#বিধবা_বিবাহ (বিংশ পর্ব)
“কি হলো গলাটা এরকম শোনাচ্ছে? অরিন্দম ফের বিরক্ত করেছে? নাকি বাড়িতে কোনো সমস্যা?…” ঐশী কলটা রিসিভ করা মাত্র খানিক উদ্বিগ্ন ভঙ্গিতে বলে উঠলো অতনু। প্রায় পাঁচশ কিলোমিটার দূরে থাকা সত্ত্বেও তরঙ্গের কারিকুরিতে মনমধ্যে ধরা দিচ্ছে প্রেয়সী বড্ডো ক্লান্ত। তাই সম্পর্কের বাঁধন সুদৃঢ় না হলেও খানিক ইতস্তত করে প্রশ্নটা করেই ফেললো সে। মানুষের অবচেতনে এঁটে থাকা চিন্তাভাবনা বুঝতে পারার গোপন ক্ষমতা পুরোপুরি রপ্ত না করতে পারলেও
ঐশীর ভালোখারাপ বোধের জ্যামিতি অংকনে একপ্রকার সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছে সে। তাই ফোনকলের ওপ্রান্তে থাকা মানুষটির কণ্ঠস্বর পড়ে নিলো নিমেষের মধ্যেই।
“সেরকম কিছু না। তুমি পৌঁছালে কখন? আর রাস্তায় অসুবিধা হয়নি তো?” সন্দেহের সূক্ষ্ম পরশটা মনের গোপন কন্দরে বন্দি রেখে বলে উঠলো ঐশী।
“দুই ঘন্টা হবে। সঠিক বলতে পারছিনা।”মনের মধ্যে হিসেব কষতে কষতে বলে উঠলো অতনু। “আসার পর সোজা থানায় গেলাম। ভট্টাচার্য্য বাড়ির দুই সুপুত্রর কীর্তিকলাপ বলিনি যদিও, কিন্তু জানতে পারলাম ওই চক্রের আরো দুইজন গ্রেপ্তার হয়েছে। এবং তাদের মধ্যে একজন অপরাধীর স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন।” হালকা গলাখাকারি দিয়ে বলে উঠলো অতনু।
পৌঁছে ফোনটাও করেনি!ঈষৎ খারাপ লাগায় মনটা ছেয়ে গেলেও চুপচাপ গিলে নিল ঐশী।তারপর শেষ বাক্যটা কানে যেতেই আঁতকে উঠলো সে।”সেকি আত্মহত্যা করেছে! কিন্তু কেন?”
“প্রাথমিকভাবে শুনলাম সম্ভ্রম নষ্ট হওয়ার কারণে.. কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার ভিকটিমকে কয়েকমাস ধরে নিয়মিতভাবে একটা অজানা নাম্বার থেকে ফোন করা হচ্ছিল। এবং নম্বরটা দেখে আমার অনুমান ক্ষমতার সাথে মিলে গেল। আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর গলাটা উঁচিয়ে বলে উঠলো অতনু।
“কে! কার নম্বর দিয়ে ফোন করা হতো মহিলাকে?” অসীম কৌতুহলভরে প্রশ্ন করে উঠলো ঐশী।
“মনু যাদব। লোকটাকে কিন্তু তুমিও চেনো।
বেগুসারাই এলাকার অস্থায়ী ঠিকাকর্মী, যিনি এখন পুলিশের খাতায় ফেরার।”
“সে আবার কে!”স্মৃতির অতল হাতড়াতে হাতড়াতে বলে উঠলো ঐশী। বস্তুত জীবনের পথ চলায় বহুলোকের সাথে বহুরকম ভাবে আলাপচারিতা জমে উঠলেও মনু যাদব নামক কোন ব্যক্তির সাথে তার পরিচয় হয়নি।
“ধুত! কিসব বলছো? আমি চিনিনা কে মনু যাদব। তাছাড়া কবেই বা বেগুসরাই গেলাম আমি!”
“নাইন এইট সেভেন থ্রি ফাইভ ফোর…” পরপর দশটা নম্বর মুখস্থ ভঙ্গিতে আউরে উঠলো অতনু এবার নিশ্চয়ই চিনতে পারছ লোকটা কে?”
“নাইন এইট সেভেন থ্রি ফাইভ ফোর..” আপন-মনেই সম্পূর্ণ নাম্বারটা বিড়বিড় করে উঠতেই প্রচন্ড চমকে উঠলো ঐশী।”এই যে অরিন্দমের নাম্বার! যে নাম্বার দিয়ে কিছুদিন আগেও ফোন করে করে বিরক্ত করত আমাকে!”
“ইয়েস, ইউ আর এ্যাবসল্যুটলী রাইট!” ঐশীর স্মৃতিশক্তির তারিফে প্রায় উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল অতনু।”নম্বরটা অরিন্দমই ব্যবহার করতো আর মনে করো তোমাকে বলেছিলাম নম্বরটা বেগুসরাইয়ের।সুতরাং দুয়ে দুয়ে চার মেলাতে পারলে?”
“কিন্তু সনু যাদবের সিম অবিনাশের কাছে গেল কি করে?”প্রচন্ড অবাক হয়ে বলে উঠল ঐশী,”একজনের পার্সোনাল সিম অন্যজনকে দেবেই বা কেন?”
“সনু নয় মনু যাদব।” ঐশিকে শুধরে দিয়ে বলে উঠলো অতনু,”যাতে ইনভেস্টিগেটররা বুঝতে না পারে নম্বরটা আদতে অরিন্দম ব্যবহার করছিল। এটা খুব সিম্পিল ট্রিকস ঐশী। কলেজে পড়ার সময় আমরাও বন্ধু-বান্ধবদের সিম নিয়ে ফ্যামিলি মেম্বারকে প্রাঙ্ক করতাম।কিন্তু প্রমাণের অভাবে কোনদিনই ধরতে পারেনি…” ওপ্রান্তে বলে উঠলো অতনু।
“কিন্তু এভাবেও যে প্রমাণ করা গেল না অরিন্দমই আমাকে ফোন করে বিরক্ত করতো। আলটিমেটলি নাম্বারটা আছে মনু যাদবের নামে রেজিস্টার করা, তাই না?”একরাশ হতাশাকে সঙ্গী করে বলে উঠল ঐশী,”আর লোকটা ধরা পড়লেই জানা যাবে সবকিছু নতুবা অরিন্দমের পেট থেকে কথা বার করতে হবে যেনতেন প্রকরণে। লাঠির দশ ঘা পড়লেই বাবাগো বলে সত্যি কথা পিচকিরির মত বেরিয়ে আসবে। কি যে করো না তোমরা!”
হবু স্ত্রী এর কণ্ঠস্বরে নেতিবাচক ভঙ্গির ছোঁয়া পেয়ে খানিক অসন্তুষ্টি গ্রাস করল অতনুকে। তবুও নিজেকে সামলে বলে উঠলো সে,”সবকিছু তো চলচ্চিত্রের মতো তাড়াতাড়ি হয়ে যায় না ঐশী, তাই আমাদেরও একটু সময় লাগছে। তবে হ্যাঁ, এই চক্র বহুদিন ধরেই একটিভ ছিল। নেহাত ভিকটিম আত্মহত্যা করল, উপরতলার টনকও নড়লো। তারপর পুলিশ কোমর বেঁধে লাগলো।”
“ভিকটিম আত্মহত্যা করার সাথে তদন্তের অগ্রগতির কি সম্পর্ক?” খানিকটা বিরক্ত হয়েই উত্তর দিলো ঐশী। যেন আত্মহত্যার মত নিদারুণ ঘটনাটা না ঘটলে ইনভেস্টিগেটরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতেন!
“কারণ, অপজিশন পার্টি ব্যাপারটাকে হাতিয়ার করে মাঠে নেমে পড়েছে। প্রথমত ভিকটিম নাবালিকা, দ্বিতীয়ত বড়লোকের মেয়ে। পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে পালিয়ে বিয়ে করার কেস আরকি! ভিক্টিমের স্বামী জেরায় জানিয়েছিল বিয়ের দিনই মন্ডপ ছেড়ে পালিয়ে আসে মেয়েটি। প্রেমের কথা জানতে পেরে বাড়ির লোক নাবালিকা অবস্থাতেই ওকে বিয়ে দিতে চাইছিল।”এক নিঃশ্বাসে বলে গেল অতনু…
“এ যে আমার মত অবস্থা!” আপন মনেই বলে উঠে ঐশী।”পার্থক্য এটাই ভিক্টিমের মত নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে করে বসেনি সে। কিন্তু পরিবারের অমতেই গাঁটছড়া বেঁধেছিল।”
“ইসস নাবালিকা অবস্থায় কেন যে বিয়ে দিতে যায় এরা! বিরক্তিকর!” ঘৃণাভাব চুঁইয়ে পড়ে ঐশির কণ্ঠস্বরে।”ভিক্টিমের স্বামীর কাছ থেকে আর কি কি জানতে পারল? ওদের গ্যাংয়ের লিডারের নাম নিয়েছে?”
“উনি তো ফুস! তবে কি না বললাম অপজিশন পার্টি উঠে পড়ে লেগেছে!” শিস কেটে বলে উঠল অতনু। “বাই দ্যা ওয়ে লোকটার নাম কি জানতে চাইবে না?”
“কি নাম?” ঈষৎ বিরক্তি ভরে বলে উঠলো ঐশী।
পুলিশের গা ছাড়া ভাবে এবার রীতিমতো মাথা গরম হচ্ছিল ওর। প্রথমে মনু যাদব, পরে ভিকটিমের স্বামী।
“ভিকটিমের স্বামীর নাম মনু যাদব।”ওপ্রান্তে ধীর স্বরে বলে উঠলো অতনু।
“হোয়াট!” উত্তেজনায় এবার প্রায় চিল্লিয়ে উঠলো ঐশী,”মনু যাদবই ভিক্টিমের স্বামী? তাহলে নিজের স্ত্রীকে অন্য নম্বর দিয়ে ফোন করতো কেন? বাড়িতেই তো ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে নিতে পারে!”
“একদমই তাই…তাছাড়া বিয়ের পর বছর কাটতে না কাটতেই স্বামীগুলো চুপচাপ হয়ে যায়, স্ত্রীকে সমঝে চলাও শিখে যায়। বুঝে শুনে কথা বলে।
জানে বেফাঁস কিছু বললেই চিত্তির! প্রেম হলে তাও একটা কথা ছিল, কিন্তু বিয়ের পর…” ঐশীকে খানিক খচিয়ে দেওয়ার লোভটা ঠিক সামলাতে পারলো না অতনু। কথোপকথনের মাঝখানেই হেসে ফেলল ফিক করে। তারপর নিজেকে সামলে বলে উঠলো,”একঘরে থেকেও মনু যাদব নিজের স্ত্রীর সাথে ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলবে? তাও আবার গ্যাঁটের পয়সা খরচ করে রিচার্জ করিয়ে?”
“এই! তুমি কি বলতে চাইছো পরিষ্কার করে বলতো!” অতনুর ইঙ্গিতটা ঐশী ধরে ফেলেছে ততক্ষনে। খোঁচাটা যে ওকেই দেওয়া হচ্ছে সেই ব্যাপারে এক্কেবারে নিশ্চিত সে।
“না ইয়ে আমি বলতে চাইলাম একজন অস্থায়ী ঠিকাকর্মী কাজবাজ না করে ঘন্টার পর ঘন্টা বউয়ের সাথে কি করে কথা বলবে।” গলার স্বরটা খাদে নামিয়ে বলে উঠল অতনু। ঐশী যে এতো সহজেই কথাটা বুঝতে পারবে, সেটা অনুমান করেনি মোটেই।
“কিন্তু তুমি যে বললে ভিকটিম নাকি বড়লোকের মেয়ে, তবে একজন ঠিকাকর্মীকে বিয়ে করে নিল? কিভাবে সম্ভব?” অবাক হয়ে বলে উঠল ঐশী,”আই মিন ওয়েভ ম্যাচিং বলেও তো কিছু থাকে!”
“মনু যাদব থোড়ি এত বোকা ওইভাবে নিজের স্বরূপ দেখিয়ে মেয়ে তুলবে! মানে প্রেম করবে..” চলতি কথাটা মুখ ফসকে বেরিয়ে যেতেই খানিকটা সামলে নিল অতনু। পুরুষ বন্ধু বান্ধবদের সাথে “মেয়ে তোলা” জাতীয় কথাগুলো খুব স্বাভাবিক’ হলেও পারতপক্ষে অন্য কোন মেয়ের সামনে এইসব ভাষা ব্যবহার করেনি সে। তাই নিজেকে খানিক সামলে নিয়ে বলে উঠলো ফের,”লোকটা রীতিমতো ঝকঝকে তকতকে হয়ে ভিকটিমের স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। বাইক ভাড়া করে দুজনে মিলে বিয়ের আগে দুজনে মিলে বেড়াতো গোটা শহর। যদিও বিয়ের আগে ঘুণাক্ষরেও নিজের অবস্থার কথা জানায়নি ভিকটিমকে। চেহারা স্বাস্থ্য ভালো,তাই মেয়েটাও সন্দেহ করেনি। পরে ধরা পড়ার পর নিজেই স্বীকার করেছে সেই কথা।”
“এত মিল! এতটা!” নিজের অতীত স্মৃতিপটে ভেসে আসতেই অবাক হয়ে আপনমনে বলে উঠল ঐশী,”অবিনাশও যে সব সময় ফিটফাট হয়েই আমার সাথে দেখা করতে আসত। কলেজের বাইরে লেটেস্ট মডেলের বাইক নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করত.. তবে কি এইগুলোই
‘মেয়ে তোলার’ ফাঁদ!”
“আমার মনে হয় মনু যাদব ইচ্ছেকৃত ভাবেই নিজেকে এমনভাবে রিপ্রেজেন্ট করত। যাতে সহজেই ধনী অবস্থাপন্ন ঘরের মেয়েরা ওর প্রেমের ফাঁদে পড়ে।” ঐশির মনের কথাটা কেড়ে নিয়ে বলে উঠলো অতনু,”ইনফ্যাক্ট জেরায় এটাও স্বীকার করেছে লোকটা একাধিক বৈবাহিক সম্পর্কে লিপ্ত ছিল। রাজ্যের বাইরেও অনেকগুলো সংসার পাতিয়ে বসেছিল সে। ওদের চক্রের বেশিরভাগ সদস্যই এই নিয়ম মেনে চলত।” সাধ্যমত জোগাড় করে রাখা সবটুকু ইনফর্মেশন ঐশীকে বলে খানিক যেন ভারমুক্ত হল অতনু। ওর মনটা চাইছে না বলা কথাগুলো ঐশী বুঝে নিক। পড়ে নিক অতনুর সমস্ত অনুমান ক্ষমতা। যে অনুমান ক্ষমতায় অতনু আশঙ্কা করছে অবিনাশও ঐশিকে ঠিক একই কারণে একই উপায় বিয়ের ফাঁদে ফেলেছিল। অবস্থাপন্ন, স্বল্পবয়স্কা হওয়ার কারণে ঠিক যেমন মনু যাদব ভিকটিমকে নিজের ফাঁদে ফেলতে পেরেছিল। ঠিক যেমন, নিজের বিবাহিতা স্ত্রীকে প্রতারণা করে মনু যাদব একাধিক বিবাহ সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিল, নীল চক্রের পরিধি ভারতব্যাপী বিস্তার করার আকাঙ্ক্ষায়….
“অতনু, মনু যাদবের ফটোটা আমাকে একটু চ্যাটবক্সে পাঠাতে পারবে?”খানিক ইতস্তত করে বলে উঠলো ঐশী।”হয়ত তোমাদের রুলসের মধ্যে পড়বেনা। কিন্তু প্লিজ…”
ঐশীর আর্তি শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল অতনু। মেয়েটা ফের ভাবছে অবিনাশ বেঁচে আছে,এবং মনু যাদবকেই অবিনাশ ভেবে ফেলেছে মনের জটিল সমীকরণের ফলশ্রুতিতে।
“দিচ্ছি।” বলে ফটোটা ঐশীর চ্যাটবক্সে পাঠিয়ে দিল অতনু। দিনকয়েক আগেই সোশ্যাল মিডিয়াতে রাখা ঐশীর প্রোফাইলে অবিনাশের ফটো দেখেছে সে। সহজাত অনুমান ক্ষমতায় প্রথমে অতনুও ভেবে ফেলেছিল মনু যাদব লোকটাই অবিনাশ ভট্টাচার্য, নাম ভাঁড়িয়ে অন্য রাজ্যে আছে অন্যান্য কিসের মত। কিন্তু পরে ফটো দেখার পরেই ভুলটা ভাঙ্গে এবং জানতে পারে এইভাবে প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে পয়সা উপার্জন করাই এই দলের মুখ্য উদ্দেশ্য এবং মূলধন হিসেবে স্রেফ মিষ্টি কথা ও সুদর্শন অবস্থাপন্ন ঘরের চেহারাই যথেষ্ট। এবং টার্গেটে থাকে অল্পবয়স্কা, উচ্চবিত্তের কিশোরী বা সদ্যযুবতী মেয়েরা, যাদের জীবনের অভিজ্ঞতা কম এবং বিচার-বিবেচনা বোধ করে খাঁটি পাথর চিনে নেওয়ার ক্ষমতা তলানীতে… বস্তুত মনু যাদবের কথা বলে প্রয়াত স্বামী অবিনাশের চরিত্রের একটা স্বচ্ছ ধারণা ঐশীর মনে তৈরী করতে চাইছিল অতনু। বুদ্ধিমতী এই মেয়েটি যে অতনুর আকার-ইঙ্গিত বুঝে নেবে সেই ব্যাপারে একেবারে নিশ্চিত ছিল সে।
কিন্তু একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে ঐশী যে মনু যাদবকেই অবিনাশ ঠাহর করে বসবে, সেটা অতনু ভাবতে পারেনি তা বলাই বাহুল্য। চাইলেই ঐশীর প্রাক্তন স্বামী সম্বন্ধিত অনুমান ক্ষমতা প্রত্যক্ষ ভাবে বলে দিতে পারতো অতনু, কিন্তু মুখে বললেও সরাসরি কথা ‘নেওয়ার’ ক্ষমতা ঐশির চরিত্রের মধ্যে একেবারেই নেই, সেটা অতনু বুঝে গিয়েছে ততক্ষনে। তাই ঐশী নিজেও সরাসরি কথা না বলে ত্যাড়াব্যাকা রাস্তাটাই বারে বারে অবলম্বন করে…
“নাহ। এটা অবিনাশ নয়।”আপন মনেই বলে উঠলো ঐশী। নিজের অনুমান ক্ষমতার সাথে বাস্তবের মেলবন্ধন না হওয়ায় খানিকটা যেন হতাশই হলো সে। নিজের অবচেতন মনটা জানান দিচ্ছিল অবিনাশ হয়তো এখনো বেঁচে আছে, খাদে পড়ে যাওয়ার ঘটনাটা নেহাতই মিথ্যে। কিন্তু চোখের সামনে কঠোর বাস্তবটাকে দেখেও মনের গোপন কন্দরে জিইয়ে রাখা বিশ্বাসটা মরচে ধরল না। “এখনো তো তদন্ত বাকি আছে!” আপনমনেই বলে উঠল ঐশী। তারপর অতনুর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”আর কিছু জানতে পেরেছো?”
“নাহ্, আসলামই তো কিছুক্ষণ আগে!”ঐশিকে নিরাশ করে বলে উঠলো অতনু,”তবে আজ বিকেলে সঙ্গীতা আসছে। অফিশিয়ালি, ডিপার্টমেন্টের তরফ থেকে… রাত্রে এখানেই থাকবে। ওকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে আমি কাল সকালে ফিরে যাব।”
“হঠাৎ ওকে যেন ডাকছে!” মনের মধ্যে জমে থাকা দুষ্টুমিষ্টি সন্দেহটা হঠাৎই বেড়ে গেলো। কি করে অতনুকে বোঝাবে সংগীতা ওর ধারে কাছে থাকলেও ঐশীর মনটা মনটা চঞ্চল হয়ে ওঠে। দুজনেই অবিবাহিত এবং মানানসই…
“কেন সঙ্গীতা কেন যাচ্ছে আবার!” মনের ভাবটা এবার শতচেষ্টাতেও গোপন করতে পারলো না ঐশী। খানিকটা ঝাঁঝিয়ে উঠে বলে উঠল সে।
“হঠাৎ কি হল তোমার?” ওর মনের ভাবগতিক বুঝতে না পেরে বলে উঠলো অতনু।”এখানে আসা মাত্র মা ফোন করেছিলেন, শরীর খুবই খারাপ। প্রেসার ফল করছে বারেবারে। বাবা নেই, আমি ছাড়া আর কে সামলাবে মা’কে…”
“ওহহ।” অতনুর কথা শুনেও যেন নিশ্চিত হতে পারলনা ঐশী। “রাত্রে এখানেই থাকবে… মানে কি একসাথেই থাকবে” স্বভাবজাত দোষে আপনমনেই বলে উঠলো ঐশী। কাউকে বিশ্বাস না করার ধর্মটা এখনো চেপে বসে আছে যে!
“বলছি, তুমি সংগীতার বিয়েতে গিয়েছ?” ঘুরতে থাকা প্রশ্নটা অবশেষে করেই ফেলল ঐশী। বস্তুত সংগীতা বিবাহিত নাকি অবিবাহিত জানার ইচ্ছেটা মনের মধ্যে পাক খেতে থাকলেও সরাসরি জিজ্ঞেস করতে পারল না ও। অগত্যা সেই ত্যাড়াব্যাকা রাস্তাই ভরসা…
“না যাইনি।” অস্পষ্টভাবে ভাসা ভাসা উত্তর দিয়ে উঠলো অতনু।
“তবে কি সংগীতা এখনো অবিবাহিত!” মনমধ্যে চেপে বসা প্রশ্নটা জেগে উঠতেই অতনু বলে উঠলো,”ঐশী,এখন রাখি.. মা ফোন করছে।”
কলটা ডিসকানেক্ট করে চার্জে বসিয়ে দিল ঐশী। তারপর খোলা দরজাগুলো বন্ধ করে একটু ঘুমানোর তোড়জোড় করতেই ঠকঠক শব্দে আধো ঘুমটা ভেঙে গেলো অপ্রত্যাশিতভাবে।
“কে?”গলা ছেড়ে ডাক দিয়ে উঠতেই শক্ত আগলের বাইরে কৃষানুর পুরুষালী গলাটা ঠোক্কর মারলো ঐশীর কানে,”বোন, আমি দাদা, দরজা খোল। কথা আছে।”
ক্রমশ
আগের পর্ব https://www.facebook.com/114703953643370/posts/182308210216277/?app=fbl
©সম্প্রীতি রায়
আশা করি ভালো লাগছে সবার, সঙ্গে থাকবেন সবাই।