখতে পারবে তো সে তার ভালোবাসার সুগন্ধি কে!তার অন্ধকার অতীত কী ছোঁয়া পাবে তার রঙিন প্রজাপতির।নাকি তার আগেই সব শেষ হয়ে যাবে!

মাহাদ আচমকা আম্বের কে আবার টেনে নিয়ে ওর অধরে নিজেকে সঁপে দেয়।মাহাদ এর এই আচমকা অত্যাচারে আম্বের যতটা ভীতিগ্রস্ত তারচেয়ে তার হৃদয়ের ভালোলাগা আকাশ ছোঁয়া।

মাহাদ আম্বের এর অধর থেকে ওষ্ঠ সরিয়ে তার চুলে ডোবায়।তারপর ঘাড়ে।অনেকদিন তার সুগন্ধি প্রজাপতির সুগন্ধ নেওয়া হয় না মাহাদ এর।আম্বের এর শরীর থেকে এক সুদীর্ঘ গাঢ় নিঃশ্বাস টেনে নেয় মাহাদ।
আম্বের উদ্ভাসিত চোখে মাহাদ এর কর্মকান্ড দেখছে।মাঝে মাঝে আম্বের এর কাছে মাহাদ কে পাগল মনে হয়।কেমন অদ্ভুত আচরণ করে মানুষটা।

মানুষের শরীরে এতো ঘ্রাণ হয় নাকি!
হয়তো।এই যে ক্রন্দনরত শিশু যখন মায়ের আঁচলের খোঁজ পায় তখন তার কান্না থেমে যায়।কারণ সেখানে সে মা মা গন্ধ পায়।ঘামে ভিজে যাওয়া বাবার গায়েও সন্তান বাবা বাবা গন্ধ পায়।সব মানুষেরই শরীরেই একটা আলাদা গন্ধ থাকে।অনেক সময় সেই গন্ধেই তার অতি আপন,অতি প্রিয় মানুষ গুলো হাজার লোকের ভীড়ে সেই কাঙ্কিত মানুষটিকে খুঁজে পায়।

কিন্তু মাহাদ!সে কিসের গন্ধ পায়!
আম্বের বিক্ষিপ্তচিত্তে ভাবে,সে কি আসলেই তার ফিল্মস্টারের ভালোবাসার সুগন্ধি !!

নিস্তব্ধ পরিবেশে ঝংকার তুলে মাহাদ এর মিষ্টি পুরুষালী কন্ঠ।মাহাদ ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো—

“বিষন্ন মন আজ ধরেছে বায়না
অবাধ্য অনুভূতিরা এক স্বচ্ছ আয়না,
যতদূর চোখ যায় ধূ ধূ মরুভূমি
সবখানে অদ্ভুত স্বপ্নময় তুমি।”

——-তানভি

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here