বাঁধন ছেঁড়া প্রেম পর্ব :১৯

0
604

#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম:
পর্ব ১৯:
#যারিন_তাসনিম:

“কালকে সিদ্ধীর সাথে কথা হয়েছিলো। সিদ্ধী বলছিলো, রাহারও নাকি সিদ্ধীর মতো শাড়ি পরতে ইচ্ছে করছে।”
তাশরিকের কথা শুনে ফোন রেখে নিয়াজ বলল,
“তুই বলিস নি, শাড়ি পরতে?”
নাটকীয় ভঙ্গিতে তাশরিক বলল,
“আরে শোন, পুরাটা। রাহাকে পরে সিদ্ধী বলেছে, শাড়ি পরতে। কিন্তু রাহা চাচ্ছে, তুই ওকে একবার শাড়ি পরতে বলবি।”
ভ্রু কুচকে নিয়াজ বলল,
“ও এমন কিছু কেন চাইবে?”
গলা পরিষ্কার করে তাশরিক বলল,
“কজ সি লাভস ইউ।”
নিয়াজ তাশরিকের কাছে এসে বলল,
“দোস্ত, তুই আমাকে ওর হোয়াটসঅ্যাপের নাম্বারটা কালেক্ট করে দিতে পারবি?”
তাশরিক খুশি হয়ে বলল,
“অবশ্যই, দোস্ত। তুই ওয়েট কর। আমি ৫ মিনিটে আসছি।”
তাশরিক সিদ্ধীর থেকে রাহার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারটা নিয়ে নিয়াজকে দিলো। নিয়াজ সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ করল,
“আজ শাড়ি পরে এসো।”
রাহা গোসল করে এসে মোবাইল ওপেন করতেই দেখলো, নোটিফিকেশন বারে শো করছে, “আজ শাড়ি পরে এসো।”
রাহা জলদি করে ফোন খুলে দেখলো, অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজটা এসেছে। বুঝতে বাকি রইলো না, মেসেজটা কে করেছে। রাহা উত্তরে বলল,
“আপনার কথায় শাড়ি পরবো নাকি?”
রিপ্লাইয়ের অপেক্ষাতেই ছিলো নিয়াজ। তাই মেসেজ আসার সাথে সাথে রিপ্লাই করল,
“হুম।”
রাহা একটু অবাক হয়ে বলল,
“কেন? কে আপনি?”
“জানি না।”
রাহা কিছু একটা ভেবে বলল,
“আপনাকে একটা গুড নিউজ দেওয়ার আছে।”
নিয়াজ আগ্রহী হয়ে রিপ্লাই করল,
“কি গুড নিউজ?”
রাহা চন্দ্রিমার চ্যাটে গিয়ে তার জন্য ঠিক করা ছেলের ছবি ফরওয়ার্ড করলো। নিয়াজ স্থির হয়ে স্ক্রিনে তাকিয়ে রইলো। নিয়াজের উত্তর না পেয়ে রাহা বলল,
“আমার হবু স্বামী।”
দুই মিনিট ফোন হাতে নিয়ে বসে ছিলো রাহা। কোনো জবাব এলো না। রাহা কী-বোর্ডে প্রশ্নবোধক চিহ্ন উঠিয়ে সেন্ড করতে গিয়েও কেটে দিলো।
নিয়াজ ফোন ছুঁড়ে মেরে বসে রইলো।
সিদ্ধী হঠাৎ এসে বলল,
“দেখ, রাহা বাবু। আমি এই মিষ্টি রঙের শাড়িটা পরবো। তাশরিক বলেছে, শাড়ি পরতে। আর ভালোবাসার মানুষ চাইলে কী শাড়ি না পরে থাকা যায়, বল?”
রাহা চুপ করে রইলো। সিদ্ধী রাহাকে ঝাঁকিয়ে বলল,
“কই হারিয়ে গেলি?”
রাহা একটু হেসে শাড়িটাতে হাত বুলিয়ে বলল,
“তোকে খুব সুন্দর লাগবে শাড়িটায়।”
শাড়িটা হাতে নিয়ে সিদ্ধী বলল,
“তোকে তো ঢাকায় বলেছিলাম, শাড়ি পরবো এখানে। তুই এমন একটা ভাব করলি যে, শাড়ি পরা তোর জীবনে নিষিদ্ধ। তাই আর বললাম না তোকে।”
কথাটা বলেই ওয়াশরুমের দিকে যেতে নিলো সিদ্ধী। রাহা একটু চুপ থেকে বলল,
“সিদ্ধী, শোন।”
সিদ্ধী দ্রুত আবার রাহার কাছে চলে এলো। যেন ডাকের অপেক্ষাতেই ছিলো সে। রাহা বলল,
“তোর কাছে আর শাড়ি আছে?”
সিদ্ধীর চোখে মুখে ঝিলিক দিয়ে উঠলো। বলল,
“আছে মানে? বস্তা ভরে আছে।”
রাহা একটু ইতস্তত করে বলল,
“আমাকে দিবি একটা?”
সিদ্ধী না বোঝার ভান করে বলল,
“তুই না বলেছিলি, শাড়ি পরা তোর পছন্দ নয়। আর শাড়ি পরে কাউকে পটানোও যায় না।”
রাহা সিদ্ধীর গালে আস্তে করে একটা থাপ্পড় মেরে বলল,
“আমি কী পটানোর জন্য শাড়ি পরছি নাকি?”
“হ্যাঁ, অবশ্যই।”
রাহা অগ্নিচোখে তাকিয়ে রইলো। সিদ্ধী দৌঁড়ে গিয়ে আলমারি খুলল। বলল,
“দেখ তো, কোনটা পরবি?”
রাহা বলল,
“তুই পছন্দ করে দে।”
সিদ্ধী অনেকক্ষণ যাবৎ ঘেটে সাদা রঙের একটা শাড়ি বের করলো। শাড়িটা সম্পূর্ণ কাজ করা। রাহা শাড়িটা দেখে বলল,
“এত গর্জিয়াস শাড়ি আমি পরতে পারবো না। তাও কিনা ছাদে বারবিকিউ এর ওখানে এই শাড়ি পরবো। পাগল বলবে।”
শাড়িটা রাহার হাতে দিয়ে আবার আলমারি থেকে একটা বক্স বের করে বলল,
“চুপ থাক, আমি যেটা বলেছি, সেটাই পরবি।”
বক্স থেকে কালো রঙের বারোটা চুড়ি আর এক জোড়া কালো রঙের কানের দুল বের করলো। রাহার শাড়ির উপর রেখে বলল,
“এগুলো পরে নে।”
রাহা কিছু বলতে নিলে সিদ্ধী নিজের মুখে আঙুল রেখে ইশারা করে চুপ থাকতে বলে। রাহা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

নিয়াজ ছাদে যাবে না। চুপ করে বিছানায় শুয়ে আছে। তাশরিক বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ নিয়াজকে ঠেলছে, ছাদে যাওয়ার জন্য। নিয়াজ কোনো উত্তর না দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে আছে। এদিকে সিদ্ধীও জানিয়েছে, রাহা শাড়ি পরবে। সব পরিকল্পনা জলে যাবে যদি নিয়াজই ছাদে না যায়। তাশরিক বারবার বলেই যাচ্ছে নিয়াজকে। নিয়াজ জবাব দিচ্ছে না। নিয়াজের সবথেকে প্রিয় মানুষটা কিছুদিন পর অন্যের হয়ে যাবে, সেই মানুষটাকে আর দেখতে চায় না নিয়াজ। এবার ভুলতেই হবে। তাশরিকের কোনো কথাই সে কানে ঢুকাচ্ছে না৷ শেষে তাশরিক রেগে গিয়ে বলল,
“দোস্ত দেখ! এসব ঠিক না। বার-বি-কিউটা তুই আর আমি করবো, এখন যদি তুই-ই না যাস, তাহলে আমি একা কীভাবে করবো? রাহা আর সিদ্ধীও তৈরি হচ্ছে যাওয়ার জন্য। ওদের এত খুশি তোর জন্য নষ্ট হয়ে যাবে?”
নিয়াজ কথাগুলো শোনার সাথে সাথে উঠে বসলো। তাশরিক মনে মনে বলল,
“আমার পরিকল্পনা কোনোদিনও জলে যেতে দিবো না।”
নিয়াজ ওয়াশরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নরমাল একটা কালো রঙের গেঞ্জি পরলো। ছাই রঙের জিন্স আগে থেকেই পরা ছিলো। সেটা আর পরিবর্তন করলো না। তাশরিক এসে বলল,
“দোস্ত আজকে সবাই একটু সাজুগুজু করছে, আর তুই এটা পরে যাবি?”
নিয়াজ ঝাঁঝালো গলায় বলল,
“তাহলে আমিও মেয়েদের মতো সাজুগুজু করে যাবো?”
তাশরিক গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“না মানে আমাকে দেখ। আমি ব্লেজার পরেছি। তুই আর কিছু না কর, উপর দিয়ে একটা ব্লেজার পরে নে।”
নিয়াজ বিরক্ত হয়ে বলল,
“আমরা বার-বি-কিউ করতে যাচ্ছি। বিয়ে খেতে নয়।”
তাশরিক কিছু না ভেবেই বলল,
“কিন্তু সেখানে আমাদের হবু বউয়েরা থাকবে। একটু সুন্দর করে যেতেই হয়।”
নিয়াজ তাশরিকের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমাদের হবু বউয়েরা মানে?”
তাশরিক ঢোক গিলে বলল,
“ইয়ে, আমি ছাদে যাচ্ছি। তুই জলদি আয়।”
কথাটা বলেই তাশরিক ছাদে চলে গেলো। নিয়াজও গেলো। তাশরিক যা যা লাগবে, সবকিছু হাতের কাছে রাখলো। নিয়াজ তাশরিকের পাশে গিয়ে ওকে সাহায্য করা শুরু করলো।
হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া এলো। নিয়াজ কাজ বন্ধ করে থমকে গেলো। নিয়াজের চুলগুলো হালকা উড়ছিলো। পাশ ফিরে সামনের দিকে তাকালো। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
অহনার দিকে নিয়াজকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে অহনা লজ্জা পেয়ে ওড়না ঠিক করে নিয়াজের দিকে আসতে থাকলো।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here