বাঁধন ছেঁড়া প্রেম পর্বঃ৯

0
828

#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম
#যারিন_তাসনিম
#পর্ব:০৯

রাহা আবারও ইশারা দিয়ে সিদ্ধীকে বলতে বলল, সে রাজি আছে। সিদ্ধী রাহার দিকে না তাকিয়েই বলল,
“আমি রাজি আছি। তবে আমি রাহাকেও নিয়ে যেতে চাই। আমার একা যেতে খুব আনকমফরটেবল লাগবে। তোমার কী কোনো সমস্যা হবে?”
তাশরিকের উত্তর পাওয়ার আগেই রাহা চিৎকার করে বলল, “না, আমি যাবো না।”
সিদ্ধীও মেজাজ দেখিয়ে বলল,
“একদম চুপ। কোনো কথা বলবি না। আর তুই না গেলে আমিও যাবো না।”
তাশরিক হতবাক হলো। বলল,
“রাহা তোমার সাথে আছে?”
সিদ্ধী রাহাকে চিমটি কেটে আবার ফোনের দিকে নজর দিয়ে বলল,
“না মানে, কিছুক্ষণ আগে এসেছে।”
তাশরিক হেসে বলল,
“আচ্ছা পরে কথা বলবো।”
তৎক্ষণাৎ ফোন কেটে গেল। রাহা রাগে গজগজ করতে থাকলো। সিদ্ধী রাহার পাশ ঘেঁষে বসে বলল,
“ধীরে ধীরে তুই আগের রূপে ফিরে এসেছিস। না, আগের রূপ নয়। তোর নিজের রূপে ফিরে এসেছিস।”
রাহার রাগ মিইয়ে গেল। অবাক হয়ে সিদ্ধীর দিকে তাকালো। মৃদু হেসে সিদ্ধী আবার বলল,
“নিয়াজ ভাইয়া বোধহয় এবার সবটা সত্যিই পরিবর্তন করে ফেলবে।”
স্বাভাবিক স্বরে রাহা বলল,
“উনি কে যে, আমার সবটা পরিবর্তন করবে?”
“তোর এক্স।”
বলেই জোরে হেসে উঠলো সিদ্ধী। পেটে হাত দিয়ে হাসি থামিয়ে বলল,
“আমি খুব খুশি যে, নিয়াজ ভাইয়া ফিরে এসেছে। কোনোদিন ভাবতেই পারি নি, নিয়াজ ভাইয়া আসবে। এবার সবটা আমার হাতে ছেড়ে দে। আমি সব সামলে নিব।”
দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে রাহা বলল,
“পারবি না। যে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো, সে কি আর ফিরে আসবে? যেন মুহূর্তেই সবটা পরিবর্তন হয়ে গেল। নিয়াজকে দেখে আমি এতটাই অবাক হয়েছিলাম যে, নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বারবার মনে হচ্ছিলো, ভুল দেখছি আমি। গায়ের রংটা আগের থেকে অনেকটা উজ্জ্বল হয়েছে। আগের থেকে অনেকটা স্বাস্থ্যবানও হয়েছে। আমাকে ছাড়া এতটাই ভালো আছে যে, দেহের উন্নতি হয়েছে।”
শেষ লাইন শুনে সিদ্ধী হেসে উঠলো। রাহা আবার বলল,
“আমার চোখ ফেরাতে একটুও ইচ্ছে হচ্ছিলো না। আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো, আজ মন ভরে দেখি। এতদিন না দেখার যেই তীব্র আগুন জ্বলছিলো আমার বুকে, সবটা আজ ওকে দেখে পানি ঢেলে আগুনটা নিভাই। আগুন নিভে নি। নিভবে সেদিন, যেদিন ওকে মন ভরে দেখতে পারবে। আমার যন্ত্রণা সেদিন কমবে, যেদিন আমি ওর বুকে মাথা রেখে আমার সব কষ্ট ওকে বলতে পারবো।”

ঘাটে নৌকা ফিরে এসেছে। ভাড়া মিটিয়ে দুজন আবার লেগুনায় করে কেরানীগঞ্জ ফিরে এলো। এরপর গাড়ি করে রাহা সিদ্ধীকে সিদ্ধীর বাড়ি পৌঁছে দিল।
বাড়ি পৌঁছতেই দেখলো, রাব্বি ডাইনিং টেবিলে বসে পিজ্জা খাচ্ছে। রাহা হাত মুখ ধুঁয়ে এসে রাব্বির পাশে বসে বলল,
“হাত ধুঁয়ে খাচ্ছিস তো?”
রাব্বি আড়চোখে একবার দেখে পিজ্জা খাওয়ায় মনোযোগ দিল। রেশমি রাহার খাবার রাহার সামনে রেখে বলল,
“হ্যাঁ বাবা, হাত ধুঁয়েই বসেছে।”
রাব্বি আড়চোখে আরেকবার দেখে ভেংচি কাটলো। রাহা জানে, রাব্বি এমনটা কেন করছে। রাব্বিকে রাহার সাথে নিয়ে যায় নি বলেই রাব্বির এই আচরণ। রাব্বি খেয়ে রুমে চলে গেল। রাহা রেশমিকে জিজ্ঞেস করলো,
“আম্মু কোথায়?”
রেশমি হেসে বলল,
“আপা আপার রুমে।”
রাহা আর কিছু বলল না। আজকে ছুটির দিন। অন্তত আজকের দিনটা তো তার মা তাকে খাবার দিতে পারতো। তার মা অন্যদের মত কেন নয়? মাঝেমধ্যে এসব তাকে খুব ভাবায়। কষ্ট দেয় খুব। মনে হয়, মা’দের চাকরি না করাটাই মানায়। এসব ভাবতে গিয়ে তার মাথায় আসে, সেও তো একদিন মা হবে। তখন তো সে তার চাকরি ছাড়তে পারবে না। শুধু শুধু আরেকজনকে দোষারোপ করার আগে নিজের দিক থেকে একবার ভেবে দেখতে হয়।

ফোন চেক করতেই দেখলো, চন্দ্রিমার ১২ টা মিসড কল। দ্রুত কল ব্যাক করলো। রিং হতেই রিসিভ হয়ে গেলো,
“কই ছিলি?”
খাটে বসে রাহা বলল,
“আপু, বাহিরে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষন আগেই এসেছি। ডাইনিং রুমে ছিলাম, তাই তোমার ফোন দেখি নি।”
করূণ কন্ঠে চন্দ্রিমা বলল,
“কিছু জানিস?”
ভ্রুকুটি করে রাহা জিজ্ঞেস করলো,
“কি জানবো?”
“তোর বিয়ে ঠিক করছে, মামা-মামি।”
কন্ঠ আগের থেকে জোরালো হলো। বলল,
“কিহ? কবে? কার সাথে?”
“আব্বুর কোনো এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়। ছেলেটাও ডাক্তার।”
রাহার মাথা ঘুরাতে শুরু করলো। তার বাবা-মা এতদিন বিয়ের কথা বললেও ঠিক করে নি। এবার এতদূর এগিয়ে গেছে তাকে না জানিয়ে। ভয়ে রাহার হাতের তালু ঘেমে গেলো। স্বপ্ন ভাঙার ভয়! স্বপ্নের দুয়ারের কাছাকাছি এসে তাকে কী ফিরে যেতে হবে?

“সিদ্ধীর বেস্ট ফ্রেন্ড রাহাও যাচ্ছে।”
তাশরিকের কথাটা শুনে কিছু বুঝলো না নিয়াজ। জিজ্ঞেস করলো,
“কোথায়?”
“খুলনা।”
বড়সড় একটা ধাক্কা খেল নিয়াজ। কিন্তু তাশরিককে বুঝতে দিল না। তার চেহারায় কোনোরকম পরিবর্তন আসে নি। তাশরিক নিয়াজের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো, কোনোরকম পরিবর্তন এসেছে কিনা। নাহ, স্বাভাবিকই আছে। তাশরিক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। নিয়াজ বলল,
“কিছু বলবি?”
ঢোক গিলে তাশরিক বলল,
“আচ্ছা তোর এক্সের নাম রাহা ছিলো না?”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here