#বালিকা _বউ 🥰
#পার্টঃ৬
লেখিকা ঃ মারিয়া
এরপর দুজন ছেলেকে নিয়ে রোশনিকে খুঁজতে গেলাম। আমরা একটা নদীর পাশে এসে দেখি বড় বটগাছের সাথে একটা দোলনা বাঁধা। তাতে রোশনি দোল খাচ্ছে সাথে আরও অনেক মেয়েরা আছে। আমাকে দেখে বলল
এই থামা থামা৷ আদিত্য বাবু চলে এসেছেন৷ একটু দোল দিন তো। এদের টায় জোর হচ্ছে না।
পাশের থেকে একটা মেয়ে বলল হ্যা হ্যা বরকে দেখে এখন তো তাই বলবি।
আমি ওর পিছনে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে দোল দিলাম। এভাবেই পুরো বিকালটা মজায় কেটেছে। রাতে আমাকে আলাদা ঘুমাতে দিলো। রোশনি ওর মা আর বোনের কাছে ঘুমিয়েছে। শীতকালে উপরে সিলিং ফ্যানের বাতাস সাথে সাথে মোটা কম্বল। খুব আরামেই ঘুম হলো।
হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে আস্তে আস্তে ধাক্কা দিচ্ছে। ভয়ে চোখও খুলছি না। আমি তো একা ছিলাম এ রুমে,,, কিন্তু কে আসলো। তারপর পরিচিত গলা পেয়ে ধড়পড় করে উঠলাম। রোশনি আমাকে ডাকছিল এতক্ষণ।
কি হয়েছে এখন ডাকছো কেন??
উঠুন আপনাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবো।
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত তিনটা। এই এখন কোথায় যাবো আমরা।
আহহ আগে চলুন তো।
কম্বল টা পেচিয়েই চোরের মতো দুজনে বের হলাম। বাইরে এত কুয়াশা আমি তো ঠকঠক করে কাঁপছি আর রোশনিকে অনুসরণ করছি। গলা ঝেড়ে বললাম আমরা কোথায় যাচ্ছি বলো তো।
আরে আস্তে কথা বলুন। গেলেই দেখতে পাবেন।
অনেকক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে রোশনি থামলো। আমিও দাড়িয়ে গেলাম। তারপর স্বাভাবিক গলায় বলল খেজুরের রস কখনো খেয়েছেন।
সেটা কি??
দাঁড়ান তাহলে। তারপর একটা গুলতি বের করে পাথর রেখে জোরে ছুড়ে মারলো। প্রথম টায় মাটির হাড়ির কিছু হলো না। কিন্তু তৃতীয় বারে মাটির হাড়িটা ছিদ্র হয়ে রস পড়তে লাগলো। রোশনি ওর হাতে থাকা ব্যাগ নিয়ে সামনে গেল। তারপর একটা গ্লাস ধরলো আর সেখানে রস পড়ার পর আমার কাছে নিয়ে আসলো। এই নিন ধরুন আর খেয়ে নিন।
গন্ধ টা খুব সুন্দর। তাই আর না ভেবে খেয়ে নিলাম একবারে। এত টেস্ট ফুল।
ভ্রু নাচিয়ে বলল কেমন।
দারুন।
তারপর আবার আমরা নিঃশব্দে বাড়ি চলে আসলাম। মনে মনে ভাবছি কি দস্যি মেয়েরে বাবা৷ বিয়ের আগে এমন করতো বলেই হয়তো বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। রুমে ঢোকার পর রোশনি আর ও ঘরে যায়নি যদি ধরা পড়ে যায়।
সকালে তাই নিয়ে যে দিদুন কত হাসি তামাশা করেছে। ৫দিন গ্রামে থেকে বাসায় ফিরলাম। মাঝে দুইদিন রেস্ট নিয়ে পরেরদিন গেলাম রোশনিকে স্কুলে ভর্তি করাতে। সিঁদুর পড়তে দেইনি তাই কোনো সমস্যা ও হয়নি৷ শুধু ওর কিছু টেস্ট নিয়েছিল তারপরে ভর্তি করে নিলো। এরপর থেকে ওকে নিয়ে আসা যাওয়া পড়ানো সবটা আমার দায়িত্ব। ওর আগ্রহ দেখে আমার কখনো ক্লান্ত লাগে না।
নিজেও পড়াশোনা করে যাচ্ছি। বিকালে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছি। ইশু বলল দেখেছো মা দাদা রোশনিকে কত হেল্প করে। কিন্তু রোশনি দাদা যখন থাকবে না তখন কি করবে। একা সব করতে পারবে তো।
রোশনি মুখ কালো করে বলল কেন কোথায় যাবে।
আমি বললাম ইশু এসব কথা পরে হবে।
না আপনি বলুন কোথায় যাবেন আপনি।
আরে তেমন কিছু না। ও মজা করেছে। আমার কথাটা ওর বিশ্বাস হলো কিনা কে জানে।
আজ স্কুল থেকে আনতে গেলে রোশনি বলল জানেন আদিত্য বাবু আমার একটা খুব ভালো বন্ধু হয়েছে।
তাই নাম কি??
পায়েল বোস। অনেক ভালো।
তাহলে সবসময় ওর সাথেই থাকবে আর মন দিয়ে স্টাডি করবে ওকে।
হুমম। একটা কথা বলি আপনাকে।
কি বলো??
ওকে কাল আমাদের বাড়ি নিয়ে যাবো?? ও আসতে চাইছিলো।
এটা আবার বলা লাগে নাকি। স্কুল ছুটির পর তোমাদের দুজনকে বাসায় নিয়ে যাবো।
সত্যি।
হুমম।
আপনি খুব ভালো আদিত্য বাবু।
তারপরের দিন ছুটির পরে ওরা দুজন গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওদের সামনে গাড়ি ব্রেক করলাম। রোশনি আর পায়েল পিছনে বসলো। আমাকে এখন ওদের ড্রাইভার লাগছে শুধু ইউনিফর্ম থাকলেই হতো। আর আমার বউটা কাউকে পেলে আমার কথা ভুলেই যায়।
আগে যতবার নিতে এসেছি আমার সাথে গল্প করতো খেয়েছি কিনা জিজ্ঞেস করতো। আর আজকে,,, ওকে একটু খ্যাপানো যাক।
হাই পায়েল।
হ্যালো।
কেমন আছো।
ভালো আর আপনি।
ভালো। তোমাকে দেখতে না খুব সুন্দর। তোমার চুলগুলো আরও সুন্দর।
আয়নায় রোশনির মুখটা দেখে বেশ আনন্দ লাগছে। পায়েল তো থ্যাংকস্ থ্যাংকস্ বলেই যাচ্ছে।
তোমার,,,,
রোশনি চেচিয়ে বলল মন দিয়ে গাড়ি চালান। নাহলে এক্সিডেন্ট হয়ে সবার চেহারার বারোটা বেজে যাবে।
নাহ বাবা পুরো হাইপার হয়ে গেছে। তাই আর কিছু না বলে গাড়ি চালানোতেই মন দিলাম। আর সারারাস্তা চাসনি পায়েলের সাথে কোনো কথা বলেনি।
বাসায় পৌছানোর পর ভিতরে গেলাম। যাওয়ার সময় পায়েল রোশনিকে আস্তে করে বলল তোদের ড্রাইভার টাতো বেশ হ্যান্ডসাম। আমার খুব ভালো লেগেছে। সাথে সাথে রোশনি ওর হাতে জোরে চিমটি কাটলো। আর পায়েল আ করে চেচিয়ে উঠলো।
আমি পিছনে ফিরে বললাম কি হয়েছে পায়েল।
ওই রোশ,,,,
রোশনি বলল ওর খিদে পেয়েছে তাই এমন করছে। তারপর হাত টেনে ওকে ভিতরে নিয়ে গেলো। পায়েলকে সবাই আদর করছে। সেটাও মনে হয় রোশনির সহ্য হচ্ছে না। ও একটু দূরে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
দুপুরে খাবার শেষে আমি পায়েলকে এগিয়ে দিতে যাবো। রোশনি জেদ ধরলো ও ও সাথে যাবে। না নিতে চাইলে এমন রক্ত চক্ষু করে আমার দিকে তাকালো মনে হয় কত বড় ভুল কথা বলে ফেলেছি।
মা ইশু তো ওর কান্ড দেখে মুখ চেপে চেপে হাসছে। তারপর ওদের নিয়ে গাড়িতে বসলাম। এবার রোশনি আমার সাইডে বসেছে আর পায়েল পিছনে। মাঝে মাঝে আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে যে আমি কি করছি আবার পিছনে পায়েল কি করছে। বউ তো না গোয়েন্দা।
রাতে খাবার পর বেডে শুয়ে আছি। রোশনি তারপর থেকে আর আমার সাথে কোনো কথা বলেনি। ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে চুল ছেড়ে বসে টেনে টেনে দেখছে আবার পিছনে ঘুরে আমাকে দেখছে। আমিও সাথে সাথে চোখ ঘুরিয়ে নিচ্ছি।
হঠাৎ আমার সামনে দাড়িয়ে বলল
আপনার ফোনটা দিন তো??
কেন??
পায়েলকে ফোন করবো।
কেন?
ও চুলে কি তেল ইউস করে সেটা জানতে।
কেন??
আহহ এত কেন কেন করছেন কেন। দিতে বলেছি দিন।।।
বউটা রেগে গেছে দেখে এক হাত টেনে পাশে বসালাম। তারপর চুলে হাত বুলিয়ে বললাম পায়েলের চুলগুলো হয়তো সুন্দর কিন্তু তার থেকে অনেক বেশি সুন্দর তোমার চুল।
তাহলে ওর সামনে বললেন না কেন??
আরে বাবা ও আমাদের গেস্ট। তাই একটু মিথ্যা বলেছি আর তুমি সেটা নিয়ে রাগ করে আছো।
সত্যি তো।
তিন সত্যি।
চাসনিও হেসে দিলো।
এভাবে চলতে চলতে বছরের শেষ হলো। স্কুলে রোশনি খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। সবার লাস্টে ভর্তি হলেও সেকেন্ড পজিশনে আছে। এজন্য টিচার বাড়ির সবাই খুব খুশি। এদিকে আমারও সময় আসছে। সামনে আমার এক্সাম তাই এ কয়দিন সবকিছু বাদ দিয়ে মন দিয়ে দিন রাত জেগে স্টাডি করছি।
এক সপ্তাহ পর আমার এক্সাম শুরু হলো। প্রতিদিন পরীক্ষার আগে চাসনি বেস্ট অফ লাক বলতো। খুব ভালো করেই সব পরীক্ষা দিয়েছি।
চলবে,,,,,,,