বালিকা বউ 🥰পার্টঃ১৫

0
5171

#বালিকা_বউ 🥰

#পার্টঃ১৫
লেখিকা ঃ মারিয়া

মনে মনে ভেবে নিলাম আজ রোশনিকে একটা সারপ্রাইজ দেবো। সন্ধার আগে সবকিছুর এ্যারেন্জমেন্ট করে রোশনিকে বললাম রেডি হতে। ও বলল কিন্তু কেন??
যা বলছি তাই করো।
ঠিকাছে।
রোশনি সুন্দর করে একটা লাল শাড়ি পড়ে সাথে হালকা সেজে বের হলো। আজ উপর থেকে চোখ সরাতেই পারছি না। দুই গাল টেনে বললাম খুব সুন্দর লাগছে।
রোশনি হালকা হাসলো। তারপর নিচে গিয়ে গাড়ি বের করে স্টার্ট দিলাম। গাড়ি নিজের গতিতে চলছে। এর মধ্যে কয়েকবার জিজ্ঞেস করল
কোথায় যাচ্ছি আমরা।
মেরিজান একটু ধৈর্য ধরো। গেলেই বুঝতে পারবে। প্রায় আধঘন্টা পর আমরা পৌঁছে গেলাম। ও নামার পর চোখ বেঁধে দিয়ে বললাম চলো এবার। আর একদম চুপ।
ওর হাত ধরে নিয়ে এক জায়গায় দাড় করানোর পর চোখের বাঁধন খুলে দিলাম। ও চারদিকে তাকিয়ে দু হাত দিয়ে বিস্ময়ে মুখ ঢাকলো। কারন ওর চারপাশে রাউন্ড করে লাইটিং করা। উপর দিয়ে জোনাকির মত লাইট উড়ছে।

আমিও ওর পাশে দাড়ালাম।
এগুলো আমার জন্য।
নাহ এগুলো আমার একমাত্র বউয়ের জন্য।
ও বুকে আস্তে করে একটা কিল মারলো। তারপর বললাম চলো ওদিকে। সেখানে নিয়ে গিয়ে রিমোটের বাটন চাপতেই চারপাশ আলোকিত হয়ে গেলো। ও চোখ বড় বড় করে সেগুলো ধরে ধরে দেখছে।
আমি বললাম কি ম্যাডাম পছন্দ হয়েছে।
একদম।
সারপ্রাইজ তো এখনো বাকি।
ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল আর কি??
চলো ওদিকে।

এবার নদীর পাড়ে নিয়ে গেলাম। ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। আমি পকেটে হাত গুঁজে দাড়িয়ে আছি। আর রোশনি ওর দুহাত প্রসারিত করে শ্বাস নিচ্ছে। এরপর একটা বড় নৌকা আসল যেটার দুই পাশ ফুল দিয়ে সাজানো ছিল। মাঝিকে আগে থেকেই বলে রেখেছিলাম। রোশনি দেখে আমার পাশে এসে বলল
এতকিছু তুমি করেছো??
জিহ মহারানী।
কিন্তু কেন??
কারন,,,তোমার মুখের মিষ্টি হাসিটা দেখবো তাই। ওঠো এখন।
প্রথমে রোশনিকে উঠিয়ে তারপর নিজে উঠলাম। মাঝি বৈঠা দিয়ে বেয়ে চলেছে। রোশনি পানিতে হাত দিচ্ছে আবার জল ছিটিয়ে দিচ্ছে আমার দিকে। ও যে আজ অনেক খুশি হয়েছে সেটা দেখেই বুঝতে পারছি। অনেকক্ষণ এভাবে নৌকায় ঘুরলাম।

এবার বাড়ি ফেরার পালা। এমনিতেও ১১ টা বেজে গেছে। রোশনি তো যেতেই চাইছিলো না। কত বছর পর নৌকায় উঠল। আবার আমার সাথে টাইম স্পেন্ড করলো। তারপর বুঝিয়ে পারে নিয়ে আসলাম। ও আমার কোমরে হাত রেখেছে আর আমি ওর কোমরে। এভাবেই হাঁটছি একসময় বললাম
চাসনি।
ও কিছুক্ষণ পর বলল হুমম।
একটা কিস করবে।
ইস কি এখন।
হ্যা আমি তোমাকে কিস করেছি তখন নিজেকে ভাগ্যবতী ভেবেছো। এবার আমাকেও করো। আমিও একটু ভাগ্যবান হই।
রোশনি অবাক চোখে তাকিয়ে বলল তুমি কি কোনোভাবে আমার ডায়রিটা পড়েছো।
হেসে দিয়ে বললাম হ্যা ইশু দিয়েছিলো।
সবই কি পড়েছো??
হ্যা না পড়লে কি জানতাম আমার পিচ্চি বউটা আমাকে এত্ত ভালোবাসে। এত মিস করেছে।

এর মধ্যেই গাড়ির কাছে চলে আসলাম। রোশনি বলল আমি ড্রাইভ করবো।
তুমি পারবে তো??
কেন ইশু বলেনি আমি সাইকেল বাইক আর কার ড্রাইভিং ও করতে পারি।
অবশ্যই বলেছে। আচ্ছা চলো তাহলে।
রোশনি গাড়ি স্টার্ট দিলো। সত্যি খুব ভালোই ড্রাইভ করতে পারে।
বাসার সামনে গাড়ি ব্রেক করে মেইন দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখি মা আর ইশু বসে আছে। অলরেডি ১২ টা বাজতে গেলো। এতক্ষণ জেগে আছে কেন??
ইশু আমাদের দেখে বলল দেখো মা তোমার ছেলে বৌমার এই আসার সময় হলো। তোদের জন্য সেই কখন থেকে ওয়েট করছি জানিস।

কিন্তু কেন??
তারপর মা আমার চোখ বেঁধে দিলো। আর ইশু রোশনিরটা। দুজনকে একসাথে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিয়ে গেলো। তারপর চোখ খুলে দিলো। ভালো করে তাকিয়ে দেখার পর আমার চোখ ছানাবড়া। দুজনই দুজনের দিকে তাকালাম। কারন পুরো রুমটা ফুলসজ্জার মত ফুল দিয়ে সাজানো। ক্যান্ডেল জ্বলছে। মা মুচকি মুচকি হাসছে। ইশু বলল অনেকদিনই তো আলাদা ছিলিস। আজ থেকে তোরা একসাথে থাকবি আর এটা মায়ের ইচ্ছা।

মনে মনে মা কে উবুড় হয়ে প্রনাম করতে মন চাইছে। আমার কাজটা এত সোজা করে দেবে ভাবতেই পারিনি। মা ইশু বের হয়ে বাইরে থেকে দরজা লক করে দিলো।
আমি একটু গলা ঝেড়ে বললাম সামনে দেখেছো কি??
চাসনি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।
তারপর ওকে বেডে বসালাম। নিচে বসে ওর হাত ধরে বললাম আজ সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিতে চাই। ধরবে আমার হাত??
রোশনি মাথা নাড়ল।
তারপর ডেস্ক থেকে একটা গিফট বের করে ওর হাতে দিয়ে বললাম লন্ডন থেকে এটা তোমার জন্য আগেই এনেছিলাম। কিন্তু তখন দেইনি আজ দিচ্ছি।
কি এটা বলে খুলে দেখল একটা আইফোন। আইফোন?? কিন্তু এটা আমার লাগবে না। আপনার ফোনটাও তো নষ্ট হয়ে গেছে প্রায়। এটা বরং আপনিই রাখুন।

তোমার জন্য যখন এনেছি তুমিই রাখো। দরকার পড়লে আমি একটা কিনে নেবো। তারপর সেই শাড়িটা ওর হাতে দিলাম।
এটা আবার কবে কিনলেন??
ওই ফার্স্ট শপিং করতে গিয়েছিলাম তখন পছন্দ হয়েছিল। আর কিনে নিলাম। যাও এটা এখন পড়ে এসো।
আচ্ছা বলে ওয়াশরুমে গেল।
বের হবার পর ওকে দেখে পুরো ফিদা হয়ে গেছি। কোমড় ছাড়ানো চুল গুলো ছে্রে রেখেছে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে দেখতে। আমিও আস্তে আস্তে করে ওর কাছে এগিয়ে গেলাম। তারপর কপালে কিস করে কোলে তুলে বেডের উপর শুইয়ে দিলাম। পাশে থাকা ক্যান্ডেল গুলো নিভিয়ে দেবার পর,,,,,,, রোশনিকে নিজের করে পেলাম সারাজীবনের জন্য।

সকালে,,, রোশনি ৭ টার পরপরই উঠে গেছে। আমি শার্ট বিহীন শুধু পেট অবধি একটা ব্লাংকেট জড়িয়ে শুয়ে আছি। অনেকবছর পর ওকে বুকে জড়িয়ে ঘুমালাম। এক আলাদা প্রশান্তি লাগছে। বেশ কিছুক্ষণ পর আমিও উঠে গেলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গিয়ে দেখি রোশনি একা একা রান্না করছে। আপাতত ময়দা মাখছে। আমি পা টিপে টিপে পিছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।
ও ভয়ে লাফিয়ে উঠে বলল
আপনি,,, উঠে গেছেন??
হ্যা আর এখন তোমাকে জ্বালাতে এসেছি।
সারারাত জ্বালিয়েও আপনার শখ মেটেনি নাকি।
নাহ গো।
আহ ছাড়ুন কেউ তো চলে আসবে।
কেউ আসবে না বলে ওর কানে ফু দিচ্ছি, আবার পেটে পিঠে সুরসুরি দিচ্ছি। আর ও রাগী লুকে আমার দিকে তাকাচ্ছে। এক পর্যায়ে ওর গলায় হালকা ভাবে স্লাইড করছি। রোশনিও একদম শক্ত ভাবে দু পাশের শাড়ি ধরে দাড়িয়ে আছে।
হঠাৎ পিছন থেকে কেউ বলল সরি সরি। আমি কিন্তু কিছু দেখিনি। বলে চোখ বন্ধ করলো।
পিছনে ফিরে দেখি ইশু। সাথে সাথে আমি ছিটকে সরে গেলাম। আর রোশনি নুন হলুদ দিতে ব্যাস্ত।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here