#বিন্নি_ধানের_খই
#পর্ব_০৬
#মিদহাদ_আহমদ
আমি রাতেই মাকে কল করে জানালাম, তাদের জামাই পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে আসবে আগামীকাল। সেই টাকায় যেনো ইফতারি কিনে আনে বাবা। কোনকিছুর কমতি যেনো না থাকে।
সেই রাতে আমি ঘুমালাক কম, শুনলাম বেশি। একটা সিগারেট ধরিয়ে লম্বা টান দিতে দিতে আসিফ আমার পাশে এসে বসলো। খাটের এক পাশে বালিশ দেয়ালের দিকে নিয়ে হেলান দিয়ে বসলো। টু-কোয়ার্টার প্যান্ট হাঁটু ছেড়ে আরও সামান্য উপরে উঠে এসেছে। এসি ছাড়া, তার পরও তার এই অভ্যাস যেনো একটা চিরাচরিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। গালভর্তি ঘন দাড়ি আর লম্বা গোঁফের ভর্তি চেহারা দেখতে যে কারোর ই ভালো লাগবে। হয়তো এই চেহারার প্রেমে কত রমনি মাতোয়ারা হয়ে থাকে সব সময়!
এক হাতে সিগারেট, অন্য হাতে মদের গ্লাস। গ্লাস রেখে মাথার চুলে হাত দিতে দিতে আসিফ আমাকে জিজ্ঞেস করলো
‘কী চাও তুমি?’
আমি কিছুটা অপ্রস্তুত, কিছুটা ভয় আর কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বললাম,
‘এই মদের গ্লাসটা কি এক পাশে রাখা যাবে এখন?’
আসিফ হো হো করে হেসে উঠলো৷ সাদা দাত আর মুখ থেকে বের হওয়া সিগারেট আর মদের অদ্ভুত মাতোয়ারা গন্ধে যেনো চারপাশ ছেয়ে গেলো। তারপর খাটের বক্সে হাত লম্বা করে নিয়ে মদের গ্লাসটা রাখলো। তারপর অন্যহাতে সিগারেটে টান দিতে দিতে আমার দিকে মুচকি হাসে হেসে বললো,
‘কী চাও?’
আমি এবার কোন কথা বলে উঠতে পারলাম না৷ আসিফ বললো,
‘তোমাকে বলেছিলাম তুমি কী চাও। আর তুমি উঠে বললে মদের গ্লাস রেখে দিতে?’
কথাটা বলেই আবার নিজের মতো করে হেসে উঠলো আসিফ। আমি এই প্রথম সম্ভবত আসিফের হাসি এত গভীরভাবে দেখলাম। খেয়াল করলাম তার গালে টোল পড়ে। ছেলেদের গালে টোল পড়তে আমি দেখিনি সচরাচর৷ গালভর্তি দাড়ির ভেতরে থাকা তার উজ্জ্বল গাল যেনো মলিন হয়ে এসেছে। যত্ন নিলে এই গালকেই হয়তো ফর্সা দেখাতো!
আসিফ নিজ থেকে বললো আবার,
‘তোমার স্বপ্ন কী ছিলো?’
আমি বললাম,
‘ডাক্তার হবো। এমনটাই আশা দেখেছিলাম সব সময়।’
‘হু হু হু। তারপর? বিয়ে হয়ে গেলো? এইতো জীবন! হো হো হু৷ আমাকেও বিয়ে করিয়ে দিলো৷ ভেবেছে বিয়ে করলে মদ নারী এসব ছেড়ে দিবো। জীবনে নিজের স্বপ্নের মৃত্যু নিয়ে কি আর বেঁচে থাকা যায়?’
আমি বললাম,
‘যায় তো। বেশ যায়। কেন যাবে না? আমিও তো বেঁচে আছি তাইনা?’
এবার আসিফ গলা ঝেড়ে আমাকে জোর গলায় বললো,
‘না৷ এই বাঁচাকে বাঁচা বলে না। এইটা বাঁচতে বাঁচতে মরে যাওয়া। এই মরার চেয়ে বহু আগেই মরে যাওয়া ভালো৷ বহু আগেই মরে যাওয়া ভালো।’
মাথার বালিশটা একপাশে রেখে বিছানা থেকে পা নামালো নিচে আসিফ। তারপর লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরালো৷ আমি কেশে উঠলাম। এই কয়েকমাসে সিগারেটের গন্ধ আমার সয়ে গিয়েছে। অভ্যাস হয়ে উঠেছে। তবুও খেয়াল করলাম আসিফ উঠে বারান্দায় চলে গেলো। কয়েক সেকেন্ড পরে আবার উঠে এসে আলমারি থেকে মদের বোতল বের করলো। আবার চলে গেলো বারান্দায়৷ বারান্দার গ্লাস টেনে লাগিয়ে দিলো।
ভেতরে ভেতরে মনে হতে লাগলো, হয়তো আমি কেশেছি এজন্য আসিফ গ্লাস বন্ধ করে দিয়েছে বারান্দার! এর আগে তো সে এমন করেনি!
এসব চিন্তা করতে করতে কখন যে আমি ঘুমিয়ে গেলাম তার টেরই পেলাম না৷ রাতে সেহরিও খাওয়া হলো না। কেউ ডেকেছিলো কিনা তাও বলতে পারছি না। সকালে উঠে দেখলাম, আসিফের এক পা আমার উপরে৷ সে বেহুশের মতো ঘুমাচ্ছে৷ তাকে সরিয়ে দিয়ে উঠলাম আমি৷ গোছল সেড়ে বাইরে আসতেই ননাস বললো,
‘কী? সেহরির সময়েও উঠা লাগে না নাকি? এসব অসভ্যতামো কোনদিন যাবে না? ঘরে শ্বশুর শাশুড়ি ননাস ননদের আছে যে, এইটা ভুলে গিয়েছো? ‘
আমি কোন জবাব না দেয়ায় ননাস আমার আরও কাছে এসে চিৎকার করে আবার বললো,
‘কথা কানে যায় না নাকি?’
শাশুড়িও সামনে এলেন। বললেন,
‘কতদূর? তোমার বাবা আসছেন তো সবকিছু নিয়ে?’
আমার মনে হলো এমন সময়ে যে আসিফ বলেছিলো পঞ্চাশ হাজার টাকা দিবে। অথচ সে এখনও ঘুমাচ্ছে রুমে! আমারও মাথায় ছিলো না এইটা। তড়িঘড়ি করে রুমে গেলাম। দেখি আসিফ বসা আছে ইজি চেয়ারে। মোবাইলে গেইমস খেলছে। আমি বলার আগেই বললো,
‘তোমার বাবাকে টাকা দিয়ে এসেছি সকালেই। তুমি ঘুমে ছিলা। তাই আর জাগাইনি। বাবা টাকা নিতে চাচ্ছিলেন না। আমি জোর করে দিয়ে এসেছি। কোন টেনশন করার দরকার নেই ‘
আমার ভেতরটা এক প্রশান্তিতে ভরে গেলো। যে মানুষটা আজ তিনমাসের মাঝে একবারও আমার সাথে ভালো ব্যবহার করেনি, সেই মানুষটা আজ কেমন করে যেনো নতুন রূপে আমার সামনে এসে হাজির হচ্ছে! এ যেনো এক নতুন বিস্ময়! ননাস এসে ডাক দিয়ে আমাকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো। ননদ বললো তার লেবুর শরবত করে রাখতে৷ আমি সবার জন্য লেবুর শরবত করবো কিনা জিজ্ঞেস করতেই শাশুড়ি বললেন,
‘বাপের টাকায় লেবু আসছে নাকি তোমার যে দুইশো জনের জন্য লেবুর শরবত করবা? এখানে বালতি রাখা আছে আর রুহ আফজার এক বোতল রাখা আছে। এই এক বোতল রুহ আফজা দিয়ে দুইশো জনের শরবত বানিয়ে রাখো৷ আর তারপর বালতিটা ডিপ ফ্রিজে তুলে রেখে দিও।”
আমি শরবত বানালাম। শরবত এতটাই পাতলা হলো যে মুখে তোলার মতো অবস্থা না৷ আমার দেখতেই খারাপ লাগছিলো।
যোহরের নামাজ শেষ হতে না হতেই শাশুড়ি আমাকে বারবার জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন আমার বাবা কোথায়। ননদ এসে কটাক্ষ করে বলতে লাগলো,
‘ট্রাক দুইটা লোড করতে তো সময় লাগেই মা। বুঝো না কেন’
ননাসও তার বোনের সাথে যুক্ত করে বললো,
‘হ্যাঁ হ্যাঁ। আজ নুপুরের বাপের বাড়ি থেকে এতো ইফতার আসছে যে এগুলা লোড করতে সময় তো লাগবেই।’
এত অপমান, এত কথা সহ্য করছিলাম আমি নীরবে৷ আড়াইটার দিকে বাবা এলেন৷ দেখলাম এক মাইক্রোবাস আর দুই ঠেলা এসে আমাদের আলিশান ভবনের মেইন গেইট ক্রস করলো। একে একে ঠেলাওয়ালারা বাসার ভেতরে ইফতারির আইটেম এনে রাখতে লাগলো। শাশুড়ি গুণতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর ননাস এসে বললো,
‘নিমকি মাত্র দশ কেজি কেন? আর জিলাপি যদিও লোকে খায় না তার পরও এক মণ তো দেয়া যেতোই। আধা মণ জিলাপি কম হয়ে গেলো না নুপুর? মিষ্টি এক মণ, আমার তো বাবা দিয়েছিলো দুই মণ। আর ফলফ্রুট যা এসেছ, চলে আরকি। ”
শাশুড়ি এসে তার মেয়েকে আটকালেন। আবারও বললেন তাচ্ছিল্যের সুরে,
‘আরে দুই হাড়ি গরুর আখনি এসেছে যে এটাই অনেক। আমি তো ভেবেছিলাম আমাদের মান সম্মান আবার সব ধূলোয় মিশে যায় কিনা। প্রথম দিনেই যা ইফতারির বাহার দেখলাম তার বাপের বাড়ির!’
‘আশ্চর্য! আমাদের ঘরে কি খাবার কম আছে নাকি? এতকিছু তার পরও তোমাদের মন ভরছে না? অন্যজন কীভাবে দিয়েছে এইটাও তো ভেবে দেখার বিষয়! মানুষ খাইয়ে এতো ইফতার এনে, অন্যের উপর জুলুম আর চাপিয়ে দেয়া ছাড়া তোমরা জীবনে কিছুই শিখোনি?’
পেছন থেকে এসে কথাগুলো মা আর বোনদের বললো আসিফ। আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম রান্নাঘরের কোণে।
(চলবে)
প্রিয় পাঠক, আপনাদের অনেক বেশি ভালোবাসি। গত পর্বে আপনারা সবাই পড়ে লাইক কমেন্ট করেছেন এবং আপনারা জানলে খুশি হবেন যে আমার গল্পের রিচ, আপনাদের লাইক কমেন্টের কারণে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে এবং গ্রুপে মেম্বার অনেক যুক্ত হয়েছে নতুন করে। আমি আশা রাখবো যে আপনারা সবাই আপনাদের লাইক কমেন্টের মাধ্যমে গল্পের রিচ বাড়িয়ে যাবেন। মাঝেমধ্যে কঠিন হয়ে বলি যে লাইক কমেন্ট না হলে লেখা বন্ধ করে দিবো। আসলে কষ্ট থেকেই বলি। রিচ অনুপাতে এনগেজমেন্ট না আসলে গ্রুপ মেম্বার যে বাড়ে না! আপনারা যদি এভাবে পাশে থাকেন, তাহলেই আমাদের গ্রুপ এগিয়ে যাবে। প্লিজ সবাই পড়ে যাবেন না শুধু, সাথে লাইক কমেন্ট করে যাবেন। আজকের পর্বে আপনাদের মিনিমাম ১ হাজার লাইক ও ২/৩০০ কমেন্ট আমি আশা করছি। কমেন্টে আপনাদের মতামত জানাবেন। ভালোবাসি আপনাদের❤️