বালিকা বউ 🥰পার্টঃ৪

0
6710

#বালিকা_বউ 🥰

#পার্টঃ৪
লেখিকা ঃ মারিয়া

তাহলে মনে হয় ওরা আমাকে নিজের হাতে পুলিশের কাছে দিয়ে আসতো।
বিকালে আমার ফ্রেন্ড শুভ্র কল করে বলল যেন ওর সাথে মিট করি। তাই রেডি হয়ে বের হলাম।
রোশনি রুমে যাচ্ছিল তখন ইশু বলল ঠাম্মি ওকে ডেকেছে। ঠাম্মির রুমে ঢুকে বলল আমাকে ডেকেছিলে।

উনি চশমা খুলে বলল রোশনি আয় ভিতরে আয়। তারপর চশমাটা মুছে আবার চোখে পড়লেন। রোশনি হাসিমুখে সামনে বসে বলল
কিছু লাগবে ঠাম্মি।

নারে আয় আমার সাথে। তারপর ঘরের সাথে লাগোয়া একটা তাক খুললো। সেখানে বিভিন্ন কাচের বয়ামে রাখা আচার আছে। রোশনি দেখে চোখ বড় বড় করে তাকালো।

ঠাম্মি বলল যেসব খেতে পছন্দ করিস। এখান থেকে নিয়ে যা।

আমাকে দেবে।

হ্যা কেন আচার পছন্দ করিস না।

খুববব করি।
তারপর আবার বেডের উপর বসলো। ঠাম্মি বলল কিই আমার আদিত্যের সাথে কি ভাব ভালোবাসা হয়েছে।

ভাব ভালোবাসা সেটা কি??
হেসে দিয়ে বলল আরে ভালোবাসার সম্পর্ক কি হয়েছে।।।
সেটা কিভাবে হয়।
আচ্ছা তাহলে শোন,,, বলে কানে কানে ফিসফিসিয়ে সবটা বলল। রোশনি শুনে মুখ চেপে হাসছে। এমন করলে ভালোবাসা হয়।
হ্যা হয় তো।

এতদিন পর দেখা হলো তাই শুভ্র তাড়াতাড়ি ছাড়লো না। ফিরতে ফিরতে প্রায় ৯ঃ৩০ টার বেশি বাজে। রুমে গিয়ে দেখলাম রোশনি পায়চারি করছে। ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত মনে হলো। আমাকে দেখে বলল এতক্ষণ কোথায় ছিলেন আপনি??.

একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম কেন বলেই তো গেলাম আমার ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।

হুমম তা আগে আসা গেলো না। সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি।

ওর কথা শুনে চোখ কপালে উঠল আমার। মেয়ে বলে কি আজ হঠাৎ কি হলো।

কি বিড়বিড় করে বলছেন।

ঘড়ি খুলতে খুলতে বললাম আজ এত বউ বউ ভাব। শরীর ঠিক আছে তো।

আমার সব ঠিক আছে।
আর কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হতে গেলাম। ড্রেস চেন্জ করে বের হলাম। রোশনি বেডের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে। ওকে আজকে কেমন যেন লাগছে। তাই পাশে বসে কপালে আর গলায় হাত দিয়ে দেখলাম জ্বর এসেছে কিনা। কিন্তু না একদম পার্ফেক্ট আছে। এমনিতেই খুব টায়ার্ড লাগছে। ওকে বললাম খেয়েছো।
হুমম আপনি।
হ্যা বাইরে থেকে। আচ্ছা শুয়ে পড়ো।
সোজা হয়ে শুয়ে কপালে হাত দিয়ে চোখ বুজে আছি। হঠাৎ রোশনি আমার গালে একটা কিস করলো। আমি পুরো হকচকিয়ে উঠে ওর দিকে তাকালাম। তারপর উঠে বসে গালে হাত দিয়ে বললাম এটা কি হলো।

কেন ভালোবাসা।

কিহ কই থেকে শিখেছো এসব।

শিখবো কেন ঠাম্মি বলেছে। এটা স্বামী কে দিলে নাকি ভালোবাসা বাড়ে।

একটা শ্বাস ছেড়ে বললাম ঠাম্মি এখন তোমার মাথাটাও বিগড়ে দিচ্ছে। এমন সময় রোশনি বলল কি হলো আমাকে ফেরত দিন।

কি ফেরত দেবো।
ওই যে আমি যেটা দিলাম।
পারবো না আমি যাও ঘুমাও। বলে বালিশ নিয়ে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম।

প্রায় অনেকক্ষন পর আপনাআপনি ঘুম ভেঙে গেল। এদিক ফিরতেই দেখি রোশনি হাঁটু ভাজ করে বসে আছে। রাত প্রায় ১ টা এই মেয়ে এখনও ঘুমায়নি। রুমের লাইট জ্বালিয়ে মৃদুস্বরে ডাকলাম চাসনি।
ও মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো।
উঠে বসে ওর মুখ নিজের দিকে টেনে বললাম কি হলো চাসনি মন খারাপ।
সরুন আপনি। আপনি আমাকে একটুও ভালোবাসেন না। কাল আমি ঠাম্মির কাছে বলবো।

মনে মনে বললাম কি বলে এসব ঠাম্মিকেও বলবে। আমার মান সম্মান তো পুরো প্লাস্টিক বানিয়ে ছাড়বে দেখছি।

একটু পর ও বেড থেকে নেমে গেল দরজার দিকে। আমিও সাথে সাথে নেমে ওর হাত টেনে বললাম আরে আরে কোথায় যাচ্ছো এত রাতে।

ঠাম্মির কাছে।
ওকে এদিকে টেনে এনে বললাম রাগ কোরো না প্লিজ। মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ওর সামনে হাঁটু গেড়ে কান ধরে বললাম বলো কি করলে তোমার রাগ কমবে।

আমার দিকে তাকিয়ে বলল যদি চুম্মা দেন তাহলেই।

আর কোনো উপায় না পেয়ে গালে কিস দিলাম যেমন আগে বাচ্চাদের দিতাম। তারপর বললাম এবার খুশি।

হেসে বলল হ্যা অন্নেক।
যাক আচ্ছা চলো ঘুমাতে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হলাম। রোশনিকে কোথাও দেখছি না তাই একটু বেলকনির দিকে গেলাম। ওখানে গিয়ে যা দেখলাম আমি পুরো হা হয়ে গেছি। রোশনি লুকিয়ে লুকিয়ে আচার খাচ্ছে। আর এত তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে মুখের চারপাশে লেগে গেছে। আমাকে দেখেই খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। ও হয়তো এখানে আমাকে দেখবে আশা করে নি। আস্তে করে উঠে দুই হাত শাড়িতে মুছলো। আর অপরাধীর মত মাথা নিচু করে আছে।
আমি ওর সামনে দাড়িয়ে গম্ভীর গলায় বললাম
কোথায় পেয়েছো এগুলো।

আআমাকে ঠাম্মি দিয়েছে।

তাহলে লুকিয়ে খাচ্ছিলে কেন।

চুপ করে আছে।

কি হলো বলো লুকিয়ে খাচ্ছিলে কেন??

যাতে আপনাকে না দিতে হয়।

ওর কথা শুনে বড়সড় ঝটকা খেলাম। আমার থেকে লোকানোর জন্য আমার বেলকনিতে বসেই খাচ্ছে। পেট ফেটে হাসি আসছে। কিন্তু ওর সামনে হাসলে চলবে না এখন। তারপর বললাম এগুলো যদি এখন নিজের কাছে রেখে দেই তখন কি করবে??

ও আহত দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে।

যা দেখে একটু মায়া হলো। তাই ওর সামনে বসে নরম গলায় বললাম সকাল সকাল এগুলো খেলে তো তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে।

ও এবারও নিশ্চুপ।

কি হলো কথা বলছো না যে??
কাঁদো কাঁদো গলায় বলল আপনি কি সত্যি আর আমাকে খেতে দিবেন না।
ওর বাচ্চামো স্বভাব দেখে হেসেই দিলাম। আমাকে হাসতে দেখে আমার দিকে চেয়ে নিজেও হেসে দিলো। তারপর হাসি থামিয়ে বললাম কি অবস্থা করেছো নিজের মুখের। ও নিজের মুখে হাত দিয়ে দিয়ে ধরছে এতে হাতে থাকা আচার গুলোও মেখে গেলো।

আমি ফোন বের করে সেলফি ক্যামেরা ওর দিকে ঘুরিয়ে বললাম দেখো তোমার অবস্থা।
দেখে জিভে কামড় দিলো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে হুট করে ওর গাল দিয়ে আমার মুখেও লাগিয়ে দিলো।
এই কি করলে এটা।
বারে আমাকে দেখে হাসলেন তাই আমিও লাগিয়ে দিলাম বলেই দৌড়।
এই মেয়ের মাথায় তো খুব বুদ্ধি। এই বয়সেই এমন না জানি বড় হলে কি কি করবে আমাকে।

দুপুরে খাবার পর ফেসবুকে ঘুরছি। এমন সময় রোশনি এসে বলল
আদিত্য বাবু।
হুমম কি।
আপনি আমাকে মিথ্যা বললেন কেন??
কি মিথ্যা বললাম আবার।
শহরে বলে কোনো পুকুর থাকে না তাহলে বাড়ির পিছনে ওটা কি??
কোন বাড়ির পিছনে।
আপনাদের।
হোয়াট আমাদের বাড়িতে পুকুর। আর ইউ ম্যাড।
বিশ্বাস না করলে আসুন আমার সাথে আসুন। একরকম টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেলো। আমিও ভাবছি হঠাৎ এক রাতের মধ্যে পুকুর কিভাবে হয়ে গেলো। তারপর দাড় করিয়ে বলল ওই তো পুকুর কি সুন্দর টলটলে জল।

ওর কথা শুনে আমার মাথা ঘুরছে। ওর দিকে তাকিয়ে বললাম এটা পুকুর নয় সুইমিং পুল বলে এটাকে।
কি পুল।
সুই,,ওটা বুঝবে না। আরও বড় হও তারপর বুঝবে।

আর বুঝে কাজও নেই। আমি এখন এখানে স্নান করবো।
মানে একবার তো করেছো।
তাতে কি গ্রামে থাকতে কতবার স্নান করেছি।
তখন যা করেছো করেছো। কিন্তু এখন করা যাবে না। কাল করবে চলো।
না আমি যাবো না।
রোশনি একবার কিন্তু বারন করেছি।
আমার চোখ গরম দেখে চুপ করে গেলো। তারপর চুপচাপ রুমে আসলো।

বিকালে সবাই একসাথে আড্ডা দিচ্ছি কিন্তু রোশনি হাফ ফুলে বসে আছে। ইশু বলল আমাদের রোশনির কি হলো। ওতো চুপচাপ থাকার মেয়ে নয়।
মা বলল তোর কি মন খারাপ।
ও বলল হ্যা আদিত্য বাবু আমাকে বকেছে।
কেন??
আমাকে পুকুরে নামতে দিলো না আজ।
মা আর ইশু অবাক হয়ে বলল পুকুর এখানে পুকুর আসবে কিভাবে। তারপর আমি সবটা খুলে বললাম ওরা তো শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here