বালিকা বউ 🥰পার্টঃ৯

0
5841

#বালিকা_বউ 🥰

#পার্টঃ৯
লেখিকা ঃ মারিয়া

কি করি কি করি। ধুর যা হবার হবে পরে দেখা যাবে। আগে পেট তো ঠান্ডা করি। আস্তে করে রুম থেকে বেরিয়ে পা টিপে টিপে হাঁটছি। সবার রুমের লাইট অফ তার মানে সবাই ঘুম। যাক আমারই ভালো হলো।
কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ থেকে সব খাবার গুলো খুব যত্নে বের করে আগে গরম করলাম। তারপর টেবিলে নিয়ে সাজিয়ে খাওয়া শুরু করে দিলাম।
খুব তাড়াতাড়ি খেতে হচ্ছে এদিকে পেটের খুদা ওদিকে আবার ধরা পড়ে যাবার ভয়। হঠাৎ কেউ আমার ঘাড়ে হাত রাখল। ভয়ে আমার সিড়দাড়া লম্বা হয়ে গেলো। চোখ বড় করে আস্তে করে পিছনে ফিরে দেখি মা মৃদু হাসছে। আমি বড়সড় একটা শ্বাস ছাড়লাম। ভাগ্য ভালো ইশু বা রোশনি ছিল না।

মা আমার পাশে বসে বলল মেয়েটাকে এত ভালোবাসিস তবুও কষ্ট দিস কেন??
ওটা তুমি বুঝবে না??
হুমম তুই তো সবই বুঝিস।
ওর জন্য আমি এত কষ্টে থেকেছি সেটা ওকেও তো ফিল করতে হবে। তাহলে তো ও বুঝবে ও আমাকে কতটা ভালোবাসে।
কি জানি বাবা। কিন্তু ও ও তোর অপেক্ষায় এতগুলো বছর বসে ছিল। সেটা একটু মাথায় রাখিস বলে উঠতে যাবে। আমি বললাম শোনো মা –
হুমম কি??
এরপর থেকে রোশনিকে অন্তত একটা ডিশ রান্না করতে বলবে। ভীষণ ভালো রান্না করে।
মা হালকা হেসে বলল কখন যে কি বলিস করিস। কিছুই বুঝিনা বাপু। আচ্ছা বলবো আমি। বলে উপরে গেল।

মনে মনে বললাম কষ্ট না ছাই পেয়েছে। তখন তো ছোট ও কষ্ট ভালোবাসার কি বুঝে হু।
তারপর আঙ্গুল চেটে সব খাবার শেষ করে সবকিছু পরিস্কার করে রেখে উপরে গেলাম। এখন খুব শান্তি লাগছে।

সকালে,,,, মা কিচেনে ঢুকে দেখল শ্যামলি ( কাজের মেয়ে) পায়চারি করছে। মা বলল
তোর আবার কি হলো। এমন করছিস কেন??
বড় মা আমি কিন্তু কিছু খাইনি। আমার মনে হয় রাতে বাড়ি চোর ঢুকে সব খাবার নিয়ে গেছে।
কি চোর,,,
হ্যা ফ্রিজে রাখা খাবার গুলো নেই।
ওও ওটা চোর নয় বিড়াল ছিলো।

এর মধ্যে রোশনি এসে বলল
মামনি গুড মর্নিং।
গুড মর্নিং সোনা মা আমার। তুই এসেছিস ভালো হয়েছে।
কেন??
একটা কিছু রান্না করে ফেলতো।
কিন্তু কার জন্য। কেউ কি আসবে।
আমার জন্য। এবার শুরু কর।
রোশনি ওড়না পেচ দিয়ে তরকারি বের করে কাটতে লাগল। তারপর শাশুড়ী বৌমা মিলে রান্না শুরু করে দিলো।

কাল অনেক রাতে ঘুমিয়েছি। তাই সকালে উঠতে অনেক লেট হয়ে গেলো। ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম। মা আমাকে দেখে বলল
বস খেতে দিচ্ছি।
আচ্ছা সবাই আসুক।
কে আর আসবে সবার খাওয়া হয়ে গেছে।
মনে মনে বলি রোশনিরও। নিজের স্বামীর আগেই খেয়ে নিলো। পেটুক মহিলা।
কি এত ভাবছিস খাওয়া শুরু কর। আর এই মাছটা রোশনি রান্না করেছে। আমিও আগে মাছটা খাওয়া শুরু করলাম। দারুণ স্মেল আর টেস্টি।

বিকালে,,,, রোশনি ছাদ থেকে নেমে বলল মামনি মামনি কোথায় তুমি।
আমরা সবাই ড্রয়িংরুমে বসা। মা বলল
কি হয়েছে??
ছাদ থেকে তুমি কি আমার কোনো ড্রেস তুলেছো।
নাতো কেন??
আমার হোয়াইট ড্রেসটা পাচ্ছি না।
মা ইশু আমার দিকে তাকালো।
আমি বললাম আরে আরে সবাই আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছো মনে হয় ওই জামা আমি বেঁচে খেয়ে ফেলেছি।
ইশু বলল না এতদিন কিছু হয়নি। কিন্তু তুই আসার পরেই। ব্যাপারটা,,,
এই শোন আমি আজ সারাদিন বাড়ি ছিলাম না ওকে। আর সেদিন ১০ টা ড্রেস কিনে দিলাম। আর একটা ড্রেসের জন্য সারা বাড়ি মাথায় তুলছে। বলে রাগ দেখিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।

আমার এমন কান্ড দেখে সবাই হেসে দিলো। আমি রুমে দরজাটা লক করে বালিশের নিচ থেকে ড্রেসটা বের করে বুকে জরিয়ে নিলাম। ওকে বুকে না নিলে আমার ঘুম হতো না। আর এত বছরেও আমার এই অভ্যাসটা পাল্টেনি।
রাতে ল্যাপটপে কিছু কাজ করে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে আবার কলেজে যেতে হবে।

সকালে রোশনি রেডি হচ্ছে। নীল রঙ্গের একটা কুর্তি সাথে জিন্স প্যান্ট গোড়ালির কাছে ফোল্ড করা, বেল্ট সিস্টেম সিলিপার, হাতে ঘড়ি, চোখে আইলিনার মাশকারা, হালকা লিপস্টিক, চুলগুলো ছেড়ে সামনে দুইপাশে রাখল হাতে ঘড়ি আর মুখে পাউডার। ব্যাস এতেই কিউট লাগছে। ডাইনিং এ একসাথে খেতে বসলাম। রোশনি এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে আর ইশু অর্নাস সেকেন্ড ইয়ারে। দুজনেই সেম কলেজে। খাওয়ার সময় ও আড়চোখে রোশনিকে দেখেছি। কয়েকবার চোখাচোখি ও হয়েছে।
ওরা দুজনে একসাথে খেয়ে মাকে বলে বেরিয়ে গেলো।

রোশনি ঘড়ি দেখতে দেখতে হাটছে। ওর সামনে ওর বেস্টফ্রেন্ড অনু এসে ওকে জরিয়ে ধরলো। তারপর বলল এতদিন আসিস নি কেন??
আদিত্যের কথা মনে পড়তেই একটু খারাপ লাগল। তারপর বলল না ওই একটু অসুস্থ ছিলাম তাই।

কি এখন ঠিক আছিস তো।
হ্যা।
গুড। তারপর হাঁটতে হাঁটতে বলল ও তোকে তো বলাই হয়নি। কলেজে নতুন একজন প্রফেসর এসেছে। এত সুন্দর দেখতে কি বলবো তোকে। সিনিয়র মেয়েরা তো ক্রাশ খেয়েই যাচ্ছে। আর এই প্রথম বাইরে থেকে গ্রাজুয়েশন কম্পিলিট করা কোনো প্রফেসর এ কলেজে পড়াতে এসেছে। তাহলে বোঝ কতটা ব্রিলিয়ান্ট।
তাই নাকি।
হ্যা তুই দেখলেও হা হয়ে যাবি।
আচ্ছা তো নামটাম কিছু জানিস??
AD.
short from. ফুল নাম জানিস না।
নারে। আর নাম জেনে কি করবো। চেহারাটাই এত জোস। আর শুনলাম আমাদের ক্লাস করাবে।
ওকেহ তখন দেখা যাবে। এখন চল ওদিকে বসি।

আমি কলেজে একটু আগে এসেছি। রোশনিকে কোথাও দেখতে পেলাম না ঢোকার সময়। তারপর কলেজের অন্যন্য প্রফেসর রা এত ঘিরে রেখেছে বেরোনোর আর টাইমই পাইনি। বছরের প্রথম তাই ক্লাস খুব কম হচ্ছে। স্টুডেন্ট রা এসে দুই একটা ক্লাস করে আড্ডা দিয়ে চলে যায়। শুনলাম নবীন বরনের পর ফুল ক্লাস আরম্ভ হবে।

রোশনি আর কোনো ক্লাস করলো না। মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে। তাই ইশুকে বলে বাড়ি চলে আসলো। ক্লাস শেষে ইশু বাইরে বেরিয়েছে হঠাৎ দেখল আমাকে। প্রথমে চোখের ভুল ভাবলেও পরে এগিয়ে এসে বলল দাদা তুই এখানে??
পাশের স্যার বলল এটা কি ধরনের ব্যবহার। তুমি কি ওনাকে চেনো।
আমি বললাম আপনি একটু যান। আমি পরে কথা বলবো। উনি চলে গেলে ইশুকে বললাম আমি এই কলেজের নিউ প্রফেসর।
হোয়াট তার মানে তুই সেই AD. যার নাম সকাল থেকেই শুনে যাচ্ছি।
একটু ভাব নিয়ে বললাম ইয়েস। কিন্তু বাড়িতে কাউকে বলবি না।
আচ্ছা। এখন আমি বাসায় যাচ্ছি।
ওকে সাবধানে যাস।

তারপরের দিন কলেজে নোটিশ এলো। পরশুদিন নবীন বরন হবে।
পরের দিন কলেজে গেলাম। রোশনিকে দেখলাম একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে। ভাবলাম একটু জ্বালানো যাক। ও কাছে গিয়ে বললাম,,,,

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here