বাইজি কন্যা পর্ব-৪

0
810

#বাইজি_কন্যা
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_সংখ্যা_৪
সেই আর্তনাদ শুনতে পেয়ে আতঙ্কগ্রস্থ হলো গুটিকয়েক মানব-মানবী। থেমে গেলো বাঁশির সুর।
[৯]
জমিদার বাড়ির গহীন অরণ্যে রয়েছে একটি ছোট্ট কুটির। কুটিরের চারদেয়াল বাঁশের বেড়া দিয়ে কারুকার্যে শোভিত। কুটিরটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দৃশ্য হচ্ছে বিশেষ ভাবে পলিথিন মুড়িয়ে তৈরি ছনের ছাদ। এতে বৃষ্টিপাতের সময় বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পায় কুটিরে অবস্থানরত মানুষ। জমিদার অলিওর চৌধুরী’র কনিষ্ঠ পুত্র রঙ্গন চৌধুরী’র শখের কুটির এটি। কেন জানি বিশাল অট্রালিকার সীমাহীন বিলাসিতার কক্ষটি ফেলে এই কুটিরটাই ভীষণ আরামদায়ক মনে হয় তার কাছে। তাই সারাদিন পর রাতের সময়টুকু এই আরামপ্রিয় জায়গাটিতে কাটিয়ে দেয় একের পর এক দীর্ঘ রজনী। সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় অন্তর গহীন থেকে আসা সুর’কে। যা তার এক জীবনের সমস্ত দহন শুষে নেয়। অঢেল ক্লান্তির পর দেয় সীমাহীন শ্রান্তি। রোজকার মতোই আজও রঙ্গন তার আরামপ্রিয় কুটিরটি মাতিয়ে তুলেছিলো সুরের মেলায়। তবে আজ সে একা ছিলো না। সঙ্গে ছিলো অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাজু, খালাতো বোন রোমানা,বড়ো ভাই প্রণয় এবং অঙ্গন। হঠাৎ করেই আজ রোমানা বায়না ধরেছিলো রঙ্গনের ছোট্ট কুটিরে আসার জন্য। কিন্তু রঙ্গন কোনক্রমেই রাজি হয়নি। তাই মা প্রেরণা’কে দিয়ে রাজি করানোর চেষ্টা করে তবুও লাভ হয় না। পরবর্তী’তে মা প্রেরণা বুদ্ধি করে প্রণয়’কে বাড়িতে আনার ব্যবস্থা করে। প্রণয় যেমন মা’য়ের বাধ্য ভাই’দের মধ্যে রঙ্গনও তেমন প্রণয়ের বাধ্য। সে সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়েছে মা প্রেরণা। তারপর মনের আশা পূরণ করেছে অতি আদরের বোন ঝি’র। সকলেই বিমোহিত হয়ে শুনছিলো বাঁশির সুর। শুধু প্রণয়ই অত্যন্ত গম্ভীর মুখে বসে ছিলো। যেনো ভীষণ অস্বস্তি জেঁকে ধরেছে তাকে। একটু পর পর হাত উঁচিয়ে কব্জিতে থাকা ঘড়িটির দিকে দৃষ্টি বুলাচ্ছিলো। কতো সময় বাজার অপেক্ষায় ছিলো কে জানে? তার পাশে কাঠের মোড়ায় বসে ছিলো রোমানা৷ প্রণয়ের এক বাহু চেপে ধরে কাঁধে মাথা রেখে পরম আবেশে চোখ বুজে ছিলো সে। ওদের দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো অঙ্গন চৌধুরী। রাজু মুগ্ধ চোখে দেখছিলো রঙ্গন’কে। রঙ্গন কেমন চোখ বুজে সুরের ঘোরে চলে গেছে অন্য দুনিয়ায় সেটাই হয়তো ভাবছিলো রাজু। এমনই দৃশ্য তৈরি হওয়ার ঠিক মিনিট কয়েকের মধ্যেই ওদের কর্ণকুহরে ভেসে আসে,
-‘ ও মা গো। ‘
সঙ্গে সঙ্গেই বাঁশিওয়ালা রঙ্গন চৌধুরী’র বাঁশির সুর থেমে যায়। আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে প্রণয়’কে দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রোমানা। অঙ্গন, রঙ্গন,রাজু তিনজনই ওদের নিজস্ব টর্চলাইট জ্বালিয়ে কুটির থেকে বেরিয়ে পড়ে। প্রণয়ও ত্বরিত গতিতে টর্চলাইট নিয়ে বের হওয়ার জন্য উদ্যত হয়। কিন্তু রোমানা দু’হাতে আঁকড়ে ধরে তাকে। বিরক্ত হয়ে প্রণয় রোমানার হাত ছাড়িয়ে দৃঢ় কন্ঠে বললো,
-‘ চুপচাপ এখানটায় বসে থাকো। ‘
প্রণয় বেরিয়ে যাওয়ার পর কিছুটা শঙ্কিত হয়ে ঠাঁই বসে রইলো রোমানা। এদিকে রঙ্গন,অঙ্গন,রাজু তিনজনই আর্তনাদকারী ব্যক্তিকে খুঁজতে খুঁজতে পুকুরঘাট অবদি এসে থামলো। পিছন থেকে প্রণয় বললো,
-‘ কাউকে পেলি? ‘
তখনই বাইজিগৃহের বাইরের ঐ জানালার নিচে ভূমিতল থেকে আবারো আর্তনাদের সুর ভেসে এলো,
-‘ ও মা গো… মরে গেলাম আম্মা… আমি মরে গেলাম।’
বিস্মিত হয়ে সকলেই তাকালো বাইজি গৃহের দিকে। সাংঘাতিক আশঙ্কায় সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠলো প্রণয়ের। একই আশঙ্কায় উপস্থিত সকলেই একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলো। আজ শুক্রবারের রাত। বাইজি গৃহে আজ কিসের উল্লাস পুরোটাতেই অবগত প্রণয়,অঙ্গন এবং রঙ্গন৷ তাই কয়েক পল নিশ্চুপ সময় কাটিয়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো প্রণয়। রঙ্গন’কেও ইশারা করলো ফিরে যেতে। এমনই এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো যে অঙ্গন কৌশলে রাজু’কে নিয়ে চলে গেলো পাঁচফোড়ন গৃহে। প্রণয় আর রঙ্গন কিছু সময় পার হতেই অরণ্যে ফিরে যেতে উদ্যত হলো। তখনই স্পষ্ট নারী কন্ঠের ক্রন্দনধ্বনি শুনতে পেলো। রঙ্গন বললো,
-‘ ভাই এটা দেয়ালের ভিতর নয় বাইরের আওয়াজ। ‘
ভ্রুদ্বয় কুঁচকে প্রণয় বললো,
-‘ চল সামনে আগাই। ‘
ঘুরে দাঁড়িয়ে পুকুরের পাড় ঘেষে আগাতে থাকলো প্রণয়, রঙ্গন। পুকুরের কিনারা শেষ হওয়ার পরই টর্চ লাইট তাক করলো ভূমিতলে। বেল গাছের ডাল কেটে পালা আকারে জড়ো করে রাখা হয়েছিলো সেখানে। সে পালার একপাশে একটা দু’টো কাঁটাযুক্ত ডাল ছিলো। সেখানেই এক পা জড়িয়ে ধরে বসে আছে একটি মেয়ে। শোনা যাচ্ছে তার ক্রন্দনধ্বনি। আশপাশে সতর্ক দৃষ্টি বুলালো প্রণয় চৌধুরী। ভাবলো,
-‘ এই মেয়েটা নিশ্চয়ই বাইজি গৃহেরই কোন সদস্য। মনে হয় এই অভিশপ্ত গৃহ থেকে মুক্তি পেতেই পালানোর চেষ্টা করছিলো। কিন্তু না পালিয়ে এভাবে বসে বসে কাঁদছে কেন? ‘
পরোক্ষণেই টর্চ উপরের দিকে ধরলো। দেখতে পেলো জানালা খোলা। নিজেকে রক্ষা করতে ঐ জানালা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিশ্চয়ই শরীরে বেশ আঘাত পেয়েছে? ভাবামাত্রই রঙ্গন’কে উদ্দেশ্য করে বললো,
-‘ রঙ্গন, মেয়েটা’কে জলদি তোর কুটিরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা কর। ‘
বেশ চিন্তিত ভঙ্গিতে নুরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো রঙ্গন। হাত বাড়িয়ে বললো,
-‘ এই মেয়ে হাতটা ধরো। ‘
নাক কুঁচকে পিছন ঘুরে দাঁড়ালো প্রণয়। গা ঘিনঘিনে এক অনুভূতি’তে সিক্ত হয়ে ওঠলো তার পুরো দেহ। না জানি কতো পুরুষের ভোগ্যবস্তু মেয়েটি। না জানি কতো পুরুষের নোংরা ছোঁয়ায় সিক্ত দেহ মেয়েটির। রঙ্গনের কি আক্কেল জ্ঞান জীবনেও হবে না? বিরবির করে কথাগুলো বলছিলো প্রণয় তখনি রঙ্গন বললো,
-‘ ভাই মেয়েটা তো আমাকে ভয় পাচ্ছে। ‘
প্রণয় ওদের দিকে না ঘুরেই উচ্চকণ্ঠে বললো,
-‘ ওকে বল আমাদের সঙ্গে যেতে কোন ভয় নেই। আমাদের সঙ্গে না গেলেই ওর জন্য বিপদ!’
[১০]
অস্বাভাবিক শঙ্কায় জর্জরিত হয়ে অবিরত কাঁপছে শাহিনুর। অজ্ঞাত দু’টো পুরুষ তাকে কোথায় নিয়ে এলো ভাবতেই গা শিউরে ওঠছে। তার জানা মতে, তার মা’য়ের ভাষ্যমতে সে মন্দ মানুষের হাতে পড়লো না তো! মন্দ মানুষ’রা যে খুব কষ্ট দেয়, তাকেও কষ্ট দেবে না তো? আবছা কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেলো শাহিনুরের –
তখন তার বয়স মাত্র ছয় বছর। মান্নাত’কে বিয়ে করে বাইজি গৃহে নিয়ে আসার পর সেদিনই প্রথম মান্নাতের সঙ্গে রাত কাটায় পলাশ। ছয় বছরের বাচ্চা মেয়েটি দরজায় ঠকঠক শব্দ করতে করতে বললো,
-‘মান্নাত বুবু ও মান্নাত বুবু তুমি কান্না করো কেন? কে মারছে তোমাকে, ও বুবু দরজা খোলো। ‘
-‘আরে খুকি তোমার মান্নাত বুবু সুখে কাঁদে সুখে, বড়ো হও এই সুখ কান্না তোমাকেও কাঁদাবো। ‘
ভিতর থেকে এমন কুৎসিত বাক্য শুনতেই পিছন থেকে শারমিন শাহিনুরের মুখ ছাপিয়ে ধরে টেনে নিয়ে গেলো নিজের ঘরে। তারপর তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলো। এটুকুন মনে পড়তেই আতঙ্কে বক্ষস্থল ধড়াস ধড়াস করে ওঠলো শাহিনুরের। শুষ্ক গলায় ঢোক গিলতে শুরু করলো অবিরত। ভুলে গেলো ক্ষত হওয়া দেহখানির কথা। কুটিরের সম্মুখে দাঁড়িয়ে মৃদ্যু সুরে রঙ্গন বললো,
-‘ ভিতরে প্রবেশ করো বালিকা ভয় নেই আমরা খুবই ভালো মানুষ। ‘
এ’কথায় স্বল্প স্বস্তি পেলো শাহিনুর বারকয়েক ঢোক গিলে ধীরপায়ে প্রবেশ করলো ঘরের ভিতর। সেখানে রোমানা’কে দেখা মাত্রই অনেকটাই স্বস্তি পেলো। রোমানা বললো,
-‘ ও কে, এই মেয়েটাকে কথায় থেকে নিয়ে এলে? ওর গায়ে রক্ত কেন! ‘
ভয়ে শিউরে ওঠলো শাহিনুর। ক্ষতের কথা মনে পড়তেই ব্যথায় দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝড়তে শুরু করলো। জড়োসড়ো হয়ে কম্পিত দেহে মাথা নিচু করে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো গৃহতলে। তার পাশ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো প্রণয়। একজন ডক্টর হিসেবে তার প্রথম দায়িত্ব মেয়েটির আঘাত সারিয়ে তোলা। পথমধ্যেই প্রণয় খেয়াল করেছে শাহিনুর লেংড়িয়ে লেংড়িয়ে হেঁটে এলো। তাই পা’য়ের আঘাত কতোটুকু তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। কিন্তু বাইজি গৃহের এক সদস্যের শরীর সে স্পর্শ করবেনা। বাইজি, ঘুঙুরের শব্দ, সবটাতেই তার ভীষণ ঘৃণা। তাই হাসপাতালের এক সেবিকা’কে খবর পাঠানোর জন্য পাঁচফোড়ন গৃহের কোন ভৃত্য’কে প্রয়োজন তার। প্রণয় রোমানা’কে বললো,
-‘ রোমানা এখুনি গৃহে ফিরতে হবে আমাদের। ‘
-‘ আগে বলো এই মেয়েটা কে? ‘
রঙ্গন সবটা খুলে বললো রোমানা’কে। সবটা শুনে রোমানা জেদ ধরলো সে যাবেনা। বহুদিনের শখ তার বাইজি দেখবে। আজ এতো কাছে বাইজি পেয়ে এতো স্বল্প সময় দেখেই চলে যাবে? রোমানার জেদের কারণে অধৈর্য্য হয়ে মোড়ায় বসলো প্রণয়। এদিকে শাহিনুরের সম্মুখে এসে দাঁড়ালো রঙ্গন, রোমানা। কুটিরে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা থাকায় এ প্রথম স্পষ্ট ভাবে শাহিনুরের দিকে নজর পড়লো রঙ্গনের। তীক্ষ্ণ নজর দিলো রোমানাও। দু’জোড়া দৃষ্টি আপাদমস্তক ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখতে লাগলো শাহিনুর’কে। অথচ প্রণয় একটুর জন্য স্পষ্টভাবে শাহিনুর’কে দৃষ্টিপাত করেনি। অবাকান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রোমানা। তীব্র অস্বস্তি, ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে শাহিনুর। ঘনঘন পড়ছে চোখের পলক,কাঁপছে ওষ্ঠাধর। আচমকাই রঙ্গন বলে ওঠলো,
-‘ কে তুমি হৃদমোহিনী! ‘
রঙ্গনের বলা বাক্যটি শেষ হতেই গায়ের সর্বশক্তি শূন্য হয়ে মাটিতে বসে পড়লো শাহিনুর। দুর্বল চিত্তে কয়েক পলক ফেলে রঙ্গনের দিকে তাকিয়ে বললো,
-‘ আমি শাহিনুর। ‘
আচমকাই ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো প্রণয়। বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বললো,
-‘ বাইজি কন্যা! ‘
প্রণয়ের স্বরধ্বনি কারো কর্ণগোচর হলো না। শাহিনুরের দিকে মুগ্ধ চাহনিতে চেয়ে রঙ্গন বললো,
-‘ আমার ছোট্ট নীড়ে চাঁদের আলোর আগমন ঘটলো তবে…।’
-‘ বাজে বকা বন্ধ কর রঙ্গন এর চিকিৎসা প্রয়োজন। রোমানা ওকে ডিভানে ওঠে বসতে সাহায্য করো। ‘
প্রণয়ের হুকুম পেয়ে রোমানা শাহিনুর’কে ডিভানে নিয়ে বসালো। মেয়েটার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ যন্ত্রণায় ভুগছে। রোমানা খেয়াল করলো শাহিনুরের পরিহিত শুভ্র শাড়িটির কিছু অংশে রক্ত লেপ্টে রয়েছে। তাই বললো,
-‘ শাহিনুর তোমার শরীরে রক্ত কেন কিভাবে আহত হয়েছো তুমি? ‘
শাহিনুর শঙ্কিত হয়ে উত্তর দিলো,
-‘ আমার শরীরে কাঁটা বিঁধেছে আমাকে আম্মার কাছে নিয়ে যাও, আমি আম্মার কাছে যাব।’
ভ্রু কুঁচকে রঙ্গন বললো,
-‘ তোমার শরীরের সব কাটা আমি দূর করে দিব হৃদমোহিনী তুমি প্লিজ আম্মা আম্মা করোনা। ‘
মুগ্ধ চাহনিতে চেয়ে মৃদুস্বরে রঙ্গন কথাটি বলতেই চোখ গরম করে তাকালো প্রণয়। কিন্তু সেদিকে রঙ্গনের কোন খেয়াল নেই। অদ্ভুত হলেও সত্যি রঙ্গনের বক্ষস্থল থেকে অনেক বড়ো পাথর সরে গেছে আজ। এক পলকের দেখাতে যে নারী’টি তার বহুদিনের জমে থাকা বিষণ্নতা দূর করতে পেরেছে নিঃসন্দেহে সে নারী’টি কেবল তারই জন্য সৃষ্টি। এমনই ভাবনা আসা মাত্রই রঙ্গনের মনে পড়ে গেলো এক বাইজি’কে নিয়ে এমন অনুভূতি কি করে আসলো তার মনে? বাইজিরা শুধু তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারে কিন্তু প্রিয়জন কি হতে পারে? সমস্ত ঘোর এক নিমিষেই কাটিয়ে ফেললো রঙ্গন। মুখ ভার করে বসে পড়লো মোড়াতে। এদিকে শাহিনুরের সামনে বসে শাহিনুরের বাম পা শূন্যতে তুলে এক মোচড় দিলো প্রণয়। ঘর কাঁপিয়ে চিৎকার করে ওঠলো শাহিনুর। কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-‘ আম্মাগো আমাকে মেরে ফেললো তুমি কই আম্মা!’
চোখ,মুখ শক্ত করে সরে দাঁড়ালো প্রণয়। শাহিনুরের পাশে গিয়ে বসলো রোমানা। মায়ার সুরে বললো,
-‘ আহারে বাইজি কেঁদো না। ও তোমাকে মারেনি তোমার পা মচকে গেছিলো তাই ঠিক করে দিলো। ও যে ডাক্তার ও মানুষ বাঁচায় মানুষ’কে মারে না। ও খুব ভালো। ‘
ঘুরে তাকালো প্রণয় চোয়ালজোড়া শক্ত করে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
-‘ না জেনে কথা বলবে না রোমানা। এ বাইজি নয় বাইজি শারমিনের কন্যা শাহিনুর। আমার জানামতে এর বয়স ষোল হয়নি তাই এখনি এ’কে বাইজি উপাধি দেওয়া সাজে না। ‘
বিস্মিত হয়ে তাকালো রোমানা, রঙ্গন দু’জনেই। একদিকে বিস্ময় অপর দিকে দৃষ্টিজোড়া প্রজ্বলিত হয়ে ওঠলো রঙ্গনের। ক্ষীণ স্বরে রোমানা প্রণয়’কে প্রশ্ন করলো,
-‘বাইজি গৃহের খবর তুমিও রাখো প্রণয়! ‘
চোখ রাঙিয়ে তাকালো প্রণয় মাথা নিচু করে ফেললো রোমানা। প্রণয় সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো শাহিনুরের দিকে। শুভ্রেরাঙা মুখশ্রী’টি আজ লালচে আভা ধারণ করেছে। হরিণাক্ষ দৃষ্টিজোড়াও রক্তিম বর্ণে পরিণত হয়েছে। টকটকে ওষ্ঠাধরের অবিরত কম্পন নাড়িয়ে দিচ্ছে সমস্ত সত্ত্বা। নিজেকে নিজ সত্ত্বায় অটল রাখার তীব্র চেষ্টা করে প্রণয় ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো শাহিনুরের দিকে। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেলো শাহিনুর। ভ্রু কুঁচকে উৎকন্ঠিত মনে দাঁড়িয়ে পড়লো রঙ্গন। গা শিউরে ওঠলো রোমানারও। সকলের মনের তীব্র আশঙ্কাকে দূরে ঠেলে শাহিনুরের কাঁধ চেপে ওকে ঘুরিয়ে বসালো প্রণয়। তারপর পরিহিত শাড়ির আঁচল সরিয়ে রক্তাক্ত পিঠ,কোমড় দেখতে পেলো। কোমল দেহে বিঁধে থাকা কাঁটাগুলো প্রচন্ড ক্ষোভ সহকারে তুলতে শুরু করলো প্রণয়। ব্যথায় কুঁকড়ে গেলো শাহিনুর। অসহনীয় যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে এক পর্যায় জ্ঞান শূন্য হয়ে ডিভানেই শরীর ছেড়ে দিলো সে। প্রণয় বললো,
-‘ ওহ শীট। ‘
রঙ্গন বললো,
-‘ ভাই আমি এখুনি চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করছি।’

চলবে.
[এডিট ছাড়া পর্ব ভুলত্রুটি ক্ষমা করে ভুলগুলো ধরিয়ে দেবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here