বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗পর্ব-২০Extra part –

0
2513

💗 বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗
Extra part – 20
________________________________

কাল রাতে তুমুল বর্ষনে ভেজার কারনে শরীরে জ্বর এসে পড়েছে পরির।
অনেক গুরুতর না হলে ও মোটামুটি পরিমানে শরীর টা অসুস্থ তার।
গাঁয়ে চাদর জড়িয়ে বেডে শুইয়ে আছে পরি।
সকালে তো ঘুম থেকেই উঠেছে এগারোটা বাজে।
ভাগ্যিস আজ শুক্র বার ছিলো,,, নাহলে আজ স্কুল টা মিস ই যেতো।
ঘড়ির কাঁটা সাড়ে বারোটা নাগাদ হতেই মসজিদ থেকে আজানের সুমধুর কন্ঠ ভেসে আসলো।
পরি আজানের শব্দ পেয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো।
মাথায় ঘোমটা টেনে স্থির দৃষ্টিতে আজান শুনতে লাগলো।
আজান শেষ হতেই পরি সাওয়ার নিতে গেল।
হালকা ঠান্ডা পানি শরীরে পরতেই শরীর যেন কেঁপে উঠলো।
শরীরের বিভিন্ন স্থানে খানিকটা ব্যাথা ও করছে ওর।

বেশ কষ্ট করে সাওয়ার শেষ করে নিলো।
গোসল শেষে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রোদের কোমল স্পর্শে নিজেকে স্নিগ্ধ করতে লাগলো।
খানিকটা ভালো লাগছে এখন।
পরি রুমে ঢুকে বেডে কিছুক্ষণ বসে থেকে অযু করে নামাজ পড়ে নিল।
নামায কতোটা প্রশান্তি দায়ক তা শুধুমাত্র নামায পড়লেই বুঝা যায়।
শরীর টা বেশ চাঙা লাগছে এখন ,,, সকালের সেই ক্লান্তি আর গা ছেড়ে দেওয়া ভাব টা এখন আর নেই।
পরির মায়ের ডাকে পরির রেশ কাটলো,,,, পরি আসছি বলেই রুম থেকে ডাইনিং এ পদার্পণ করলো।
ডাইনিং এ চেয়ার ঠেলে বসতেই আফজাল হোসেন বললেন
– মামনি শুনলাম তুমি নাকি অসুস্থ।
এখন ঠিক আছো তো ?

পরি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
– একদম ঠিক আছি আব্বু।
মেয়ের কথাতে আফজাল হোসেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
তারপর মিসেস রাহেলা কে বললেন
– আমান আর নিশা কোথায় ?

মিসেস রাহেলা ভাত বারতে বারতে বললেন
– ওরা তো আব্বা আর মায়ের সাথে ছোট মামার বাসাতে গেছে।

আফজাল হোসেন ছোট করে বললেন
– ওহহহ

মিসেস রাহেলা পরির মাথা তে হাত রেখে তাপমাত্রা মেপে নিলেন।
পরির শরীর টা এখনো গরম ,,,,

মিসেস রাহেলা ভ্রু কুঁচকে বললেন
– একটা ঔষধ দিবো খেয়ে নিবি ,,, এখনো শরীর টা গরম।

ঔষধের কথা শুনতেই পরি নাক কুচকালো।
বাবার দিকে অসহায় দৃষ্টি তে চেয়ে আছে।
আফজাল হোসেন মুখ চেপে হাসছেন।
মা মেয়ের কথা তে ওনি ঢুকবেন না বলেই স্থির করলেন।
তার উপর এটা পরির অসুস্থতার বিষয়।
কোনো মতেই সেক্রিফাইজ করা যাবে না।
কারো দিকে তাকিয়ে লাভ নেই তা পরি বুঝে গেল ।
কিছুটা খাবার খেয়ে মায়ের দেওয়া ঔষুধ টা নাক চেপে গিলে নিলো।
মিসেস রাহেলা মুচকি হেসে বললেন
– এখন যা রেস্ট নে।

পরি সম্মতি জানিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো।
সকাল থেকে শরীর টা অসুস্থ হওয়া তে পরি ফেসবুকে একটিভ হতে পারে নি।
ইসসস কাল যে নীল কে ম্যাসেজ দিলো সেটাই তো আর দেখা হলো না ।
পরি সাইট টেবিল থেকে ফোন টা নিয়ে ফেসবুক লগ ইন করে নিলো।
বেশ কিছু ম্যাসেজের শব্দে পরির চোখ মুখ কুঁচকে উঠলো ।
পরি শুধু নীলের সাথে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
পরি অন্য ম্যাসেজ গুলো ঠেলে নীলের ম্যাসেজ টা বের করলো।
গোটা গোটা অক্ষরে লিখা মিস করবো রে খুব মুটি টারে।

পরি দেখতে একটু গুলুমুলু ই বটে।
তবে অন্য কেউ মুটি বললে পরি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।
কিন্তু এই মুহূর্তে নীলের বলা এই উক্তি টাকে পৃথিবীর সুমধুর বাক্য বলে মনে হচ্ছে।
পরি আনমনে হাসতে লাগলো।
দিন চলতে লাগলো তার নিজস্ব গতিতে।
_______________________

পরি বোধহয় জীবনের এক অদ্ভুত কষ্ট নিয়েই জন্মেছিলো।
না হলে নীল কথা বলা বন্ধ করে দিতো না।
সেই দিনের মিস করার কথা টা বলার পর নীল পরি কে আর কোনো রিপলে দেয় নি।
আজ প্রায় সাত মাস হয় গেল।
হাজারো ম্যাসেজে র ভিরে নীলের কোনো রিপলে নেই।
পরি এখন আর আগের মতো কাঁদে না।
যতটা সম্ভব নিজেকে সামলে নিয়েছে।
কিন্তু বেহায়া মন প্রায় ই অশান্ত হয়ে যায়,, আর শুরু হয় অশ্রু বর্ষন।
এভাবেই দিন কাটতে লাগলো,,,, সকল পাওয়া না পাওয়ার মাঝে নবম শ্রেনি থেকে দশম শ্রেণীর এনাউল পরীক্ষা ও হয়ে গেল।
রেজাল্ট দেওয়ার পর পরির মন খানিকটা শান্ত হয়েছে।
রেজাল্ট মোটামুটি ভালোই হয়েছে।
সামনে একটাই লক্ষ্য এস এস সি পরীক্ষায় ভালো করতেই হবে ।
আদা জল খেয়ে নেমেছে পরি,,,, চেষ্টা করছে ভালো মতো পড়াশুনা করতে।
বইয়ের পাতা খুললে ও মাঝে মাঝে নীলের নাম পাওয়া যায়।
পরি নাম টা তে ঠোঁট ছোঁয়ানোর জন্য আগাতেই এক অদৃশ্য দেয়াল বাঁধা দেয়। পরি মলিন হেসে পাতা উল্টে নেয়।
ভাগ্য তাকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা সত্যি দুর্বিষহ।
_______________________

মাথায় দুই বিনুনি বেঁধে কাঁধে স্পোর্স ব্যাগ ঝুলিয়ে সাদা কেইস পায়ে মাঠে দৌড়াচ্ছে পরি।
আজকে যে স্কুলের ফাইনাল স্পোর্স।
আহহহ একটি বছর পর কাঙ্খিত দিন,, যার জন্য অধীর আগ্রহে সবাই অপেক্ষা করে ।
পরি স্টেজের কাছে এসেই চোখ মুখ কুঁচকে কানে হাত দিয়ে হিয়া কে সরি দেখাচ্ছে ।
হিয়া কোমরে দু হাত গুঁজে দাড়িয়ে আছে।

পরি কাঁধের ব্যাগ টা টেবিলে রেখে বলল
– হঠাৎ করেই লেট হয়ে গেল রে।
রাগ করিস না ,,,,, মাত্র 23 মিনিট ই তো দেরি হয়েছে।
হিয়া ভ্রু কুঁচকে বলল
– এটাকে মাত্র বলছিস তুই ?

পরি হিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে বলল
– এখন চল না হলে আমাদের কাজ গুলো করতে লেট হয়ে যাবে।

হিয়া ও আর কথা বাড়ালো না পরির সাথে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
পরির টিম কে এই অনুষ্ঠানের অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো জন্য দেওয়া হয়েছে।
একেক টিম এ পাঁচ জন করে ,,, পরির টিম সাধ্য মতো অতিথিকে অভ্যর্থনা জানালো।
এই ফরমালিটিস শেষ হতেই পরি সহ সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
কিছুক্ষণের মাঝেই খেলা শুরু হবে।
সবার মাঝে উত্তেজনা কাজ করছে।
বিশাল মাঠের চারিদিকে হাজারো মানুষ দাড়িয়ে আছে।
সবার এক উদ্দেশ্য খেলা দেখা ,,,,,

পরি দুই নয়ন দিয়ে পুরু মাঠ কয়েকশ বার দেখে নিলো।
পরির চোখ জোড়া পাগলের মতো কাউকে খুঁজে চলছে।
হিয়া পরির কাঁধে হাত রেখে বলল
– পেলি ?

পরি ছলছল নয়নে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
– নাহহহহ

হিয়া দীর্ঘশ্বাস টেনে পরি কে দু হাতে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

( আসসালামুআলাই রির্ডাস। এটা স্পেশাল পার্ট দিয়ে দিলাম।
আজ আর গল্প পাবেন না। কাল থেকে বিশাল বড় করে গল্প দিবো ইনশআল্লাহ।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক দিয়ে পাশে থাকুন )

বি: দ্র: ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

💙 হ্যাপি রিডিং 💙

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here