বাঁধন ছেঁড়া প্রেম পর্বঃ৬

0
770

#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম
#পর্ব:০৬
#যারিন_তাসনিম

নিয়াজ কথায় কথায় সব যে বলে ফেললো, এতক্ষণে তার জ্ঞান হলো। কথা ঘুরিয়ে বললো,

“কি গরম পড়েছে। চল তো বাসায়, সহ্য হচ্ছে না। ”

কথা শেষ হতেই নিয়াজ চলে গেলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাশরিকও পিছু গেল। নিয়াজ গাড়িতে উঠে জানালা দিয়ে দেখলো, তাশরিক দাঁড়িয়ে আছে। বললো,
“কিরে, গাড়িতে উঠ!”
তাশরিক নিয়াজের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার গাড়ি নিয়ে এসেছি।”
নিয়াজ আফসোস করে বললো,
“ধুর, বেটা! ভেবেছিলাম, একসাথে যাবো। আমি ড্রাইভ করবো, তুই পাশে থাকবি। টাকা পয়সা হওয়ার পর থেকে আর আগের মত আনন্দ হয় না। আগে শুধু তোর গাড়ি ছিল। অফিস শেষে প্রায়ই তুই ঘুমে ঢলে পড়তি, আমি ড্রাইভ করতাম। মাঝে মাঝে পুরো রাস্তা আমার কাঁধের উপর তোর মাথা থাকতো। আমি বিরক্তবোধ হলেও মনের মধ্যে কোনো এক অজানা সুখ অনুভব করতাম। এরপর আমি গাড়ি কিনার পর দু’জন আলাদা হয়ে গেলাম। ”
নিয়াজের চেহারায় বিষন্নতা দেখে তাশরিক চট করে পকেট থেকে ফোন বের করলো৷ এরপর নিয়াজের গাড়ি থেকে কিছুটা দূরে চলে গেল।
নিয়াজ গাড়িতে বসেই বুঝার চেষ্টা করলো, তাশরিক কি করছে। ফোনে কথা বলছে, কিন্তু কি বলছে, তা এখান থেকে শোনার উপায় নেই। ২ মিনিটের মধ্যেই তাশরিক এসে গাড়ির দরজা খুলে নিয়াজের পাশে বসলো। নিয়াজ বললো,
“কাহিনী কি?”
তাশরিক পানির বোতল নিয়ে এক ঢোকে খানিকটা পানি শেষ করলো। বললো,
“গাড়ি স্টার্ট দে।”
নিয়াজ হতবাক হলো। বললো,
“তোর গাড়ি?”
“রাইসুল আংকেলকে ফোন করে বলে দিয়েছি, বাবার থেকে আমার গাড়ির ডুপ্লিকেট চাবিটা নিয়ে আমার গাড়িটা নিয়ে যেতে।”

গাড়ি স্টার্ট দিলো নিয়াজ। মুখের ভঙিমায় নিজের খুশিটা না দেখালেও তার মনে খুশিতে শীতল হাওয়া বইলো। নিজেকে সত্যিই খুব ভাগ্যবান মনে হয়, এমন একজন বেস্ট ফ্রেন্ড পেয়ে৷ শেয়ার করার সাথে সাথেই তার কষ্ট, আফসোস মুহূর্তেই কেউ একজন দূর করে দেয়। ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে নিয়াজ বলল,
“রাইসুল আংকেল কে?”
তাশরিক চোখ বড় করে নিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল,
“বলদ! ভুলে গেলি। রাইসুল আংকেল আব্বুর সবথেকে কাছের, বিশ্বস্ত মানুষ। রাইসুল আংকেল আব্বুর গাড়ির ড্রাইভার হলেও আব্বু তাকে নিজের ভাইয়ের চেয়েও বেশি মনে করে।”
নিয়াজ আস্তে করে বললো,
“অতিরিক্ত বিশ্বাস করা মানেই ধোঁকা খাওয়া।”
তাশরিক বাইরে তাকিয়ে বললো,
“হ্যাঁ। যেমনটা তুই কোনো একজনকে দিয়েছিস। বাচ্চারা যেমন একজন অচেনা মানুষকে নির্দ্বিধায়, মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, তোকেও সে নির্দ্বিধায়, মনে প্রাণে বিশ্বাস করতো।”
চোখের কোণে জল আসতেই তা নিজের নিয়ন্ত্রণে আনে নিয়াজ। গাড়ি শাহাবাগের রাস্তায় চলছে। রমনায় কাপলদের আনাগোনা নিয়াজ আড়চোখে দেখছে। গরম হাওয়া তীব্র গতিতে গাড়িতে প্রবেশ করছে। আসলে তীব্র গতিতে গরম হাওয়া প্রবেশ করছে না, রাস্তা জ্যামমুক্ত হওয়ায় নিয়াজ তীব্র গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে। তাশরিক গাড়ির জানালা বন্ধ করে এসি ছেড়ে বললো,
“রমনা পার্কের দিকে এমন চোরের মত দেখছিস কেন?”
ভ্রুকুটি করে নিয়াজ বললো,
“আমি মোটেও সেদিকে দেখছি না। দেখলে এতক্ষণে গাড়ি এক্সিডেন্ট করতো।”
ঠোঁট বেঁকে তাশরিক বলল,
” তুই তো চোখ বন্ধ করেও চালাতে পারিস।”
তাশরিকের মুখের ভঙ্গিমা দেখে নিয়াজ সশব্দে হেসে উঠলো। নিয়াজকে একটু খুশি করতে পেরে তাশরিক যেনো সাত রাজার ধন পেয়েছে, এমনভাবে হাসলো। কিছুক্ষণ পর তাশরিক নিয়াজের কাঁধে মাথা রেখে বলল,
“টায়ার্ড লাগছে। খুব ভয়ে আছি রে!”
“আন্টি ভাবিকে মেনে নিচ্ছে না দেখে?”
করুণ সুরে তাশরিক বললো,
“সিদ্ধীর মধ্যে কোনো কমতি নেই। গায়ের রংটা শ্যামলা, তবুও দেখলেই চোখ ঝলমল করে, উচ্চতা ৫” ৪। ভদ্র মেয়ে। এলাকায় কত মানুষকে আম্মু জিজ্ঞেস করেছে, কোনো বাজে কথা ওর ব্যাপারে পায় নি। ওর বাবার আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো না দেখে আম্মু এমন করছে।”

একটু থেমে কাঁধ থেকে মাথা উঠিয়ে নিয়াজের দিকে তাকিয়ে আবার বলল,
“আচ্ছা, তুই ই বল, জীবনসঙ্গী বেছে নিতে কি টাকা-পয়সা লাগে?”
মৃদু হেসে নিয়াজ বলল,
“জীবনসঙ্গী বেছে নিতে সৌন্দর্যেরও প্রয়োজন নেই। তুমি লম্বা হও, খাটো হও, মোটা হও, কুৎসিত হও, এগুলো কখনো আসল বিষয় না। আসল বিষয় হচ্ছে, তোমার হৃদয়ের আকার কতটুকু। তাছাড়া, জীবনসঙ্গী নিজে বেছে নিতে হয় না। আল্লাহ আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখে। আর তারপর ভাগ্য দু’জনকে মিলিয়ে দেয়।”
তাশরিক আবার নিয়াজের কাঁধে মাথা রেখে বলল,
“সেগুলো আম্মুকে কে বুঝাবে? মাঝেমধ্যে মনে হয়, নিজের হাতে সিদ্ধীর জীবনটা নরকে ফেলে দিচ্ছি। আম্মু ওকে খুব জ্বালাতন করবে। আম্মু যাকে মন থেকে মেনে নিতে পারে না, তার সাথে কখনোই ভালো ব্যবহার করে না।”
নিয়াজ তাশরিকের চুলগুলোতে হাত দিয়ে নাড়িয়ে বলল,
“চিন্তা করিস না। ভাবি খুব ভালো। মেনে নিবে ঠিকই। আর দেখিস, ভাবি আন্টির মন জয় করে ফেলবে।”
“ভাবি, ভাবি করিস না। তোর ছোট হয়, আমার অকওয়ার্ড লাগে তুই ভাবি ডাকলে।”
“বেস্টফ্রেন্ডের হবু স্ত্রীকে সম্মান দিতে হয়। আর তুইও ফিউচারে আমার ওয়াইফকে সম্মান দিয়ে ভাবি ডাকবি৷ নইলে খবর আছে।”

তাশরিক চুপ করে রইলো। সে আগের চিন্তাতেই মগ্ন! গাড়িটা নিয়ে কোথায় কোথায় গিয়েছে, নিয়াজ নিজেও জানে না। আজ ইচ্ছে হলো, একটু ঢাকা শহর ঘুরার। তাই যেখানে ইচ্ছে, সেখানে গিয়েছে। তাশরিক এরপর আর কোনো কথা বলেনি। তাই নিয়াজও কোনো কথা বাড়ালো না। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। নিয়াজ গাড়ি ঘুরিয়ে পল্টনের দিকে গেল।
তাশরিকের বাড়ির সামনে আসতেই দারোয়ান গেট খুলে দেয়। গাড়ি ঢুকিয়ে গ্যারেজে গিয়ে রাখে। তাশরিকের দিকে তাকিয়ে দেখে, ঘুমিয়ে আছে। নিয়াজ পানির বোতাল থেকে হাতে সামান্য পানি নিয়ে ছিটিয়ে দেয় তাশরিকের মুখে। তাশরিক জেগে ওঠে। আশেপাশে তাকিয়ে বলে,
“ওহ, চলে এসেছি।”
সিট বেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নামে। নিয়াজকে বলে,
“নাম।”
নিয়াজও নেমে আসে।
দরজায় কলিং বেল বাজতেই তাশরিকের মা নিরল আক্তার দরজা খুলে ভ্রু কুঁচকে ভেতরে চলে যায়। তাশরিক নিয়াজের দিকে তাকিয়ে ইশারা দিয়ে বুঝায়, নিরল আক্তার বিয়ের বিষয় নিয়ে এখনো রেগে আছেন। নিয়াজ ভেতরে ঢুকে বলে, “আন্টি, কেমন আছেন?”
পিছনে ঘুরে নিয়াজকে দেখে নিরল আক্তার অবাক হয়ে একগাল হাসেন। বলেন,
“তুই যে এসেছিস, আমি খেয়ালই করি নি।”
এরপর তাশরিকের দিকে তাকিয়ে বলল,
“অবশ্য ছেলের জীবন নিজের চোখে নষ্ট হতে দেখলে কোনো মায়েরই মাথা ঠিক থাকে না।”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here