বালিকা বউ 🥰পার্টঃ২০

0
4055

#বালিকা_বউ 🥰

#পার্টঃ২০
লেখিকা ঃ মারিয়া

শুধুমাত্র বংশ রক্ষার জন্য নিজের মেয়ের থেকেও যাকে বেশি ভালোবাসে মা সেই রোশনির বিপক্ষে কথা বলছে।
আমি আর নিচে না দাঁড়িয়ে উপরে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখলাম রোশনি বালিশে মুখ গুঁজে কাদছে। আমি আস্তে করে ওর পাশে বসে বেশ কিছুক্ষণ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। কিছু বললাম না কারন জানি এখন কোনো স্বান্তনাই ওকে শান্ত করতে পারবে না। আর কাঁদলে যদি মনের কষ্ট টা কমে যায়।

এরপর ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। বাইরে বেরিয়ে দেখি রোশনি ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়েছে। বালিশ ভেজা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। হাঁটু ভেঙে বসে আলতো করে চুলগুলো সরিয়ে দিলাম। দেখতে কি নিস্পাপ লাগছে। কতক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমি,,, নিজেও জানিনা। তারপর আস্তে আস্তে ডাকলাম
ও চোখ মেলে আমাকে দেখে উঠে বসলো। তারপর বলল কিছু লাগবে।
নাহ তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আর এখনো তো কিছু খাওনি।।
খাবো না খুদা নেই।
রোশনি বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু। পৃথিবীতে এমন অনেক মেয়ে আছে যারা মা হতে পারে না। তারা কি বেঁচে থাকে না। এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে দম নিলাম। তারপর ওর মুখ হাতে ধরে বললাম দেখো এতে তোমার কোনো দোষ নেই। it was an accident.

আমি এতগুলো কথা বললাম কিন্তু রোশনি আর কিছু না বলে বেড থেকে নেমে তোয়ালে নিয়ে বলল তুমি খেয়েছো??
নাহ তোমাকে ছাড়া খাই কি করে??
একটা শ্বাস ফেলে বলল আচ্ছা বসো তুমি আমি এখনি স্নান সেরে আসছি। বলে ওয়াশরুমে গেলো।

রোশনি ড্রেস চেন্জ করছে আর আমি খাবার নিয়ে আসলাম৷ তারপর একসাথে খেতে বসলাম আমি রোশনিকে খুব যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছি। এসময় মেয়েদের একটা সাপোর্ট দরকার যেটা আমি ওকে সবসময় দেবার চেষ্টা করবো।
রোশনি খেতে খেতে বলল মা খেয়েছে??
হুমম শ্যামলি দিয়ে এসেছে।
আচ্ছা। এখন কি করছে??
সেটা জানিনা। হয়তো ঘুমিয়েছে। তুমি খাও চুপচাপ করে।
তুমি তো খাচ্ছোই না।
এভাবে কথায় কথায় ওকে সবগুলো খাবার খাওয়ালাম। এবার বললাম চুপ করে ঘুম দেবে একদম রিল্যাক্স মুডে।

ও বলল আর তুমি??
আমার একটু বাইরে কাজ আছে। সন্ধার আগেই চলে আসবো।
আচ্ছা কিন্তু সাবধানে।
ওকে মেরিজান।
আমি প্লেট নিচে রাখতে গেলাম এসে দেখি রোশনি গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে। তারপর রেডি হয়ে ওর কপালে একটা কিস করে ফোন নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

এভাবে চলে গেলো আরও একমাস ##
ওর পর থেকে মা রোশনির সাথে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছেন। সারাক্ষণ নিজের ঘরেই থাকে। এমনকি রোশনির রান্না করা খাবার ও খায় না। এর জন্য মাঝরাতে ও রোশনির ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার শব্দ পাই। রোশনিও কেমন মনমরা হয়ে থাকে, বেশিরভাগ সময় আশ্রমে বাচ্চাদের সাথে কাটায়। বা একা একা ছাদে থাকে।
আমিও কলেজের জবটা ছেড়ে দিয়ে বিজনেসে জয়েন করেছি। কাজের পর যতটুকু সময় পাই মা আর রোশনিকে দেই। কিন্তু দুজনের সম্পর্ক এখনো ঠিক হয়নি।

আমি অফিসে আছি। দুপুরের দিকে রোশনির কল এলো। ও আশ্রমে যাচ্ছে বিকালে ওকে যেন ওখান থেকে পিকআপ করি। তারপর টুকিটাকি কথা বলে ফোন কেটে দিলাম। রোশনি আশ্রমে গেলো তারপর সব বাচ্চাদের খাবার সার্ভ করলো। ওখানের মাদার রোশনিকে নিজের মেয়ের মতই ভালোবাসেন। আমার মায়ের অভাবটা মাদার পুরন করছেন।

বিকালে সব বাচ্চারা আশ্রমের মাঠে হৈ-হুল্লোড় খেলাধুলা করছে। রোশনিও ওদের সাথে চোখ বেঁধে কানামাছি খেলছে। একসময় ওদের বলল তোমরা এখন খেলো আমি আর খেলবো না। তারপর পুকুর পাড়ে গিয়ে ঘাসের উপর বসলো। একভাবে পুকুরের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ ওর কিছু মনে হওয়াতে পাশ ফিরলো দেখলো ৬/৭ বছরের একটা ছেলে ওর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা বেশ গোলগাল আর খুব কিউট। ওকে দেখে রোশনির খুব ভালো লাগলো। ও হাত দিয়ে ইশারা করে ওকে ডাকলো।

প্রথমে ছেলেটা আসলো না। কয়েকবার ডাকার পর আস্তে আস্তে এসে রোশনির কাছে দাঁড়ালো। রোশনি ওর মুখ হাত নাক ধরছে। তারপর পাশে বসিয়ে বলল
কে তুমি। নাম কি তোমার??
ছেলেটা কিছু বলল না।
রোশনি একটু অবাক হলো। কথা বলতে পারে না নাকি। এত সুন্দর একটা বাচ্চা।

একটু পর মাদার হাফাতে হাফাতে এসে হাঁটু ধরে বলল ওও রোহিত তোমার কাছে??
মাদার কে দেখে দুজনেই উঠে দাঁড়ালো। আর ছেলেটা দৌড়ে মাদারের কাছে চলে আসলো। মাদার আরেকজন সিস্টারের কাছে ওকে দিয়ে রোশনির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল

ওর নাম রোহিত রায়। ওর মা দুই বছর আগে মারা যায়। তারপর ওর বাবা আরেকটা বিয়ে করেন। কিন্তু সৎ মায়ের অত্যাচারে ওর বাবা গতকাল এসে এখানে দিয়ে গেছে। তোমাদের বলিনি ভেবেছি আজ বলবো।
রোশনি বলল ওকি কথা বলতে পারে না।
পারে তো। কিন্তু একটু কম কথা বলে।
বাচ্চা টা খুব সুন্দর।
এর মধ্যে আমি এসে মাদারকে বললাম কেমন আছেন??
ভালো আর বাবা তুমি।
হ্যা ভালোই।
তারপর রোশনির কাছে গিয়ে বললাম কি হলো চলো।
হু,,হুম চলো।
রোশনি যেতে যেতে কয়েকবারই পিছনে তাকিয়েছে। কিন্তু কোন মায়ার টানে সেটা সবারই অজানা।

রাতে ঘুমানোর আগে রোশনি রোহিতের ব্যাপারে আমাকে সবটা বলল। আমারও দেখার একটু আগ্রহ হলো। তারপরের দিন সকালে খেয়ে অফিসে গেলাম। রোশনি ব্রেকফাস্ট করেই আমাকে বলল আশ্রমে ওকে একটু নামিয়ে দিতে।
কিন্তু এখনি কেন?? বিকালে যাও।
নাহ তখন গেলে বেশি সময় থাকতে পারি না। প্লিজ নিয়ে চলো।
আচ্ছা চলো তাহলে।

চাইল্ড হোমে ওকে নামিয়ে দিয়ে সোজা অফিসে গেলাম। রোশনিকে দেখে মাদার বলল এসেছো ভালোই করেছো। নাহলে আমিই তোমাকে খবর দিতাম।

কিন্তু কেন??
একটা বাচ্চাকে দত্তক নিতে চায়। তোমাদের অনুমতি ছাড়া তো আমি কিছু করতে পারবো না।
কথাটা শুনে রোশনির বুকটা ধক করে উঠলো। কাঁপা গলায় বলল কাকে??
রুম নাম্বার ৬ এর দৃষ্টি কে??
ওহহ। ওর মনে হয়েছিল হয়তো রোহিতকে। কবে কথা বলতে আসবে??
কালকেই।
আচ্ছা ঠিক আছে। আর মাদার রোহিত কোন রুমে আছে??
দোতলার ৯ নাম্বার রুমে।
থ্যাংক ইউ মাদার বলে দ্রুত সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো। দোতলায় ৯ নম্বর রুমে গিয়ে দেখলো রোহিত ওয়ালে কিছু আকা বা লেখার চেষ্টা করছে।
রোশনি ওর পাশে বসে বলল কেমন আছো রোহিত??
রোশনির মুখের দিকে একবার তাকিয়ে আবার আঁকায় মন দিয়ে বলল ভালো। উল্টো আর কোনো প্রশ্ন করলো না।
রোশনি আশাহত হয়ে বলল বাইরে যাবে??
একটু পর বলল কেন??
ঘুরতে।
রোশনি এসেছে শুনে অন্যন্য রুমের বাচ্চা রাও চলে এসেছে। তারপর রোশনি রোহিতসহ কয়েকজন কে নিয়ে বাইরে গেলো। গোল করে বসে গান শুনালো গল্প করলো। এর মধ্যে রোহিতের সাথে ও ভাব হয়ে গেলো। দুপুরে ওখানেই সবার সাথে খাওয়া দাওয়া করে বিকালে বাড়ি ফিরলো।

সন্ধায় বাড়ি আসার পর দেখলাম আজ রোশনির মুডটা খুব ভালো। প্রায় অনেকদিন পর আজ আমার সাথে মন খুলে কথা বলছে। ওকে জিজ্ঞেস করলাম মায়ের সাথে কি সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। তখনি মুখটা কালো করে ফেললো। তারপর রাতে ঘুমানোর আগে আবার রোহিত কে নিয়ে গল্প করা শুরু করে দিলো।

সকালে রেডি হয়ে আশ্রমে গেলাম। কারন আজ দৃষ্টি কে ওরা নিতে আসবে। গিয়ে দেখলাম খুব থমথমে একটা পরিবেশ। সবার মুখই ভার। দৃষ্টি তো কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। ও কিছুতেই যাবে না। আমরা ওর জন্য একটা ড্রেস কিনেছিলাম ওটাই রোশনি অনেক বুঝিয়ে ওকে পড়িয়ে রেডি করে দিলো। প্রায় আধঘন্টা পর উনরা একটা গাড়ি থেকে নামলেন। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবারের। ওনার স্বভাব আচার আচরণ খুব ভালো। বাকি পেপার নিয়ে এগ্রিমেন্ট করলাম। ওনরা বাকি বাচ্চাদের জন্য কিছু এমাউন্ট দিলেন। দৃষ্টিকে নিয়ে যাবার সময় সকলের কি কান্না। আমার ও চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো।

এরপর থেকে রোশনি প্রতিদিন একবেলার জন্য হলেও হোমে যাবে। আজ বিকালে তাড়াতাড়ি অফিস থেকে কাজ শেষ করে হোমে আসলাম। দূর থেকে দেখলাম রোশনি আর রোহিত দোলনায় বসে বেশ হাসাহাসি করছে। অনেক দিন পর রোশনিকে এভাবে হাসতে দেখলাম। কত খুশি দেখাচ্ছে ওকে। হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছি। এমন সময় মাদার এসে বলল রোশনি কত খুশি তাই না??
হ্যা মাদার। প্রায় কয়েকমাস পর ওকে এত হাসতে দেখছি।
হুমম ওর রোহিতের মধ্যে এমন কিছু পেয়েছে যার জন্য ও ওকে কখনো দূরে রাখে না। তারপর মাদার আরও কিছু বলল। কিন্তু সেটা কি আদৈও সম্ভব। বা মা কি কখনো মেনে নেবে??

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here