বিদায়_বরণ পর্ব-১১

#বিদায়_বরণ
পর্ব-১১
লেখা- মেহরুন্নেছা সুরভী

বিভাবরী বেগমের সাথে যামিনী গল্প করতে করতে তাঁর অতীত সম্পর্কে অনেক কথা শুনালেন। যামিনীর পরিবার সম্পর্কে জানার জন্য বলায়, যামিনীও খুশি মনে বলে দিলো। বিভাবরী বেগমের মত একজন মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা পেয়ে যামিনীর অতীতের কোনো বিষাদ-ই আর মনের মাঝে রাখল না।
আমরা যেমন আছি, আলহামদুলিল্লাহ আছি। আমরা যদি সব সময় উপরে না তাকিয়ে নিচে থাকাই, তাহলেই আমরা সুখী। যারা আমাদের থেকেও খারাপ আছে, তাদের স্থানে নিজেদের বসালে, তখন বুঝা সম্ভব, আমরা এখন যেমন আছি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ভবিষ্যতে আরো ভালো থাকাট চেষ্টা করব।

জীবনে কখনোই কোনো শূন্যস্থান শূন্য থাকে না। আল্লাহ ঠিকই এক সময় সেটা কোনো না কোনো ভাবে পূর্ণ করে দেন।
আর যামিনী সেটা বিশ্বাস করে। বিশ্বাস আছে তার ভাগ্যের প্রতি। ভাগ্যচক্রে আজ বিভাবরী বেগমের সাথে দেখা করিয়ে দিলেন। নয়ত, সেই পারা গায়ের মেয়েটি আজ এত সুন্দর বাসায়, পরিবারের সাথে থাকার কখনো কল্পনাও করেনি! সত্যি বলতে, জীবন কল্পনার থেকেও সুন্দর!

শিখিনী সাওয়ার নিয়ে এসে দেখল, প্রেম বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে আছে। দরজাটা এখনো বন্ধ। রুমের বাহির থেকে যামিনীর আর বিভাবরীর হাসির আওয়াজ ভেসে আসছে। দুজনে মিলে কী করছে সেটা দেখার জন্য একবার বাহিরে বের হবে ভাবল। কিন্তু প্রেম যে তার বিছানা দখল করে আছে, এটা তার মা দেখে নিলে, জানি না জল কতদূর গড়াবে!

দুপুর প্রায় তিনটে বেজে গেছে। শিখিনীর জ্বর এখনো সারেনি। এর মাঝেই সাওয়ার নিলো। একটু আগে প্রচণ্ড গরম, আর ঘামছিলো সে। এটা জ্বর কমে আসার জন্য, না প্রেমের রাগী চেহারা দেখে শিখিনী সেটা এখনো বুঝতে পারছে না!
প্রেম কী ঘুমিয়ে আছে? সেটা দেখার জন্য শিখিনী এগিয়ে প্রেমের কাছে গেল। এই রুমে এসি নেই। আর প্রেম এসি ছাড়া থাকতে পারে না।
প্রচুর গরম লাগছে বলে শার্টটা খুলে শুয়ে পরল। ফ্যান চলছে ফুল স্পিডে, তবুও প্রেম ঘামছে!

পাশে পরে থাকা প্রেমের শার্টটা হাতে নিয়ে দু’হাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো। শার্টটা থেকে সুন্দর স্মেল আসছে, কিন্তু ঘামের ঘ্রাণটাই বেশী! শিখিনী ভাবল, শার্টটা সে ধোঁয়ে দিক, তারপর, প্রেম কীভাবে বাহিরে সেই ভেবে পাশে রেখে দিলো। প্রেমের কপালে হাত দিলো, শিখিনীর গরম হাতের ছোঁয়া পেয়ে প্রেম চোখ মেলে তাকায়, শিখিনী হাতটা সরিয়ে নেয়,
“তুমি কী আমার জ্বর চেক করছ?”

শিখিনী লজ্জায় সরে গিয়ে মাথা নীচু করে রাখল। প্রেম হাত বাড়িয়ে দেখল, শিখিনীর শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছে। ভিজে চুল দেখে বুঝে নিলো, শিখিনী সাওয়ার নিয়েছে! চুল থেকে টপটপ পানি পরছে। প্রেম উঠে দাঁড়িয়ে টাওয়াল নিয়ে শিখিনীর চুল পেঁচিয়ে রাখল। দু’কাঁধ ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিল, “নিজের যত্ন না নিতে পারিস না দেখেই, অসুস্থতায় পরেছিস।”
” হ্যাঁ, এখন তো সব দোষ আমার! আপনার জন্যই তো আমার এই অবস্থা! ”
” ওহ, তাই! সকালে তো এটা মানতেই চাইছিলি না ”

শিখিনী রাগ করে প্রেম সরিয়ে দূরে সরে গেল। সব সময় শুধু জ্ঞান দিতেই পারে। অসুস্থতা, সুস্থতা তো দেখবেই না, শুধু অত্যাচার করে যাবে। শিখিনী গাল ফুলিয়ে সোফায় গিয়ে বসে পরল। প্রেম ঔষধের বাটিটা সামনে রেখে বলল, “এই যে মিস,গাল ফুলানি, খাবাড খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিয়েন। ”

শিখিনী সেদিকে তাকায় না। প্রেম আরো কিছু বলে, কিন্তু শিখিনী সেটা না শুনার ভাবে বসে থাকে। প্রেম কিছুক্ষণ শিখিনীর দিকে তাকিয়ে ডাকতে গিয়ে গলার স্বর নীচু করে, বাহির থেকে কেউ বুঝে গেলে সমস্যা আছে! লজ্জায় পরতে হবে দুজনকেই!
প্রেম বাহিরে না গিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। অনেকক্ষণ সময় চলে যায়। শিখিনী এই ফাঁকে একটু বাহিরে বেরিয়ে খাবার নিয়ে আবার রুমে চলে আসে।
বাহিরের হলঘর, আর সম্পূর্ণ রুমটা সাখাওয়াত ওর বন্ধুরা মিলে সাজাচ্ছে। আজ সাখাওয়াতের জন্মদিন।শিখিনী অসুস্থতা হওয়ায় আজ কিছু করতে পারছে না! প্রতিবছর শিখিনিই সবটা করে। সারা বিকেল সন্ধ্যে সবার সাথে আনন্দ করে পরদিন সারাদিন তিনজনে মিলে শহর ঘুরবে, আর ডিনার শেষে বাসায় ফিরবে।
কিন্তু এই বছর সেরকমটা আর হবে না। সাখাওয়াতের মন খারাপ কীনা জানে না শিখিনী। তবে, আগামীকাল সুস্থ বোধ করলে, বিভাবরী বেগমকে বলে দেখবেন, বাহিরে ঘুরতে যাওয়ার বিষয়টা।

সাখাওয়াতের জন্মদিন নিয়েই কিছুক্ষন আগে প্রেমের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে শিখিনীর। আজ যে সাখাওয়াতেরজম তারিখ, সেটা প্রেমেরখেয়াল ছিল না। আর আজ শিখিনীকে দেখতে আসবে, এটাই যেন প্রেম আর শিখিনীর জন্য কাল হয়ে এসেছিল! প্রেম রেগে শিখিনীকে কষ্ট দিতে ভুল করেনি! কারণ, প্রেম বিশ্বাস ই করে নিয়েছিল,তার মা যেটাবলেছে, সত্য! কিন্তু শিখিনীর চোখের জল দেখে প্রেম নিজের প্রতি লজ্জিত হয়। প্রেম শুধু ভাবে, তারমা কেন মিথ্যে বলল! নাকী পাত্রপক্ষের বিষয়টা শিখিনী জানেই না! সেই নিয়েই শিখিনীর অভিমান!

শিখিনী খাবারটা টেবিলের এক পাশে রেখে দেয়। প্রেম খেয়ে নিবে। তার খেতে একদমই ইচ্ছে করছে না! হালকা পরিমান সুপ খেয়ে জ্বরের ঔষধ খেয়ে নেয়। যদি জ্বরটা সারে। সোফায় মাথা হেলিয়ে বসে থাকে।
প্রেম সাওয়ার নিয়ে এসে দেখে শিখিনী চোখ বুঝে বসে আসে। শিখিনীর মুখটার দিকে তাকালে প্রেমের ভীষণ অনুভূতি হয়, কাছে পাওয়ার অনুভূতি।
যে মেয়েটার সাথে ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছে। সারাক্ষণের সাথি ছিল, সেই মেয়েটার থেকে সে চারটা বছর দূরে ছিল। ভাবতেই পুরোনো ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে সে!

প্রেম এগিয়ে দিয়ে শিখিনীর পাশে বসে। ডান হাত দিয়ে য়িখিনীর বা -হাত আগলে নেয়। প্রেমের হাত ঠাণ্ডা, ঠাণ্ডা স্পর্শ পেতেই শিখিনূর শরীর কেঁপে উঠে।

শিখিনীকে কোলে তুলে বসে প্রেম। প্রেমের বুকে মাথা রাখে শিখিনী।সামান্য ঠাণ্ডা লাগে, কিন্তু প্রেমের স্পর্শ পাওয়ার জন্য ব্যাাকুল মনটাকে আটকে রাখতে পারে না!
প্রেম বা-হাত দিয়ে শিখিনীর কাঁধ জড়িয়ে নেয়। চুলের বাঁধনটা খুলে টাওয়ালটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে। চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলে,
“শিখি।”
শিখিনী স্বল্প আওয়াজে হুমম বলে।
“আমি তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছি, তাই না? ”
“হুমম,খুব।”
“আমি খুব খারাপ? ”
“হুমম!”
“তবুও, এই খারাপ ছেলেটাকে ভালোবাসো? ”
“হুমম, বাসি!
” কতটা?”
” অনেকটা।”
“তুমি, জানো, আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি?”
“উহু।”

প্রেম হেসে উঠে। গাল টেনে বলে, পাগলী একটা!
শিখিনী চোখ বন্ধ করেই ছিলই, আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। কান পেতে শুনতে থাকে, প্রেমের হৃদয়ের কম্পন। যেন দুটি হৃদয়ের কম্পন একসাথে চলছে, ধকধক ধকধক!

শিখিনীর গুলুমুলু গালটা প্রেমের বুকে চাপ লেগে সামান্য মুখ খুলে আছে। একদম বাচ্চা ভাব। প্রেম মুচকি হেসে গালটা আবার টেনে দেন, শিখিনী নড়ে উঠে। প্রেমের চোখ খাবারের প্লেটে,পাশে ঔষধ রাখা। হয়ত শিখিনী ঘুমের ঔষধও খেয়ে নিয়েছে। প্রেম বারবার সময় দেখতে থাকে, তাকে তো এই রুম থেকে বাহিরে যেতে হবে, সাখাওয়াতের জন্য গিফট কিনতে যেতেও হবে। আর বেশীক্ষণ এখানে থাকাটাও সুবিধার নয়! কীভাবে বাহিরে যাবে সে এখন!

চলবে…

দ্রঃআমি বলেছিলাম, আব্বুর অসুস্থের জন্য কদিন গল্প দিতে পারব, জানি না! আজ দিতাম, ভুলত্রুটি মার্জনীয়!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here