বালিকা বউ 🥰পার্টঃ৮

0
5987

#বালিকা_বউ 🥰

#পার্টঃ৮
লেখিকা ঃ মারিয়া

ভাবতেই বুকের ভিতরে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।

দেখতে দেখতে কেটে গেলো তিন তিনটা বছর। এমন কোনো সময় আসেনি আমি আমার চাসনিকে ভুলে ছিলাম। ওর থেকে দূরে থেকেও সবসময় ওকে অনুভব করেছি। ইশুর থেকে শুনলাম গতকাল ও ১৭ বছরে পা দিয়েছে। সেটা বাড়িতে সবাই সেলিব্রেট ও করেছে।আমারও আর দু’মাস পর ২৯ বছর হবে।
রোশনি কতটা বড় হয়ে গেছে। ওকে দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছে তাই এখানের সবকিছু ফেলে দেশে ছুটে যাচ্ছি।
একটু পর মোহন এসে বলল স্যার নিচে আপনার গাড়ি চলে এসেছে। আপনি কি এখন বের হবেন।

হ্যা তুমি যাও। আমি আসছি।
আরেকবার নিজের রুমটাতে চোখ বুলিয়ে লাগেজ নিয়ে নিচে নামলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর এয়ারপোর্টে চলে এসেছি। ভিসা পাসপোর্ট সব চেক করার পর প্লেনে নিজের সিটে বসলাম। তারপর একটা ম্যাগাজিন বের করে পড়ছি।

দেবরায় ম্যানশনে উৎসব লেগে গেছে মনে হচ্ছে। এত বছর পর বাড়ির ছেলে বাড়ি ফিরছে লাগারই কথা। আদিত্যের মা নিজে দাড়িয়ে থেকে সবটা তদারকি করছেন। কিছু রিলেটিভস ফ্রেন্ডস্ ও এসেছে। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
রোশনির রুমে ঈশিতা ওকে রেডি করিয়ে দিচ্ছে। একটা নীল কাতান শাড়ি সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ, কোমড় ছাড়ানো চুল পিছনে বেনী করে তাতে বেলী ফুলের গাজরা পড়িয়ে দিল। কানে ঝুমকা, হাত ভর্তি নীল কাচের চুড়ি কপালে নীল বড় টিপ, চোখে কাজল আইলিনার মাশকারা, হালকা লিপস্টিক, টিকলি গলায় সর্নের হার আর হালকা মেকাপ। তাতেই চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। ইশু ওর মুখটা ঘুরিয়ে এনে তারপর দেখে বলল বৌদি জাস্ট ওয়াও লাগছে। আজ তো দাদা তোর থেকে চোখই ফেরাতে পারবে না। অজ্ঞান ও হয়ে যেতে পারে বলে হাসলো।
রোশনি বলল আরে কি যে বলো না।
আর লজ্জা পেতে হবে না। দাদা চলে আসলো বলে। যাই আমিও রেডি হয়ে পড়ি।

আচ্ছা।
ইশু বেরিয়ে যাবার পর রোশনি আয়নার আরেকবার নিজেকে দেখলো। এত বছরের অপেক্ষা সার্থক হতে চলেছে। এতদিন কোনো ছেলের দিকে ভুলেও তাকায়নি। যেদিন বুঝেছে ভালোবাসা কি?? সেদিন থেকে শুধু আদিত্য কে ভালোবেসেছে। আর আজ ভালোবাসার মানুষটাকে সামনে থেকে দেখতে পাবে সেটা ভেবেই ও পাগল হয়ে যাচ্ছে। তারপর বলল আদিত্য অর্থ সুর্য আর রোশনি অর্থ আলো। আমি তোমার সুর্যের আলো হয়েই থাকতে চাই আজীবন।

আমি রাতের ফ্লাইটেই রওয়ানা করেছি। তাই এখানে আসতে আসতে বিকাল গড়িয়ে গেল। নিচ থেকে গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেয়ে একটা হৈচৈ পড়ে গেলো। রোশনিও দাড়িয়ে পড়েছে। সবাই বাইরে আসলো আমাকে নিয়ে আসতে। আমি গাড়ি থেকে আগে এক পা বের করে তারপর বাইরে বের হলাম। জিন্স প্যান্ট উপরে শার্ট তার উপর স্লিভ জ্যাকেট। সিল্কি চুলগুলো হালকা বাতাসে নড়ছে। হালকা চাপ দাঁড়ি।
কাজিনরা দেখে তো হা হয়েই গেছে। ওর মা ছলছলে চোখে এগিয়ে আসলো। তারপর বুকে আছড়ে পড়ে কেঁদে দিলো। আমি ও আজ নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না। তারপর চোখ মুছে এদিক ওদিক একজনকেই খুজতে লাগলাম।

রোশনি ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে আছে। আদিত্যের সামনে যেতে ওর একটু লজ্জা লজ্জা করছে। তারপর সবাই ভিতরে গেল। ইশু রোশনিকে দেখে বলল দাদা ওই দেখ কে দাঁড়িয়ে আছে??
আমার আর চিনতে বাকি রইলো না। আমার চোখের পলক পড়ছে না। এত্তো সুন্দর হয়েছে আমার চাসনি। দুধের মত সাদা গায়ের রং তার উপর নীল রংটা ফুটে উঠেছে। আগে কোমড় অবধি চুল ছিল এখন আরও বড় হয়ে গেছে। হঠাৎ আমার মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি চাপলো।
আমি বললাম কে এটা??
রোশনি সহ বাড়ির সবাই আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। রোশানির মুখটা কালো হয়ে গেছে দেখে ইশু তাড়াতাড়ি বলল দাদা ওতো রোশনি। আমার বৌদি আর তোমার বউ।
ওহ সেই পিচ্চি মেয়েটা। এত বড় হয়ে গেছে। তারপর ওর কাছে গিয়ে চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে বললাম এখনও সেই গেয়োই আছে। তেমন সাজপোশাক। শাড়ি i hate this.
রোশনি আমার অপমান গুলো বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে থাকলো। আমি আর কিছু বলবো তার আগেই দৌড়ে চলে গেলো।

হঠাৎ মা আমাকে টেনে নিয়ে বলল বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে কি শুরু করেছিস হ্যা। মেয়েটা কত আশা নিয়ে অপেক্ষা করছিলো জানিস।
আহহ মা বাদ দাও তো। মনে মনে বললাম এ কয়টা বছর ওকে না দেখে অনেক জ্বলেছি কষ্ট পেয়েছি। এবার ওকে একটু না জ্বালালে হয়।
মা আর কিছু না বলে আমাকে নিজের রুমে যেতে বলল। দ্রুত সেদিকে গেলাম কারন রোশনি হয়তো আমার রুমেই আছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো কিন্তু রোশনিকে কোথাও দেখছি না। লাগেজ সাইডে রেখে চারদিকে তাকাচ্ছি। এমন সময় ইশু এসে বলল দাদা কিছু লাগলে বলিস। আমি বললাম ইশু শোন।
কিছু বলবি দাদা??
হ্যা এই রুমে এতদিন কি কেউ থাকেনি??
তুই বৌদির কথা বলছিস তো। না থাকেনি। তুই চলে যাবার পর ও অনেক কষ্ট পেয়েছিল। এই রুমে আসলে তোর কথা মনে করে কাদতো। তাই মায়ের কথায় ও আমার সাথে ঘুমায়।
ওহহ। তো সে কি এখন তোর রুমে।
জানিনা।
আচ্ছা যা তুই। তারপর ফ্রেশ হয়ে রুমে বসলাম।

আস্তে আস্তে আমার রুমে অনেকে আসলো। বিভিন্ন রকম বিষয়ে জানতে চাইছে। লন্ডন শহর কেমন ওখানের পরিবেশ কেমন। আমিও সবার উত্তর দিয়ে যাচ্ছি। একটু পর রিত্তিক অমি শুভ্র এলো। এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো। অমি বলছে তুই এত বছর ছিলিস না। আমাদের মন খারাপ ছিল কিন্তু এখন তুই এসেছিস। আমাদের আর কোনো চিন্তা নেই।
হ্যা। আচ্ছা রুম থেকে এখন বের হ। এতদিন পর দেখা হলো চল ছাদে যাই।
সবাই মিলে ছাদে উঠলাম।

রোশনি কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে চোখের জলটা মুছলো। তারপর পিছনে ফিরে আমাদের দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো। চাদের আলোয় মেয়েটার মুখ আরও মায়বী লাগছে। ওর রুপে তো আমি ঘায়েল হয়ে যাচ্ছি। রোশনি মাথা নিচু করে দ্রুত ছাদ থেকে নেমে গেল।
শুভ্র বলল মেয়েটা কে রে দোস্ত।
মনে মনে ভাবলাম এখন যদি বলি আমার বিয়ে করা বউ তাহলে হাজারটা প্রশ্ন করবে। তাই বললাম ওই আমাদের বাসায় থাকে কেন??
হেব্বি দেখতে কিন্তু।
হুমমম তো??
না কিছু না।
শুভ্রের মতিগতি একদম ভালো লাগছে না। তাই প্রসঙ্গ ঘুরাতে অন্যন্য কথা বলছি। প্রায় অনেক রাত অবধি আড্ডা দিলাম। তারপর রাতে ডিনার করে ওরা চলে গেলো। আমিও নিজের রুমে আসলাম ভীষণ টায়ার্ড লাগছে। কিন্তু চোখে একফোঁটা ঘুম নেই। বারবার চাসনিকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু এখন কি ওরা জেগে আছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১২ টার বেশি বাজে। এতক্ষণ নিশ্চয় জেগে থাকার কথা নয়।

ইশু রোশনিকে বলছে বৌদি মন খারাপ করিস না। এতদিন বিদেশি কালচারে থেকেছে তো তাই হয়তো।

আমি ওনার কথায় মন খারাপ করিনি ইশু। কিন্তু এক বাড়ি লোকের সামনে গেঁয়ো শব্দ টা উচ্চারণ না করলেও পারতো।

আহহ দাদা তোর ব্যাপারে জানে না। তাই এমন বলেছে।

আচ্ছা থাক বাদ দাও। অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড়ো।

সকালে,,,,, খাবার পর আমি অনেকগুলো প্যাকেট নিয়ে আসলাম।
সবার জন্য যা যা এনেছি তাই তাদের হাতে তুলে দিচ্ছি। রোশনিও পাশে দাড়ানো। ইচ্ছে করেই ওকে দিলাম না। মা বলল রোশনির টা কোথায়??
আসলে মা ওর জন্য কিছু আনতে মনে নেই।
সাথে সাথে মা প্যাকেটটা সোফার উপর ছুড়ে ফেলে বলল তাহলে এসবের আমারও দরকার নেই। বলে কিচেনের দিকে গেলো।
আমিও পিছন পিছন গিয়ে বললাম মা এটা কি হলো????
তুই কি শুরু করেছিস তাই বল। কেন মেয়েটার সাথে এমন করছিস।
আচ্ছা কি করলে তোমার রাগ ভাঙবে।
তুই আজ ওকে শপিং করিয়ে দিবি নিজে সাথে নিয়ে গিয়ে।
মায়ের কথাটা শুনে এত খুশি লাগলো। তারপর ও মুখটা কালো করে বললাম ঠিক আছে আর কি করার।
রোশনিকে বললাম তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। তোমাকে নিয়ে মলে যাবো।
আমি কোথাও যাবো না।
চোখ গরম দিয়ে বললাম যেতে তো তোমাকেই হবে। so get ready.
রোশনি অসহ্য বলে উপরে গেলো। আমিও হেসে দিলাম।

আজ রোশনি আর শাড়ি চুড়ি পড়েনি। একটা হোয়াইট লং ফ্রগ সাথে চুড়িদার। চুলগুলো সাইড সিথি করে ছেড়ে রাখা, হাতে পার্স হাইহিল, মুখে কোনো মেকাপ নেই তাতেই ভীষণ সুন্দর লাগছে।
আমার সাইডে দাঁড়িয়ে সামনে তাকিয়ে বলল আমি রেডি চলুন এবার।
ওকে নিয়ে গাড়িতে বসলাম। আমি ড্রাইভ করছি আর ও ফোন স্ক্রল করছে।
আমি একটু গলা ঝেড়ে বললাম এবার তুমি কিসে পড়ছো??
এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল আমাকে বলছেন??
হ্যা এখানে কি আর ১৪ জন বসে আছে??
না হঠাৎ এই প্রশ্ন তাই। আমি এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছি।
মনে মনে বললাম কথা বলার স্টাইল সবকিছুই চেন্জ হয়ে গেছে। বয়সের ধাপে ধাপে মানুষ নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে। সেটা আজ ওকে দেখে বুঝছি।
হঠাৎ রোশনি বলল এখানে থামান। আমিও ব্রেক করলাম। তারপর বললাম কি হলো।
আমরা চলে এসেছি।
ওহহ আচ্ছা।

ভিতরে গেলাম মলে ঘুরছি। ওকে একটা শপে নিয়ে গেলাম সেখান থেকে নিজের পছন্দ মতো ১০ টা ড্রেস সাথে ম্যাচিং অর্নামেন্ট আর সু কিনলাম। হঠাৎ একটা শাড়িতে আমার চোখ পড়লো। কিন্তু ওর সামনে কিনলে ওর সন্দেহ লাগতে পারে। তাই বললাম ড্রেসগুলো ট্রায়াল দিতে। ও ট্রায়াল রুমে গেলো এই ফাঁকে শাড়িটা প্যাক করে নিলাম। ও বেরোনোর পর বলল না কোনো সমস্যা হয়নি৷। সব প্যাকেট গুলো নিয়ে বাসায় আসলাম।

রাতে ডিনার করতে ডাইনিং এ বসেছি সবাই। মা আর রোশনি মিলে খাবার সার্ভ করছে। সত্যি রোশনি যেভাবে মাকে হেল্প করছে দেখে খুব ভালো লাগলো। খাবার মুখে নিলাম আস্তে আস্তে চিবচ্ছি। এত টেস্ট ফুল খাবার বলার বাইরে। মা হেসে বলল খাবার গুলো সব রোশনি রান্না করেছে তোর জন্য। কেমন হয়েছে রে খেতে??

সাথে সাথে দাড়িয়ে গিয়ে বললাম এত বাজে খাবার এর আগে খাইনি ছিঃ।
ইশু বলল কি বলছিস দাদা। রান্না তো দারুণ হয়েছে আর এমনিতেও রোশনি খুবই ভালো রান্না করে।
তোরা তো ওর কোনো খারাপ কিছুই দেখতে পারিস না। চিকেন টা একদম কাঁচা রয়ে গেছে।

মা চিকেনটা ছিড়ে দেখলো একদম ঠিকই আছে। তবুও নিজের কথা বজায় রাখতে হনহন করে উপরে গেলাম।

রোশনি বলল মামনি তোমাকে বলে ছিলাম রান্নাটা তুমিই করো। কিন্তু আমাকে জোর করলে। আর না খেয়েই চলে গেলো।
একটা শ্বাস ছেড়ে বলল আমি জানিনা ছেলেটার কি হয়েছে। ও তো এমন ছিলো না।

রাত একটা বাজে। এতক্ষন শুয়ে শুয়ে জগের সব জল শেষ করে ফেলেছি। খুদায় পেট চেপে এপাশ ওপাশ করছি। আহ রান্না গুলো এত ভালো ছিল কি আর বলবো। ইশু আবার সবটা খেয়ে নেয়নি তো। যাবো একবার নিচে কিন্তু যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে তো আমার প্রেস্টিজ একদম শেষ। কি করি কি করি।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here