বালিকা বউ 🥰পার্টঃ১১

0
5856

#বালিকা_বউ 🥰

#পার্টঃ১১
লেখিকা ঃ মারিয়া

শুভ্র যাবার সময় বলল কাজটা ঠিক করলি না আদিত্য।
ওরা চলে যাবার পর মা এসে আমার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলেন। আমি মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। মা বলল
আজ শুধুমাত্র তোর খামখেয়ালির জন্য এত বড় একটা ঘটনা ঘটলো। তুই যদি ওকে বউ মনে করিস তাহলে ওর মর্যাদাটা কেন দিচ্ছিস না।
আমি চুপ করে থাকলাম। কারন এটার উত্তর আমার জানা নেই।
মা ও আর কিছু না বলে রোশনি আর ইশু কে নিয়ে উপরে গেলেন।

বিকালে ইশুর রুমে গিয়ে নক করলাম। রোশনি কাপড় ভাজ করছিলো আমাকে দেখে ওর হাত থেকে কাপড়টা পড়ে গেলো। আর ইশু গান শুনছিলো আমাকে দেখে এয়ারফোনটা খুলে ফেলল। দুজনেই হা করে তাকিয়ে আছে।
আমি ভিতরে ঢুকে গেলাম। ইশু বলল
দাদা তুই। কিছু লাগবে??
হ্যা আমার বউকে লাগবে। আমার উত্তর শুনে মনে হলো দু-জনের চোখ কপালে উঠে গেছে।
দাদা তুই ঠিক আছিস তো। না মানে হঠাৎ এ ঘরে আসলি।
তোর প্রশ্ন করা শেষ হলে তুই এখন একটু বাইরে যা। আমার রোশনির সাথে কথা আছে।

ঠিক আছে বলে ওর ফোন আর ইয়ারফোন নিয়ে বের হয়ে গেলো।
আমিও দরজাটা আটকে দিলাম। রোশনি বলল এই কি কি করছেন।
বাকা হেসে বললাম এখনও তো কিছুই করলাম না।
দরজা লক করলেন কেন??
আসলে রোশনি আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি। তারপর ওর হাতদুটো ধরে বললাম চলো আমরা আমাদের সংসার শুরু করি।

একটু পর হালকা হেসে ওর হাত ছাড়িয়ে বলল
আজ আপনার মনে হচ্ছে আমাদের সংসার করা উচিত ভালো তো। মানে আপনার যখন যা মনে হবে আপনি তাই করবেন। তিন বছর আগে আমাকে রেখেই বিদেশে চলে গিয়ে ছিলেন। কই তখন তো আমার কথাটা একবারও ভাবেননি। মানলাম আপনার বাবার স্বপ্ন পুরন করতে যেতে হয়েছিল। তারপর,,, আসার পর আপনি সবার সামনে যে বিহেভ টা করলেন সেটা কি আপনার ঠিক হয়েছিল।

আসলে রোশনি,,,
থাক আমি আর ছোট নই এখন। যেকোনো বুঝ দিলেই আমি মেনে নেবো। আজ আপনি আমাকে কাছে টেনে নেবেন। কয়েকমাস পর যে ছুড়ে ফেলে দিবেন না তারই বা কি গ্যারান্টি আছে।
খুব কড়া গলায় বললাম রোশনি।
বাস্তবতা এমনই হয় বলে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।
আমি শুধু ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। নাহ ও আমাকে ভুল বুজছে। ওর ভুল ভাঙতে হবে।

পরের দিন কলেজে গেলাম। আজ থেকে রুটিন অনুযায়ী ক্লাস চলবে। প্রথম পিরিয়ডে একটা ক্লাস করিয়েছি অর্নাসদের। তারপরে ক্লাস ছিল না এখন থার্ড পিরিয়ডে হায়ার ম্যাথ মানে রোশনির ফোর্থ সাবজেক্টের ক্লাস হবে। খুব ভাবসাব নিয়ে উপরে উঠছি। যতই হোক বউয়ের স্যার বলে কথা। রোশনি আমাকে দেখলে মুখটা কেমন করবে সেটা ভেবেই হাসি আসছে।
ক্লাসের সামনে যেতেই একটু নার্ভাস লাগছে। তবুও বুকে দম নিয়ে ক্লাসে ঢুকলাম। হঠাৎ ঢুকে পড়ায় সবাই আমাকে দেখে দাড়িয়ে পড়লো শুধু দুইজন ছাড়া। রোশনি আর ওর ফ্রেন্ড অনু। বই দেখে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। আমি এমন কিছুর সুযোগ খুজছিলাম।

জোরে বললাম স্ট্যান্ড আপ। ওরা দুজনেই আমার দিকে তাকালো। আর সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলো। অনু বলল স -সরি স্যার। আসলে আমরা খেয়াল করিনি।
তাই তাহলে এর পানিশমেন্ট তো তোমাদের পেতেই হবে।।
দুজনের মুখই চুপসে গেলো।
অনু কাদো কাদো মুখ করে বলল এবারের মত মাফ করে দিন স্যার।
আজ তোমাদের মাফ করলে কাল ওদের ও মাফ করতে হবে। এতে ক্লাসে ডিসিপ্লিন নষ্ট হবে। যেটা আমি চাইনা।

অনু আর কিছু বলবে তার রোশনি ওর হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে বলল স্যার ঠিকই বলেছে। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল বলুন আমাদের কি পানিশমেন্ট দিবেন। একদম দৃঢ় গলায় কথাটা বলল।

আচ্ছা তোমাদের হায়ার ম্যাথের একটা অংক করতে দেবো যে পারবে সে ক্লাসে বসবে। আর যে পারবে না তাকে আজ ক্লাসের বাইরেই থাকতে হবে। গট ইট।
রোশনি বলল ওকেহ।
বই খুলে বেছে বেছে একটা কঠিন অংক দিলাম। প্রথমে অনু করার জন্য হোয়াইট বোর্ডের কাছে আসলো। মেয়েটার ভয়ে হাত পা কাঁপছে। কিছুক্ষণ পর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। অনেকভাবে করার ট্রাই করছে কিন্তু হচ্ছে না। এক পর্যায়ে মাথা নিচু করে বলল সরি স্যার। আমি পারবো না। তারপর বেরিয়ে গেলো।

এরপর রোশনির পালা। অংকটা করা শুরু করলো আর একদম নির্ভুল ভাবে। আমিই অবাক হয়ে গেলাম। অংকটা মিলিয়ে দেখলাম প্রশ্ন তো একদম ঠিকই আছে। রোশনি আমার দিকে ফিরে বলল ঠিক আছে তো স্যার।

হ্যা,,, হ্যা যাও তোমার নিজের জায়গায়।
ও দরজার দিকে হাঁটা দিলো। আমি বললাম ওদিকে কোথায় যাচ্ছো।
সরি স্যার আমি ক্লাস করবো না। কারন অনু আমার জন্যই অন্যমনস্ক ছিল। তার জন্য ও শাস্তি পাবে আর আমি ক্লাস করবো সেটা তো হয় না। সেজন্য ক্লাসে থাকতে পারছি না বলে বাইরে গিয়ে অনুর পাশে দাড়ালো।

আমার এখন কি করা উচিত সেটা আমি জানিনা। কিন্তু রোশনি যে একজন মানুষের মত মানুষ হয়েছে সেটা ভেবেই খুব গর্ব হচ্ছে।
ক্লাস কোনোরকমে করিয়ে অফিস রুমে গেলাম। সেখান থেকে রোশনির সব রেজাল্টের হিস্ট্রি দেখে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। এত ট্যালেন্টেড আনবিলিএভল।

এরপর কেটে গেলো আরও এক সপ্তাহ। আজ ইশুকে ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে। শুভ্রর হুমকির পর মা খুব ভয় পেয়ে গেছেন। ওরা কলেজে যাওয়া আসা করে কখন কি বিপদ হয়। তাই যার সম্পত্তি বুঝিয়ে উনি নিশ্চিন্তে থাকতে চান। ইশু প্রথমে রাজি ছিলো না কিন্তু ছেলেরা ওকে বিয়ের পর স্টাডি করাবে তাই রাজি হলো। আজ সকাল থেকে বাড়িতে আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। রোশনি মা শ্যামলি সবাই কিচেন সামলাচ্ছে। কখনো রোশনি বাইরে বেরিয়ে ইশুকে হেল্প করছে। আমার বসে বসে এসব দেখা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।

১২ টার সময় ছেলে, তার মা আর একজন বয়স্ক মহিলা আসলেন। ছেলেকে খুব নম্র ভদ্র আর কম কথা বলে। নাম রাজ পেশায় একজন MBBS ডক্টর। একটু পর ইশুকে নিয়ে আসল পাশে রোশনি। আজ আমার বউটাকেও খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। ইশু ট্রে টা রেখে সবাইকে প্রনাম দিলো। তারপর ওকে বসতে বলল। বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন করছে। এক পর্যায়ে রাজ আর ইশুকে উপরে পাঠানো হলো আলাদা কথা বলার জন্য। এরপর আমাদের বলল মেয়ে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। আপনারা আর ঈশিতা মা রাজি হলেই আমার সম্পর্কটা এগিয়ে নেবো আশা রাখি।
মা বললেন অবশ্যই অবশ্যই। রাজকেও আমাদের খুব ভালো লেগেছে। কি বলিস আদি।
হু,, হুমম।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here