বালিকা বউ 🥰পার্টঃ৭

0
5766

#বালিকা_বউ 🥰

#পার্টঃ৭
লেখিকা ঃ মারিয়া

খুব ভালো করেই পরীক্ষা দিয়েছি। যত রেজাল্ট পাবলিসডের দিন আগাচ্ছে ততই অস্থির লাগছে। কিন্তু সেটা রেজাল্ট খারাপ হওয়ার ভয়ে নয় রোশনির থেকে দূরে চলে যেতে হবে। এটা যতই ভাবছি নিজেকে আর সামলে রাখতে পারছি না। বুকটা ভারী হয়ে আসে। এ কয় মাসে ও আমার মনে একটা বড় জায়গা নিয়ে বিরাজ করছে।

এখন ভার্সিটিতেও যাওয়া লাগে না তাই যতটা সময় পারি রোশনিকে সময় দেই। ওকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া ওর সব আবদার পুরন করা। এতেই মেয়েটা এত খুশি হয়,,, জানিনা আমার অনুপস্থিতিতে কি করবে। আর বিদেশে পড়তে যাবার কথা শুনলে কেমন রিয়াক্ট করবে। এভাবে চলে আসলো আমার রেজাল্টের দিন। অনলাইনে দেওয়া হবে তবুও আমি সিয়াম অমি আর রিত্তিক ভার্সিটিতে একসাথে গেলাম। আরও অনেকে এসেছে।

মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছি কারন রেজাল্ট দিবে দুপুরের পর। সিয়াম বলল
দোস্ত তোরা আল্লাহ আল্লাহ কর।

অমি বলল কেন দোস্তো।

এবার যদি ইভা ফেল করে তাহলে ওকে বিয়ে দিয়ে দেবে।। আর আমার থেকে ভালো পাত্র ওর আব্বায় কস্মিনকালেও পাবে না। তাই দোয়া কর যাতে ও ফেল করে আর আমার সাথে বিয়েটা হয়ে যায়।

ওর কথায় আমরা সবাই হোহো করে হেসে দিলাম।

রিত্তিক বলল কিরে আদি একটু পর পর টিউবলাইটের মত দুম করে মুখটা অন্ধকার করে রাখছিস কেন??

অমি বলল বুঝিস না। ওর আমাদের ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে।

সিয়াম বলল আরে পাগল তাতে কি?? সারাজীবনের জন্য যাচ্ছে নাকি। ও বিদেশ থেকে গ্রাজুয়েশন কম্পিলিট করলে ওর সাথে আমাদের ও সুনাম হবে। আমরা এককালে ওর বন্ধু ছিলাম বলে আমার পিঠ চাপড়ে দিলো।

সত্যি এমন বন্ধু পাওয়া খুব ভাগ্যের ব্যাপার।
রিত্তিক বলল তাহলে এই কথার পর একটু ঠান্ডা হয়ে যাক। তারপর এক দৌড়ে দোকান থেকে এক লিটারের সেভেন আপের বোতল কিনে আনলো। সবাই ভাগাভাগি করে খেয়ে ফেললাম। এরপর ঘোষণা করা হলো রেজাল্ট দেওয়া হয়েছে।
যে যার ফোন থেকে রেজাল্ট দেখছে। সিয়াম বলল এই অমি ইভার রোল নাম্বার টা বল তো।
অমি বলল আরে সালা নিজে দেখ পাশ করতে পারিস কিনা। ও আবার আরেকজনের টা চিন্তা করে। দেখ আবার এমন না হয় ইভা পাশ করে গেল আর তুই করলি ফেল।
রিত্তিক এসব শুনে হেসে গড়িয়ে পড়ছে।

অমি বলল ভাই আমি পাশ করেছি আহহ।
সিয়াম বলল পাশ তো সবাই করে। পজিশন কত বল তো।
মুখ চুপসে বলল ৭৮৬।
এবার সিয়াম ওকে লেকফুল করছে।
সবাই রেজাল্ট দেখলো। আমার রেজাল্ট দেখে আমি বিলিভ করতে পারছি না। আমি কলেজের মধ্যে স্ট্যান্ড করেছি। পরপরই প্রিন্সিপাল মাইকিং করল আমার নাম ধরে। আমি যেখানেই থাকি মিটিং রুমে যেন উপস্থিত হই। সাথে সবাইকে যেতে বলেছে।

প্রিন্সিপাল টিচারের বক্তব্যের পর আমাকে সামনে ডেকে কিছু উপহার দিলেন। আজকে আমার লাইফের শ্রেষ্ঠ দিন মনে হচ্ছে। তারপর ওখান থেকে বেরিয়ে বাসায় ফোন করে জানালাম। ভার্সিটিতে সবাই আমাকে নিয়ে হইহই করছে। একটু পর দেখলাম সিনথিয়া কাঁদতে কাঁদতে বের হচ্ছে হয়তো রেজাল্ট খারাপ হওয়ায়।
তারপর সবাইকে বিদায় দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। ভিতরে এসে মনে হচ্ছে একটা ছোট খাটো অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।

রোশনি এসে বলল আদিত্য বাবু আপনি চলে এসেছেন। আপনি ফার্স্ট হয়েছেন আমি খুব খুশি হয়েছি। এই নিন মিষ্টি খান।
আমিও হা করলাম। একটা আস্ত মিষ্টি আমার মুখে পুরে দিলো।
ঠাম্মি মা বরন করছে। আরও অনেক রিলেটিভ রা এসেছে। সবাই ভীষণ খুশি। একদম রাত অবধি এই অনুষ্ঠান চললো। তারপর গেস্ট রা ডিনার করে তাদের বাসায় ফিরলো।
আজ সারাদিন খুব টায়ার্ড। তাই আস্তে করে শুয়ে পড়লাম। একটু পর চাসনি এসে আমার মাথায় হাত বোলাতে লাগলো। তারপর বলল আপনার কি কিছু হয়েছে।
কেন??
খেয়াল করছি কেমন উদাস হয়ে থাকেন।
মনে মনে বললাম এখন কি বলবো?? না থাক ওর আনন্দ টা নষ্ট করবো না। পরে নাহয় বলবো।
কিছু বলছেন না যে।
চাসনি আমার মাথাটা খুব ব্যাথা করছে। ঘুমাবো এখন বলে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম।

সকালে উঠে রোশনি আর আমার সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেনি। জিজ্ঞেস করলে বলছে আমি কেন এমন করছি সেটা না বলা অবধি ও কোনো কথা বলবে না। কোনো উপায় না পেয়ে রাতে ঘুমানোর আগে বললাম আমাকে বিদেশ চলে যেতে হবে।
কথাটা শুনে অনেকক্ষণ একভাবে তাকিয়ে ছিলো। তারপর বলল কি বলছেন এসব।

আমি ঠিকই বলছি। হায়ার স্টাডির জন্য আমি লন্ডনে যাবো।
মানে আপনি এ বাড়ি থাকবেন না??
নাহ।
আপনি কোথাও যাবেন না।
ওর মুখ ধরে বললাম বোঝার চেষ্টা করো চাসনি। আমারও যেতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু এটা আমার বাবার স্বপ্ন ছিল।

কিন্তু,,,, আপনি চলে গেলে আমি কি করবো। কার সাথে খেলবো মজা করবো।
কেন ইশু তো আছে। আর সবাই তোমার খেয়াল রাখবে।

কবে যাবেন??
এই সপ্তাহেই। কাল তোমাকে এইটে ভর্তি করিয়ে দেবো। তারপর পাসপোর্ট হয়ে গেলেই চলে যাবো।
আমি আর কিছু বললাম না। চুপচাপ শুয়ে থাকলাম। ওপাশ ফিরে রোশনি কাঁদছে টের পেয়েছি কিন্তু কিছু বলিনি।

তারপরের দিন ওকে স্কুলে নিয়ে ভর্তি করে দিয়ে আসলাম। বছরের শুরু তাই ক্লাস একটু কমই হচ্ছে। আমি না যাওয়া অবধি রোশনি স্কুলে যায়নি। এ কয়দিন ধরে অনেক বুঝিয়েছি। কিন্তু তবুও এক কথা ওকেও যেন সাথে নিয়ে যাই। সারাদিন মুখ ফুলিয়ে থাকলো। কারো সাথে একটা কথাও বলেনি ঘর থেকেও বের হয়নি। কাল চলে যাবো তাই মা ঠাম্মির সাথে অনেকক্ষণ কথা বললাম। মা বলল তুই একদম চিন্তা করিস না। আমরা রোশনিকে ভালো ভাবেই দেখেশুনে রাখবো। তুই সাবধানে থাকিস।
তারপর রুমে এলাম সারারাত ঘুম হলো না। সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। সকাল ৯ টায় ফ্লাইট। প্রয়োজনীয় সবকিছু লাগেজে নিয়ে বের হবো। রোশনি আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। ওর চোখমুখ লাল হয়ে আছে। ভাঙা গলায় বলল
আপনি চলে যাচ্ছেন আদিত্য বাবু।।
কেন জানিনা নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না। ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম। আমার চোখের জল আজ বাঁধ মানছে না৷ এরপর চোখটা মুছে বললাম নিজের খেয়াল রেখো আর মন দিয়ে পড়াশোনা কোরো। আমি খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো।

তারপর সবাইকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে বসলাম। সবার মুখ ভার আমারও যেতে কষ্ট হচ্ছে। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেবার পর হাত নাড়ালাম। যতক্ষণ দেখা যাচ্ছিল নিজের কাছের মানুষ নিজের বাড়িটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আবার তিন বছর পর সবার সাথে দেখা হবে। ভাবতেই বুকের ভিতরে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here