বালিকা বউ 🥰পার্টঃ১৩

0
5397

#বালিকা_বউ 🥰

#পার্টঃ১৩
লেখিকা ঃ মারিয়া

তারপর ড্রাইভ করে সোজা বাসায় আসলাম।
এরপর চাসনি আর আমার সামনে আসেনি। হয়তো সবার সামনে থাপ্পড় দেওয়ায় হার্ট হয়েছে। রাতে সবাই ঘুমানোর পর মাঝরাতে বেলকনি বেয়ে ওর রুমে ঢুকলাম। ভাগ্য ভালো ওখানের জানালাটা খোলাই ছিল। রুমে নাইট লাইট জ্বলছে খুব অল্প আলো। ভালো করে চাসনির মুখও বোঝা যাচ্ছে না। আমি আস্তে করে ওর পাশে বসে আলতো করে ওর কপালে একটা কিস করলাম। এক অন্যরকম অনুভূতি হলো তখন। রোশনি হালকা ওপাশ ফিরে ঘুমালো। ওর ঘুম ভেঙে গেলে সর্বনাশ। তাই আবার সাবধানে রুমে থেকে একই ভাবে বের হলাম।

এভাবেই চলতে লাগলো আমাদের প্রেমকাহিনী। সকালে ওকে কলেজে নিয়ে যাওয়া, আবার নিয়ে আসা, রাতে ওর জামা বুকে জড়িয়ে ঘুম আর খুব মনে পড়লে ওর রুমে গিয়ে কিস করে আসি।
এভাবে কেটে গেলো আরও ১৫ দিন। এ কয়দিনে রোশনিকে আরও ভালোবেসে ফেলেছি। এক মুহুর্ত ওকে ছাড়া থাকা অসম্ভব। এমনিতেও সবসময় চোখের সামনেই থাকে। কিন্তু এর থেকে বেশি আমাদের রিলেশনে উন্নতি হয়নি।

আজ শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। হয়তো জ্বর আসবে। ব্লাংকেট মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছি। কয়েকবার এসে মা ডেকে গেছে। শুধু বলেছি আজ কলেজে যাবো না। নিচ থেকে আওয়াজ পেলাম মা রোশনিকে বলছে আদি যখন যাবে না তোর ও যাবার দরকার নেই। কিন্তু রোশনির একটা ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে তাই নাকি ওর যেতেই হবে। মা ও কিছু একটা ভেবে যাবার অনুমতি দিলো।

রোশনি রেডি হয়ে রিকশা করে বের হলো। হঠাৎ পথের মাঝে একটা কালো গাড়ি এসে দাঁড়ালো। রিকশা চালক কষে গাড়ি থামালো। রোশনি চেচিয়ে বলল রাস্তায় কিভাবে গাড়ি চালান। দেখে চালাতে পারেন না। গাড়ি থেকে কয়েকটা ছেলে আগে নামল তারপর নামল শুভ্র। ওকে দেখে রোশনি ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। রিকশা চালক বিপদ বুঝে আগেই দৌড়ে পালিয়ে গেছে।

রোশনি আস্তে করে রিকশা থেকে নেমে বলল
আআপনি।

কেন এখানে আদি আসলে কি বেশি খুশি হতে। কিন্তু সে তো এখানে নেই। ওই আদিত্য বহুত বার বেরেছে। ও আমার গায়ে হাত তুলেছে তাই না। এবার দেখ ওর প্রানপাখির কি অবস্থা করি। প্রানটাই কেড়ে নেবো আমি। তখন বুঝবে আদি।

এসব কথা শুনে রোশনি গলা শুকিয়ে আসছে। এরপর শুভ্র কে ছুড়ি বের করতে দেখে রোশনি পিছন দিকে দৌড় দিল। কিন্তু বেশিদূর যাবার আগেই শুভ্র ওর হাত টেনে সামনে নিয়ে পরপর তিনবার ছুড়ি রোশনির পেটে ঢুকালো। তারপর ধাক্কা মেরে ফেল দিল রাস্তায়। রোশনির আকাশের দিকে তাকিয়ে শুধু বলল আদিত্য।

আমার খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল। একটু পরই আননোন নাম্বার থেকে কল আসল। তাড়াতাড়ি রিসিভ করে বললাম
হ্যালো।
হ্যাল্লো বন্ধু।
কে আপনি।
আমি,,, আমি শুভ্র তোর জম। তোকে একটা গ্রেট নিউজ দেই। তোর বউ মানে রোশনির পেটে আমি ছুড়ি ঢুকিয়েছি।

কু*** বাচ্চা। কি বলছিস তুই। ওর কিছু হলে কিন্তু তোকে আমি জ্যান্ত পুতে ফেলবো।

আগে হসপিটালে তো নিয়ে যা। ওকে নিচু রাস্তায় ফেলে রেখেছি বলেই ফোনটা কেটে দিলো। আমি কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করে ফোনটা ফ্লোরে আছাড় মারলাম।

শুভ্র কি বলল। রোশনির পেটে ছুড়ি আর কিছু ভাবতে পারছি না। ব্লাংকেটটা সরিয়ে দাড়ালাম প্রচন্ড মাথা ঘুরছে। হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামতে দেখে মা বলল এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিস। শরীরে হাত দিয়ে বলল জ্বরে তো তোর গা পুড়ে যাচ্ছে।

আহহ ছাড়ো তো মা। আমাকে যেতে দাও।

আদি শোন বাবা। কোথায় যাচ্ছিস সেটা তো বলে যা।
আমি গাড়ি বের করে হাই স্পিডে ড্রাইভ করছি। আমার মনে শরীরে যে তখন কি হচ্ছে শুধু আমিই জানি। আধঘন্টার রাস্তায় ১০ মিনিটে পৌঁছে গেলাম।

গাড়ি থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম কিছু দূরে রাস্তার সাইডে অনেক লোক জড় হয়ে আছে। অজান্তেই বুকটা কেঁপে উঠল। এদিকে পা দুটোও চলছে না। তবুও দৌড়ে লোক সরিয়ে তাকাতেই আমার রোশনির রক্ত মাখা মুখটা দেখে ধপ করে ওখানেই বসে পড়লাম। পাশ থেকে কয়েকজন বলছে আপনি কে?? আপনি কি মেয়েটাকে চিনেন।
আমি রোশনির মাথাটা আমার কোলে রেখে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম।

তারপর আর দেরী না করে কয়েকজন মিলে ধরে ওকে গাড়িতে তুললাম। শ্বাস চলছে এখনও শুধু সেন্সলেস হয়ে আছে। চোখে ঝাপসা দেখছি আর মনে মনে প্রার্থনা করছি হসপিটাল অবধি যাওয়ার শক্তি দাও। আমার চাসনিকে যেন আমি বাঁচাতে পারি। হসপিটালের সামনে গাড়ি ব্রেক করে নার্স ডক্টর দের ডাকতে লাগলাম। তারপর বেডে করে ওকে OT তে নিয়ে গেল। আমার আর কিছু মনে নেই। চোখ খুলতেই দেখি মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর কান্না করছে।

আমি লাফ দিয়ে চারপাশে তাকিয়ে বললাম
মা রোশনি কোথায়??
মা আঁচলে মুখ ঢাকলেন।
চেচিয়ে বললাম ও কেমন আছে বলো না।
বাবা তুই একটু শান্ত হ। রোশনি ঠিক আছে। তিন ব্যাগ রক্ত লেগেছে। ওর গ্রুপের সাথে আমার ব্লাড গ্রুপ ম্যাচ করায় আমিই দিয়েছি। তুই অজ্ঞান হয়ে যাবার পর এখানকার একজন নার্স তোর ফোন থেকে আমাকে ফোন দিয়ে সবটা জানায়।

রোশনি ভালো আছে শুনে আমার বুক থেকে ভারী একটা পাথর সরে গেল মনে হলো। আমি যাবো রোশনির কাছে।
মা আমাকে বাধা দিয়ে বলল রোশনির বিপদ কাটলেও এখনো ওর জ্ঞান ফিরে নি।
তারপর ও মাকে বুঝিয়ে ওর কেবিনের দরজার কাছে এসে দাড়ালাম। রোশনি চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো স্যালাইন চলছে। পিছন থেকে একজন নার্সকে দেখে বললাম ওর কি হয়েছে ও ঠিক হয়ে যাবে তো??
দেখুন অনেক ব্লিডিং হওয়ায় ওনার সেন্স ফিরছে না। আর ৭২ ঘন্টার মধ্যে যদি জ্ঞান না ফিরলে সরি আমাদের আর কিছুই করার নেই।
নার্সের কথা শুনে আমি দুপা পিছিয়ে গেলাম। তারপর বেন্চির উপর বসে পড়লাম। মাথায় কিছু আসছে না কি করবো এখন। আজ আমার জন্য ওর এই অবস্থা।

এসব ভাবতে ভাবতে রাতে ওখানে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানিনা। সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙল। চোখ মেলে মাকে দেখে বললাম মা রোশনি কেমন আছে।
সেই একই রকম।

উঠে আবার দরজার বাইরে থেকে দেখলাম মেয়েটা সেই একই ভাবে শুয়ে আছে।

মা আমার কাধে হাত রেখে বলল চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই বরং বাড়ি গিয়ে কিছু খেয়ে নে।

সত্যি কাল থেকে মা ও কিছুই খায় নি। আবার রক্ত দিয়েছে। তুমি এখানে একা কি থাকতে পারবে।
কেন পারবো না।

এর মধ্যে ইশু আর রাজ চলে আসলো। ইশু হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল মা দাদা বৌদি এখন কেমন আছে। আমি ওর কাছে যাবো।

রোশনিকে বুঝিয়ে ওখানে বসালাম। তারপর ওর কাছে মাকে রেখে আমি বাড়ি চলে আসলাম।
রোশনিকে ছাড়া বাড়িটা হুহু করছে। চোখের জলটা মুছে নিজের রুমে এসে স্নান সেরে ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে খেতে বসেছি। দু টুকরো খেয়ে রেখে দিলাম। কিচ্ছু ভাল লাগছে না।
আরও খাবার বক্সে ভরে হসপিটালে নিয়ে গেলাম। সেখানে গিয়ে ও শুনলাম রোশনির এখনো জ্ঞান ফিরেনি। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে যদি রোশনির আর জ্ঞান না ফিরে তখন কি হবে। না না কিসব ভাবছি এখনো ৪৮ ঘন্টা বাকি আছে।

ইশু মা ভীষণ কান্নাকাটি করছে। রাজ ইশুকে সামলাচ্ছে এদিকে মাকে কোনোভাবে বোঝাতেই পারছি না। নিজের মেয়ের মতই রোশনিকে দেখে ভালোবাসে। ওর কষ্ট উনি আর চোখে দেখতে পারছেন না। এদিকে আমার মনের মধ্যে ও ঝড় বয়ে যাচ্ছে সেটা কেউই টের পাচ্ছে না। মাকে খেতে দিলাম কিন্তু খাবে না। তারপর অনেক জোর করে খাওয়ালাম।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here