#বালিকা_বউ 🥰
#পার্টঃ৫
লেখিকা ঃ মারিয়া
ওরা সবটা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
এভাবে কেটে গেলো একটা মাস। শীতের মরশুম চলে এসেছে যা বরাবরই আমার খুব প্রিয়। সকাল সকাল উঠে বেলকনিতে গিয়ে কিছুক্ষণ প্রকৃতি উপভোগ করলাম। তারপর নিচে গেলাম নাস্তা করার জন্য।
মা আমাকে দেখে বলল নেমেছিস যখন একবারে রোশনিকেও নিয়ে আসতি। ইশু বলল বৌদি কি ঘুমাচ্ছে এখনও।
আমি ওদের কথা শুনে থ হয়ে বললাম রোশনি তো উপরে নেই।
মা বলল কি বলিস উপরে নেই তাহলে কোথায় গেলো।
ইশু বলল আমিও তো নিচে নামতে দেখিনি।
আচ্ছা আমি দেখছি কারন আমার ধারনা ঠিক হলে রোশনি ওদিকেই আছে। বাগানের দিকে গিয়ে দেখলাম রোশনি জলপাই পাড়ার চেষ্টা করছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গায়ে একটা লাল চাদর জড়ানো। এই মেয়ে কখন যে চলে আসে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে।
ওর পাশে দাড়িয়ে বললাম
কি করছো এখানে।
আমার দিকে ফিরে বলল ওহ আদিত্য বাবু চলে এসেছেন। আমাকে একটু হেল্প করুন প্লিজ।
ভ্রু কুচকে বললাম কি হেল্প।
ওই ডালটা একটু টেনে ধরুন তো আমি নাগাল পাচ্ছি না। এত কিউট করে বলল আর রাগ করে থাকতে পারলাম না। ডাল থেকে সবগুলো জলপাই পেড়ে দিলাম সেতো মহাখুশি।
তারপর নাস্তা শেষে সেগুলো খুব সুন্দর করে কি কি দিয়ে যেন মাখালো দারুন টেস্ট হয়েছিলো। আজ আমিও আর ভার্সিটিতে যাইনি।
বিকালে বায়না ধরেছে কানামাছি খেলবে। আমার খেলার ইচ্ছা একদমই ছিল না কিন্তু মায়ের ধমকে খেললাম। সাথে মা ঠাম্মি ও ছিলো। রোশনিকে ধরাই যাচ্ছিলো না। এমনিতেই সাইজে ছোট আরও চোখ বাঁধা অবস্থায় তো মোটেই না। আমার চোখ বাঁধার পর ও কোমড়ে পেটে সুরসুরি দিচ্ছে। একসময় ইশুকে ধরে ফেললো এখন আমার মুক্তি। ওর চোখ টাইট করে বেঁধে দিলাম। এবার ও ধরার চেষ্টা করছে। খুব হৈ-হুল্লোড় হলো। আমার মনে হলো একদম শৈশবে ফিরে গেছি। সত্যি চাসনি আসার পর সবাই খুব হাসিখুশিতে মেতে থাকে।
রাতে মা এসে বলল রোশনিকে নিয়ে যেন বাইরে ঘুরে আসি। সাথে সাথে আমার রিত্তিকের কথা মনে পড়লো। ও আবার কোথায় দেখবে আর কি না কি করে। প্রথমে যেতে চাইনি কিন্তু পরে যাবার জন্য রেডি হলাম। গাড়ি নিয়েই বের হয়েছি কারন বাইকে উঠলে ওর পড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। যেতে যেতে হাজার রকমের প্রশ্ন এটা কি ওটা কি?? ওটা ওখানে কেন। আবার হাত বের করে বাতাস ধরার চেষ্টা করছে। এক সময় জানালার কাচ উঠিয়ে আটকে এসি অন করে দিলাম। তারপর পুরোটা রাস্তা মুখ ফুলিয়ে বসে ছিলো। প্রথমে ওকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম। খাবার অর্ডার করার পর খাবার সার্ভ করলো।
ডিনারের টাইমে এসেছি তাই ফ্রাইড রাইস চিলি চিকেন চিংড়ির পাতুরি চাউমিন এ্যান্ড স্যালাদ৷ অনেকই উৎসুকভাবে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। রাজ্যের চিন্তা করছে মনে হয় আমাদের জন্য। রোশনি বলল
আদিত্য বাবু এতত খাবার।
হ্যা কেন??
না কিছু না।
আমি খাওয়া শুরু করলাম। একটু পর দেখি ও চামচ নাড়িয়ে যাচ্ছে। চিকেন টা আলাদা করতেই পারছে না। কি হলো খাচ্ছো না কেন??
আসলে আমি হাত দিয়ে ছাড়া খেতে পারি না।
তো সমস্যা কোথায়?? হাত দিয়েই খাও আর একটু খাবার ও যেন নষ্ট না হয়।
ও খুশি হয়ে চামচটা রেখে মাখিয়েই খাওয়া শুরু করলো। এজন্য অনেকে মুখ টিপে হাসছে। আমি মনে করি তুমি যাই ই করো না কেন মানুষ তোমার দুর্বলতা বের করে সেটা নিয়ে তামাশা করবে। তাই ওদিকে পাত্তা না দিয়ে রোশনির পাশে বসলাম। তারপর নিজের হাতে ওকে খাইয়ে দিলাম।
একটু পর বাকিরা নিজেদের কাজে মন দিলো। রোশনিকে বললাম খাবারটা কেমন।
অসাধারণ।
ওখানের বিল দিয়ে বেরিয়ে এলাম। তারপর ওকে আইসক্রিম কিনে দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। দুজনেই খুব টায়ার্ড হয়ে আছি। আর বেশি লেট না করে ঘুম দিলাম। সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে জগিং করতে গেলাম। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোশনিকে স্কুলে ভর্তি করে দিতে হবে। বাসায় ফেরার পর ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ বসেছি। মা বলল আদিত্য কিছুক্ষণ আগে রোশনির বাবা কল করেছিলো। তো বললেন মেয়েটাকে অনেকদিন দেখে না তাই তোদের একবার ঘুরে আসতে বলেছে। আমি একবার মায়ের দিকে তাকালাম তারপর রোশনির দিকে। মেয়েটা মাথা নিচু করে আছে হয়তো বা আমার হ্যা বলার অপেক্ষা করছে। এমনিতেও আমার গ্রাম ভালো লাগে না শুধু ওর জন্য যেতে রাজি হলাম। রোশনি খুশিতে লাফ দিলো।
রাতে ঘুমানোর আগে বললাম সবকিছু লাগেজে নিয়েছো তো।
হ্যা গুড। কিন্তু আমি ওখানে যেতে পারি। তার আগে একটা শর্ত আছে।
কি শর্ত।
ওখান থেকে ফিরে এসে স্টাডিতে মন দিবে। এমনিতেও বছরের ছমাস পার হয়ে গেছে। তাই অনেক হার্ড ওয়ার্ক করতে হবে। তোমাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবো মন দিয়ে কিন্তু পড়াশোনা করতে হবে। মনে থাকবে তো।
পাক্কা। আমি পড়ায় একদম ফাঁকি দেবো না।
ওর গাল টেনে বললাম that’s like a good girl.
সকালে লাগেজ নিয়ে একবারে নিচে নামলাম। মা সবকিছু মনে করিয়ে দিচ্ছে এটা ওটা নিয়েছি নাকি। ঠাম্মি আরও অনেক কিছু প্যাক করে ধরিয়ে দিলো। আর বলল রোশনি যেভাবে যাচ্ছে সেভাবেই যেন ওকে নিয়ে আসা হয়। তারপর সবাইকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে উঠলাম। ড্রাইভার ড্রাইভ করছে আমরা পিছনে বসেছি। মা সাথে খাবার দিয়েছিল সেগুলোই সবাই ভাগাভাগি করে খেয়েছি। পুরো ৫ ঘন্টা পর পৌছালাম মধুপুর গ্রামে। হঠাৎ ড্রাইভার গাড়ি কষে ব্রেক করলো। আমি ধমক দিয়ে বললাম কি হয়েছে??
স্যার সামনে গাড়ি আর ঢুকবে না। বের হয়ে দেখলাম একদম চাপা রোড। শিট্। রোশানির দিকে তাকিয়ে বললাম এখন কিভাবে যাবো হেঁটে হেঁটে।
নাতো একটু সামনে আগালেই রিকশা স্ট্যান্ড।
ওকে চলো তাহলে।
ড্রাইভার গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেল। আর আমরাও একটা রিকশা পেয়ে গেলাম। পায়েচালিত রিকশা খুব ধীরগতিতে চলছে। রোশনি বলছে আদিত্য বাবু এইদিকে দেখুন এখানে আমরা খেলতে আসতাম, ওই ওদিকে আমাদের স্কুল একটু দূরে এগিয়ে বলল এই পুকুরে গোসল করতাম। আমি এই ফার্স্ট কোনো গ্রামে এসেছি। মধুপুর গ্রামটা খুবই ভালো লাগছে। মাঝে মাঝে মৃদুমন্দ বাতাস। একটা সুগন্ধ ভেসে আসছে। একসময় পৌঁছে গেলাম। রোশনি উঠান থেকেই আমাকে ফেলে এক দৌড়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। একটু পর কয়েকটা ছেলে এসে আমাদের লাগেজগুলো নিয়ে ভিতরে নিয়ে গেলো। ঘরটা পুরোই টিনের কিন্তু বেশ বড় আর নিচে ফ্লোর করা।
ভিতরে যাবার পর এত ভীড়। বেশিরভাগ মহিলা তার বাচ্চাসহ দাড়িয়ে আছেন। কেউ কেউ বলছে জামাই বাবু কেমন আছেন। ঠিকভাবে আসতে পেরেছি কিনা। রোশনির মা কোনোরকমে উনাদের সরিয়ে আমাকে একটা বেডের উপর বসতে বলল। উপরে সিলিং ফ্যান চালানো আবার পাশে টেবিল ফ্যান চালিয়ে দিয়েছে। পাশে রোশনির দিদুন হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছে। হাতমুখ ধুয়ে আসলাম। সামনে একটা মাঝারি সাইজের টেবিল তাতে বিভিন্ন ফল মিষ্টি মুড়ি মুরকি বড় একটা প্লেট ভরে সাজিয়ে রেখেছে। আমাকে চেয়ারে বসালো। আমি মিষ্টি তেমন পছন্দ করি না। শুধু সৌজন্যতার জন্য সবকিছুই একটু একটু করে খেলাম। এদিকে রোশনি আমাকে ভুলে কোথায় যেন চলে গেছে। এমনিতেও দুপুর গড়িয়ে গেছে তাই দুপুরে কিছু খেলাম না। স্নান করে রেডি হয়ে বাইরে বের হলাম। এর মাঝে রোশনি একবার এসেছিল তারপর আবার চলে গেছে। পাখি খাঁচা থেকে মুক্ত হলে যেমন করে আরকি। ওর ছোট বোন রোহিনি গুটিগুটি পায়ে আমার কাছে আসলো। আদো আদো কথা বলছে খুব মিষ্টি দেখতে রোশনির মতই। এরপর দুজনকে ছেলেকে নিয়ে রোশনি কি করছে তাই দেখতে গেলাম।
চলবে,,,,,