বাঁধন ছেঁড়া প্রেম পর্বঃ৪

0
867

#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম
#পর্ব:০৪
#যারিন_তাসনিম

রাহা দরজা খুলে খাটে এসে বসলো। পিছনে রাব্বিও এসে রাহার সাথে বসলো। রাব্বি বললো,
“আপু, তোমার মোবাইলটা একটু দিবা?”
রাহা টেবিল থেকে মোবাইলটা নিয়ে রাব্বিকে দিলো। রাব্বি অবাক হয়ে বললো,
“ওমা, আগে তো আমাকে চাওয়ার সাথে সাথে দিতে না। কি কি যেন করতে। এরপর দিতে।”
রাহা রাব্বির দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোর মোবাইল না লাগলে ফেরত দিয়ে দে।”
রাব্বি জোরপূর্বক হেসে বললো,
“রাগ করো কেনো? আচ্ছা আমি যাই।”
রাব্বি মোবাইল নিয়ে চলে গেলো। নিজের রুমে গিয়ে রাব্বি দরজা বন্ধ করে দিলো। রাহা মোবাইলে কোনো লক রাখে না। তাই রাব্বি সহজেই মোবাইল খুলে রাহার ফটোসে ঢুকলো। একটু দ্বিধাবোধ করলো। তার বোন তাকে বিশ্বাস করে ফোন দিয়েছে। কিন্তু সে বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারলো না। তারও কিছু করার নেই। সবকিছু জানতে হলে এতটুকু করতেই হবে। ফটোসে ৪০০০+ ছবি। বেশিরভাগই রাহা আর সিদ্ধীর। না হয় রাহা, সিদ্ধী আর চন্দ্রিমার। স্ক্রল করতে করতে নিচে যেতে থাকলো। পরে কি যেন ভেবে এলবাম চেক করলো। এলবামে যেতেই একটা এলবামে রাব্বির চোখ আটকে গেলো। এলবামের নাম “মাই স্মাইল মেকার” দিয়ে সেভ করা। ওখানে ঢুকেই দেখলো, ১০০০ টা ছবি। সবগুলো ছবি দেখেই রাব্বি বুঝলো, এগুলো অনেক আগের। রাহাকে একদম বাচ্চা বাচ্চা দেখাচ্ছে। আর প্রত্যেকটা ছবি ভিডিও কলে তোলা, একটা ছেলের সাথে। কিছু ছবিও আছে, যেগুলো ছেলেটার সাথে সরাসরি তোলা। হ্যাঁ, রাব্বি পেয়ে গেছে। একেই খুঁজছিলো এতদিন। কিন্তু তার নাম, পরিচয় কিছুই জানে না রাব্বি। চটজলদি করে কিছু ছবি রাহার আইডি থেকে নিজের আইডিতে পাঠিয়ে দিলো। পিকগুলো ডেলিভারড হওয়ার সাথে সাথে সব মেসেজ ডিলিট করে দিলো।
এরপর মোবাইল নিয়ে রাহার রুমে গিয়ে রাহাকে ফেরত দিল। রাহা জিজ্ঞেস করলো,
“ফোন কেনো নিয়েছিলি?”
রাব্বি আমতা আমতা করে জবাবে বললো,
“আপু গুগলে একটা জিনিস দেখার জন্য। ”
রাহা আর কিছু বললো না। রাব্বি আরও প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার ভয়ে দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে গেল।

পরেরদিন রাহা সিদ্ধীর দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছালো। সবার মতো সিদ্ধীও তার হবু স্বামীর সাথে রেস্টুরেন্টেই দেখা করবে। রাহা ঢুকেই দেখলো, সিদ্ধী একপাশের একটা টেবিলে বসে আছে। রেস্টুরেন্টের প্রত্যেকটা টেবিলের মাঝে একটা গোল আকৃতির গ্লাস রয়েছে। গ্লাসের মধ্যে একটা ছোট মোমবাতি জ্বালানো। সেটার দিকেই সিদ্ধী তাকিয়ে রয়েছে। রাহা গিয়ে সিদ্ধীর পাশে বসলো। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সিদ্ধী পাশে তাকিয়ে দেখলো, রাহা এসেছে। মুচকি হাসলো।
রাহা চারদিকে আরেকবার চোখ বুলিয়ে বললো,
“খুব সুন্দর তো!”
সিদ্ধী দাঁত বের করে বললো,
“তোর ভাইয়াই এই রেস্টুরেন্টের খোঁজ দিয়েছে।”
রাহা সিদ্ধীর মাথায় হালকা বারি মেরে বললো,
“তুই শুধু শুধু আমায় কেনো ডেকেছিস? ভাইয়া তোর জন্য এত সুন্দর একটা জায়গা চুজ করেছে। সেখানে তুই আমাকে নিয়ে এসেছিস।”
সিদ্ধী মুখ গোমড়া করে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“তোর মাথা। তোর ভাইয়াও তার বন্ধুকে নিয়ে আসবে।”
“বাহ! দুই আনরোমান্টিক মানুষ কাপল হতে যাচ্ছে।”
সিদ্ধী ভেংচি কেটে বললো, “বাদ দে। তুই কি হসপিটাল থেকে এসেছিস?”
“হ্যাঁ। ২ ঘন্টা সময় নিয়ে এসেছি”
“হুহ! ২ ঘন্টাও আমি ওইটার সাথে কথা বলবো না। আধা ঘন্টা লাগবে।”
“দেখা যাবে৷”

কিছুক্ষণ পর একটা ছেলে টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো। রাহা দেখেই বুঝে গেলো, এই ব্যক্তিই হচ্ছেন সিদ্ধীর হবু স্বামী। রাহা, সিদ্ধী দুজনেই দাঁড়িয়ে গেলো। সিদ্ধীর চোখের পলক যেনো পড়ছেই না। কালো রঙের একটা পাঞ্জাবি পড়ে এসেছে তাশরিক। আর কলারটা সাদা রঙের। তাশরিকের ফর্সা বর্ণের উপর কালো রঙটা বেশ মানিয়েছে। সিদ্ধী ভেবে কুল পায় না, তার মতো শ্যামলা বর্ণের মেয়েকে তাশরিক কীভাবে পছন্দ করেছে। রাহা সালাম দিলো। সিদ্ধী হুশে আসলো। লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। তাশরিককে সালাম দেওয়ার কি আছে, তা ভেবে তাশরিক নিজেও লজ্জা পেলো। বললো,
“আরে, আপনারা বসেন। দাঁড়ালেন কেনো?”
রাহা হেসে বললো,
“ভাইয়া আপনিও বসেন।”

সিদ্ধীর চোখ টেবিলের উপর। চোখ কেনো যেনো উঁচু করতে পারছে না। লজ্জা নাকি অস্বস্তি? এর আগেও তো কথা বলেছিলো, তখন তো কোনোরকম অস্বস্তি বা লজ্জা হয় নি। আজ তাহলে বুকের ভিতর ধুকপুক কেনো করছে?
তাশরিক প্রথমে লজ্জা পেলেও পরবর্তীতে স্বাভাবিকভাবে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনিই রাহা?”
“জ্বী।”
“কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ, ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?”
“এইতো বেশ!”
সিদ্ধী কোনো কথা বলছে না দেখে তাশরিক নিজেই সিদ্ধীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“এইযে মিস, তুমি কেমন আছো? কথা বলছো না কেনো? নাকি বেস্ট ফ্রেন্ডের সামনে লজ্জা পাওয়ার ভান করছো?”
সিদ্ধী আরো লজ্জা পেল। মনে মনে আফসোস করছে, শাড়ি কেনো পরে আসলো না। তাহলে দুজনকে একসাথে খুব সুন্দর লাগতো।
সিদ্ধীর জবাব না পেয়ে তাশরিক বললো,
“আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নিয়াজও আসবে। ও আসলে অর্ডার দিব।”
সিদ্ধী আর রাহা দুজনেই চমকে একবার তাশরিকের দিকে তাকালো। এরপর আবার স্বাভাবিক হলো। রাহা নিজ থেকে বললো,
“ভাইয়া আপনারা কথা বলেন, আমি অন্য টেবিলে বসি। ”
বলেই চলে যেতে নিলে সিদ্ধী রাহার হাত চেপে ধরে। রাহা খুব অবাক হচ্ছে, সিদ্ধীর অবস্থার পরিবর্তন দেখে! ও তো এর আগেও তাশরিকের সাথে কথা বলেছিলো, তাহলে এমন কেনো করছে? প্রশ্নগুলো রাহার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকলো।

“ওইতো নিয়াজ এসেছে।”

তাশরিকের গলার আওয়াজে রাহা তাশরিকের দিকে তাকালো। তাশরিকের দৃষ্টি অনুসরণ করে দরজার দিকে তাকালো। লম্বা, সুঠাম দেহের অধিকারী শ্যামলা বর্ণের একটি ছেলেকে দেখলো। নিয়াজ এসে রাহার দিকে তাকালো। রাহাও একবার দেখে চোখ সরিয়ে ফেললো। তাশরিক দ্রুত গতিতে বললো,
“কিরে, বস!”
নিয়াজ চেয়ার টেনে বসলো। রাহাকে “হাই” বললো। রাহাও নরম কণ্ঠে জবাব দিল।
সিদ্ধী এখনো ঘোর থেকে বেরোতে পারছে না। রাহার হাত তখনো ধরে ছিল। রাহা সিদ্ধীর হাত সরিয়ে সিদ্ধীর হাতের উপর হাত রাখলো। সিদ্ধী চমকে উঠলো৷ সামনে তাকিয়ে আরেকটি ছেলেকে দেখে কপালে জমে থাকা ঘাম মুছলো। নিয়াজ বললো,
“ভাবি, আসসালামু আলাইকুম”
সিদ্ধীর গলা কাঁপছে। কাঁপা গলায় বললো,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
তাশরিক পরিচয় করাতে ব্যস্ত হলো। তাশরিক যে খুব চঞ্চল স্বভাবের, রাহা তা বুঝলো। তাশরিক একগাল হেসে বললো,
“শুন, নিয়াজ। ও তো তোর ভাবি, জানিস ই। ছবি দেখিয়েছিলাম। আর সিদ্ধী, ও হচ্ছে আমার সবথেকে কাছের বন্ধু, নিয়াজ। নিয়াজ মুনকার।”
সিদ্ধী মাথা নাড়লো। তাশরিক আবারও বললো,
“আর ও হচ্ছে রাহা। সিদ্ধীর বেস্ট ফ্রেন্ড। ও একজন ডক্টর।”
রাহা হেসে বললো,
“আমাদের পরিচয় তো দিয়েছেন ই। এবার উনার অন্যান্য পরিচয়ও দিন।”
নিয়াজ চোখ তুলে তাকালো। সাদা রঙের সুতি জামার উপর আকাশি রঙের ওড়নাটা গলায় জড়িয়েছে রাহা। দেখতে কি মিষ্টি লাগছে!
টানা চোখ! হালকা কাজল।

“আর কি পরিচয় দিব?”
তাশরিকের কথায় নিয়াজ অন্যদিকে ফিরে তাকালো। ইশ! বাকি রূপের বর্ণনা এই মুহুর্তে নিয়াজের দেওয়া সম্ভব নয়। তাশরিকের জন্য পুরোপুরি দেখতেও পারে নি।
রাহা সামনে আসা চুলগুলো পিছনে গুঁজে বললো,
“উনি কি করেন?”
“ওহ, নিয়াজও আমেরিকায় জব করে। ওকে জোর করে আমার সাথে এনেছি। ব্যাটা আসতেই চাচ্ছিলো না৷ কাজের প্রতি খুব মনোযোগ তার।”
নিয়াজ চুপ করে মুচকি হাসলো। সে হাসি আর কারো চোখে না পড়লেও রাহার চোখ এড়ায়নি।
অর্ডার করা খাবারগুলো এসে পড়লো। রাহা বললো,
“সিদ্ধী এবার অন্তত অন্য টেবিলে যাই।”
সিদ্ধী চোখ ছোট করে রাহার দিকে তাকালো। কোনো কাজ হলো না। রাহা অন্য টেবিলে চলে গেল। তাশরিক আস্তে করে বললো,
“ওই? বুদ্ধি সুদ্ধি নাই? যা এখান থেকে।”
নিয়াজ কটমট করে তাশরিকের দিকে তাকালো। তাশরিক এক ঢোক গিললো। নিয়াজ কথা না বাড়িয়ে মাঝের টেবিলে গিয়ে বললো,
“আমি কি এখানে বসতে পারি?”

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here