বিন্নি ধানের খই পর্ব-০৭

0
3582

#বিন্নি_ধানের_খই
#পর্ব_০৭
#মিদহাদ_আহমদ

আসিফের কথা শুনেই এক মুহূর্ত দমে রইলো না আমার ননাস। মুখের উপর সে আমার দিকে তাক করে বললো

‘শেষ? এখন তাহলে আমার ভাইয়ের ব্রেইন ওয়াশ করাও হয়ে গিয়েছে? লাগানো, পড়ানো শুরু হয়ে গিয়েছে?’

শাশুড়িও নাকি সুরে বললেন তার ছেলেকে,

‘কী আসিফ? এতদিন তো কোন কথা ছিলো না মুখে৷ আজ নতুন করে কথা বলা শিখে এসেছিস নাকি কেউ শিখিয়ে এনেছে?’

আসিফও যেনো রেগে উঠলো। সে বললো,

‘কী আবোল তাবোল বকছো তোমরা? আসলে তোমাদের প্রবলেম টা কোথায়? তোমরা কী করতে চাও আমার সাথে? আমি কিছু বলি না, এখন বলছি তার মানে এই দোষটাও অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে হবে এবার?’

আসিফ চলে গেলো রান্নাঘর থেকে। তার যাওয়ার পর শাশুড়ি আর ননাস আরও কতক্ষণ একা একা কথা বললো তাদের নিজেদের মাঝে। কথার টপিক ছিলো এই একই, ছোট ঘরের মেয়েকে বিয়ে করিয়ে নিয়ে এলে এই সমস্যা, সেই সমস্যা হেনতেন। আমি নাকি আমার স্বামীর ব্রেইণ ওয়াশ করছি এখন৷ তাকে লাগাচ্ছি এসব হেনতেন নানাকিছু। ননদ এসে আমাকে বললো,

‘তা এতকিছু পারো তো নিজের স্বামীকে ঠিক করতে পারো না? পারো না এসব নেশা থেকে বের করে দুনিয়ায় আনতে?’

এতগুলো কথার মাঝে আমার শুধু আমার ননদের কথাটাই মাথায় গেঁথে গেলো। ঠিকই তো বলেছে সে! আমি কি পারি না আমার স্বামীকে ঠিক করতে? পারি না তাকে আবার সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দিতে?

এসব ভাবতে ভাবতে রুমে গিয়ে দেখি সিগারেটের ধোয়া। দেখলাম আসিফ এই রোজার মাসেও বারান্দায় বসে সিগারেট টানছে একটার পর একটা। আমি তার কাছে গেলাম। গিয়ে আলতো করে পিঠে হাত দিয়ে বললাম,

‘কী দরকার ছিলো মায়ের সাথে এমন কথা বলার? দেখলে তো এমনি এমনিই তোমাদের ভুল বুঝাবুঝি হলো।’

‘অহ! তার মানে আমার সাথে হওয়া অপরাধ এখন আরেকজনের সাথে হচ্ছে, অবিচার হচ্ছে, অন্যায় হচ্ছে তাও আমি মেনে নিবো? চোখ খোলা রেখেও বন্ধের মতো আচরণ করবো? এইটাই চাচ্ছো নাকি এখন? তুমিও কি এখন আবার নতুন করে আমার স্বাধীনতায় বাধা হয়ে আসবে?’

আমি সেই টপিকটা এড়িয়ে গেলাম। এবার আসিফকে বললাম,

‘রোজামাসে সিগারেট না ধরালেই নয়? তাও দিনের বেলা? কেউ যদি দেখে ফেলে তো?’

আসিফ বললো,

‘দেখলে দেখুক। আমার কোন সমস্যা নেই। কেন তোমার কোন সমস্যা আছে? আমি ফেইক পারসোনালিটি নিয়ে থাকি না। আমি যা, আমি তাই। আমি কখনো এই কখনো সেই এমন দেখাই না। যা আমার বাস্তবে, তাই আমার ভেতরে।”

বুঝতে বাকি রইলো না আসিফকে এখন বুঝিয়ে আমার লাভ নেই। এতে হিতে বিপরীত হবে আমার। আমার কানে বারবার বাজতে লাগলো আমার ননদের কথা, সে বলেছে, আমি আমার স্বামীকে ঠিক করতে কেন পারিনা! আসলেই তো!

এসব ভাবতে ভাবতে বারান্দা থেকে আমার আলমারি পর্যন্ত চলে এলাম। শাড়ি বের করবো। ননাস বলে দিয়েছে আজ সবুজ পাড় আর সাদা জমিনের কাতান শাড়ি যেনো পরি। তার শ্বশুরবাড়ি থেকে সবাই আসবে ইফতারে। আমি আলমারির দরজা খুলতে গিয়ে লুকিং গ্লাসে দেখলাম বারান্দায় বসা আসিফ তার হাত থেকে সিগারেট ছুড়ে ফেলে দিলো। গুণগুণ করে সে গান গাইতে লাগলো একা মনে। আমার ভেতরটা খুশিতে ভরে উঠলো। সামনে না হোক, রোজার দিনেও হোক, রোজা ভেঙ্গেও ফেলুক, তার পরও মানুষটা আমার কথা শুনেছে। হয়তো বুঝেছেও। তাই হয়তোবা সিগারেট ফেলে দিয়েছে।

আমি গোছল করে এলাম আবার। গরম লাগছে প্রচন্ড। নামাজ পড়ে শাড়ি পরে নিলাম। চুল ভেজা ছিলো। তাই বাঁধিনি৷ চুল যখন ড্রেসিংটেবিলে বসে বসে শুকাচ্ছিলাম হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে, তখন বিছানায় বসে থাকা আসিফ আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘ভারী সুন্দর চুল তো তোমার! এই চুলে সাদা গাজরা লাগিয়েছো কখনো?’

আমি উত্তর দিলাম,

‘না।’

‘অহ! গাজরায় মানাবে তোমার চুল। ‘

আর কোন কথা বাড়লো না আমাদের। আমার ভেতরে ভেতরে এই সুখস্মৃতি ধরা দিলো যে, কী হচ্ছে এসব আমার জীবনে! আমার স্বপ্ন, আমার সাধা, আমার ইচ্ছা সবশেষে সবকিছু কি আবার তবে ঠিক হতে চলেছে?

ভাবনার ফুরসৎ ফুড়ানোর আগেই ননাস রুমে ঢুকলো। কাছে এসে হাত এগিয়ে আমার হাতে চার গাছা সোনার চুড়ি, গলায় ভারি বেনিচেইন, কানে ঝুমকা আর নাক থেকে সোনার নাকফুল খুলে ডায়মন্ডের নাকফুল পরিয়ে দিলো। দশ আঙুলের ছয় আঙুল ভর্তি করে দিলো আংটি দিয়ে৷ তারপর একটা ছয় ইঞ্চি জুতা বের করে ইশারা দিয়ে দেখিয়ে বললো,

‘এই জুতা পরে বাইরে এসো। সবাই দেখবে বলে অপেক্ষা করছে। আর কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে কোন জবাব দেয়ার দরকার নেই। বুঝেছো? আমি পাশে থাকবো। যা বলার আমিই বললো।

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম। যাবার সময় ননাস বললো,

‘চুল ছাড়া কেন? ভিজা চুল তো শুকানো লাগে নাকি? চুল বাঁধো। খোপা করে নাও। আর মাথায় টেনে ঘোমটা দিবে। আর এই ব্লাউজ কেন পরেছো? ফোর কোয়ার্টার ব্লাউজ পরো। গরম তো কী অসহ্য হয়ে যাচ্ছো? বাসায় এসি আছে তার পরও হচ্ছে না? বাপের বাড়িতে কি আইসের মাঝে থাকতা কাপড়চোপড় পরে?’

আমি হ্যাঁ বা না কোনকিছু বললাম না আর। ব্লাউজ চেইঞ্জ করে ছয় ইঞ্চি উঁচু জুতা পরে রুম থেকে বের হবার আগে আসিফকে বললাম,

‘টু কোয়ার্টার প্যান্ট ছেড়ে গোছল করে এই পিচ কালারের পাঞ্জাবি আর কালো পাজামা পরে নিও। তোমাকে সুন্দর মানাবে ”

আমি কী না বলবো কথাটা, আসিফ তার পাশে থাকা সিগারেটের স্ট্রে টা ছুড়ে মারলো আমার দিকে ইশারা করে। তারপর বললো,

‘এই মেয়ে তোমার সমস্যা কোথায়? আমার লাইফ, আমার চয়েজ। এখানে তোমার ঢুকার তো অনুমতি আমি দেইনি। আমি কী পরবো, না পরবো অথবা আমি টু-কোয়ার্টার পরে থাকবো কিনা না এইটা আমার বিষয়। নেক্সট টাইম এসব নিয়ে কান ঝালাফালা করবা না আমার বলে দিলাম।’

আমার চোখের কোণে জল চলে এলো। আমি সেই জল আর কাওকে দেখালাম না৷ চলে এলাম রুম থেকে বের হয়ে। আমি যখন রান্নাঘরে যাবো, তার আগেই আমার ননদ তামান্নার রুম ক্রস করতে যাবো ঠিক তখনই খেয়াল করলাম সে কাকে যেনো বলছ

‘আরে বাবা আমার শরীর পাবা। সমস্যা কী? আর আসবো না আমি বলেছি? হ্যাঁ, বাসায় বলেছি যে আজ আমি আমার ফ্রেন্ডের বাসায় থাকবো রাতে। রোজামাস। ভার্সিটি তো বন্ধ। বুঝতেই পারছো জান। একটু বুঝার ট্রাই করো। আজ রাতে তো তোমাকেই আমি সময় দিবো। আর হ্যাঁ, হোটেলের রুম সুন্দর তো? পরিপাটি আর সবকিছু সেইফ আছে তো? আমি আগে বলে রাখছি কিন্তু এসব ঠিকঠাক রাখা লাগবে….’

প্রিয় পাঠক, গল্প পড়ে চলে যাবেন না প্লিজ। গল্পের রিচ অনুপাতে যদি ২০% লাইক আসতো, তাহলেও লাইকের সংখ্যা ২ কে ছাড়াতে। অথচ রিচ অনুপাতে লাইক কমেন্ট আসছে না। আপনারা পড়ছেন, আমার ভালো লাগছে। আপনারা পড়ার পর আপনাদের লাইক কমেন্ট করে যাবেন। এতেকরে গল্পের রিচ বাড়বে, গ্রুপের রিচ বাড়বে। এই লাইক কমেন্ট চাওয়া নেতিবাচক ভাবে দেখলেও, আমি চাচ্ছি এর কারণ, গল্পের+গ্রুপের রিচ বাড়ানো। লেখক হিসাবে আমার লেখা অনেকেই পড়ুক, এই চাওয়াটুকু তো আমার থাকতেই পারে তাইনা? আমি তো আর বেশি কিচ্ছু চাচ্ছি না। আমি আশা করবো আপনারা যারাই গল্পটা পড়বেন, আমার জন্য একটা করে রিয়েক্ট, আর কমেন্টে অনুভূতি জানাবেন। আমি ভীষণ খুশি হবো। এই গ্রুপটা তো আপনাদেরই পরিবার তাইনা? আমাদের পরিবারকে বড় করতে আপনারা সবাই যার যার পরিচিতদের গ্রুপে ইনভাইট করবেন। আশাকরি এই কাজগুলো করবেন আপনারা। ভালোবাসি❤️

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here