বিধবা বিবাহ’ পর্ব-১৮

0
1111

#বিধবা_বিবাহ(ঊনবিংশ পর্ব)
মাছভাতের থালাটা বিধবা ঠাকুরঝির দিকে এগিয়ে দিয়ে সবিতাদেবী যখন নিজের ঘরে ফিরে এলেন, গোটা গা রাগে থরথর করে কেঁপে চলেছে তার। পূর্ব খোলা সুনির্দিষ্ট চার দেওয়ালের গণ্ডিতে সূর্যের আলো লুটোপুটি খেলেও দুচোখে রীতিমতো ঝাপসা দেখছেন তিনি। নিজের ছোট্ট পৃথিবীটা যেন চাপ চাপ অন্ধকারে ভরে যাচ্ছে নিমেষের মধ্যে, মনের উপর চেপে বসেছে অনর্থক কিছু ঘটে যাওয়ার ভয়। গোটা পরিবারের বাঁধনের গিঁট আলগা হয়ে যাওয়ার ভয়।
আজন্মলালিত সংস্কারকে চোখের সামনে এমনভাবে গুঁড়িয়ে যেতে দেখলে ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় প্রত্যেকেই ভেঙে পড়েন, বাধা দিতে চেষ্টা করেন আপ্রাণ ভাবে। সবিতাদেবী আজ ভেঙে পড়লেও নিজের মেয়ের কর্মকাণ্ডে বাঁধা দিতে পারলেন না প্রত্যক্ষভাবে। ঐশীর বলে ওঠা শব্দসমষ্টিগুলো এখনো জীবন্ত তার মানসপটে,”পিসি বিধবা হলে তুমিও তো বিধবা মা… পার্থক্য এটাই একজনের স্বামী পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন, অন্যজনের স্বামী সংসার ছেড়ে।” নিজের সংস্কার আঁকড়ে বাঁচার জন্য বহুজনের কাছে বহুরকম ভাবে সমালোচিত হয়েছেন তিনি, এমনকি ঐশীর বাবা সমীরন বাবুও নিজের স্ত্রীকে শিক্ষা-দীক্ষার মানদণ্ডে মেপে নিতে ভোলেননি। গ্রাম্য পরিবেশ থেকে আসা অল্পবয়স্কা সবিতা যুক্তিবোধ দিয়ে বিচার না করলেও পরম্পরা অনুসারে শুনে আসা কথাগুলোকে খন্ডন করতে পারেনি। কিন্তু নিজের আত্মজার মুখ থেকে শোনা কথাগুলো তার বিশ্বাসের ঝান্ডাকে নাড়িয়ে দিলো গোড়া থেকে।
শক্ত মাটিতে চেপে বসা শিকড় একটু একটু করে কাঁপছে, তার সাথে সাথে পলকা হয়ে যাচ্ছে মাটির কঠোরতা। ঝুরি ঝুরি বালুকণার মত খসে পড়ছে সবিতাদেবীর বিশ্বাসের পুরু স্তর। ঠিক যেমনটা শক্ত বিশ্বাসের অভাবে কুসংস্কারের বীজ থেকে সৃষ্ট অবিচার, অত্যাচারের মহীরুহ মরতে থাকে ধীরে ধীরে।
কিন্তু যুক্তিপূর্ণ কথাটা শুনে নাড়া দিয়ে উঠলেও কিসে আটকে যাচ্ছে বারে বারে… অনাচার হওয়ার ভয়, নাকি স্রেফ সংসারের প্রধান তকমা খসে পড়ার ভয়… উত্তর পেলেন না সবিতাদেবী।
“আমি জানতাম ঐশীকে কোনদিন এতসব আচার-বিচার পালন করানো সম্ভব নয়। যে মেয়ে বিয়ের আগে ঘটক বিচার, কুষ্টিবিচার মানে না.. তাকে দিয়ে বিধবার আচার কানুন পালন করানো শক্ত বৈকি। কিন্তু শেষমেষ অন্যের নিয়ম রক্ষার হস্তক্ষেপ করবে!” খাটের এককোণে বসে থেকে আপনমনেই বলে উঠলেন তিনি। বস্তুত নিমকাঠের চিরুনিটা ঐশী চোখের সামনে উঁচিয়ে ধরলেও
তার মনমধ্যে ক্ষীণ আশা তখনও জাগরিত ছিল যে, বাসন্তীলতাদেবী কিছুতেই বৌদির ইচ্ছা অনিচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে এই অনাচারকে সমর্থন করবেন না। ঠিক যেমনটা দশক খানেক আগে ব্রাহ্মণ বিধবার নিয়ম অনুসারে সমস্ত আচার বিচারকে পালন করতে শুরু করেছিলেন বিনা বাক্যব্যায়ে। ছোট ঐশী তখন এই কর্মকাণ্ড বুঝতে না পেরে বাধা দিতে গেলে যে ফলপ্রসূ হয়নি তা বলাই বাহুল্য।
“আমি জানি ঠাকুরঝি কিছুতেই মাছভাত খাবেনা। আমার স্থির বিশ্বাস আছে।” চোখ মুখ শক্ত করে মেঝেতে দাঁড়িয়ে পড়লেন সবিতাদেবী। তারপর বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গেলেন খাবার ঘরের দিকে। টেবিলে রাখা মাছ ভাতে ভরা কাসার থালাটা উঁকি দিচ্ছে বাসন রাখার তাকে। চকচকে, এঁটোর চিহ্নমাত্র লেগে না থাকা সেই থালা দেখামাত্র যে কেউ বুঝবে কিছুক্ষণ আগেই ধুয়েমুছে রাখা হয়েছে পাত্রটিকে। বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মত সেই পাত্রের দিকে চেয়ে রইলেন সবিতা দেবি।”তবে কি ঠাকুরঝি সত্যিই মাছভাত খেয়েছে” মনের মধ্যে চিন্তাটা উঁকি মারা মাত্র মাথাটা যেন তালগোল পাকিয়ে গেল তার।কিছুতেই বিশ্বাস হতে চাইছে না কঠোর বাস্তবটা। এমন সময় সিঙ্কে জল পরার আওয়াজ পেতেই ভাবনার জাল কাটিয়ে তিনি ফিরে এলেন বর্তমানে। এঁটো মোছার ন্যাতাটা তখন জলের ধারায় ধুয়ে চলেছেন বাসন্তীলতাদেবী। ঘোরে পাওয়া মানুষের মত তিনি পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলেন সেইদিকে।
“তুমি মাছ ভাত খেয়েছ ঠাকুরঝি। সত্যি কথা বলবে।” বাসন্তীলতাদেবীর চোখে চোখ রেখে কেটে কেটে বলে উঠলেন। তার সেই দৃষ্টি পড়ে খানিক কেঁপে উঠলেন বাসন্তীলতাদেবী। তারপর মেঝেতে চোখ নামিয়ে অস্ফুটে বলে উঠলেন,”হ্যাঁ খেয়েছি। পুরোটা খেতে পারিনি। কেমন একটা গন্ধ ঠেকছিল নাকে। মনে হয় পেয়াজের…”
“এটা তুমি কি করলে ঠাকুরঝি! এমনিতেই বাড়িতে অশান্তি ছাড়েনা। সবকিছু জেনে বুঝেও!” বাসন্তীলতাদেবীর কথা শেষ করার আগেই ফের পূর্বের মত ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন সবিতা দেবি।কিছুতেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না এমনটা হতে পারে, নিজের সংস্কার অন্য কারোর হাতে গুঁড়িয়ে যেতে পারে একনিমেষে।
“অশান্তি কোনদিনই বা ছেড়েছিল মা? সেই প্রথম থেকেই অশান্তিকে সঙ্গে নিয়েই জীবন কেটে যাচ্ছে।” মায়ের চিৎকারের মাঝেই ঐশী বলে ওঠে এবারে। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণের জন্য সে গিয়েছিল নিজের ঘরে। তারপর ফিরে এসে দেখে মা ফের চড়াও হয়েছে পিসির উপরে
“আমার বৈধব্য, বাবার বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া, দাদা বৌদির ঝগড়া, অশান্তি তো লেগেই আছে… বিধবার আচার নিষ্ঠা মেনে চলার পরেও। তবে কেন বারবার ভয় পাও তুমি কুসংস্কারচ্যুত হলেই সংসারে অশান্তি নেমে আসবে! আমরা তো অশান্তির মধ্যেই ডুবে আছি!”
মেয়ের যুক্তি শুনে থতমত খেয়ে গেলেন সবিতাদেবী। চট করে মাথায় কোন কথা গজিয়ে না উঠলেও কুসংস্কার শব্দটা শুনে ফের রেগে গেলেন তিনি। নিজের বিশ্বাসকে এইভাবে নিচু করে দেখালে ক্রোধ হওয়াটাই বরং স্বাভাবিক।
“কুসংস্কার! ব্রাহ্মণ বাড়ির বিধবার সহজাত আচরণগুলোকে তুই কুসংস্কার বলতে চাইছিস! তুই কি জানিস…”

মায়ের এমন রুদ্ররূপ দেখে দেখে ঐশীর অভ্যাসে গেঁথে গিয়েছে। তাই এইবারও বিশেষ অবাক হলো না। বিন্দু মাত্র গলা না উচিয়ে শান্তস্বরে বলে উঠলো মাকে উদ্দেশ্য করে,”একদমই তাই। এটা কুসংস্কারই। সতীদাহ প্রথার মতই বর্বর একটা কুসংস্কার। যার মাধ্যমে একজন নারীই অন্য নারীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে, তার চিন্তাভাবনাকে
দাবিয়ে রাখতে চায়।” কঠোর বাস্তবটা বলতে বলতে ঐশী হাঁপিয়ে উঠেছে ততক্ষণে,”আজকাল কয়টা বাড়িতে এইসব প্রথা মেনে চলতে দেখো তুমি! ব্যতিক্রমের খাতায় নিজেকে রাখতে চাইলে অন্যান্য ভালোদিকগুলোও তো আছে!”
ঐশীর সহজ-সরল কথাগুলো সবিতাদেবীর কানে কিছু ঢুকলো, কিছু আবার মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে গেল।”দেখ, আমি তোর মতো অতশত গুছিয়ে কথা বলতে পারিনা। কিন্তু সবাই নিয়মগুলো অগ্রাহ্য করলেই তো নিয়ম বদলে যাবে না। স্বয়ং শাস্ত্রে…”
“শাস্ত্র মানুষই বানিয়েছে মা। মানুষই সৃষ্টি করেছে এই সব নিয়মকানুন।” রীতিমত ক্লান্ত গলাতে এবার জবাব দিলো ঐশী। সময় অপচয় করে তর্ক বিবাদে জড়িয়ে মানসিক শান্তি নষ্ট করা নেহাতই ঐশীর স্বভাববিরুদ্ধ। অল্প কথায় কাজ সারতেই বরাবর স্বচ্ছন্দ সে। তাই মায়ের কথার পিঠে জবাব দিতে আর ইচ্ছে করছিল না ওর। ছেলেমেয়েকে অকৃত্রিম ভালবাসলেও স্বভাবে সবিতাদেবি বড়ই অবুঝ। তাই মনের মধ্যে জেগে ওঠা কথাগুলো ফের লুকিয়ে যেতে চাইলেও ঐশী শেষ চেষ্টা করে উঠলো,”তোমার জপের মালা কেড়ে নিয়ে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা ঠিক যতখানি পাপ, ততখানিই পাপ অন্যের ইচ্ছেয় হস্তক্ষেপ করে তাকে তার ইচ্ছেমত চলতে বাধা দেওয়া। পিসি মাছ ভাত খাক, বা না খাক তোমার কোন ক্ষতি হবে না মা। কিন্তু পিসির অবশ্যই ক্ষতি হবে।” বাসন্তীলতাদেবীর সরু সরু লিকলিকে হাতদুটো ঐশী উঁচিয়ে ধরল মায়ের মুখের সামনে। অতি ফর্সা, শিরার ছোপ লাগা সেই হাতে ফুটে উঠেছে স্পষ্ট অপুষ্টির চিহ্ন।
“দেখেছো? শরীরের কি অবস্থা হয়েছে? পিসির প্রায় হাড্ডিসার চেহারা হয়ে গিয়েছে। দিনরাত ফ্যানাভাত গিললে এর থেকে আর বেশি কি হবে!” ব্যাঙ্গের অভিব্যক্তি চুঁইয়ে পরলো ঐশীর কণ্ঠস্বরে,”জানি নিরামিষাশী হলেও মানুষের চেহারা স্বাস্থ্য অটুট থাকে। কিন্তু তাদের খাবারেরও রকমফের থাকে। পিসি খাবারে সেই সুযোগ নেই।”
মেয়ের যুক্তির পর যুক্তি শুনে কথা বলার খেই হারিয়ে ফেলেছেন সবিতাদেবী। সত্যিই তো মানুষটার জন্য যে কিছুই বাড়তি বন্দোবস্ত রাখা হয়েছিল না। তাছাড়া উদরপূর্তি হলেও মনপূর্তি ব্যাপারটা যে বাসন্তীলতাদেবীর কাছে অধরাই রয়ে যেত। ভক্তিভরে খাবার না খেলে শরীরের কি দোষ! মনের ভালোমন্দ অবস্থার সাথে শরীরের ভালো থাকা যে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত তা বলাই বাহুল্য।
মায়ের হতভম্ব হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের মুঠোফোনটা ততক্ষণে এগিয়ে দিয়েছে ঐশী। ডিজিটাল স্ক্রিনে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে একটি প্রতিবেদন। ভিন্ন দেশের ভিন্ন গোত্রীয় বিধবাদের প্রতি আরোপিত হওয়া সামাজিক বিধি নিষেধ। কোথাও স্বামীর মৃত্যুর পর চুল ছাড়া নিষেধ, কোথাও বা স্বামীর অনুপস্থিতিতে জনসমক্ষে বেরোনোয় হাতকড়া পরিয়ে দিয়েছে বিধবাকে। স্বল্প সামান্য অক্ষরজ্ঞান হওয়ায় সবিতাদেবী ঠিক বুঝে উঠতে না পারলেও একটা চিত্রে চোখ আটকে গেল তার। হাস্যরস হিসেবে প্রতিবেদন করা হলেও বিষয়বস্তু বড়ই নির্মম। সেদিক থেকে চোখটা ফিরিয়ে ঐশী বলে উঠলো,”হ্যাঁ মা, এটাও হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবাদের সেই শরীরই ভক্ষণ করতে হয় দিনের পর দিন।”
মেয়ের মুখে কথাগুলো শুনে সবিতা দেবীর গোটা গা গুলিয়ে উঠেছে ততক্ষণে। বড্ড অস্বস্তিকর লাগছে চৌহদ্দিটা।
“তোমাকে শুধু একটা কথাই বলবো… নিজের জেদ বজায় রাখতে অন্যের আত্মাকে কষ্ট দিও না। আমি হয়তো পূজার ব্যাপারে অত কিছু জানিনা, এটা জানি, অন্যের সত্তাকে কষ্ট দিলে রাধামাধব রুষ্ট হবেন!” কথাটুকু বলে ঐশী গটগট করে হেটে গেল নিজের ঘরের দিকে। মেয়ের যুক্তির প্রত্যুত্তরে একটিও উত্তর দিতে পারলেন না সবিতা দেবি। ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে রইলেন মেয়ের গমন পথের দিকে।

——–

ঘরে ফিরে নিজের খাটে ধপ করে বসে পড়লো ঐশী।রাগে উত্তেজনায় ওর মাথাটা দপ দপ করছে তখন। ভেবেছিলো পিসির দিকে থালাটা সরিয়ে দেওয়ার পর মা বোধহয় মেনে গিয়েছেন… কিন্তু মনের বিশ্বাস যে এত সহজে মেটেনা সেটা আরেকবার প্রমাণিত হলো।
“যা মন চায় করুক” আপনমনেই কথাটুকু বলে হাতে রাখা মুঠোফোনটা নিয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে নাড়াচাড়া শুরু করলো ঐশী। নিষ্প্রাণ হয়ে থাকা কালো স্ক্রীনটা জানান দিচ্ছে অতনুর তরফ থেকে কোনরকম বার্তা আসেনি।
“এখনো কি পৌঁছয়নি! দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো প্রায়। বেগুসারাই যেতে কতক্ষণ লাগে বাবা!” বলে স্ক্রিনটা আনলক করে কললগে ঢুকলো ঐশী। তারপর হঠাৎ কি মনে হতে হোমস্ক্রিনে ফিরে আসলো সে।”দরকার নেই, আমি ফোন করবো না..” ইগো নামক হুলটা কুট করে ফুটে উঠতেই মুঠোফোনটা ওইভাবেই রেখে দিলো ঐশী। কিছুই ভালো লাগছে না ওর এখন। কারো সাথে কথা বলে হালকা হতে চাইলেও শক্ত কঠিন মনটা বারে বারে বাধা দিচ্ছে নরম হতে।
“ছেলেটা তো আমার জন্যই বেগুসরাই গিয়েছে।” হঠাৎই মস্তিষ্ক কোটরে কথাটা ভেসে উঠতেই লম্বা জিভ কেটে উঠলো ঐশী। “বড্ড স্বার্থপরের ব্যাপার-স্যাপার হয়ে যাবে কিন্তু! একটা বারও খোঁজখবর না নিয়ে আমি আকাশকুসুম ভেসে বেড়াচ্ছি কল্পনাতে…”
কিন্তু বার দুই যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কিছুতেই কানেক্ট হলো না। অগত্যা ফের ফোনটাকে হাতে নিয়ে এলোমেলো নাড়াচাড়া করতে শুরু করলো ঐশী। তারপর চোখটা চলে গেল বিখ্যাত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপের দিকে।
“আচ্ছা অতনু কি ফেসবুক করে!” কথাটা মাথায় আসতেই চটপট অ্যাপের আইকনে চাপ দিল ঐশী।
প্রায় বছরখানেক সোশ্যাল মিডিয়াতে ইনঅ্যাক্টিভ হয়ে থাকার পর ফের নতুন করে ফিরে আসায় ঐশী মনে মনে বেশ রোমাঞ্চিত ছিল। বারে বারে মনে পড়ে যাচ্ছিল পুরনো স্মৃতি। অবিনাশকে ট্যাগ করে আপলোড করা দুইজনের যুগলবন্দীর ছবি, কমন ফ্রেণ্ডদের কমেন্ট, অপরিচিতের হাই হ্যালো আরো কতকিছু… সময়টা তখনও থমকে যায়নি। সংসার, অফিস সামলিয়ে তখনকার ঐশী একপ্রকার সোশ্যাল ফ্রিকই ছিলো। তারপর এক অলিখিত দুর্ঘটনায় প্রায় সব কিছুর ইতি…
“ওই তো অতনু..” কোটপ্যান্টে সুসজ্জিত লম্বা চওড়া অবয়বটা দেখামাত্র উত্তেজনার আবেশে প্রায় চিল্লিয়ে উঠলো ঐশী। তিনশোর উপর লাইকে সজ্জিত সেই ফটোটাই জানান দিচ্ছে ব্যক্তিগত জীবনে অতনুর জনপ্রিয়তা। অতনু দত্ত নামধারী সেই প্রোফাইলটি যে যথেষ্ট এক্টিভ তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এমন সময় রিসেন্টলি আপলোড করা একটা সুদৃশ্য ফটোর কমেন্ট সেকশনে চোখটা আটকে গেলো ঐশীর। দ্যা সঙ্গীতা নামের একটা প্রোফাইল থেকে করা কমেন্টটার রিপ্লাই করেছে অতনু।

“দুর্দান্ত। রুচির সাথে মিশে গিয়েছে নিখাদ ব্যক্তিত্ব।” ফোঁসফোঁস করতে করতে সঙ্গীতার তরফ থেকে করা করা কমেন্টটা পড়ে ঐশী পড়ে ফেলেছে ততক্ষনে…একের পর এক ফটো দেখার পালা চলছে তখন। বেশিরভাগ ফটোতেই সঙ্গীতার তরফ থেকে করা কমেন্ট গজিয়ে উঠেছে অতনুর প্রোফাইলে। নিজের অজান্তেই হঠাৎ কিরকম রাগ হয়ে গেলো ঐশীর…
এমন সময় হাতে রাখা মুঠোফোনটা বেজে উঠতেই সেদিকে চোখ রাখলো ঐশী। অতনুর সেভ করা নম্বরটা ফুটে উঠেছে সেখানে।
“হ্যাঁ বলো..”

আগের পর্ব https://www.facebook.com/114703953643370/posts/181631566950608/?app=fbl

ক্রমশ,
©সম্প্রীতি রায়
আগামী পর্বে চমক থাকছে, আশা করি ভালো লাগছে সবার, সঙ্গে থাকবেন সবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here