বাঁধন ছেঁড়া প্রেম পর্বঃ২

0
1059

#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম
#যারিন_তাসনিম
#পর্ব:০২

বেল বাজলো। রাহা কথা এড়িয়ে বললো, “মা এসেছে বোধহয়। দরজাটা খোল। আর রেশমি আন্টিকে বলিস আমার খাবারটা ঘরে দিয়ে যেতে। আমি ঘুমাবো”

রাব্বি মন খারাপ করে রুম থেকে চলে গেল। রাহা দ্রুত পায়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজা লাগালো।
দরজা বন্ধ করার আওয়াজে রাব্বি একবার পিছনে ফিরলো। সে জানে, তার বোন এখন কাঁদতে বসবে।

শিউলি আমিন বাড়িতে ঢুকেই রাব্বিকে জিজ্ঞেস করলো, “রাহা খেয়েছে?”

রাব্বি মন খারাপ করে বললো, “না, আম্মু”
শিউলি আমিন ছেলের দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, “কী হয়েছে?”
রাব্বি স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বললো, “কিছু না। আম্মু তুমি ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হও। আর আব্বু ফোন করে বলেছে, আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে। ”
শিউলি আমিন নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে বললো, “ওইটা তোর আব্বু প্রায়শই বলে। তার কাছে রাত ৩ টা বাজে আসা মানেই তাড়াতাড়ি আসা। রেশমিকে বল, আমার খাবার রেডি করতে।”
বলতে বলতে শিউলি আমিন ঘরে পৌঁছে গেল।
রাব্বি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রান্নাঘরে গেল। দেখলো, রেশমি হাড়ি-পাতিল ধুচ্ছে।
রাব্বি আস্তে করে বললো, “রেশমি আন্টি, আম্মু বলেছে, খাবার রেডি করতে। আপু বলেছে, আপুর খাবার ঘরে দিয়ে আসতে।”
রেশমি কালো বর্ণের হলেও মুখে অন্যরকম মায়া আছে। চেহারাটা সবসময় হাসি হাসি থাকে। বয়স ২৭। এ বাড়িতে ৮ বছর ধরে কাজ করছে, যদিও কেউ ওকে কাজের লোক মনে করে না, বাড়ির মেয়ের মতই দেখে। আয়োজন করে তার বিয়েও দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ভাগ্য তার এখানেই ছিল। তাই বিয়েটা টিকে নি।

রেশমি বিশাল এক হাসি দিয়ে রাব্বির দিকে তাকিয়ে বললো, “ঠিক আসে,বাপ। আমি সব করতেসি। ”
কিন্তু রাব্বির মন খারাপ দেখে রেশমির বিশাল হাসি মুহূর্তেই মুছে গেল।
কৌতূহলবশত জিজ্ঞেস করলো, “কি হইসে, বাপ? মন খারাপ কেন?”
রাব্বি করুণার দৃষ্টিতে রেশমির দিকে তাকালো। সে চাহনিতেই রেশমি ঘটনা বুঝে গেল।
প্লেটে খাবার তুলতে তুলতে বললো, “কেন গেসিলি আবার ওসব প্রশ্ন করতে?”
রাব্বি উত্তরে বললো, “জানতে ইচ্ছে করে না বুঝি? তুমি জানো রেশমি আন্টি, এই বয়সে অজানাকে জানার তীব্র কৌতূহল থাকে?”
রেশমি খাবার নিয়ে ডাইনিং রুমে গেল। রাব্বি পিছনে যেতে যেতে বললো, ” আপুর টপ সিক্রেট আমি জানি, অথচ এটাই জানলাম না যে আপুর ব্রে……”
দরজা খোলার আওয়াজে রাব্বি চুপ হয়ে গেল। শিউলি আমিন এদিকেই আসছেন, খেতে বসলেন। রাব্বি নিজের রুমে চলে গেল।
রেশমি রাহার খাবার নিয়ে রাহার রুমে গিয়ে দেখলো, দরজা লাগানো। সে আস্তে করে কড়া নাড়লো। রাহা এসে দরজা খুললো। রেশমি ঘরে ঢুকে টেবিলের উপর খাবার রাখলো। রাহা ল্যাপটপে কিছু একটা করছিলো, রেশমি রাহার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। রাহা রেশমির দিকে তাকিয়ে বললো, “কিছু বলবে রেশমি আন্টি?”
রেশমি আমতা আমতা করে বললো,
“না, মা..মানে”
রাহার মনে সন্দেহ জাগলো। বললো,
“তোতলাচ্ছো কেন? যা বলবে, সরাসরি বলো। ”
রেশমি বুকে হাত দিয়ে সাহস এনে বললো,
“রাব্বি বাবার দেখলাম, মন খারাপ। ওর কী হইসে, জানো?”
রাহা ল্যাপটপের দিকে মনোযোগ দিয়ে বললো,
“ওর কথা বাদ দাও। আর কিছু বলবে?”
রেশমি বুঝতে পারলো, রাহাকে দিয়ে কিছু বলানো যাবে না। তাই সে বললো,
“না, আর কিছু বলবো না। কিন্তু তোমার চোখ-মুখ ফোলা কেনো?”
রাহা ঝটপট করে হাত দিয়ে মুখ ঘষলো। বললো,
“ঘুম পাচ্ছে, তাই বোধহয়।”

রেশমি জানে, রাহা এতক্ষণ খুব কেঁদেছে। কেনো যে রাব্বি ওইসব প্রশ্ন করে মেয়েটাকে কাঁদায়, সেটা তার মাথায় ঢুকে না।

রেশমি কোনো জবাব না দিয়ে ঘর থেকে চলে এলো।

“আপু, আপু। এটা কে?”
রাহা দ্রুত মোবাইল লুকিয়ে বললো, “কেউ না-তো। আমি কার্টুন দেখছিলাম।”
রাব্বি রাহার হাত থেকে মোবাইল টানাটানি শুরু করলো। রাহা আন্দাজে বাটন চেপে ফোন কেটে দিল। এরপর মোবাইল টা রাব্বির হাতে দিল, কিন্তু ততক্ষণে মোবাইল লক হয়ে গিয়েছিল।
রাব্বি রাগী কন্ঠে বললো, “না বললে আমি আম্মুকে বলে দিব।”
রাহা কাঁপা গলায় বললো, “কী বলবি?”

রাব্বি দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো, “ওইযে, তুমি একটা ছেলের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছিলে।”
রাহা রাব্বির মুখে হাত দিয়ে বললো, “শয়তান ছেলে, আস্তে বল। কোনো ছেলের সাথে কথা বলছিলাম না। ইউটিউবে কার্টুন দেখছিলাম”
রাব্বি হাত সরিয়ে বললো, “মিথ্যা বলবা না আপু।”
রাহা মাথা চুলকিয়ে বললো, “আসলে ওটা একটা ভাইয়া। বুঝছো? আর কিছুই না।”
রাব্বি চোখ ছোট করে বললো, “কেমন ভাইয়া?”
রাহা জোরপূর্বক হেসে বললো, “ভাইয়া আবার কেমন হয়? যা ভাগ”

রাব্বি আর জানতে চাইলো না। কারণ তার খেলার সময় হয়েছে। ছাদে চলে গেলো।

রাহা আবার মোবাইল বের করে ভিডিও কল দিলো। ওপাশ থেকে বললো,
“শালা আসছিলো, তাই না?”
রাহা লজ্জা পেয়ে বললো, “হুম, সন্দেহ করছে।”
অপরপক্ষ জোরে হেসে বললো, “ওকে বলেই দাও না আমাদের ব্যাপার টা।”
রাহা চোখ বড় করে বললো, “পাগল তুমি? পরে কথায় কথায় ব্ল্যাকমেইল করবে। ওর কথা শুনতে বাধ্য করাবে।”

ওপাশ থেকে আর আওয়াজ আসলো না। রাহা দেখলো, সে খুব মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে। কী এত কাজ করে? জানতে খুব ইচ্ছে করে রাহার। কিন্তু কখনো জিজ্ঞেস করে না। রাহা মন খারাপ করে বললো,
“আচ্ছা তুমি কাজ করো। আমি যাই।”
ওপাশে দ্রুত ল্যাপটপ বন্ধ করে মোবাইলের দিকে
তাকিয়ে বললো, “সরি, এবার বলো, কি বলবা?”
রাহা চুপ করে রইলো। ওপাশে আবার বললো,
“বলো।”
রাহা কিঞ্চিৎ হেসে বললো, “না, কিছু না। তুমি কাজ করো।”
ওপাশ থেকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
“বলবা, মেজাজ খারাপ কইরো না। ”
রাহা তাড়াতাড়ি বললো, “না, সত্যি কিছু না।”
ওপাশে নরম কন্ঠে বললো, “তাহলে মুখ ভার করে রেখেছো কেন?”
রাহা ভয় পেয়েও সত্যিটা বললো, “তুমি তো আর আমাকে দেখো না, ল্যাপটপে কাজ করো।”
ল্যাপটপের দিকে আবার তাকিয়ে জবাব দিলো,
“আসলে আব্বুর কাজ করছি।”
রাহা ধীর কন্ঠে বললো,
“ওহ।”
হঠাৎ ফোনের রিংটোনের আওয়াজ পেলো। না, রাহার ফোনে ফোন আসে নি।
ওপাশ থেকে দ্রুত বললো,
“শুনো, ফুপি ফোন করেছে। কাটলাম।”
রাহা কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেল। এই ছেলেটা কোনোদিন ভালোভাবে সময় দিতে পারে না। কষ্ট হলেও মানিয়ে নেয় সে। কতকিছু পেটের মধ্যে ঘুরপাক খায় বলার জন্য। কিন্তু দিনশেষে ছেলেটা বলে, “সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে, তাই ঘুমায় গেলাম। ”
নিজের খারাপ লাগাটা রাহা বুঝতে দেয় না, কিন্তু বিপরীত পক্ষ ঠিকই বুঝে। বিপরীত পক্ষের কিছু করার থাকে না।

———————————————————————————————————
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here