#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম
পর্ব:১৩
#যারিন_তাসনিম
তিনতলা বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো। তাশরিক নেমে হাত-পা একটু মোচড়ালো। এতক্ষণ গাড়ি চালানোর কারণে শরীর ব্যথা হয়ে আছে। সিদ্ধীও নামলো। রাহা অহনাকে দু-তিনবার ডাকার পর ঘুম ভাঙলো। মুখ বড় করে হা’ই তুলে গাড়ি থেকে নামলো। নেমে দেখলো, নিয়াজ লাগেজগুলো বের করছে। রাহা বাড়িটির দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। খুব পুরনো বাড়ি। কুয়াশা বাড়িটিকে ঘিরে ধরেছে। আশেপাশে বিশাল তালগাছ। সিদ্ধী রাহার পাশে এসে বলল,
“কীরে? ভয় লাগছে না?”
রাহা পুরো বাড়িটিতে চোখ বুলিয়ে বলল,
“কেমন গা ছমছমে পরিবেশ। কুয়াশার কারণে ভূতূড়ে লাগছে। কী নিস্তব্ধ! ভূত থাকতে পারে।”
নিয়াজ কাছে এসে বলল, “হ্যাঁ! ভূত চলে আসছে তো!”
রাহা কেঁপে উঠলো। নিস্তব্ধতার কারণে হঠাৎ নিয়াজের কণ্ঠ শুনে ভয় পেয়ে গেল। সিদ্ধী রাহার পিঠ চাপড়ে হাসতে থাকলো।
অহনাও জোরে জোরে হেসে বলল, “উফ, নিয়াজ! এত কিউট মেয়েকে কেউ ভয় দেখায়?”
অহনার কণ্ঠে নিয়াজের মুখের সামান্য হাসি মিলিয়ে গেল।
ফজরের আজান ভেসে আসলো। তাশরিক নিয়াজের থেকে কিছু লাগেজ নিল। জোরে জোরে “জসিম চাচা” বলে ডাক দিল। ভিতর থেকে বয়স্ক একজন পুরুষ বেরিয়ে এলো।লোকটি সিদ্ধী, রাহার দিকে একপলক তাকিয়ে বাহিরে এলো। তাশরিককে দেখেই বিশাল পরিসরে হাসলো। লাগেজগুলো হাতে নিয়ে বলল,
“আপনেরা আইসেন। দাদি তো নামাজে দাঁড়াইসে। আপনেগোরে দেখলে খুশিতে পাগল হইয়া যাইবো।”
তাশরিক জবাবে বলল,
“পাগল হওয়া লাগবে না, চাচা। এখন আপনি এগুলো ভিতরে নিয়ে যান। আমরা খুব ক্লান্ত। আর আমার তো গাড়ি চালিয়ে শরীর
ব্যথা হচ্ছে।”
“আইচ্ছা আসেন।”
বলেই জসিম ভিতরে ঢুকে গেল। জসিমের পিছে পিছে সবাই গেল।
ভিতরে ঢুকতেই বিশাল ড্রইং রুম। অহনা সোফায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়ল। তাশরিক দেখে নাক ছিটকালো। বাহির থেকে এসেই ড্রইংরুমে শুয়ে পড়া তার একদম পছন্দ নয়। তাশরিক গিয়ে বসলো। অহনা রিমোট নিলো। তাশরিক অহনার হাত থেকে রিমোট নিয়ে বলল,
“একদম এই ভোরবেলা টিভি ছাড়বি না। ”
অহনা মুখ ভেংগালো।
“বাহির থেকে এসে বকাবকি শুরু করিস না।”
একজন বৃদ্ধা নারীর কণ্ঠ শুনে সবাই সেদিকে তাকালো। অহনা লাফ দিয়ে উঠে সেই বৃদ্ধা নারীকে জড়িয়ে ধরলো। সিদ্ধী, রাহা দু’জন দু’জনের মুখের দিকে তাকালো। তাশরিক দ্রুত সিদ্ধীর পাশে এসে বলল,
“সিদ্ধী যাও! পা ধরে সালাম করো।”
সিদ্ধী অগ্নিচোখে তাশরিকের দিকে তাকিয়ে সেই বৃদ্ধা নারীর কাছে গেল। পা ধরে সালাম করলো। অহনা হেসে বলল,
“দাদি, এটা আমার হবু ভাবী।”
মুখে হাত বুলিয়ে রানী বেগম সিদ্ধীকে জড়িয়ে ধরলেন। আচমকা জড়িয়ে ধরায় সিদ্ধী অবাক হলো। রানী বেগম সিদ্ধীকে ছেড়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“বেশ দেখতে হয়েছে রে।”
রানী বেগম তাশরিকের দাদি, এতক্ষণে উপস্থিত সবাই বুঝে গেল। রানী বেগমের কথায় সিদ্ধীর সব কষ্ট উড়ে গেল। সেও হেসে বলল,
“আমার দাদি শাশুড়ীটাও বেশ দেখতে হয়েছে। ”
রাহা কপালে হাত দিলো। কেউ এসব বলে নাকি? নিয়াজ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। চোখের পলক দু’তিনবার ফেলে রানী বেগম বললেন,
“হ্যাঁ রে। দাদি শাশুড়ীও সুন্দরী, দাদি শাশুড়ীর নাত-বউও সুন্দরী। তাহলে আমার ছেলের নাতি-নাতনিও সুন্দর হবে। ”
সিদ্ধী হিসেব মিলানোর চেষ্টা করলো। কিছুক্ষণ ভেবে বুঝতে পারার পর হেসে দিলো। রানী বেগম নিয়াজ আর রাহাকে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাদের কাছে গেলেন৷ রাহা মুখে সালাম দিল। রানী বেগম জবাব না দিয়েই তাশরিকের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই দুটো ছেড়া-ছেড়ি কে রে?”
তাশরিক কাছে এসে বলল,
“ওমা, দাদি! তুমি নিয়াজকে ভুলে গেলে।”
রানী বেগম নিয়াজের দিকে তাকালো। নিয়াজ মাথা নিচু করে রইলো। রানী বেগম বিস্ময় ভঙ্গিতে বলল,
“এই ছেড়ার এমন গম্ভীর মুখ কবে হইলো?”
রাহা ফিক করে হেসে দিল। নিয়াজ রাহার দিকে তাকাতেই চুপ হয়ে গেলো। রাহার কাছে এসে রানী বেগম বললেন,
“আর এই সুন্দরী ছেড়িডা কে?”
“দাদি, ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।”
জবাবে সিদ্ধী বলল। রানী বেগম হাসলেন।
কাজের লোক জেসমিনকে ডেকে যার যার রুম দেখিয়ে দিতে বললেন। দু’তলার ডানপাশের কর্ণারে একটি রুম দেওয়া হলো সিদ্ধী আর রাহাকে। সেখানে একটি বেডে অনায়াসে তিনজন ঘুমানো যাবে। বেডের পাশেই একটা ছোট টেবিল। একপাশে কাঠের আলমারি। বেডটার ডানপাশে জানালা। যেখান থেকে দূর-দূরান্তের পুকুর দেখা যাচ্ছে। দূরের ঘরগুলো পিঁপড়ের মত ছোট দেখাচ্ছে। জানালার পাশে বসে রাহা তাকিয়ে রইলো। নিচের স্টিলের গেটটার দিকে একটা লম্বা ছেলের পিছন পাশ দেখে নড়েচড়ে বসলো। ছেলেটা নিয়াজ বাদে কেউ হবে না। কিন্তু এখন কোথায় যাচ্ছে?
সিদ্ধী ফ্রেশ হয়ে এসে কম্বল মুড়ি দিয়ে বলল,
“কীরে ঘুমাবি না?”
কম্বলের দিকে তাকিয়ে রাহা বলল,
“হ্যাঁ। ঘুমা তুই! আসছি আমি৷”
কথাটা বলেই দৌড়ে বেরিয়ে গেল। বের হওয়ার মুহুর্তে অহনাকেও বের হতে দেখলো। অহনা গুটিসুটি মেরে পা টিপে টিপে নিয়াজের পিছে যাচ্ছে। তার পিছে রাহা৷
ইটের রাস্তার একপাশে ছোট ছোট ঘর আছে। ঘরের সামনে বাঁশের ব্রিজ। এখান দিয়ে পার হতে গেলে ভেঙে যায় না? প্রশ্নটা নিয়াজের মনে আসলো। আরেক পাশে ক্ষেত আছে। অহনা দৌঁড়ে গিয়ে নিয়াজের পাশে হাঁটা শুরু করলো। নিয়াজ প্রথমে অবাক হলেও পরে স্বাভাবিক হলো। অস্বাভাবিকের কিছু নেই। অহনা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের মুখের কাছে এনে “উহম,উহম” করলো। নিয়াজ একবার তাকিয়ে আবার সামনে তাকালো। অহনা নিয়াজের সামনে এসে দাঁড়ালো। নিয়াজও দাঁড়িয়ে রইলো। রাহা দ্রুত একটা গাছের পিছে গিয়ে লুকালো।
“আর কতদিন অপেক্ষা করাবে?”
নিয়াজ চুপ করে রইলো। অহনা আবার বলল,
“প্লিজ বলো না।”
নিয়াজের খুব রাগ হচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে একটু মন ফ্রেশ করার জন্য বেরিয়েছিলো, এখন তার উল্টোটা হচ্ছে। অহনা নিয়াজের হাতে হাত রেখে বলল,
“আমার মধ্যে কোনো কমতি আছে?”
রাহা কোনো কথা শুনতে পাচ্ছে না। কিন্তু ভিতরে কোথাও খুব জ্বলছে। সহ্য হচ্ছে না।
নিয়াজ আস্তে করে হাতটা নিজের হাতের মধ্যে এনে বলল,
“বাচ্চা মানুষ তুমি! জীবনে আরো অনেক ছেলে আসবে। এভাবে আবেগটাকে গুরুত্ব দিও না। দেখো, নিজেই এক সময় আমাকে ভুলে যাবে। তাই অপেক্ষা করো ভালো কিছুর।”
রাহা দৌড়ে বাড়ি ফিরলো। রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে হাত দিয়ে মুখ চেপে ফুঁপিয়ে কাঁদলো। কার জন্য এতদিন অপেক্ষা করেছিলো? সে তো এখন অন্য কারোর। তার সব অপেক্ষা বিফলে গিয়েছে।
চলবে,
আগামীকাল শুক্রবার। তাই গল্প দিবো না। ☺শুক্রবার বাদে ️সপ্তাহে ছয়দিনই গল্প দেওয়ার চেষ্টা করবো, ইন শা আল্লাহ। 🧡