#বিধবা_বিবাহ(চতুর্থ পর্ব)
চওড়া পুরুষালী পাঞ্জাটা নিপুণভাবে খেলে বেড়াচ্ছে ফিনফিনে ফর্সা কোমরের আগেভাগে। উন্নত ভরাট স্তন, নিতম্ব সম্মিলিত শরীরে এসে পড়েছে জোরালো আলোর পরিমিত ঝলকানি। পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখা হাইলাইটেড চুল, প্রসাধনে পরিপূর্ণ অতিফর্সা নারীমূর্তির মুখাবয়ব স্পষ্টভাবে বোঝা গেলেও পুরুষালী অবয়বটির চওড়া পিঠই কেবলমাত্র দৃশ্যমান। গোটা দৃশ্যটা ডিজিটাল স্ক্রিনে দেখতে দেখতে গা গুলিয়ে উঠছিলো ঐশীর।
এমন সময় পুরুষটির পিঠের নির্দিষ্ট জায়গায় চোখ যেতেই ভ্রূ জোড়া কুঁচকে উঠলো ওর। সামান্য দূরত্বে অবস্থিত দুটো লালচে ছোপের দিকে নজর যেতেই বুকটা ধক করে কেঁপে উঠলো ওর।
“এমন জন্মদাগ তো অবিনাশেরই ছিল। পিঠের বাম কোণে পরপর দুটো।” ভাবনার আজগুবি জালটা মনের মধ্যে পাক খেতে লাগলো অবিন্যস্তভাবে।”তবে কি পর্দার পুরুষটি আমার স্বামী অবিনাশ!”
“কাট!” মুঠোফোনের স্পিকার থেকে ভেসে আসা শব্দ শুনেই চমকে উঠলো ঐশী। প্রাবল্য এতটাই বেশি ছিলো যে হাত থেকে কমদামী টাচফোনটা মেঝেতে পড়ে গেলো সশব্দে। ওর ফর্সা মুখ ততক্ষনে লাল হয়ে গিয়েছে। বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে স্পন্দনযন্ত্রটা সংকুচিত, প্রসারিত হয়ে চলেছে পূর্নগতিতে।
টুং!
মেঝেতে নিস্পন্দের মতো পড়ে থাকা যন্ত্রটা নিজের অস্তিত্ব জানান দিতেই বাস্তবের মাটিতে ফিরে এলো ঐশী। কাঁপা কাঁপা হাতে রিসিভ করতেই ওপ্রান্ত বলে উঠলো,”হ্যালো।”
প্রত্যুত্তরে কিছু জবাব দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে ঐশী। চোখদুটো জ্বালা করতে শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই।
“কিরে! কানে তুলো গুঁজে রেখেছিস? নাকি তোর বরের ভিডিও ফুল ভলিউমে দেখে কানে শুনতে পাচ্ছিস না আজকাল!” হো হো করে হেসে উঠল ওপ্রান্ত।”অবশ্য আমার দাদার পারফরম্যান্স দেখে কানে শুনতে না পাওয়াই স্বাভাবিক। যেমন তেমন পারফরম্যান্স নয়। এক্কেবারে প্রফেশনাল, তাই না?”
“ওটা কিছুতেই অবিনাশ হতে পারেনা!” কোনমতে গুঙিয়ে বলে উঠলো ঐশী। উত্তেজনায় ওর পা দুটো থরথর করে কাঁপছে। আলোয় উজ্জ্বল ঘরটা ধোঁয়াটে হয়ে যাচ্ছে নিজের স্বামীর কুকীর্তি দেখে।
“আচ্ছা আরো কিছু পাঠাচ্ছি, ওয়েট কর। নেহাত লোকটা আমার দাদা ছিলো, তাই ভেবেছিলাম পর্দা ফাঁস করবোনা। কিন্তু উপায় রইলনা।” কথাটুকু শেষ করেই কট করে লাইনটা ডিসকানেক্ট হয়ে গেলো। মুঠোফোনটা হাতে নিয়ে একচিলতে মেঝেতে ততক্ষনে বসে পড়েছে ঐশী।
অরিন্দমের তরফ থেকে পাঠানো পরবর্তী ভিডিওটা ততক্ষনে চলতে শুরু করেছে। এবারেও পরিপাটি ভাবে সাজানো, মসৃণ মাখনকোমল ত্বকের অধিকারিনীকে দেখা যাচ্ছে স্পষ্টভাবে। কিন্তু নতুন ভিডিওতে নতুন মেয়ে দেখেই ভ্রু দুটো কুঁচকে উঠলো ঐশীর। ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে একমনে তাকিয়ে রইলো ভিডিওর দিকে। ডিজিটাল পর্দায় রতিক্রিয়া ততক্ষনে শেষ হয়ে গিয়েছে। পর্দায় আসীন দুই প্রাপ্তবয়স্কদের নারীপুরুষ লজ্জানিবারণের জন্য পোশাকের আবরণে নিজেদের আচ্ছাদিত করতে শুরু করেছে।
এমন সময় পুরুষালী অবয়বটির মুখ দেখা যেতেই হৃদপিন্ডটা ধক করে কেঁপে উঠলো।
“এ যে অবিনাশ!” নিদারুণ কষ্টে বাকশক্তিও যেন
হারিয়ে ফেলেছে ঐশী, অস্ফুটে গুটিকয়েক শব্দ সমষ্টি ছাড়া কিছুই বার হতে চাইছেনা আজ। আবেগের সুতীব্র দোলাচলে কান্নাটাও হারিয়ে গিয়েছে হতাশার চোরাবাঁকে।
“কীরে, নিজের বরের কীর্তি দেখলি?” আননোন নম্বর থেকে আসা কল রিসিভ করতেই বলে উঠলো ওপ্রান্ত।”ইলিগ্যাল আফেয়ার্স ভাবিস না আবার, সবকটা ‘মাল’ ইমপোর্টেড। এক একটা ভিডিও প্রায় কোটিখানেক ছাড়াবে।” ওপ্রান্ত হাসতে হাসতে বলে উঠেছে এবার।
নিজের মৃত স্বামীর জীবনের গোপনতম অধ্যায়টি এমনভাবে নিজের চোখে দেখার পর ঐশী কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। শিরায় শিরায় অ্যাড্রেনালিন ক্ষরণের দরুন বড়ো বড়ো শ্বাস পড়ছে দ্রুতগতিতে। অবিনাশের অতিরিক্ত দৈহিক চর্চা, হাই প্রোফাইল লাইফ স্টাইল মেনটেন করার কারণটা বুঝতে পারছে ঐশী। যে রূপের মোহে অন্ধ হয়ে ভেসেছিল, তা এমন মাকাল ফল হবে কে জানতো! সর্বক্ষণ ফিটফাট, পরিপাটি থাকার কারণটা যে পেশাগত খাতিরে তা বলাই বাহুল্য। নীল ছবিতে অভিনয় করতে গেলে যে দৈহিক সৌন্দর্যই মূল দাবিদাওয়ার মধ্যে পড়ে, তা বলাই বাহুল্য।
“ছি!” এতক্ষণ পর ঘৃণার উদ্রেগ বেরিয়ে এলো উত্তপ্ত সিসার মতো।
সেই শব্দ শুনে ওপ্রান্ত বলে উঠলো ফের,”সবে তো ট্রেলার দেখলি মনি, পিকচার অভি বাকি হেন মেরে দোস্ত! নিজের স্বামীর জীবনের একটা পার্ট জানলি সবেমাত্র। এমন রঙিন জীবন বোধহয় ফিল্মস্টারদেরও হয়না।”ওপ্রান্ত হোহো করে হেসে উঠেছে এবার,”সরি সরি, তোর স্বামী তো একজন ফিল্মস্টারই। নীল জগতে যার নাম আরিয়ান। মুখ না দেখানো চরম জনপ্রিয় একজন দেহশিল্পী। যার খ্যাতি এশিয়াটিক কান্ট্রি ছাড়িয়ে স্টেটসও পাড়ি জমাচ্ছে।”
ঐশীর গাটা গুলিয়ে উঠেছে ততক্ষনে।কলেজজীবনের ‘ক্রাশ’ তথা নিজের প্রাক্তন ‘অধিকার’ এর এমন কুরূপ মানসিকতা দেখে ঘৃণার প্রবৃত্তি জেগে উঠতে বাধ্য। মানুষটা মৃত হলেও মনের গহীন কোণে সূক্ষ্ম অনুভূতির জাল তখনও এলোমেলো হয়ে জমে ছিল যে! মনের আবেগ মিটিয়ে দেওয়া কি অতই সহজ!
“আমার ভালবাসা তোর কাছে বড্ড ঠুনকো লেগেছিলো, তাই না রে মনি? ক্যান্টিনে যখন কুকুরের মত পড়ে থাকতাম তোর পিছনে…আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে অবিনাশের সাথে ঘুরে বেড়াতিস। এমনকি ওকে দিয়ে ভরা কলেজের সামনে মারও খাইয়েছিলিস! মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা..?”ওপ্রান্তে অরিন্দম বলে ওঠে এবার।
“স্টপ! তোকে আমি কখনই মনি নামে ডাকার অধিকার দেইনি।সো ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট।” অরিন্দমের কথার মাঝেই বলে উঠলো ঐশী।”আর যেটাকে তুই ভালোবাসা বলছিস, সেটা কাম প্রবৃত্তি ছাড়া কিছুই না। আমার অনুমতি না নিয়ে লেডিস টয়লেটে ঢুকে জোরজবরদস্তি শুরু করেছিলি! একে তুই ভালোবাসা বলতে চাস!” প্রায় চিল্লিয়ে বলে উঠলো ঐশী।
হতাশার বুদবুদ পেরিয়ে ওর মনে চাগার দিয়ে উঠেছে বিষম ক্রোধ। বিশ্বাস ভাঙার সাথে সাথে মৃত স্বামীর প্রতি জেগে থাকা সম্মানও ধূলিঝড়ে মিশে গিয়েছে ততক্ষনে। বিয়ের পরপর অবিনাশের অন্যত্র চলে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারলেও এখনও অনেক হিসেব মেলা বাকি আছে। তবুও সেদিকে বিন্দুমাত্র দৃষ্টি না দিয়ে ঐশী বলে উঠলো,”অবিনাশ এখন মৃত। একজন মৃত মানুষের নোংরা জীবনকাহিনী দেখিয়ে কি প্রমাণ করতে চাইছিস?”
ওর কথার সরাসরি জবাব না দিয়ে ওপ্রান্ত বলে উঠলো এবার,”তোর ধারণা ভাঙাতে চাইছিলাম.. জানতে চাইবিনা কেন কথাগুলো এত পরে বললাম আমি? এভিডেন্স তো বহুদিন আগে থেকেই আমার কাছে ছিলো, বিয়ের আগে থেকেই।”
“বহুদিন! বিয়ের আগে?” ঐশীর মাথায় যেন কিছুই ঢুকছিলনা এবার। এতো বড়ো বিশ্বাসঘাতকতা!
“তোমার স্বামীরত্নটি বহুদিন আগে থেকেই এই পেশায় জড়িত, পরে কাঁচা পয়সা হাতে আসায় নিজেই ডিরেক্ট করা শুরু করে, বুঝলে ঐশী সোনা?” ওপ্রান্ত হাসতে হাসতে বলে ওঠে এবার,”তোমার সাধের গয়না বন্ধক দিয়েই এই কারবারের মূলধন বানানো শুরু। উদ্দেশ্য ছিল আরো বেশি কিছু, কিন্তু হলো কই!”
“তবে কি অরিন্দম কোনোকালেই আমাকে ভালোবাসেনি!” একের পর এক প্রমাণে ওর বিশ্বাসটা তখন কার্যত ধুলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। বড্ডো কষ্ট হচ্ছে ওর। অন্যের সাথে জীবনটা শুরু করতে চাইলেও প্রতারণার ক্ষত ওকে যেন ধরাশয়ী করে দিতে চাইছে।
“দাদা তোকে কোনোকালেই ভালোবাসেনি ঐশী। ওপ্রান্ত বলে উঠলো এবার,”দাদা ভালোবাসতো টাকাকে। আর বড়োলোক বাড়ির মেয়ে হওয়ার কারণেই তোকে বিয়ে করেছিল। তোর প্রতি ওর মায়া মমতা, ভালোবাসা কিচ্ছু ছিলনা। আর যদি সবটুকু জানতে চাস, তবে নিজের পুরনো ঠিকানায় চলে আসিস।”
“ঠিকানা!” কথাটা শুনে অতিকষ্টেও হেসে ফেললো ঐশী। যে বাড়িতে অবিনাশ বেঁচে থাকাকালিনও প্রাপ্ত সম্মান পায়নি, সেই বাড়িকে অরিন্দম পুরনো ঠিকানা বলছে!
“শোন, পুরোনো কথা ঘেঁটে লাভ আছে কি? তাছাড়া দুই তিনটে ক্লিপ দেখিয়ে নিজেকে কি প্রমাণ করতে চাইছিস জানা নেই।”নিজেকে খানিক সামলে নিয়ে বলে উঠলো ঐশী। নিজের ভেঙে পড়াটা কিছুতেই জানান দেওয়া যাবেনা অরিন্দমকে এমনটা ভেবে ঐশী ফের বলে ওঠে,”তোদের পরিবারের সাথে আমি কোনোভাবেই কানেক্টেড নই। বিধবা হওয়ার পর অবিনাশের প্রতি যেটুকু মায়া ছিলো, আজকের পর সেটাও গিয়েছে।”কেটে কেটে বলে ওঠে ঐশী।”তাই বার বার ফোন করে আমাকে বিরক্ত করিস না, তোর দাদা বা তোর কেচ্ছাকাহিনী শুনতে আমি ইন্টারেস্টেড নই। জীবনটা এখনও পড়ে আছে আমার।”
“মিস ঐশী চক্রবর্তী,”ওপ্রান্ত বলে উঠলো এবার,”বিয়ে হলেই পার পেয়ে যাবেন। এটা ভেবে বসবেন না। অতনু আসুক, বা অন্য কেউ…যতদিন না তোকে নিজের করে পাবো। আমি হাল ছাড়বোনা।” বলেই কট করে লাইনটা ডিসকানেকট হয়ে গেলো এবার।
লাইনটা ডিসকানেক্ট হওয়া মাত্র ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল ঐশী। বহুকষ্টে ধরে রাখা আবেগ ঝরে পড়ছে উত্তপ্ত বারিধারার মত। প্রতারণার ক্ষত বুকে বয়ে নিয়ে চলা যে কতখানি দুঃসাধ্য, সেটা একজন ভুক্তভুগীই বুঝবে। কাঁপা কাঁপা হাতে অরিন্দম নাম্বারটা ব্লক করতে যাবে এমন সময় চোখ আটকে গেল কিছুক্ষণ আগে পাঠানো মেসেজের দিকে।
“হানিমুনে কেন নিয়ে গিয়েছিল…” বার্তাটা দু’তিনবার পরার পরই ভ্রূ দুটো কুঁচকে উঠল। অবচেতন মনটা জানান দিচ্ছে একটা বিরাট রহস্যের গোলকধাঁধায় জড়িয়ে গিয়েছে সে।
“মনি, দাদা তোকে ডাকছে।” বলতে না বলতেই ঘরে ঢুকলেন ঐশীর পিসিমা। রাত্রের স্বল্পাহার সেরে নিজের এঁটো বাসনটা ধুতে গিয়েছিলেন বাইরে। তারপর কেঁদেকেটে লাল হয়ে যাওয়া ভাইঝির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ।
“হুম যাচ্ছি।” কথাটুকু বলে ঐশী পা বাড়ালো ঘরের বাইরে।
———–
চক্রবর্তী বাড়ির বৈঠকখানায় আড্ডা জমে উঠেছে..দাদা, বৌদি, ঐশী মিলে টুকটাক গল্প করে চলেছে হাসিমুখে। গল্পের এক পর্যায়ে কৃষানু একটা কাগজ আর পেন এগিয়ে দিল ঐশীর দিকে।
“বুঝলি বোন, বাড়িটা আর রাখতে পারবোনা। এত বড়ো বাড়ি, রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়েই ফতুর হয়ে যাবো। বাবার মতো তো বড়ো মাপের ব্যবসা নেই আমার। সামান্য চাকরি করি। এদিকে চাঙর খসে পড়ার দশা হচ্ছে।” দাদার কথার মাঝেই ঐশী চোখ রাখলো সিলিংয়ে। চাঙর তো দূর! সামান্য ফাটল ধরার চিহ্ন নেই সেখানে।
“তাছাড়া টিয়া, তুতুনের জন্য বছর বছর খরচ বাড়ছে। আর মায়ের রোগভোগের জন্যও খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় সামান্য স্যালারি দিয়ে আমি আর টানতে পারছিনা রে!” অসহায়ের ভঙ্গিতে বলে উঠলো কৃষানু।”তাই আমি আর লাবনী মিলে ঠিক করলাম বাড়িটা প্রোমোটারকে দিয়ে দেবো। মাও তাই চাইছে, এবার তুই সিগনেচার করে দিলেই ব্যাপারটা ঘাড় থেকে নেমে যায়।”
“বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছিস? নাকি সম্পত্তির অর্ধেক পাওনাদারকে?” বলতে গিয়েও চুপ করে গেলো ঐশী।তারপর তাকাল নিজের মায়ের দিকে। ওনার নৈঃশব্দ্যই জানান দিচ্ছে পরিপূর্ণ সম্মতির স্পষ্ট চিহ্ন।
“আমি আর পিসি কোথায় থাকবো?” এগিয়ে রাখা পেনটা দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে উঠলো ঐশী।
“পিসিকে একটা ঘর বানিয়ে দেবো তো! সামনের মাস থেকেই কাজ শুরু হচ্ছে। তোর বিয়ের পরই। চিন্তার কিছু নেই। আর তুই তো বিয়ের পর অতনুর সাথে থাকবি। সেইমতো তোকে খানিক ক্যাশে দিয়ে দেবো।”ঠোঁটের কোণায় সহজ সরল হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে কৃষানু। আপাতসরল সেই হাসির কোণে যে একটা কুটিল মুখ লুকিয়ে আছে সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না ঐশী। কিন্তু দ্বিতীয় বিয়ে উপলক্ষ্যে নানারকম গহনা দেওয়ার কারণ ওর কাছে তখন দিনের আলোর মত পরিষ্কার। কমদামী সোনার গহনা গছিয়ে বেশি দামের বলে চালানোর কারণটাও এখন সুস্পষ্ট।
“তাছাড়া ঐশী তো আমার বোনের মতোই। সেই মতো আমরা না হয় একটা এক্সট্রা রুম বানিয়ে নেবো ফ্ল্যাটে। অতনুকে নিয়ে আসলে ওখানেই থাকবে।”স্বামীর সমর্থনে বলে ওঠে লাবনী।”তাছাড়া বিয়ের পর মেয়েদের শ্বশুরবাড়িই সব, ভুল কিছু বললাম মা?”
“কোনো পার্থক্য নেই! সব সমান!”আপনমনেই বলে ওঠে ঐশী,”একজন সম্পত্তির জন্য বিয়ে করেছে, আরেকজন সম্পত্তির লোভে একপ্রকার বাড়ি ছাড়া করতে চাইছে।” প্রোমোটারকে দিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে গোটা সম্পত্তি কৃষানু বুদ্ধির জোরে দখল করতে চাইছে, তা বলাই বাহুল্য।
“এটাকে আলোচনা বলেনা দাদা, আলোচনা হলে সম্মতি নেওয়ার আগে প্রোমোটারের সাথে আমার যোগাযোগ করিয়ে দিতিস।” চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠলে বলে উঠলো ঐশী।”তোরা দুজনে তো বাড়ি ভাঙার দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলেছিস!” শেষের কথাটুকু বলতে গিয়েও চুপ করে গেল ঐশী। তারপর নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে কাগজটা হাতে নিয়ে নিলো সে। মুখে বললো,”আমাকে ভেবে দেখার সময় দে…”
আশা করি ভালো লাগছে সবার, সঙ্গে থাকবেন সবাই।
ক্রমশ।
পরবর্তী পর্বে ঐশীর মা, বাবার ভূমিকা স্পষ্ট হবে।
আগের পর্ব https://www.facebook.com/114703953643370/posts/168804571566641/