বালিকা বউ 🥰পার্টঃ১৬

0
4727

#বালিকা_বউ 🥰

#পার্টঃ১৬
লেখিকা ঃ মারিয়া

সাথে সাথে আমি ছিটকে সরে গেলাম। আর রোশনি নুন হলুদ দিতে ব্যাস্ত।
ইশু পা টিপে টিপে এসে কড়াইতে উঁকি দিয়ে আমার দিকে হাসিমুখ করে তাকিয়ে বলল
কিরে দাদা,, এত সকাল সকাল কিচেনে তুই। রান্না শিখছিস নাকি শিখাচ্ছিস।
আআমি কেন এসব করতে যাবো। কিন্তু তুই এখানে কি করছিস হুমম।
মায়ের উঠতে লেট হচ্ছে দেখে ভাবলাম যাই কিচেনে বৌদি থাকলে হেল্প করবো। কিন্তু এখানে এসে দেখছি হেল্পিং হ্যান্ড হাজির বলে মুখ টিপে হাসছে।
তবেরে,,, ও দিল দৌড় আর আমিও ওকে ধরার জন্য পিছু পিছু ছুটছি।

তারপর ব্রেকফাস্ট করতে বসলাম সবাই একসাথে। তখন ইশুকে অনেক কষ্টে ও ধরতে পারিনি। তাই নিয়ে ননদ বৌদি মিলে হাসাহাসি করছে। রোশনি ব্রেকফাস্টে করেছে গরম গরম লুচি আর কসামাংস। দেখেই জিভে জল চলে এসেছে। রাজ বলল সত্যি বৌদিমনি আপনার রান্নার তারিফ না করে পারছি না। দাদা ভীষণ লাকি। একটু ইশিতাকেও শিখিয়ে দেবেন তো।
ইশু চোখ ছোট ছোট করে বলল কিই আমি কি রান্না পারিনা।
না জানো কিন্তু আরেকটু।
শোনো এই যা শিখেছি বৌদির জোরাজুরিতে। এর থেকে বেশি চাইলে তোমার খাবার বন্ধ।
মা বলল ইশু কি হচ্ছে?? এভাবে কেউ কি কথা বলে।
মায়ের কথায় ইশুও চুপ হয়ে গেলো। সাথে বাকি সবাই অন্য গল্প করে খেতে লাগলাম।

বিকালে,,, আজ সারাদিন বাসায়ই আছি। ছাদে রাজকে নিয়ে আড্ডা দিচ্ছি রিত্তিক অমিও এসেছে। এর মধ্যে ইশুও চলে আসল। সবাই খুব হৈ-হুল্লোড় করছে। শুধু আমি ছাদের দরজার দিকে কিছুক্ষণ পর পরই তাকাচ্ছি। কারন আমার বউটার কোনো খোঁজ নেই। ইশুর কানে কানে বলল
বৌদিকে ডেকে দেবো দাদা।
একটু নড়েচড়ে বসে বললাম তোর আর কোনো কাজ নেই তাইনা আমার পিছে না লাগা ছাড়া। এতই যখন বুঝিস যা না ডেকে নিয়ে আয়।
আসছে,, কিচেনে আছে।
এর মধ্যে রোশনি দূর থেকে বলল এসে গেছি এসে গেছি আমি। আর সাথে গরম চা আর পকোড়া।
অমি বলল এই নাহলে বৌদি। সত্যি বৌদি মনটা এতক্ষণ চা চা করছিলো। ওর কথায় আমরা সবাই হেসে দিলাম।

তারপর অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম। অমি রিত্তিক উঠে বলল
ভাই সন্ধা পেরিয়ে গেছে। এখন আমরা যাই। আবার পরে দেখা হবে।
আচ্ছা see you later. by.
by.
রাজের ফোন আসল। ও নিচে নেমে গেল সাথে ইশুও। ছাদে এখন আমি আর আমার চাসনি আছি। ওকে কোলে তুলে নিলাম।
ও বলল আরে করছেন টা কি?? পড়ে যাবো তো??
কিই আমার মত একটা বডি বিল্ডারের কোলে উঠে পড়ে যাওয়ার ভয় হচ্ছে।
তাই নাকি।
কেন তোমার সন্দেহ আছে নাকি। লন্ডনে সপ্তাহে তিনদিন জিম করতাম। আর এক্সারসাইজ তো রেগুলারই।
হয়েছে এবার নামান।
নামিয়ে ওকে কাছে টেনে বললাম আকাশটা দেখো। কত সুন্দর তাইনা।
হ্যা ডোবা সুর্যের পাশে বিভিন্ন কালারের আলো আরও মায়াবী করে তুলেছে।
ঠিক তাই।

বেশ কিছুক্ষণ ওখানে থেকে রুমে গেলাম। মা এসে বলল ওরা আজ রাতেই নাকি চলে যাবে।
কিন্তু কেন??
বলল কাজ আছে। সব গোছগাছ করছে।
আমি ইশুর রুমে গেলাম। দুজনে লাগেজ প্যাক করছে। রাজকে বললাম কি ব্যাপার। আজই চলে যাচ্ছো কেন??
আসলে দাদা হসপিটালে এমারজেন্সি পেসেন্ট আছে। তো ওখানে আমার তো একটা রেসপনসেবলিটি আছে। বিকালে হসপিটাল থেকেই কল করেছিল। তাই এখনি যেতে হবে।

আচ্ছা ইশুকে কয়েকটা দিন রেখে যাও।
সরি দাদা আসলে প্রথমবার আসলাম তো। তাই মা বলেছে জোর না ভাঙতে। দুজনকেই ফিরতে হবে।
ইশুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও মুখ গোমড়া করে দাড়িয়ে আছে। আমি মাথায় হাত রাখতেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল সরি রে থাকতে পারলাম না। খুব মন খারাপ লাগছে।
চিন্তা করিস না। এরপর এলে এক মাসের আগে যেতে দেবো না।
ওদের গোছানো শেষ হলে গাড়িতে করে স্টেশন অবধি পৌঁছে দিলাম।

বাসায় এসে দেখি রোশনি ডাইনিং টেবিলে বসে আছে।
তুমি এখনো ঘুমাওনি।
তুমি চলে এসেছো।
হ্যা।
আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আসো। একসাথে ডিনার করবো।
ফ্রেশ হয়ে এসে বসে প্লেট উল্টাতে উল্টাতে বললাম মা খেয়েছে।
হ্যা খাবার পর ওষুধ দিলাম। খেয়ে ঘুমাতে গেলো।
তুমিও খেয়ে নিতে।
হ্যা আর তুমি না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়তে।
তারপর একসাথে খেয়ে ঘুমাতে গেলাম।

সকালে রোশনি নড়াচড়া করছে। আমি চোখ বন্ধ করেই বললাম
এত নড়ছো কেন??. নিরিবিলি থাকতে পারো না।
আরে মশাই উঠবো আমি।
এত তাড়াতাড়ি উঠে কি হবে। চুপচাপ ফিল করো।
কি আবার।
এই যে তোমাকে জড়িয়ে রেখেছি এটা।
তোমার সবসময় এত রোমান্টিক মুড থাকে কিভাবে একটু বলবে।
এক চোখ খুলে বললাম এর উপর পিএইচডি করেছি তো তাই বলে আবার চোখ বন্ধ করলাম।
রোশনি মুখ ঘুরিয়ে বলল বাঁদর একটা।

এর মধ্যে এর্লাম বেজে উঠলো। রোশনি বলল আরে ৮ টা বেজে গেছে। ছাড়ো আমাকে কলেজে যেতে হবে। এবার ছেড়ে দিলাম কারন আমাকেও তো যেতে হবে। রোশনি বেড থেকে নামার আগেই আমি নেমে সোজা দৌড়ে ওয়াশরুমে গেলাম।
তারপর দরজা খুলে শুধু মুখ বের করে ভ্রু নাচাচ্ছি।
এটা কি হলো।
ওটা তুমি বুঝবে না।
তোমাকে তো আমি,,, বলে বেডের উপর রাখা একটা টেডিটয় ছুঁড়ে মারল। আমিও সাথে সাথে দরজা বন্ধ করে দিলাম।
স্নান সেরে তাকিয়ে দেখি টাওয়াল আনতেই ভুলে গেছি। এখন কি করবো। আস্তে দরজা খুলে রোশনিকে ডাকতে লাগলাম।
রোশনি ফ্লোরে পায়চারি করছে। তারপর চেচিয়ে বলল কি,,, হলো তোমার। দরজায় আমাকে দেখে বলল সকাল সকাল কি শুরু করেছো বলোতো। আজ কি বের হবা না। নাকি ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ ডিনার সব ওয়াশরুমেই পাঠিয়ে দেবো।

আরে বাবা আস্তে আস্তে। এত জোরে চেচাচ্ছো কেন। তারপর বেবি ফেস করে বললাম আসলে টাওয়াল টা নিতে ভুলে গেছি। একটু এগিয়ে দাও প্লিজজ।

উফ এই লোকটা আমাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে। টাওয়াল সামনে ধরে মুখ অন্যদিকে রেখে বলল এই নাও ধরো।

আমার মাথায়ও একটা শয়তানি বুদ্ধি চলে এলো। ওর হাত ধরে দিলাম হেঁচকা টান। এক টানে ওয়াশরুমে এনে দরজা বন্ধ করে দিলাম।

এটা কি করলে??

কেন আমার বউয়ের সাথে শাওয়ার নেবো তাই।
তোমাকে তো,,,বলার সাথে সাথে ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে দিলাম। প্রায় আধঘন্টা ধরে শাওয়ার শেষ করে দুজনে বাইরে বেরিয়ে এলাম। রোশনি তো আমার দিকে তাকাচ্ছেই না। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর মুচকি হাসছে।
চুল মুছতে মুছতে বললাম কি ম্যাডাম এত হাসছেন। আগে বললেই পারতে আমার সাথে শাওয়ার নিতে চাও।

তুমি কিন্তু দিন দিন খুব অসভ্য হচ্ছো।
ওর দিকে ঝুঁকে বললাম সেটা আরও ৭ বছর আগে থেকেই ছিলাম। কিন্তু এখন সেটার প্রয়োগ করছি।

মানে তোমার সাথে কথায় পারবো না বলে আলমারি থেকে একটা ড্রেস বের করে ওয়াশরুমে গেল। আমিও রেডি হয়ে নিলাম।

রোশনি নীল রংয়ের লং রাউন্ড ড্রেস সাথে চুরিদারি আর ম্যাচিং ওড়না। চুলগুলো সাইড করে বেনি করলো। মুখে হালকা পাউডার ছোট টিপ লিপস্টিক আর হাতে ঘড়ি।
ওর সাথে ম্যাচিং করে আমিও নীল শার্ট সাথে কালো প্যান্ট জুতা, হাতে ঘড়ি পড়লাম আর সানগ্লাস। তারপর দুজনে একসাথে নিচে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম।

মাকে বলে গাড়িতে বসে স্টার্ট দিলাম। দুজনেই চুপচাপ আছি হয়তো সকালের ব্যাপারটা নিয়ে। রোশনি মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে আবার আমিও তাকাচ্ছি। চোখাচোখি হলেই চোখ সরিয়ে ফেলছে। কলেজের সামনে গাড়ি ব্রেক করলাম।
রোশনি বলল আমি গেলাম তাহলে। ক্লাসে দেখা হচ্ছে।
ও বের হতে যাবে তার আগেই ওর হাত ধরে ফেললাম। আমার দিকে তাকিয়ে বলল কি??
আমার পাওনাটা কে দিবে শুনি।
কিসের পাওনা??
কেন সকালে যেটা দিলাম।
কিন্তু এখানে??
বাঁকা হেসে বললাম চলো তাহলে আবার ওয়াশরুমে যাই।
উফ আপনিও না। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল তেমন কেউ নেই। আমার কপালে একটা কিস করলো। তারপর গাড়ি থেকে ছুটে নেমে গেল। আমিও হালকা হেসে আবার ওকে দেখে সামনে পার্ক করে রাখলাম।

১১ টায় বেল বাজলো। আজও রোশনির ক্লাস আছে আমার। তাই এক মিনিট ও দেরী না করে ক্লাসে গেলাম। আজ রোশনি ফার্স্ট চেয়ারে বসেছে। আমাকে আসতে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে পড়লো। সবাইকে বসতে বলার পর লেকচার শুরু করলাম। রোশনির দিকে তাকাতেই ও চোখ মারল। বড়সড় একটা ঝটকা খেলাম। আর কথারও এলোমেলো হয়ে গেলো। অন্য দিকে চোখ সরিয়ে আবার কনসেন্ট্রেট করছি। কিন্তু বেহায়া চোখে আবার ওর দিকে তাকাতেই ফ্লাইং কিস ছুড়লো। সাথে সাথে কাশি চলে আসলো।

আসলে ক্লাসের মেয়েগুলো এত মগ্ন হয়ে আমার কথা শুনছে। আশেপাশে কি হচ্ছে কেউ দেখতেই পারছে না। তখনি একটা মেয়ে জলের বোতল আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি বোতলটা খুলে তিনবার জল খেয়ে মেয়েটাকে দিলাম। এবার রোশনির দিকে তাকাতেই ও চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে কলম ঘোরাচ্ছে। জানিনা আজ বাড়ি গেলে কি আছে কপালে।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here