#বিধবা_বিবাহ (একবিংশ পর্ব)
“বাপের পয়সায় ফুটানি মেরে আর কতদিন!
করো তো অন্যের কেরানিগিরি, তাও আবার প্রাইভেট ফার্মে। নিজের মুরদে বাড়িটা বানালে তাও বুঝতাম। কি দেখে তোমার মত একজনের গলায় মালা দিতে গিয়েছিলাম, কে জানে!” সুতীক্ষ্ণ তীরের ফলার মত শব্দসমষ্টিগুলো কর্ণপটহের পাতলা পরত ভেদ করে ঢুকে যাচ্ছে আরো গভীরে। নিদারুণ অপমানে মস্তিষ্কের কোষে কোষে বিদ্রোহের দামামা বেজে উঠলেও প্রতিনিধিত্বকারীরা সকলে ঢুকে পড়তে চাইছেন মসৃণ সমতল মেঝের আশ্রয়ে। ঠিক যেমন স্ত্রীয়ের বাক্যবাণে জর্জরিত কৃশানু ঢুকে পড়তে চাইছিল শ্বেতপাথরের মসৃণ মেঝের আশ্রয়ে। ধরণী দ্বিধা হও বলতে বলতে লাবনীর চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা আত্মীয় কুটুম্বদের নজর থেকে বাঁচবার জন্যে চকচকে মেঝের গাত্রে ফুটে ওঠা প্রতিবিম্বে খুঁজে পেতে চাইছিলো নিজের সত্তাকে। মান অপমানের মাঝে বেঁচে থাকা চক্রবর্তী বাড়ির সন্তান কৃশানুকে। বিয়ের পর স্বামীর পরিচয়ে বাঁচতে গিয়ে যে হারিয়ে ফেলছিল সন্তানের পরিচয়কে।
ওরা সংখ্যায় কতজন ছিল, যারা বাড়ির জামাইয়ের অপমান প্রাণভরে শুষে নিচ্ছিল… পাঁচ, নাকি ছয় নাকি আরো আরো অনেকে। সেই মুহূর্তে ধোঁয়াতে যেন ভেসে গিয়েছিল চারিপাশ। কানে আসছিল নিজের স্ত্রীয়ের তীক্ষ্ম চিৎকারের ছদ্মবেশে বলে ওঠা কৃষানুর অক্ষমতা। সুন্দরী স্ত্রীকে দামি উপহারে মুড়ে রাখার অক্ষমতা… দুই ছেলে মেয়েকে নামিদামি স্কুলে পড়িয়ে গেট টুগেদারের খরচ বহনের সামর্থ্যহীনতা।
“না আছে ব্যবসার মূলধন। না আছে স্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা! কাপুরুষ কোথাকার।ভেবেছিলাম গোটা বাড়িটা তোমার নামে রেজিস্টারড আছে, নইলে…!”
“নইলে কি? বিয়ে করতে না?”স্ত্রীয়ের বাক্যবাণ এর বিরুদ্ধে কৃশানুর পুরুষালী সত্তা গর্জে উঠতে চেষ্টা করলেও নিভে গেল একদমকে। কারণ ততক্ষনে মায়ের তর্জন গর্জনের চোটে টিয়া এসে দাঁড়িয়েছে বাবার পাশে।
“তোকে বারণ করেছিলাম না বড়দের কথার মাঝে আসতে নেই!”মেয়েকে দেখে উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার বদলে দ্বিগুণ হারে বেড়ে গিয়েছিল লাবনীর। বড় বড় ডাগর দুই চোখে ফুটে উঠেছিল আত্মজাকে হারানোর ভয়। মায়ের কথা অমান্য করে টিয়া যে কোন সাহসে বাবার পাশে আসতে পারে, সেটা ভেবে ওর চোখের তারায় আঁকি-বুকি কেটেছিল আশঙ্কার মেলা। স্ত্রীয়ের সেই দৃষ্টি পড়ে নিয়ে হারানো মনোবলের বিন্দু বিন্দু অংশ কৃশানুর মনে সঞ্চারিত হলেও মুহূর্তখানেক পরেই তা ধসে পড়েছিল বালির বাঁধের মতো।
“কান খুলে শুনে রাখো কৃশানু। তোমার মত অকর্মণ্য পুরুষের সাথে সংসার করা আর পোষাচ্ছে না আমার। ডিভোর্সের লেটারটা পেয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি। বারে বারে এখানে আসা বন্ধ করো। তোমার অনুরোধে একমুঠো চিঁড়েও ভিজবে না। বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমি কিন্তু ম্যারিটাল হারাসমেন্ট এর কেস করতে বাধ্য হবো।”
স্ত্রীয়ের কথা শুনে নিজের দুইকানকে কিছুতেই বিশ্বাস করে উঠতে পারছিল না কৃশানু। সামান্য শরিকি হওয়ার দোষে এতবড়ো শাস্তি! ব্যবসার মূলধন যোগাড় করতে না পেরে শেষমেষ ডিভোর্স। তবে কি বিবাহ নামক পবিত্র বন্ধনটা এতটাই ঠুনকো… প্রশ্নটা ভেসে আসার সাথে সাথে আরেকটি নির্মম সত্য এসে ধাক্কা মারে কৃশানুর মস্তিষ্ককোটরে।”টিয়া তুতুনের কি হবে!”
“ওদের দুজনকেই আমি নিজের কাছে রাখবো। দরকার নেই এমন বাপের…” মায়ের এমন কটুক্তি টিয়ার কানে না পৌঁছানোয় শতখারাপের মধ্যেও ভালোর সূক্ষ্ম রেশ ছড়িয়ে পড়েছিল কৃশানুর মনে। নিজের সন্তানের সামনে এরকম অপমানের জ্বালা নিতে অনেকেই যে অপারগ তা বলাই বাহুল্য।
আজ, বোনের ঘরের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ঘন্টাখানেক আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার রিপিট টেলিকাস্ট পাক খাচ্ছিল কৃশানু মনমধ্যে। অপমানের জ্বালায় জ্বলতে জ্বলতে কেবলমাত্র গুটিকয়েক শব্দই ফুটে উঠছিল ওর মনে,”গোল্ড ডিগার…” যারা পয়সার লোভে একটা পবিত্র সম্পর্ককেও খাদের কিনারায় ঠেলে দিতে পারে নিঃসংকোচে। “সব মেয়েরাই এক! পয়সা ছাড়া কিচ্ছু চেনেনা এরা।” মনের মধ্যে সমগ্র নারীজাতির প্রতি এক তীব্র বিষ বাষ্প ধোঁয়ার কুণ্ডলী মত জেগে উঠছিল। “লাবনী, ঐশী কোন পার্থক্য নেই এদের মধ্যে…একজন সম্পত্তির লোভে শরিকি স্বামীকে নির্দ্বিধায় ডিভোর্স দিতে চাইছে, অপরদিকে আরেকজন…”
এমন সময় ভাবনার মাঝপথেই দরজাটা খুলে গেলে মনের মধ্যে সাজিয়ে রাখা কথাগুলো আরেকবার আউড়ে নিল কৃশানু।
“হ্যাঁ দাদা বল।” ভেঙে পড়া হাতখোঁপাটায় একটা ক্লিপ এঁটে দরজার বাইরে বেরিয়ে এসেছে ঐশী। তারপর খাটের এককোণে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকা বাসন্তীলতাদেবীর শরীরটা দেখে নিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল নিঃশব্দে। পিসির ঘুম যাতে না ভাঙ্গে তাই এই ব্যবস্থা।
“শুনলাম তুই প্রোমোটারকাকুকে ফোন করেছিলিস বাড়ি বিক্রির ব্যাপারে। ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে কোন কথা হয়েছে?” কোনরকম ভুমিকা ছাড়াই সরাসরি বোনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো কৃষানু।
“সমান তিন ভাগে ভাগ হবে। কিন্তু আমি আমার ভাগের কিছুটা পিসির নামে রেজিস্টার করে দিয়ে যাব। মানুষটা একটা ঘর পাবে,আর শেষজীবনে এসে পয়সাকড়ির অভাবও হবে না।” নাকটা খানিক টেনে বলে উঠলো ঐশী।
অতিবৃদ্ধা পিসীমার জন্য বরাদ্দ করে রাখা সম্পত্তির হিসাবনামার কথা শুনে কৃশানুর অন্তরাত্মাটা খানিক ঝাকুনি দিয়ে উঠলো। লাবনীর সাথে নিক্তিতে নিক্তিতে মেপে রাখা বোনের চারিত্রিক সাদৃশ্য গঠনে ছেদ এসে পড়ল অলিখিতভাবেই।
“পিসির জন্য তুই নিজের সম্পত্তি ভাগাভাগি করবি?” বোনকে উদ্দেশ্য করে অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে বলে উঠলো কৃষানু।
“হ্যাঁ, সেটাই ভেবেছি। যদিও পিসিকে এখনো অবধি কিছুই জানানো হয়নি, কিন্তু ডিল ফাইনাল হলে বলে দেবো সময়মত।” পাশের বাঁধানো চাতালে বসতে বসতে বলে উঠলো ঐশী,”তুই হঠাৎ ডাকলি? কিছু দরকার ছিল?”
“ভাবছিলাম একটা ব্যবসা করব। চাকরিতে ঠিক পোষাচ্ছে না। দুই ছেলেমেয়ে বউ নিয়ে একলার রোজগারে সংসার টানা যাচ্ছে না রে!”শশুর বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে আসা অপমানের ঝুড়ি মনের গোপন কন্দরে বন্দি রেখে বলে উঠলো কৃশানু।”সেই কারণেই বাড়িটা বিক্রি করতে চাইছিলাম.. কিন্তু হিসাব করে দেখলাম তিনজন সমানভাবে ভাগ পেলে ব্যবসাটা শুরু করতে পারবোনা।”
“কিসের ব্যবসা?”লাবনীর বাড়ি ফেরার সময়টা জানতে ইচ্ছে করলেও দাদার কাছে চেপে গেল ঐশী। আজ সকালেই খাবার টেবিলে কৃশানু অনুপস্থিত ছিল। ছুটির দিনে বাড়ির ছেলে ঝগড়া, অশান্তির আঁচ লাগা দাম্পত্যের বাঁধন শক্ত করতে কোথায় যেতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু চিরাচরিত হিসেবকে পিছনে ফেলে লাবনী যে আজকেও কৃশানুকে ফিরিয়ে দেবে,সেটা ঐশী ভাবতে পারেনি মোটেই।
“সেরকম বড় ব্যবসা নয়… ছোটখাটোই।” বোনকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল কৃষানু।
“বাহ ভালই তো.. ইউনিক ডিসিশন। চাকরি করার পাশাপাশি ব্যবসা সামলানো যদিও বেশ টাফ..”দাদার কথার প্রত্যুত্তরে বলে উঠলো ঐশী..কিন্তু এর সঙ্গে বোনের সাথে কথা বলার কী আছে, সেটা বুঝতে পারল না ও।
“হ্যাঁ আইডিয়াটা ইউনিক… কিন্তু সমস্যা একটাই আমার হাতে পয়সা নেই। তাই তোর কাছে এসেছিলাম আরকি।”আমতা আমতা করে মনের মধ্যে ঘুরতে থাকা পরিকল্পনাটা অবশেষে উগরে দিল কৃশানু।”ব্যাংক থেকে সরাসরি লোন নিতে চাইছিনা… আর এখন এই বাজারে ক্যাশে হাত দেওয়াটা খুব রিস্কি হয়ে যাবে। তাই চাইছিলাম জিরো ইন্টারেস্টে যদি কিছু ধার পাই আরকি। আমি এক দুই বছরের মধ্যেই শোধ করে দেবো।”
ব্যবসার মূলধন কোনমতে জোগাড় করে নিজের স্ত্রী সন্তানকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার খাতিরেই যে এরূপ পদক্ষেপ তা বলাই বাহুল্য।
“বাহ ভালই তো… কিন্তু আমাকে কত দিতে হবে? আই মিন পরের মাসে বিয়ে, বুঝতেই পারছিস খরচাপাতি আছে। তারপর বিয়ের পরেও…” দাদার বক্তব্যের মাঝপথেই বলে উঠলো ঐশী। এতদিন বাদে সম্পত্তির হিসেব কম করে দেখানোর কারণটা ওর কাছে স্পষ্ট। যদিও দাদার এইরূপ লুকোচুরিতে ঠাসা চরিত্র ওর কাছে একেবারে নতুন, তবুও কঠোর বাস্তবটা জিজ্ঞেস করার লোভ সামলাতে পারল না ও।”দাদা, তুই কি এই কারনেই আমাকে বাবার লিখে দেওয়া সম্পত্তি থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছিলিস?”
বোনের মুখে প্রশ্নটা শুনে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মত তাকিয়ে রইল কৃশানু। ওর ভিতরটা মরমে মরে যাচ্ছিল, কি করে বলবে লাবনীর কথামতোই এতসব পরিকল্পনা ছকে রাখা হয়েছিল…
“হ্যাঁ,”অস্ফুটে জবাব দিয়ে উঠলেও সেই অস্পষ্ট শব্দই পৌঁছে গেল ঐশীর কর্ণকুহরে। প্রত্যুত্তরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল কেবল।
“টাকার পরিমান কত বলে দিস। আমি দিতে পারবো, কিন্তু অন্যায়ভাবে অন্যের প্রাপ্য ছিনিয়ে নিস না দাদা।”শেষটুকু বলতে গিয়ে ঐশীর গলাটা কেঁপে উঠলো,”আর মায়ের কাছেও গিয়ে বলতে পারিস।”
একপশলা ঠাণ্ডা হাওয়ায় কৃশানুর ভারাক্রান্ত মনটা যেন শীতল হয়ে গেল। সাথে ভেঙে গেল নিজের বোনকে লাবনীর মানদণ্ডে মেপে নেওয়ার সূক্ষ্ম অনুভূতিটুকু।
“আচ্ছা আসি, আমি পরে টাকার হিসেবটা জানিয়ে দেবো।” ঐশীর পাশ থেকে উঠতে উঠতে বলে উঠলো কৃশানু… দূরত্বের কারণে দাদার মুখ থেকে বলা শেষবাক্যটি ধরা দিলনা ঐশীর গান,”এটা ওর প্রাপ্য। জন্মসূত্রে পাওয়া সম্পদ…”
এমন সময় পাশে রাখা মুঠোফোনটা সশব্দে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে বসতেই ভ্রূ দুটো কুঁচকে গেল ঐশির। ডিজিটাল স্ক্রিনে ফুটে ওঠা অতনুর নামটা দেখেই মনটা খানিক ভালো লাগাতে চেয়ে গেলো।
“হ্যাঁ বলো অতনু, খাওয়া দাওয়া কমপ্লিট?”
“আর খাওয়া-দাওয়া! এখন আমি পুলিশ স্টেশনে ছুটছি। কিছুক্ষণ আগেই অরিন্দমের নম্বর থেকে মনু যাদবের লোকেশন ট্র্যাক হয়েছে।” হাঁপাতে হাঁপাতে উত্তর দিল অতনু।ওর কণ্ঠস্বর শুনেই বোঝা যাচ্ছে প্রচন্ড উত্তেজিত আছে অতনু।
“কি করে পেলে লোকেশন?” চরম কৌতুহলে জিজ্ঞেস করে উঠলো ঐশী।
“অরিন্দমের পার্সোনাল নম্বরে কল করেছিল লোকটা। সংগীতা এইমাত্র নাম্বারগুলোর লিস্ট পাঠালো। লোকটা আজ সকাল থেকে অরিন্দমকে পাঁচ বার ফোন করেছে।”এক নিঃশ্বাসে বিন্দুমাত্র না থেমে বলে উঠল অতনু…
“আরে বাহ! অবশেষে দুইজনের মধ্যে কানেক্টিভ লিংক পাওয়া গেল।”হাঁফ ছেড়ে বলে উঠল ঐশী।”কিন্তু অরিন্দম নিজের পার্সোনাল নাম্বারে ফোন করতে দিলো? আই মিন…”
“অরিন্দম কি আদৌ বুঝতে পেরেছে কেসটা আমরা সিরিয়াসলি নিয়েছি? ওতো ভেবে ফেলেছে কোনরকম সূত্র না থাকার জন্য আমরা চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে আছি।”ওপ্রান্তে অতনু বলে উঠলো,”আর আশ্চর্যের ব্যাপার কি জানো?”
“কি?” অসীম কৌতুহলভরে ঐশী জিজ্ঞেস করে উঠলো। এতদিন পর দিশা পাওয়ার আনন্দে ওর মনটা আনন্দেতে ভরে উঠেছে।
“মনু যাদবের সিমের লোকেশনের সাথে আরেকটা সিমের লোকেশন একসাথে ছিল বিগত দুই তিন দিন আগে। তার পরে অবশ্য সিমটা বন্ধ হয়ে যায়, আই থিঙ্ক মোবাইল থেকে সিমটাকে খুলে ফেলা হয়।”অতনু বলে উঠলো ঐশীকে উদ্দেশ্য করে,”আমার অনুমান ক্ষমতা বলছে অরিন্দম মনু যাদবের সাথেই দুই তিন দিন আগে বেগুসারাইতে এসেছিল। বিজনেস ট্রিপটা যে নেহাতই মিথ্যে সে কথা বারবার মনে হয়েছে আমার। ইনফ্যাক্ট আননোন সিমটা দিয়ে মনু যাদবের স্ত্রীকে ফোন করা হয়েছে।”
“ঠিক বুঝতে পারলাম না…” অতনুর কথাগুলো বুঝতে না পেরে ঐশী বলে উঠলো।
“মানে, মনু যাদব লোকটা পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। অরিন্দমের পার্সোনাল কলহিস্ট্রি থেকে সংগীতা মনু যাদবের ভ্যালিড নাম্বার আইডেন্টিফাই করেছে। ব্যবসার কাজে যোগাযোগ যে রাখতেই হবে! যদিও অরিন্দম এসব কিছুই জানেনা। আজ জেরাতেও ওকে উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করেনি সংগীতা। আমিই বারন করে দিয়েছিলাম লোকটাকে বিন্দুমাত্র ট্রেস না দিতে…” অনেকক্ষণ একটানা কথা বলার পর হাঁপিয়ে উঠলো অতনু। দুইমুহূর্ত শ্বাস নেওয়ার জন্য খানিক থামতেই ঐশী তাড়া দিয়ে উঠল ফের,”তারপর কি হলো?”
“মনু যাদবের সাথে থাকা নম্বরটা একদুই দিন আগে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। খেয়াল করে দেখো অরিন্দমও কিন্তু একদিন আগেই বিজনেস ট্রিপের নাম করে বাড়ি ফিরে এসেছে। তাই আমার মনে হচ্ছে লোকটা আর কোথাও যায়নি। বেগুসারাইতেই ছিল। তারপর কাজ মিটে যাওয়ার পর ভালোমানুষের মতো বাড়ি ফিরে গিয়ে মিথ্যে মিথ্যে গল্প সাজিয়ে নিজের পার্সোনাল নাম্বারটা অন করেছিল নিজস্ব ডিভাইসে…”
অতনুর মুখে কথাটা শুনে ওঠা মাত্র মাথাটা কেমন জানি তালগোল পাকিয়ে গেল ঐশির। এমন চক্রান্ত মানুষের মাথায় আসে কি করে! মনু যাদবের সাথে থাকা নম্বরটা অন করে বেগুসরাইতে কাজ সেরেছে অরিন্দম। তারপর প্রয়োজন ফুরালে সেই সিমটা বন্ধ করে দিয়ে নিজের বাড়ি ফিরে এসে নিজস্ব সিম অন করেছে!
“উফফ… এ যে ক্রিমিনাল মাইন্ডেড লোক অতনু!” অসীম উৎকণ্ঠাভরে বলে উঠল ঐশী।
“ওই অননোন সিমটা কার ছিলো জানতে চাইবে না?” ঐশীকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে উঠল অতনু।
“কার নাম্বার?”
“মনু যাদবের। আর এই নাম্বারটা দিয়েই আত্মহত্যা করে ফেলা ভিকটিম মেয়েটাকে ফোন করা হতো।”
“কিন্তু সিমটা তো অরিন্দম ব্যবহার করত। আই মিন তোমার কথা অনুসারে, বেগুসারাইতে থাকাকালীন অরিন্দম মনু যাদবের এই নাম্বারটা ব্যবহার করত…”প্রচন্ড অবাক হয়ে বলে ওঠে ঐশী,”তবে কি অরিন্দমই মনু যাদবের স্ত্রীকে ফোন করতো?”
ঐশীর মুখের কথাগুলো শুনে অতনুর শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল।সত্যিই তো এই সরল সত্যিটা আগে কেন মাথায় আসেনি!
কিন্তু ঘুরেফিরে যে একই জায়গায় এসে যাচ্ছে… সিমটা যে তখনও মনু যাদবের নামেই রেজিস্টার করা…
“তুমি একেবারে ঠিক বলেছো।”ঐশির প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলো অতনু,”এবার আমরা অরিন্দমকে ঠেসে ধরতেই পারি। নিজের স্ত্রীকে পণ্য করে তোলার অপরাধে একজন আসামির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার অপরাধে…”
ক্রমশ
আশা করি ভালো লাগছে সবার সঙ্গে থাকবেন সবাই।
আগের পর্ব https://www.facebook.com/114703953643370/posts/183677896745975/
©সম্প্রীতি রায়