বালিকা বউ 🥰পার্টঃ৩

0
6652

#বালিকা_বউ 🥰

#পার্টঃ৩
লেখিকা ঃ মারিয়া

আসলে ওর মুখের এই হাসিটা দেখার জন্যই এতকিছু।
বিকালে আমি গেলাম লাইব্রেরিতে ওর কিছু বই কেনার জন্য।
রোশনি ঘরে আছে। তখন মা বলল রোশনি মা কি করছিস??
এই তো ড্রয়িং করছি মামনি।
তাই বাহ খুব সুন্দর হচ্ছে তো। শোন যেটা বলতে এসেছি। কাল কিন্তু সেই ব্রতটা পালন করতে হবে। তাই কাল সকাল থেকে কিছু খাবি না। বুঝলি।
রোশনি হা বোধক মাথা নাড়ল।
এই তো সোনা মেয়ে আমার। তারপর মা চলে গেলেন।

রাতে রুমে এসে দেখি রোশনি বালিশে ওয়াশার পরাচ্ছে। আমাকে দেখে বলল আদিত্য বাবু চলে এসেছেন।
হ্যা এই নাও তোমার সব বই।
আপনি আমার জন্য বই এনেছেন।
হ্যা এখন আমার তোয়ালেটা দাও তো।
ড্রয়ার থেকে বের করে বলল এই নিন।
ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর মাথা মুছতে মুছতে বললাম তো মিস চাসনি আমার দেয়া হোমওয়ার্ক গুলো করেছো।
এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল কে চাসনি।
তুমি। তোমাকে ভালোবেসে চাসনি বলেই ডাকবো।
আচ্ছা। ঠিক আছে।
হুমম চলো এখন পড়তে হবে। রোশনি খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তে বসলো। এভাবে ৯ টা অবধি পড়ানো শেষ করে নিচে গেলাম ডিনার করতে।

মা রোশনির প্লেটে বেশি বেশি খাবার দিয়ে বলছে আজ বেশি করে খাও। কাল তো আবার উপোস থাকতে হবে।
আমি বললাম কেন কাল কি??
ঠাম্মি বলল কাল তো ওই মারন ব্রতটা করতে হবে সেজন্য। ইশু বলল ঠাম্মি আমিও কিন্তু যাবো তোমাদের সাথে।
ঠাম্মি বলল সে গেলে যেতেই পারো। আদিত্য তুই ও কি যাবি।
নাহ ওখানে গিয়ে আমি আর কি করবো।
আচ্ছা।

খাওয়া শেষ করে রুমে গেলাম। রোশনি বলল আদিত্য বাবু।
হুমমম।
ব্রত কেমন হবে??
সেটা তো বলতে পারবো না।
আপনি থাকলে আমার একটু সাহস হতো।
আচ্ছা আমি চেষ্টা করবো। এখন ঘুমাও বলে লাইট অফ করে দিলাম। ও আস্তে আমার কাছে এসে বলল হাত বুলিয়ে দিন।
আমিও আস্তে করে বিলি কাটছি।

আজ একটু দেরীতে ঘুম ভাঙল। উঠে দেখলাম রোশনি কোথাও নেই। তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম সেখানেও কেউ নেই। কি ব্যাপার কিচেনে মায়ের খোঁজে গেলাম। কাজের মাসি আমাকে দেখে বলল উঠে গেছো আদিত্য বাবা।
হ্যা কিন্তু মা কোথায়। দেখছি নাতো।
ও তো সবাই সাধুবাবার থানে গেছে। তুমি বসো আমি খাবার দিচ্ছি।
মনে মনে বললাম রোশনি যাবার আগে একটু বলেও গেল না। তারপর বললাম কখন গেছে।
সে তো আরও ২ ঘন্টা আগে। তুমি ঘুমাচ্ছিলে আর তোমাকে কেউ ডাকলে তো বিরক্ত হও। তাই বলে যায় নি।
ওহহ।
তারপর খেতে বসলাম।

ওদিকে অনেক আগেই রোশনি ওরা পৌঁছে গেছে। সাধুবাবা বললেন মা তুমি উপোস রেখেছো তো।
হ্যা।
আচ্ছা এই পুকুরে পুরো ৩০ সেকেন্ড ডুব দিয়ে থাকবে। তার আগে যেন মাথা না উঠানো হয়।

ইশিতা বলল ৩০ সেকেন্ড। কিন্তু এইটুকু মেয়ে কি পারবে??
রোশনি বলল পারবো আমি।
সাধুবাবা বললেন এই তো লক্ষী মেয়ে। যাও এখন।
রোশনি গলা জল অবধি নেমে জোরে একটা দম নিয়ে ডুব দিল। আর সাধু মন্ত্র পড়তে লাগল। রোশনি দম আটকে আসছে। মনে মনে সংখ্যা গুনছে আর ডুব দিয়ে আছে। ৩০ হবার পর মাথা উঁচু করে শ্বাস নিতে লাগল। নাকমুখ দিয়ে জল ঢোকায় জোরে জোরে কাশছে। তারপর মা আর ইশু ওকে ধরে উঠালো।

মা বললেন বাবা আর কি কিছু করতে হবে।
হ্যা এখন তো আসল কাজই বাকি।
ঠাম্মি বলল কি করতে হবে।
পুরো মন্দিরের চারদিকে মাটিতে শুয়ে দন্ডি কাটতে হবে। সাধুর কথামতো ভিজে শরীরে পুরো মন্দিরে গড়িয়ে গড়িয়ে দন্ডি কাটল। এমনিতেই খালি পেট তার উপর এত কিছু। রোশনির উঠে দাঁড়ানোরই শক্তি নেই। সাধু বললেন ওকে এখন কিছু খাওয়াতে পারো। আর দুশ্চিন্তার কোনো কারন নেই। আদিত্য এখন সম্পুর্ন বিপদমুক্ত।

কথাটা শুনে সবাই খুশি হলো। ইশু বলল তাহলে ওর জন্য কিছু খাবার আনি। ঠাম্মি বলল না রাস্তার খাবার পেটে গেলে সমস্যা হতে পারে। তুই বরং এক বোতল জল কিনে আন।

রোশনির খুব দূর্বল লাগছে। আর প্রচুর খুদাও পেয়েছে। কিন্তু কিভাবে বলবে। এমন সময় আমি বাইক নিয়ে ওদের সামনে আসলাম। রোশনি চোখ বড় বড় করে বলল আদিত্য বাবু।

মা ঠাম্মি আমার দিকে তাকালো। মা বলল তুই এখানে।

হ্যা ওর জন্য এই যে খাবার এনেছি। আমি বাসা থেকে বার্গার আর স্যান্ডউইচ বানিয়ে বক্সে করে এনেছি রোশনির জন্য। বক্সটা ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। রোশনি খুব তাড়াতাড়ি খাচ্ছে।

ইশু পিছন থেকে বলল আরে দাদা তুমি। তারপর রোশনিকে খেতে দেখে বলল ওহো কত ভালোবাসা।

ঠাম্মি বলল এমন স্বামী না হলে চলে নাকি। দেখেছো বৌমা আমাদের ভুল হলেও আমার দাদুভাইয়ের কিন্তু ঠিকই মনে আছে। সারাজীবন তোরা এভাবে থাকিস।

তারপর আমরা বাসায় চলে আসলাম। এভাবেই দিনগুলো কাটছিলো। রোশনির সাথে খুনশুটি, ইশুর সাথে ঘুরতে যেত, মা ওর চুল বেঁধে দিতো। সবার নয়নের মনি হয়ে গেছে এখন। আজ বিকালে মা বলল কোথায় জানি একটা মেলা হচ্ছে। সেখানে আমি যেন রোশনিকে নিয়ে যাই। কথাটা শুনে রোশনি তো মহাখুশি। ওর খুশির জন্য যেতে রাজি হলাম। কারন আমি এসব ভীড় কখনোই পছন্দ করি না। কিন্তু বিয়ে হলে নিজের শখ ইচ্ছা যে বিসর্জন দিতে হয় সেটা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।

রুমে এসে দেখি রোশনি পুরো আলমারির শাড়ি বের করে বেডের উপর রেখেছে।
চাসনি এত শাড়ি বের করেছো কেন??
আদিত্য বাবু দেখুন না কোনটা পড়বো আমি।
যেটাই পড়ো তাতেই তোমাকে সুন্দর লাগবে।
না আপনি একটা বেছে দিন।
আচ্ছা এই পিংক কালারের শাড়িটা পড়ো।
খুশি হয়ে বলল আচ্ছা।
তারপর দুজনে রেডি হয়ে গাড়ি নিয়ে বের হলাম। আমি ড্রাইভ করছি আর ও গাড়ির উইনডো দিয়ে তাকিয়ে শহর দেখছে। মাঝে মাঝে প্রশ্ন করছে এটা কি ওটা কি। আর আমিও বাধ্য স্বামীর মত উত্তর দিচ্ছি।

একসময় পৌঁছে গেলাম। অনেক বড় মেলা বসেছে। লোকজনও ভরা। ওর হাত ধরে ভিতরে গেলাম। তোমার কিছু কেনার থাকলে কিনতে পারো।
আমি চুড়ি কিনবো। চলুন চুড়ির দোকানে। এরপর তিন চার সেট চুড়ি কিনল, সাথে আলতা দুল নুপুর আরও অনেক কিছু। সবগুলোর নাম ও জানিনা। এভাবে বিকাল গড়িয়ে রাত হয়ে গেছে। আমি বললাম এখন তো আমাদের যেতে হবে।
যাবার আগে বাড়ির সবার জন্য অনেক খাবার জিনিস কিনলো। আমার অবস্থা কাহিল এই পিচ্চি মেয়ের জন্য। এত ছোটাছুটি করার পরেও কোনো টায়ার্ডনেস নেই। সারারাস্তা বকবক করতে করতে এসেছে।

তারপরের দিন সকালে নাস্তা করে রেডি হয়ে ভার্সিটিতে গেলাম। রিত্তিক বলল দোস্ত কাল তোর সাথে মেলায় একটা বাচ্চা মেয়ে দেখলাম। মেয়েটা কে রে?? তোর কোনো ভাতিজি নাকি রিলেটিভ। মেয়েটা আবার শাঁখাসিঁদুর ও পড়া ছিল। ওইটুক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।
আমি চুপচাপ দাড়িয়ে ওদের কথা শুনছি।
ও আবার বলল দেখিস তোকে আবার মেয়েটার বর না ভেবে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। বলেই হোহো করে হেসে অভির সাথে হাইফাইভ দিলো।
আমি মনে মনে বলছি কিছু না জেনেই এতকিছু বলছিস। আর যদি জানতি মেয়েটা আমার ওয়াইফ। তাহলে মনে হয় ওরা নিজেরাই আমাকে পুলিশের কাছে দিয়ে আসতো।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here