বালিকা বউ 🥰পার্টঃ১৮

0
4419

#বালিকা_বউ 🥰

#পার্টঃ১৮
লেখিকা ঃ মারিয়া

সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম। নেমে দেখি রোশনি টেবিলে সবকিছু রাখছে। আমাকে দেখে বলল
গুড মর্নিং।
গুড মর্নিং।
আচ্ছা বসো। তোমার ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি।
ওকে চলো একসাথে ব্রেকফাস্ট করি।
তারপর রোশনি সুন্দর করে সবটা সাজিয়ে দিলো। খাওয়া শেষ করে রুমে এসে দুজনে রেডি হচ্ছি কলেজে যাবার জন্য। রোশনি আমার শার্টের সবগুলো বোতাম আটকে তারপর টাই বেধে দিলো। তারপর নিচে নেমে গাড়িতে বসলাম। যেতে যেতে অনেক কথা বলতে বলতে গেটের সামনে এসে গাড়ি ব্রেক করলাম। রোশনি সব সময়ের মতো কপালে কিস করে বাই বলে ভিতরে গেলো।

রোশনিকে দেখে অনু এগিয়ে এসে বলল ম্যাম কেমন আছেন। রোশনি ব্যাগটা রেখে বলল হঠাৎ ম্যাম বলে ডাকলি কেন হুমম।
বারে স্যারের বউ তো ম্যাম ই হবে। কিন্তু সত্যি তোর লাকটা ভালো। এত্ত গুড লুকিং আর কিউট ছেলে তোর বর।
এই একদম নজর দিবি না।
ওকে ম্যাম।
এর মধ্যে বেল বেজে গেলো। যে যার সিটে বসলো। দ্বিতীয় পিরিয়ডে আমার ক্লাস। ক্লাসে গিয়ে দেখলাম সবাই খুব সিরিয়াস মুখ করে বসে আছে। কারন আগে থেকেই বলে ছিলাম আজ টেস্ট এক্সাম নেবো। সবাই আগে থেকেই খাতা কলম নিয়ে রেডি। রোশনি খুব টেনশনে আছে বোঝা যাচ্ছে। হয়তো কাল আমার জন্যই পড়তে বসতে পারে নি।
কিন্তু এখন এক্সাম নেওয়া বাদ করাও যাবে না। তাই রোশনিকে চোখের ইশারা দিয়ে টেনশন করতে বারন করলাম। তারপর হোয়াইট বোর্ডে কোয়েশ্চন লিখছি। পুরো ৪০ মিনিট খুব কড়াকড়ি ভাবে এক্সাম দিলো।

দুপুরে কলেজ টাইম শেষ। এর মধ্যে মা ও ফোন করেছে তাকে নিয়ে যেতে। এখন রোশনিকে বাড়ি রেখে আসতে গেলে অনেক টাইম লস্ হবে। তাই ওকে নিয়ে যাওয়ারই ডিসিশন নিলাম। গাড়ি স্টার্ট করার পর জিজ্ঞেস করলাম এক্সাম কেমন হলো??
মাথা নিচু করে বলল বেশি ভালো না। এত কঠিন কঠিন ম্যাথগুলো।
হায় হায় আমার বউ হয়ে যদি ফেল করো। পুরো কলেজে আমি মুখ দেখাবো কি করে।
ইস সামান্য ক্লাস টেস্ট। এমন করছো মনে হয় বোর্ড এক্সাম।
রোশনির কথায় যুক্তি আছে দেখে চুপ করে গেলাম।

গাড়ি চলতে চলতে হঠাৎ ব্রেক করলাম। রোশনি বলল
কি হলো??
ওয়েট একটু আমি আসছি। আমি রোশনির জন্য আইসক্রিম আনতে গেলাম।
রোশনি একা গাড়িতে বসে আছে। এমন সময় একটা বাচ্চা মেয়ে এসে বলল দিদি ফুল নিবেন। দেখুন তাজা ফুল। মেয়েটার ছিপছিপে গড়নের শরীর, ফর্সা হলেও মুখে কালো ছাপ, কপালে একটা কাটা দাগ আর হাতে অনেকগুলো গোলাপ ফুল। রোশনির ওকে দেখেই ভীষণ মায়া হলো। রোশনি গাড়ি থেকে নেমে বলল তোমার নাম কি বাবু??
চাঁদনী।
বাহ খুব সুন্দর নাম। তারপর আরও কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো মেয়েটা এতিম। পাশের বস্তিতেই থাকে। ফুল বিক্রি করে যা পায় তাই দিয়েই হোটেল থেকে খাবার কিনে খায়। তাই রোশনি আর দেরী না করে সবগুলো ফুল কিনে নিলো।

আমি এসে দেখলাম রোশনি গাড়িতে বসা আর হাতে অনেকগুলো গোলাপ ফুল। বললাম এগুলো কে দিয়েছে??
কিনলাম মাত্র। কত সুন্দর তাই না।
হুম খুব সুন্দর দেখতে।
তারপর দেখলাম সারারাস্তা রোশনি বেশ চুপচাপ। চাঁদনীর সাথে কথা হয়েছে সবটাই বলেছে কিন্তু তার পর থেকেই কিছু একটা ভাবছে মনে হয়। তাই আমিও বেশি জোর করিনি।

ও বাড়ি পৌঁছে দেখলাম মা আর আন্টি মিলে গল্প করছে। আমাদের দেখে খুব খুশি হলেন। রোশনিকে দেখে বলল অনিতা তোর বৌমা তো ভারী মিষ্টি দেখতে। তারপর আমাদের খেতে দিলো। খেতে খেতে অনেক গল্প করলাম। খাওয়া শেষে রোশনিকে নিয়ে নিজের রুমে গেলো। বলল তুমি এই প্রথম আমার বাড়িতে আসলে। আলমারি থেকে একটা গলার হার এনে ওর গলায় পড়িয়ে দিল।
এরপর বললেন আদিত্যের মত আমারও একটা ছেলে আছে। কিন্তু এখন বউ বাচ্চা নিয়ে মালয়েশিয়া থাকে। ভালো করে আমার খোঁজখবর ও নেয় না। আঁচলে চোখ মুছে বললেন চোখের দেখাও দেখতে পাই না।
রোশনিও ওনাকে স্বান্তনা দিলেন। প্রায় বিকাল অবধি ওখানে থেকে আন্টিকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে বসলাম। আমি ড্রাইভ করছি মা আর রোশনি পিছনের সিটে একসাথে বসলো। সত্যি মায়ের প্রতি ওর এত ভালোবাসা যত্ন দেখে আমি নিজেই মুগ্ধ হয়ে যাই।

রাতে ডিনারের সময় মা বলল আমার এখন একা একা থাকতে ভালো লাগে না।
আমি জল খেয়ে রেখে বললাম কেন মা আমরা কি এ বাড়িতে নেই।
তোরা তো থাকিস। কিন্তু বেশিরভাগ সময় কলেজে এখানে ওখানে।
রোশনি বলল তো মামনি ঠিক আছে এবার থেকে আমরা তোমার সাথেই থাকবো।
আহহ তোরা বুঝতে পারছিস না। আমি একটা নাতি নাতনি চাচ্ছি।
রোশনি আনমনে বলল ওও এই ব্যাপার। তারপর বুঝতে পেরে বলল দৌড়ে উপরে চলে গেলো।
আমি মা দুজনেই হেসে দিলাম। তারপর মাকে বললাম এত তাড়াতাড়ির কি আছে।
তোদের বিয়ের এই ৭ বছর চলছে। এখনো এই কথা বলিস। আগে তো না হয় ছোট ছিল কিন্তু এখন তো পার্ফেক্ট আছে। আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না আদি। আমার নাতি নাতনি চাই ই চাই বলে উঠে গেলো।
আমি পড়লাম মহাবিপদে।

উপরে রুমে গিয়ে দেখি রোশনি নেই। তারপর মনে হলো বেলকনিতে গিয়ে দেখলাম ওখানে একা একা দাঁড়ানো। আমি পাশে গিয়ে বললাম কি হলো এখানে দাঁড়িয়ে যে, ঘুমাবে না??
হ্যা আর তুমি।
ঘুমাবো পরে। আগে এক্সামের খাতাগুলো দেখতে হবে।

আচ্ছা একটা কথা বলি। মায়ের ইচ্ছেটা পুরন করলে হয় না।
আমার মাথায় তো আকাশ ভেঙে পড়লো। রোশনি নিজের মুখে এই কথা বলছে। তারপর বললাম তা করা যেতেই পারে। এখন ঘুমিয়ে পড়ো। আমি খাতাগুলো দেখি কেমন।
আচ্ছা।

সকালে অনেক দেরীতে ঘুম ভাঙলো। ব্রেকফাস্টের সময় মা বলল আমি কাল ইশুর সাথে কথা বলেছি। তোদের হানিমুনে পাঠাবো।
মা কিন্তু,,,
কোনো কিন্তু নয়। এটাই ফাইনাল।

ব্রেকফাস্ট শেষ করে দুজনে কলেজে গেলাম। আজ ওদের টেস্টের রেজাল্ট দিলাম। রোশনির মোটামুটি রেজাল্ট হয়েছে।

রাতে বাড়ি ফিরে রোশনি বলল আচ্ছা এক কাজ করলে হয় না।
কি আবার।
হানিমুন টা ক্যান্সেল করে দেই।
কিন্তু কেন??
আমি ভাবছি হানিমুনে যে টাকাটা খরচ হবে ওটা দিয়ে আমরা কয়েকটা অনাথ বাচ্চা কে হেল্প করবো।
একটু নড়েচড়ে বসে বললাম কি বলতে চাইছো একটু ক্লিয়ার করে বলোতো।
আসলে বস্তির আশপাশে অনেক এতিম বাচ্চা আছে। ওদের অনেক কষ্ট। তাই চাইছি ওদের তো হেল্প করবোই সাথে অনাথ আশ্রমেও হেল্প করবো। প্লিজ আমার এই আবদারটা রাখো।

রোশনির এমন আবদার শুনে আমার মনটা জুড়িয়ে গেলো। এত সুন্দর ভাবনা কয়জনেই ভাবতে পারে। তাই হ্যা বললাম। রোশনি খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here