💗 বান্ধবীর ভাই যখন বর 💗
Part – 37
_______________________________
37,,,,,,,,,,,
দশ বার কল দেওয়ার পর ও পরি ফোন ধরলো না।
বিষয়টা এতোক্ষন নীল হাসির ছলে নিলে ও এখন ওর খুব ভয় হচ্ছে।
পরি ঠিক আছে তো ?
নীল ঘড়ি তে টাইম দেখে নিলো এখন বাংলাদেশ সময় রাত 2:8।
এই অসময়ে কাউকে কল করা টা ও লজ্জা জনক।
কল করে কি বলবে এতো রাতে বউয়ের সাথে কথা বলবে আর বউ ফোন ধরছে না।
নীল চিন্তা তে পড়ে গেল,,,,
আর ও কয়েক বার ফোন দেওয়ার পর ও পরি ফোন রিসিপ করে নি।
নীলের মাথা ধরে গেছে,,, সারাদিনের কাজের চাপ তার উপর পরির কল রিসিপ না করা ।
মাথা দু হাত দিয়ে চেপে রকিং চেয়ার এ বসে আছে নীল।
মন অশান্ত হয়ে যাচ্ছে,,, শীতের মাঝে ও শরীর অস্বাভাবিক ভাবে ঘামছে,,
নীল কাঁপা হাতে নাম্বার ডায়াল করে আবার পরি কে কল দিলো।
বেশ কিছুক্ষণ কল করার পর ও পরি ধরলো না।
নীলের বুকের ভেতর চিন চিন ব্যাথা করে উঠলো।
ফোন রেখে ব্যালকনি থেকে ঘুরে আসলো।
তবু ও মন শান্ত হচ্ছে না ।
নীল আবার কল লাগালো,,,
বার কয়েক বার রিং হতেই পরি ফোন রিসিপ করলো।
পরি চাঁপা কন্ঠে বলল
– হ্যালো।
পরির গলার স্বর শুনতেই নীলের মন স্বস্তি পেল।
কিন্তু পরির উপর প্রচন্ড রাগ উঠে গেল।
নীল চেচিয়ে বলল
– হোয়াট রাবিস।
কি মনে করেছো কি আমায় মেরে ফেলবে।
কল রিসিপ করছিলে না দেখে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম।
সারা দিন কাজ করার পর আরেক টেনশন নিতে গিয়ে মাথা ধরে গেছে।
স্বস্তি পেয়েছো না?
শান্তি হয়েছে ?
আমার করা ভুলের শাস্তি এখন এভাবে দিচ্ছো।
মানছি আমি ভুল করেছিলাম কিন্তু সেটার পেছনে তো কারন ছিলো তাই না।
কাকে কি বলছি ,,,,,
তোমাকে বলা টাই তো ভুল ,,,,,,
ফাইন তুমি থাকো আমি আর কল করবো না।
এক ভুলের শাস্তি সারাজীবন পোহাতে হবে যখন তখন এখন থেকেই শাস্তি নিয়ে নিচ্ছি।
আই হোপ এখন তোমার শান্তি লাগবে।
বায়
এক নিমিষে এই টুকু কথা বলেই নীল কল টা কেটে দিলো।
বেডের উপর ছুড়ে ফেলে বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরালো।
নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াতে লাগলো।
লন্ডনে এখন বিকেল,,,,মাত্র,,, চার পাশে আলো থাকলে ও নীলের ভেতর ঘর টা অন্ধকারে ছেয়ে গেছে।
পরি থম মেরে বসে আছে ,,, চোখ দিয়ে অনড়গল পানি ঝরছে।
পরি এক হাতে চোখের পানি মুচছে তো আবার গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
কাঁদতে কাঁদতে এক প্রকার হিচকি উঠে গেছে।
নীল কে অনড়গল ফোন করে যাচ্ছে,,,, নীল রিসিপ করছে না।
আটচল্লিশ বার ফোন করার পর ও নীল ফোন ধরছে না।
নিজের প্রতি খুব রাগ হচ্ছে পরির,,,, কেন নীলের ফোনের অপেক্ষা করে নি সে।
পরির দম বন্ধ হয়ে আসছে তবু ও পরি ফোন করেই যাচ্ছে,,,,,
অবশেষে একষট্টি নাম্বার কল নীল রিসিপ করেছে।
নীল রিসিপ করতেই পরি এক হাতে নিজের মুখ চেপে ধরলো কিন্তু পরি নিজেকে সামলাতে পারছে না।
নীল বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– কিছু বলার থাকলে ফাস্ট বলো।
পরি কথা বলতে পারছে না থেমে থেমে হিচকি উঠে যাচ্ছে।
নীল বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো তারপর পরির নিঃশ্বাসের
ভারী শব্দ শুনতে পেয়েই নীল হতচকিত হয়ে উঠলো।
নীল উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল
– এই পরি ,,,, কথা বলছো না কেন ?
আম সরি ইয়ার ,,, আসলে আমি চিন্তায় বেশি বলে ফেলেছি।
ফরগিফ মি পরি ,,,,
পরি অনেক চেষ্টা করে ও কথা বের করতে পারছে না।
নীল ব্যস্ত হয়ে পড়লো,,,, নীলের মন বিষাক্ততায় ছেয়ে যাচ্ছে।
নীলের ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজেই ছিড়তে।
কি করে পারলো মেয়েটাকে এতো টা কষ্ট দিতে,,,,
নীলের বোঝা উচিত ছিলো।
এক ঘন্টা কেটে যাওয়ার পর ও পরি নিজেকে সামলাতে পারছে না।
কোনো মতে বলল
– আমভভ সরি নীল।
নীল ব্যস্ত কন্ঠে বলল
– আম সরি পরি।
নিজে কে সামলাও প্লিজ,,, এই ভাবে কাঁদলে অসুস্থ হয়ে যাবে।
হিচকি উঠিয়ে ফেলেছো,,, এইটুকুর জন্য কেউ এমন করে।
প্লিজ পরি আমার খুব কষ্ট হচ্ছে,,,,, আমি তোমার জন্য কিচ্ছু করতে পারছি না।
কিচ্ছু নাহহহ
রাগের বশে তোমাকে উল্টো পাল্টা বলে ফেলেছি।
প্লিজ পরি,,,,, শান্ত হও।
আর ও আধ ঘন্টা চেষ্টার পর পরি শান্ত হয়েছে।
নীল দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– আমি বুঝে উঠতে পারি নি পরি।রাগ করেছো আমার উপর?
পরি ধীর কন্ঠে বলল
– নাহহ । আমার ই ভুল ছিলো ।
আমি আপনাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলাম।
নীল মুচকি হেসে বলল
– এমন নাহ পরি।
আমি বেশি ই রিয়েক্ট করেছি ,,,,,,,
আচ্ছা তুমি সত্যি রাগ করো নি ?
পরি ধীর কন্ঠে বলল
– নাহহহ।
– তাহলে একটা হামি দাও।
পরি অবাক হয়ে বলল
– কিহহ
নীল হাসতে হাসতে বলল
– এই বার ঠিক আছে।
আমার বউ এতোক্ষন অভিমান করে ছিলো ,,,,,
পরি থতমত খেয়ে গেল।
নীল বুঝলো কি করে ,,,,
নীল দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– মাঝে মাঝে আমি এই ভাবে ডেসপারেট হয়ে যেতে পারি পরি।
প্লিজ অভিমান রেখো নাহহহ
অভিমানের পাল্লা ভারী হয়ে গেল সম্পর্ক ও শেষ হয়ে যায়।
ট্রাস্ট মি আমি তোমাকে হাড়াতে চাই নাহহ।
একটু মানিয়ে নিবে তো আমায় ?
আই প্রমিস যতটুকু কষ্ট দিয়ে ফেলবো তার থেকে বেশি ভালোবেসে পুষিয়ে দিবো।
আমাকে আগলে রাখবে তো পরি ,,, কখনো ছেড়ে যাবে না তো।
আমি শেষ হয়ে যাবো ,,,,,
পরির চোখ দুটো পানিতে টুইটুম্বর হয়ে গেছে।
নীল তখন অভার রিয়েক্ট করেছিলো ঠিক ই কিন্তু ভুল তো পরির ও ছিলো।
পরি ইচ্ছে করে ফোন ধরে নি ,,, ফোন রেখেই ব্যালকনিতে চলে গিয়েছিলো।
নীলের কথা তে পরির ধ্যান ভাঙ্গলো।
নীলের কন্ঠে দারুন অপরাধবোধ,,, মনে হচ্ছে এখনি বুঝি নীলের প্রান টা বেড়িয়ে যায়।
পরি ধীর কন্ঠে বলল
– নীলললল এই নীল ,,,, আমি আপনাকে ভালোবাসি,,, খুব ভালোবাসি।
আপনাকে অন্তরে মিশিয়ে নিলে ও কি শান্তি মিলবে আমার ?
আমি অপনার বুকে মাথা রেখে সারা জীবন কাটাতে চাই।
আমরা কখনো ই একে অপর কে ছাড়বো না।
নীল আর পরি এক ই নিশ্বাস এ বাঁধা হয়ে থাকবে চিরকাল।
নীল মুচকি হাসলো।
দুজনের মাঝে ই নীরবতা ছেয়ে গেল।
ফোন কলে একে অপরের নিশ্বাস এর শব্দ শুনে চলেছে।
হঠাৎ ই নীল বলল
– এই পরি আমার নাহহহ তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।
নীলের হঠাৎ এমন কথাতে পরি বোকা হয়ে গেল।
নীল আবার বলল
– তুমি কাছে থাকলে তোমায় জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে নিতাম।
অনেক গুলো চুমু খেতাম ,,,, একদম আত্মার সাথে মিশিয়ে নিতাম।
যাহহ তাহহ করে ফেললাম,,, চলে আসো না প্লিজ।
আমি তোমাকে ভালোবাসতে চাই পরি।
নীলের এমন বাচ্চা দের মতো আবদার আর টিনেজের মতো খামখেয়ালি কথা বার্তায় পরি নিজেই আত্মহারা হয়ে পড়ছিলো।
লজ্জাতে একদম নুইয়ে যাচ্ছিলো।
এই সময় যদি নীল পাশে থাকতো নির্ঘাত পরি জ্ঞান হাড়াতে।
নীল আদৌ আদৌ কন্ঠে বলল
– পরি তুমি শুনছো তো।
পরি মৃদু স্বরে বলল
– আপনি চুপ করুন প্লিজ আমি ই শেষ হয়ে যাবো।
আপনার লাগাম ছাড়া কথা বার্তা আমায় ব্যগ্র করে দিচ্ছে।
নীল মুচকি হেসে বুকের বা পাশে হাত রেখে বলল
– শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি ও,,,,
একদম শেষ হয়ে যাচ্ছি,,,, যা তা অবস্থা।
পরি মুচকি হেসে বলল
– দুটো ঠাপ্পর পড়লেই ঠিক হয়ে যাবেন।
এই সব পাগলামি কথা বার্তা ছাড়ুন।
নীল চোখ মুখ কুঁচকে বলল
– ইসসসসস বিয়ে করেছি বউ কে ছাড়ার জন্য নাকি।
এখন আমি অশ্লীল হবো ,,, ভয়ানক অশ্লীল।
আর মিসেস নীল হওয়ার জন্য তোমাকে সব শুনতে হবে ,,,, সহ্য ও করতে হবে। ভয়ানক ভয়ানক কথা বার্তা আর অবাধ্য সব ছোঁয়া,,
নীলের কথা তে পরি বেশ লজ্জা পাচ্ছে ।
নীল পুরো পাগল করে দিবে ওকে,,,,
নীল ধীর কন্ঠে বলল
– শুনবে তো পরি ?
পরি মুচকি হেসে বলল
– ইসসহ আমার বয়েই গেছে শুনতে।
নীল ডেবিল কন্ঠে বলল
– কাছে থাকলে বুঝতে,,, কোনো ছাড়াছাড়ি নেই।
অশ্লীল কাকে বলে দেখিয়ে দিতাম,,,, লজ্জার অবসান ঘটিয়েই দিতাম।
আর ,,,,,,,
নীল কে থামিয়ে পরি বলল
– অশ্লীল আপনি ,,, পুরো বাজে।
কি সব বলছেন ছিইইই
নীল হাসতে হাসতে বলল
– আচ্ছা থাক ,,,,, বিডি তে ফিরেই বিশ্ব সেরা অশ্লীল হবো।
এখন এই অশান্ত মন কে শান্ত করো প্লিজ,,,,,
– কিভাবে?
– একটা চুমু দাও। তাহলেই তো হয়,,,,,,,একটা গভীর চুমু দাও,,,,একদম ঠোটে ঠোট লাগিয়ে ,,,,,
– ধ্যাত কি সব বলেন।
নীল হাসতে হাসতে বলল
– একটা চুমু দাও তো।
– পারবো না আমি ,,,,
– আচ্ছা আমি কিন্তু দ্বিগুণ শোধ নিবো এর।
– ইসসস দেখা যাবে।
– আচ্ছা একটা গান তো শোনাও প্লিজ ,,,,,,,
প্লিজ পরি
পরি মৃদু হেসে বলল
– আচ্ছা শোনাচ্ছি
মেলেছো চোখ , উড়েছে ধুলো
দূরের পলক তোমাকে ছুলো
তবুও আজই , আমি রাজি
চাপা ঠোঁটে কথা ফুটে, শোনো,,,
আমাকে রাখো চোখের কিনারে
গোপন মিনারে ,,,,,,
ও যো ওয়াদা কিয়া ওহ নিভানা পড়েগা
রোকে জামানা চাহে রোকে খুদায়ী তুমকো আনা পাড়েগা
ঘুম ভেঙে কিছু মেঘলা দিন ও হোক
ওড়নার পাশে সেফটিপিন ও হোক
বিকেলের নাম অ্যাল পাচিনো হোক খেয়ালী ছাতে
কফি কাঁপে একা ঠোঁট ছোঁয়ানো দিন
চুপি চুপি কেঁদে রোদ পোহানো দিন
ভালো হয় যদি সঙ্গে আনো দিন যে কোনো রাতে
জানি দেখা হবে
ঠোঁটের ভেতরে ঘুমের আদরে
চকমকি মনে মন জ্বালাতে চাই
দিনে ব্যালকনি বৃষ্টি রাতে চাই
পিছু ডাকি ঘুম সাজাতে চাই বিছানা ঘিরে
ও,,,, ছোট ল্যাম্পশেড অল্প আলো তার
চুল খুলে কে যে রূপ বাড়ালো তার
তুমি বোঝা না কি মন্দ ভালো তার
যেওনা ফিরে,,,,
জানি দেখা হবে,,,,,
রাতের সোহাগে, তোমার পরাগে
ও যো ওয়াদা কিয়া ওহ নিভানা পড়েগা
রোকে জামানা চাহে রোকে খুদায়ী তুমকো
মেলেছো চোখ , উড়েছে ধুলো
দূরের পলক তোমাকে ছুলো
তবুও আজই , আমি রাজি
চাপা ঠোঁটে কথা ফুটে, শোনো,,,
আমাকে রাখো চোখের কিনারে
গোপন মিনারে ,,,,,,,,,,,
গান শেষ হতেই নীল দুষ্ট হেসে বলল
– বাহ পরি,,, মানো আর না মানো তোমার ও রোম্যান্স করতে ইচ্ছে হচ্ছে।
– মোটে ও নাহ।
– উহুমমম তাহলে এই গান টাই কেন গাইলে।
পরি সামান্য তুতলিয়ে বলল
– ভালো লাগে তাই,,,,
– আচ্ছা,,,,কি যেন গাইছিলে,, ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে হুমম,,ভালো লাগে এটা
রাতের সোহাগে ,,, তোমার পরাগে এটা ও ভালো লাগে
তবু আজ ই আমি রাজি
পিছু ডাকি ঘুম সাজাতে চাই বিছানা ঘিরে,,,,
হুমমমম পরি সমস্ত টাই তো গেয়েছো,,, এখন অস্বীকার করে লাভ হবে না।
আমি বুঝে গেছি,,,,,
– কি বুঝেছেন।
– এই যে আমার ছোট্ট বউ টার প্রেম জেগেছে।
আর ভালোবাসা পেতে ও ইচ্ছে হচ্ছে,,,,,
একদম কাছাকাছি,,,
– আপনি বেশি বকছেন।
ধ্যাত,,,
আপনি ও নাহহহ।
অপনার জন্য সব গুলিয়ে যাচ্ছে
নীল হাসতে হাসতে বলল
– শুধু কি গুলিয়ে যাবে পরি,,,, অনেক অনেক ভালোবাসা ও তো হবে।
কঠিন তম ভালোবাসা সহ্য করে নিতে হবে বউ,,,,
পরি লজ্জা পেয়ে বলল
– ধ্যাত ,,,
এভাবেই রাত ভর নীল আর পরির দুষ্টু মিষ্টি কথা চলতে থাকলো।
দুজনেই ফোন হাতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো কে জানে।
⛔ এই গল্পের রোম্যান্স দেখাতে গিয়ে আমি ই শেষ 😑
এই গল্পের আর দুই কিংবা তিনটা পার্ট হবে।
( আসসালামুআলাই রির্ডাস।গল্প কেমন হচ্ছে জানাবেন প্লিজ।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক ফলো আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন । আর গল্প শেষের পথে ,,, তাই প্লিজ সবাই গঠন মূলক মন্তব্য করুন)
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।
💙 হ্যাপি রিডিং 💙
চলবে
ফাতেমা তুজ