বাঁধন ছেঁড়া প্রেম পর্বঃ১০

0
653

#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম
#যারিন_তাসনিম
#পর্ব_১০

নিয়াজ চুপ করে রইলো। তাশরিক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“তুই আমাকে একবারও বললি না। আসলে তুই আমাকে আপন করে নিতে পারিস নি।”
নিয়াজ চুপ করে রইলো। তাশরিক আবার বলল,
“যাকে দেখে তোর মনে হয়েছিলো, পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য একত্র করে আল্লাহ তায়ালা ওকে বানিয়েছেন; সে রাহা-ই। আমার প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিলো। হঠাৎ করে চলে আসা, রাহার তোকে দেখে অস্থিরতা, তোর নাম শুনে রাহা আর সিদ্ধীর চমকে উঠা, সবকিছুই আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলো, রাহাই সেই মেয়ে, যাকে তুই ছেড়ে দিয়েও এতটা বছর ভালোবেসেছিস।
তুই ঠিকই বলেছিস, আল্লাহ আগে থেকেই জীবনসঙ্গী নির্ধারণ করে রাখে। এরপর ভাগ্য দু’জনকে মিলিয়ে দেয়। যেমনটা তোদের দু’জনকে আবার মিলালো। কি অদ্ভুত, আল্লাহ কীভাবে তোদের দু’জনকে আবার দেখা করিয়ে দিলো।”
নিয়াজ এবার জবাবে বলল,
“ভুল বলছিস। আমাদের মিলন হবে না। আমি রাহাকে ভালোবাসলেও রাহা আমাকে আর ভালোবাসে না।”
তাশরিকের উত্তরের আশায় না থেকে নিয়াজ আবার বলল,
“আমার দুটো জ্যাকেট কিনতে হবে। এখানেই যেই শীত, খুলনায় নিশ্চয়ই আরো শীত পড়বে।”
দু’জন বসুন্ধরায় গেল। নিয়াজ দুটো জ্যাকেট কিনলো। এরপর দু’জন টি শার্টের দোকানে গেল। তাশরিক দুটো টি শার্ট কিনলো। দোকান থেকে বের হওয়ার সময় দেখলো, অহনা একটা মেয়ের হাত ধরে তাদের দিকেই আসছে। মুখে এক বিরাট হাসি। নিয়াজকে দেখে এই খুশি প্রকাশ করলো। তাশরিক, নিয়াজ দু’জনেই দাঁড়িয়ে রইলো। অহনা এসেই বলল,
“হাই, নিয়াজ। তোমরা এখানে কি করছো?”
নিয়াজ স্বাভাবিকভাবে জবাব দিল,
“খুলনা যাবো তো, তাই কিছু কেনাকাটা করতে আসলাম।”
অহনা হাসলো। পাশে থাকা মেয়েটিকে বলল,
“শোন ইশিতা, এটা হচ্ছে তোর হবু দুলাভাই। আর এইযে তাশরিক ভাইয়া। ওকে তো চিনিস ই।”
রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো তাশরিক। কিন্তু অহনার ফ্রেন্ড ইশিতার সামনে কিছু বলল না। অহনা আবার বলল,
“বাই দা ওয়ে, তুমি খুলনা কেন যাচ্ছো?”
নিয়াজের চেহারায় বিরক্তির ছাপ পড়লো। সবকিছু মেনে নেওয়া যায় না। সে যে অহনার হবু জামাই নয়, তা ইশিতাকে বুঝানোর জন্য বলল,
“আরে ছোট বোন, তোমার ভাইয়ার সাথেই যাচ্ছি। তুমি জানো না?”
অহনার ভ্রু কুচকে গেল। ইশিতা অবাক হয়ে অহনার দিকে তাকালো। বলল,
“তুই না বললি, তোর হবু জামাই। তাহলে তোকে ছোট বোন কেন ডাকছে?”
নিয়াজ হাসলো। সেই হাসি কেউই দেখতে পায় নি। নিয়াজ আবার বলল,
“আসলে ও সবাইকে দেখেই হবু জামাই, হবু জামাই করে। ও খুব ফানি।”
ইশিতা হা করে রইলো। অহনা অপমানে সেখান থেকে চলে গেল। ইশিতাও পিছু পিছু গেল। এতক্ষণ চাপিয়ে রাখা হাসি বের করলো নিয়াজ। কিছুক্ষণ হেসে তাশরিকের দিকে তাকিয়ে দেখলো, তার কপালের রগ রাগে দপদপ করছে। নিয়াজ বলল,
“কিরে, তোর বোনকে অপমান করেছি বলে রাগ করেছিস নাকি?”
বলেই আবার হাসলো। তাশরিক নিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল,
“লজ্জা হচ্ছে, আমার বোন এমন লুচু বলে।”
কথাটা বলেই তাশরিক চলে গেল। নিয়াজ, তাশরিক দুজনেই বাড়ি চলে গেল। অহনা নিজের রুমে ঢুকে হাতের ব্যাগ ছুড়ে ফেললো খাটে। চুপ করে বসে রইলো। ভাবতে থাকলো, এমন কি করা যায়, যার ফলে নিয়াজের মন অহনার জন্য ছটফট করে।
হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। দৌড়ে দরজা খুলে ঘর থেকে বের হয়। ডাইনিং রুমে তাশরিক পানি খাচ্ছিলো। অহনাকে দেখে রুমে চলে যায়। অহনা নিরল আক্তারের রুমে যায়। দেখে, তিনি রুমের শো পিস গুলো পরিষ্কার করছেন একটা নরম কাপড় দিয়ে। । অহনা ঘরে ঢুকে দাঁড়িয়ে থাকে। নিরল আক্তার অহনাকে একবার দেখে আবার পরিষ্কার করায় মনোযোগ দিয়ে বলে,
“কিছু বলবি?”
অসহায়ভাবে তাকিয়ে অহনা বলল,
“আম্মু আমিও খুলনা যাই?”
নিরল আক্তার অবাক হয়ে যান। যেই মেয়েকে হাজার অনুরোধ করেও খুলনা নেওয়া যায় না, সেই মেয়ে নিজ থেকে যেতে চাচ্ছে। নিরল আক্তার অহনার কাছে গিয়ে বলে,
“আর ইউ ওকে, মাই বেবি?”
“ইয়েস আম্মু, আই এম ওকে।”
নিরল আক্তার খুশি হলেন। কিন্তু বললেন,
“হঠাৎ কি কারণে যেতে চাচ্ছিস?”
লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে বলল,
“নিয়াজের জন্য।”
নিরল আক্তার অহনার গাল টিপে বললেন,
“দোয়া করি, তুই সফল হয়ে আয়।”
অহনা নিরল আক্তারকে জড়িয়ে ধরে।
নিরল আক্তার তার তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সবথেকে বেশি অহনাকেই আদর করেন। তার কোনো কথা ফেলেন না। মেয়ে যা করবে, তাতেই তিনি সায় দেন। আর ছেলে হিসেবে নিয়াজকেও তার বেশ পছন্দ। যদিও তিনি জানেন, তাশরিক নিয়াজকে তার ছোট বোনের লাইফ পার্টনার হিসেবে দেখতে নারাজ। তবে কেনো নারাজ, তা তিনি জানেন না।
নিরল আক্তার অহনাকে নিয়ে যাওয়ার কথা তাশরিককে বলতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে সে। অহনার উদ্দেশ্য বুঝতে এতটুকু সময় লাগে নি তাশরিকের। সে অহনাকে নিতে নিষেধ করে দেয়। কিন্তু নিরল আক্তার বলেন,
“অহনাকে নিতে তোর সমস্যা কোথায়?”
তাশরিকের মুখে রাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
“কি সমস্যা, তা তুমি ভালোভাবেই জানো আম্মু।”
সুযোগ পেয়ে নিরল আক্তারও কথা শুনিয়ে দেন,
“সব তো নিজের মতোই চলিস। গরিব ঘরের মেয়েকে নিয়ে আসছিস, কোনো বাধা দেই নাই আমি। আমার কথার তো গুরুত্ব নেই তোর কাছে। ঠিক আছে, তোর জীবন; তোর মতো করেই চল। তোর আব্বু মারা যাওয়ার পর থেকে আমার গুরুত্ব তোর কাছে ছিলো না। তোর না থাকলে নাই। আমার মেয়ে আমাকে তোর থেকে হাজার গুণ বেশি গুরুত্ব দেয়। আর তাই ওকে আমি সবথেকে বেশি ভালোবাসি। ওর জীবনে ঠিক কীভাবে চলবে, তা তুই বলে দিবি না। আমি বলবো। ও তোদের সাথে যাচ্ছে, এটাই শেষ কথা।”
কথাগুলো বলে তিনি তাশরিকের রুম থেকে বেরিয়ে যান। হঠাৎ কথাগুলো শুনে হতভম্ব হয়ে যায় তাশরিক। সবকিছু বুঝতেই তার চোখে জল চলে আসে। তার জীবনে সে যা যা করেছে, সবটাই তার মায়ের জন্য। তার মা’কে ভালো রাখার জন্য। এত এত পরিশ্রম, সব তো তার মায়ের জন্যই ছিলো। তবুও কীভাবে তার মা বলল, সে তার মা’কে গুরুত্ব দেয় না? বিয়ের মতো সিদ্ধান্ত তার মায়ের মতামতের বিপরীতে গিয়ে নেওয়া কী ভুল হচ্ছে?
এতকিছু ভাবতেই তার মাথা ঘুরতে শুরু করলো। সমস্যার সমাধানটা কি, তা সে বুঝে উঠতে পারছে না।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here