#বালিকা_বউ 🥰
#পার্টঃ১৭
লেখিকা ঃ মারিয়া
জানিনা আজ বাড়ি গেলে কি আছে কপালে। তারপর যতক্ষণ ক্লাস করিয়েছি ভয়ে আর রোশনির দিকে তাকাইনি। কিন্তু ওকে বুঝতে দেইনি যে আমি ভয় পেয়েছি।
দুপুরে কলেজ ছুটি হলো। রোশনি চুপচাপ সিটে বসে বেল্ট বাঁধছে। বাঁধা শেষ হলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
হা করে কি দেখছো?? চলো।
মনে মনে বললাম কি ব্যাপার এত ঠান্ডা। নিশ্চয় মাথায় কিছু ঘুরছে। কিন্তু কি সেটা?? আর বেশি না ভেবে গাড়ি স্টার্ট দিলাম।
ড্রাইভ করছি আর মাঝে মাঝে রোশনিকে দেখছি বেশ চিল মুডেই আছে। বাইরে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। হঠাৎ কিছু একটা দেখে খুশিতে চোখ বড় বড় করে বলল স্টপ।
আমিও সাথে সাথে কষে ব্রেক করলাম। তারপর বললাম কি??
রোশনি বলল আমি তোমাকে একটা চ্যালেন্জ করবো। কিন্তু আমি জানি সেটা তুমি পারবে না??
খুব গর্ব করে বললাম তাই নাকি। আগে বলো তো কি তোমার চ্যালেন্জ।
হাত ঘসে বলল চ্যালেন্জটা হলো তোমাকে দুই প্লেট ফুচকা খেতে হবে।
হোয়াট ফুচকা,, এখন কোথায় পাবে??
তারপর বুড়ো আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলল ওই যে।
বাইরে তাকিয়ে দেখি একজন ফুচকাওয়ালা। তারপর বললাম আচ্ছা চলো তাহলে।
না না তোমার যেতে হবে না। আমিই আনছি।
কিন্তু আমি উইনার হলে কি পাবো।
একটু ভেবে বলল ওকে যা চাইবে তাই।
একটু ঝুকে বললাম সত্যি তো। যা চাইবো তাই দেবে।
অঅভিয়েসলি। আচ্ছা নিয়ে আসি। একটু ওয়েট করো।
একটু পর দু প্লেট ফুচকা হাতে নিয়ে বলল গাড়ি থেকে নামতে। দুপুরের সময় রাস্তায় লোকজন খুব কম। রোডের পাশে শিউলি গাছের নিচে দাঁড়ালাম।
একটা প্লেট হাতে দিয়ে বলল নাও শুরু করো।
একটা মুখে নিতেই কেমন ঝাল ঝাল লাগছে। কিন্তু চ্যালেন্জ বলে কথা। রোশনির কাছে হারা যাবে না।
এভাবে ৪/৫ খেতেই পেট জ্বালা শুরু করে দিয়েছে। আমি এক হাত নাড়িয়ে বলছি পানি পানি। রোশনি পানি দাও।
উহু পানি তো দেয়া যাবে না। এটা তো চ্যালেন্জ। আর তখন তো মৌমিতার কাছ থেকে ঢকঢক করে পানি খেয়েছিলে। আর তাই এখন এটা তোমার শাস্তি।
এবার পুরোটা বুঝলাম সবটাই প্লানমাফিক। ওকে,, সময় আমারও আসবে তখন দেখে নিবো। আগে এগুলো তো শেষ করি। ফুচকার দিকে তাকাতেই কান্না পাচ্ছে। আলুটা এত লাল হয়ে আছে বলার বাইরে। তেঁতুল জল ঢেলে নরম করে না চিবিয়েই খাওয়ার চেষ্টা করছি। অনেক কষ্টে সবগুলো শেষ করলাম। ঝালে আমার নাকমুখ লাল হয়ে গেছে। আর এদিকে চ্যালেন্জ কম্পিলিট করায় রোশনি হা হয়ে আছে। আর আমার অবস্থা। পেটের নাড়ি অবধি জ্বলছে, কান দিয়ে গরম হাওয়া বের হচ্ছে। রোশনি প্লেট আর টাকা দিতে গেল। তখন নিজেকে রিল্যাক্স করে নিলাম।
তারপর গাড়িতে বসলাম। খুব দ্রুত ড্রাইভ করছি। এসি অন করে রেখেছি। ঠান্ডা হাওয়ায় বাইরে ভালো লাগলেও ভিতরে তো আগ্নেয়গিরির উদগীরণ হচ্ছে। বাসায় গেটের ভিতর ঢুকে সাইডে গাড়ি রেখে বের হয়ে দৌড়ে গেলাম সোজা কিচেনে। ওখান থেকে জল খেয়েছি কিন্তু তাতেও ঝাল কমলো না। তারপর ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে খেলাম। হালকা কমলেও জিভ পুড়ে যাচ্ছে। হঠাৎ কেউ সামনে পানি ভরা গ্লাস ধরলো। ওটা নিয়েই খেতে লাগলাম মিষ্টি মিষ্টি লাগছে। খাওয়া শেষে পিছনে ঘুরে দেখি রোশনি হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর বলল ওটা চিনির জল ছিল। অতিরিক্ত ঝালে চিনি খেলে এমনিই ঠিক হয়ে যায় বলে বেরিয়ে গেলো। চিনির কথা বলতেই একটা শয়তানি বুদ্ধি আমার মাথায় আসল সাথে বাঁকা হাসলাম।
রুমে গিয়ে সিলিং ফ্যান ফুল স্পিডে চালিয়ে দিয়ে টানটান হয়ে শুয়ে আছি। আস্তে আস্তে অনেকটা কমে গেছে। এখন নেই বললেই চলে। রোশনি স্নান করতে গেছে। ও আনমনে টাওয়াল জড়িয়েই বের হলো। ওকে এই অবস্থায় দেখে আমি কাত হয়ে বললাম
এভাবে আসলে তো আমি পাগল হয়ে যাবো??
ও আমাকে দেখে বলল তুমি ঘুমাওনি।
বউ থাকলে রাতেই ঘুম আসে না আর তো দিনে হু।
তুমি তো মহাবজ্জাত। এখনো বসে আছো।
বসে নয় শুয়ে আছি।
ওই যাই হোক। এখন বাইরে যাও আমি ড্রেস চেন্জ করবো।
আমার রুম আমার বেড আমি এখানেই থাকবো। চাইলে এখানেই চেন্জ করো।
উফ তুমি যাবে নাকি মাকে ডাকবো।
রোশনি অগ্নিচক্ষু দেখে বললাম ওকে ওকে শান্ত হও। আমি বের হচ্ছি। তারপর আস্তে করে বেরিয়ে গেলাম।
রোশনির চেন্জ করার পর রুমে গিয়ে আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলাম। তারপর আমি মা আর রোশনি একসাথে লান্চ করছি। খেতে খেতে মা বলল আদি আমি একটু তোর মমতা আন্টির বাড়ি যাবো। আজকে ওখানেই থাকবো কাল আবার ফিরে আসবো। তুই একটু দিয়ে আসিস।
কেন হঠাৎ করে এভাবে??
আসলে ও অসুস্থ। ফোন করে যেতে বলল।
আচ্ছা ঠিক আছে। বিকালে তৈরি থেকো।
মা হেসে বলল আচ্ছা।
বিকালে মা আর রোশনি মিলে গল্প করছে। আর আমি নিজের রুমে ল্যাপটপে কাজ করছি। একটু পর রোশনি এসে বলল মা রেডি কিন্তু। তুমি রেডি হবা কখন??
ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই বললাম এই তো এখন।
তাড়াতাড়ি হও। নাহলে যেতে যেতে তো রাত হয়ে যাবে।
ল্যাপটপ অফ করে বললাম শার্ট প্যান্ট বের করে দাও।
রোশনি বলল বেডের উপরেই সব রাখা আছে।
ড্রেস নিয়ে বললাম থ্যাংক ইউ। তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে চেন্জ করে মায়ের রুমে গেলাম।
সেখান থেকে একসাথে নিচে নেমে রোশনি বাই বলে গাড়িতে বসলাম। স্টার্ট দেবার পর মা বলল কাল ফোন করলে আবার নিতে আসিস।
আচ্ছা তুমি টেনশন কোরো না। আর সাবধানে থাকবে।
প্রায় ৪০ মিনিট পর পৌঁছে গেলাম। মমতা আন্টিকেও একটু দেখে আসলাম। উনি আমাদের খুব ভালোবাসতেন। উনাদের বিদায় দিয়ে আবার গাড়ি স্টার্ট দিলাম। কিন্তু ফেরার পথে টায়ার বাস্ট হয়ে গেলো। একজনকে জিজ্ঞেস করার পর বলল সামনেই একটি গ্যারেজ পাবো। তারপর ওই ভাইয়ের সাহায্যে গাড়িটা গ্যারেজে নিলাম। অনেকক্ষণ ধরে গাড়ি রিপেয়ারিং করলো। এরপর ফিরতে ফিরতে ৯ টা ওভার হয়ে গেছে।
ড্রয়িংরুমে ঢুকে দেখি রোশনি ডাইনিং টেবিলে মুখে হাত রেখে একা একা বসে আছে।
আমি ডাক দিলাম রোশনি??
ও আমাকে দেখে খুশিতে দ্রুত এসে বলল চলে এসেছো। এত লেট হলো যে??
মনে মনে ভাবলাম অন্য কেউ হলে বলতো এতক্ষণ কোথায় ছিলে কার সাথে ছিলে। কিন্তু আমার চাসনি সবার থেকে আলাদা।
কি হলো বলো কিছু।
হু,,হুম। আগে ফ্রেশ হয়ে আসি। তুমি খাবার সার্ভ করো। খেতে খেতে বলছি।
আচ্ছা।
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি ও সবটা সুন্দর করে সাজিয়েছে। একটা চেয়ার টেনে বললাম। ও নিজের প্লেটে হাত দিতে যাবে আমি ওর হাত ধরে বললাম আজ আমি তোমাকে খাইয়ে দেবো। ইনফ্যাক্ট একসাথে এক প্লেটে খাবো। তারপর বললাম আসলে টায়ার বাস্ট হয়ে যাওয়ার গ্যারেজ করতে হলো। তাই একটু লেট হয়ে গেলো।
তোমার কোথাও লাগেনি তো।
নাহ।
তারপর গল্প করতে করতে আমি ওকে খাইয়ে দিচ্ছি আবার ও আমাকে দিচ্ছে। এভাবেই পুরো খাবার টা শেষ করলাম।
ডিনার শেষে একসাথে সবটা গুছিয়ে রুমে গেলাম। রোশনি ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে চুল বেঁধে আমার পাশে এসে বসলো। আমি নখ দেখতে দেখতে বললাম আজ কিন্তু একজন বলেছিল আমি চ্যালেন্জে উইনার হতে পারলে যা চাবো তাই দেবে।
এবার রোশনি একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল তো কি আমি না বলেছি। বলো কি চাই তোমার। টাকা লাগবে নাকি ট্রিট বলো বলো।
টাকাও না আর ট্রিটও না। আমার চাই হলো,,,
আরে কি বলো তো।
তুমি এখন আমাকে লিপ কিস করবে।
রোশনি চোখ বড় বড় করে একটু সরে বলল কিই??
হ্যা তাড়াতাড়ি।
ওয়েট ওয়েট। আমি কিভাবে কিস করবো। ওসব আমি পারিনা বাবা।
কোনো কথা নয়। ঝাল যখন খাইয়েছো। তখন তো দিতেই হবে। আর এটাও তোমার থেকে পেয়েছি।
মানে কিভাবে??
মনে আছে চিনির জল খাইয়ে ছিলে। মানে মিষ্টি। আর এখন যদি আমার সুইট বউয়ের সুইট কিস পাই তাহলে তো একদম দিল খুশ হয়ে যাবে আমার।
অসভ্য একটা।
সে যাই বলো। এখন কুইকলি নাহলে কিন্তু,,,
রোশনি আমার ইঙ্গিত বোঝার সাথে সাথেই আচমকা ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিলো। তারপর আমরা পাড়ি দিলাম ভালোবাসায়।
চলবে,,,,,