বালিকা বউ 🥰পার্টঃ১০

0
5981

#বালিকা_বউ

#পার্টঃ১০
লেখিকা ঃ মারিয়া

ভাবলাম একটু জ্বালানো যাক। ওর কাছে গিয়ে বললাম
এই মেয়ে দাঁড়াও।
রোশনি আমাকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো। তারপর আস্তে করে উঠে বলল আআপনি এখানে কি করছেন??
আমি যাই করি তুমি ক্লাস মিস দিয়ে এখানে কি করছো??
আমি যাই করি সেটা আপনি বলার কে??
আমি একটু কাছে গিয়ে বললাম তুমি বলতে বাধ্য। কারন আমি তোমার টিচার আর তুমি আমার স্টুডেন্ট।
রোশনি ভ্রু কুচকে বলল হোয়াট।
পাশ থেকে অনু বলে উঠল হ্যা রোশনি। উনিই তো আমাদের AD স্যার।
সাথে সাথে রোশনির চোখ বড় হয়ে গেলো। রোশনি চুপ করে মাথা নিচু করে আছে। আমি ধমক দিয়ে বললাম এখনো দাঁড়িয়ে আছো যাও নিজের ক্লাসে।
রোশনি আর অনু আস্তে সুরসুর করে চলে গেলো। ওর ভীতু মুখটা দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছিল বেচারী। মনে মনে বললাম লন্ডনে অনেক বড় একটা চাকরির অফার পেয়েছিলাম। কিন্তু সব ছেড়ে চলে এসেছি। একটু না জ্বালালে কি হয় বলে মুচকি হাসলাম।
ক্লাসে ঢুকে অনু বলল
তুই কি স্যারকে চিনিস??
না আমি চিনবো কিভাবে।
না যেভাবে কথা বলছিলি মনে হয় তোর পরিচিত।
আচ্ছা তোর স্যারের কথা বাদ দিবি।
অনু মুখে আঙুল দিয়ে বলল ওকে।

রোশনির ক্লাস শেষ তাই অনুকে বলল চল বাইরে যাই। ওখান থেকে ঝালমুড়ি খাবো তারপর সোজা বাড়ি। ওরা দুজন বের হলো। আমিও বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম হঠাৎ রুপা ম্যাম আমার কলিগ সে এসে খুব হেসে হেসে আমার সাথে কথা বলা শুরু করলো। এর মধ্যে রোশনিকে দেখে আমিও সব কয়টা দাঁত বের করে ওনার কথায় সায় দিতে লাগলাম। কথা বলার ফাঁকে রোশনির দিকে তাকালাম। ও আমাদের দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে আছে।
অনু বলল কিরে এখানে দাড়ালি কেন?? দোকান তো ওদিকে।
যাবো না আমি কোথাও।
মানে মাত্রই তো বললি।
আহ তুই থামবি।
হুমম বলে চুপ হয়ে গেলো।
রোশনি মনে মনে বলল আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে এসব করা হচ্ছে তো। আমারও সময় আসবে। তারপর বলল অনু আমি বাড়ি যাবো।
এখনি।
হ্যা কাল তো প্রোগ্রাম আছে। সকাল সকাল চলে আসিস।
আচ্ছা তুই ও। তাহলে চল।
রোশনি ওদের চলে যেতে দেখে রুপাকে বললাম আচ্ছা পরে কথা হবে। বাই বাই।
ওকে মিস্টার।

গেটের কাছে এসে দেখলাম রোশনি রিকশায় করে উঠে গেছো। আমিও অফিসের কিছু কাজ করে বাসায় চলে আসলাম। বাড়ির সবার হাবভাব কেমন অদ্ভুত লাগছে। কেউ কথা বলছে না সবাই যার যার কাজে ব্যাস্ত। আমিও ফ্রেশ হয়ে টেবিলে বসে বললাম
মা খাবার দাও।
মা চুপ করে থাকল।
মা কোথায় তুমি খাবার দাও।
মা এবার তেড়ে এসে আমার কান ধরে বলল পারবো না। যা তোর কলেজের সেই মিস কে বল।

এবার পুরো বিষয়টা ক্লিয়ার হলো। রোশনি মায়ের কাছে নালিশ করেছে। কি হিংসুটে হয়েছে রে বাবা।
কি হলো এখন চুপ করে আছিস কেন??
ভাবছি রুপা ম্যমকে এ বাড়ি নিয়ে আসবো। তাহলে সে আমার খাবার টা বেড়ে দেবে।
মা ঝংকার দিয়ে বলল কি বললি তুই। তোর কোনো কাজের জন্য আমার রোশনির চোখ থেকে যদি আর এক ফোটা জল পড়ে তাহলে তোর খবর আছে। এই শ্যামলি ওকে খাবার টা দিয়ে যা বলে হনহন করে চলে গেলো।
রোশনি কান্না করেছে মানে?? খুব বেশি করে ফেললাম নাকি।

তার পরের দিন রাতে এমনিতেই ঘুম হয়নি। রোশনি কান্না করেছে শুনে মনটাও ভালো নেই। আলাদা রুমে থাকলেও যেতে পারতাম কিন্তু পাশে তো ইশু থাকে। তাই আর সে রিস্ক নেইনি।
সকালে আলো পড়তেই হাই তুলে বেড থেকে নামলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম ব্রেকফাস্ট করতে। কাউকে না দেখতে পেয়ে মাকে বললাম
মা আর সবাই কোথায়??
সবাই কলেজে চলে গেছে।
এত সকালে।
১০ টা বাজে টের পাসনি।
ও মাই গড। তাইতো তাড়াতাড়ি খেতে দাও। খুব তাড়াহুড়ায় খেয়ে রেডি হয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলাম। আজ ভেবেছি রোশনিকে নিয়ে কলেজে যাবো কিছুই হলো না।
খুব তাড়াতাড়ি ড্রাইভ করে বের হলাম। হঠাৎ দেখলাম রোশনি একটা ছেলের সাথে খুব হেসে হেসে কথা বলছে। এটা দেখে আমার মাথা গরম হয়ে গেলো।
রোশনি মনে মনে বলছে দেখো এবার কেমন লাগে।
আমি বড় বড় পা ফেলে ওর দিকে হাঁটতে লাগলাম। সেটা দেখে ভয়ে রোশনি শুকনো ঢোক গিলল।

কি হচ্ছে এখানে।
ছেলেটা বলল আসলে স্যার।
চুপপ একদম চুপ। তারপর রোশনির হাত ধরে টেনে নিয়ে বললাম এসো আমার সাথে।
ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন বলছি। ওকে টেনে ক্লাসরুমে নিয়ে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলাম। রোশনিকে দেখতেই আমি এক ঘোরের মধ্যে চলে গেছি। আজ খুব আকর্ষনীয় দেখতে লাগছে। আমি এক পা এক পা করে আগাচ্ছি আর ও পিছাচ্ছে।

ওর ভয়ার্ত দৃষ্টি, কাঁপা কাঁপা গোলাপি ঠোঁট এক নিমিষেই সবকিছু ভুলিয়ে দিয়েছে। রোশনি দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেলো। আমি ওর খুব কাছাকাছি গিয়ে হাত দুটো চেপে ধরে বললাম
অন্য ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলা তাই না।
আআমি তো,,,,তার আগেই ওর ঠোঁট দুটো নিজের দখলে নিয়ে নিলাম। প্রায় ৫ মিনিট পর ছেড়ে দিলাম। ও জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে ঠোটগুলো মুছতে লাগল। তারপর বলল কি করলেন এটা।
যেটা করেছি বেশ করেছি। এরপর থেকে যেন আর কোনো ছেলের সাথে কথা বলা না হয়। তাহলে এর থেকেও খারাপ অবস্থা করবো।
বলে দরজা খুললাম বাইরে দেখি অনু দাঁড়ানো। আমাকে দেখে মাথা নিচু করে ফেললো।
আমি বেরোনোর পরেই অনু ঢুকে বলল কি হয়েছে সব ঠিক আছে তো। কি বলল স্যার তোকে??
ওই আরকি একটু বেশি কথা। আর ছেলেদের সাথে কথা বলতে মানা করেছে।
ওহহ আচ্ছা। চল এখন বাইরে প্রোগ্রাম শুরু হয়ে গেছে।।
প্রোগ্রাম চলাকালীন রোশনির সাথে কয়েকবারই চোখাচোখি হয়েছে। ও লজ্জায় আবার অন্য দিকে চোখ সরিয়ে নিয়েছে।

বিকালে,,, রোশনি নিজের রুমে গিয়ে বারবার ঠোঁটে হাত দিচ্ছে আর দেখছে। তারপর একটা বালিশ বুকে চেপে ধরে বলল
কেন এমন করছেন আমার সাথে। আপনি আসার পর তো সবটা অন্য রকমই হতে পারতো। এতদিন না দেখে তবুও মনকে স্বান্তনা দিয়েছি কিন্তু এখন আপনি চোখের সামনে কিন্তু আপনাকে ছোঁয়ার অধিকার আমার নেই। বলেই কেঁদে দিলো।
তারপর চোখটা মুছে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। আমি তখন কলেজ থেকে ফিরছিলাম হঠাৎ বেলকনিতে চোখ পড়তেই এলোকেশী রোশনিকে দেখে আমার চোখ আটকে গেল। পরপর চোখ সরিয়ে ভিতরে চলে আসলাম।

পরেরদিন রোশনি কলেজে যায়নি। আমি কলেজ থেকে ফিরে এসে দেখলাম শুভ্র ওর পরিবারের সাথে আমার বাড়ি এসেছে। সবাই ড্রয়িংরুমে সোফায় বসা শুধু রোশনি আর ইশু সাইডে দাঁড়ানো। থমথমে পরিবেশ আমাকে দেখেই মা উঠে এসে বলল
দেখ কি ঝামেলা হয়েছে।
কেন কি হয়েছে আবার??
তোর বন্ধু শুভ্র পরিবার সহ রোশনিকে দেখতে এসেছে।
মানে কেন??
সে রোশনিকে নাকি বিয়ে করবে।
আমি হোহো করে হেসে দিলাম। সবাই আমার হাসি দেখে অবাক হলো। তারপর শুভ্রর কাছে গিয়ে বললাম তুই নাকি রোশনিকে বিয়ে করতে চাচ্ছিস।
হ্যা কেন??
কিন্তু কারো একবার বিয়ে হয়ে গেলে আবার কেন বিয়ে করবে??
মানে বুঝলাম না।
মানেটা হলো রোশনি আমার ওয়াইফ। আমার বিয়ে করা বউ।
ও হেসে বলল তুই নিশ্চয় জোক্স মারছিস। তোর বিয়ে হলো আর আমিই জানলাম না।
কেন বিয়ে করলে কি তোকে জানিয়ে করতে হবে??
এভাবে কথা বলছিস কেন??
উফ মাথা গরম করিস না। এখন যা এখান থেকে।
ও রোশনির হাত ধরে বলল রোশনি আদি যা বলছে তা কি সত্যি।
রোশনির হাত ধরেছে দেখে আমার রক্ত গরম হয়ে গেলো। ওকে একটানে আমার দিকে ফিরিয়ে মুখ বরাবর ঘুসি দিলাম। ও মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো। মা ইশু আমাকে টেনে ধরলো। শুভ্রকে ওর বাবা উঠিয়ে নিলো। শুভ্র যাবার সময় বলল কাজটা ঠিক করলি না আদিত্য।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here