#বিবর্ণ_জলধর
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ২৪
_____________
“বিয়ে করবে কারিব?”
আষাঢ়ের বন্ধ আঁখি জোড়ার দিকে তাকিয়ে ছিল কারিব। আষাঢ় বাইরে থেকে ফিরে গা এলিয়ে দিয়েছে বিছানায়। আষাঢ়ের প্রশ্নে লজ্জা পেল সে। আষাঢ় মানুষটা বড়ো সোজা-সাপ্টা। সব কথা অনায়াসে মুখ ফুঁটে বলে দেয়। কিন্তু তার এমন কথাবার্তা যে মানুষকে লজ্জা, বিব্রত অবস্থায় ফেলে দিতে পারে সেদিকটা একটুও বিবেচনা করে না। নির্বিকার এক মানুষ।
কারিব কিছু বলার আগে আষাঢ় আবার বললো,
“তুমি কি একটা বিষয় জানো? আমার প্রত্যেক স্থায়ী গার্লফ্রেন্ডদের আমি ছাড়াও আরও বয়ফ্রেন্ড আছে।”
কারিবের চোখে-মুখে ফুঁটে উঠলো অপ্রতিভ একটা ভাব। বলে উঠলো,
“সে কি, আপনি ছাড়া আরও বয়ফ্রেন্ড মানে?”
“হুহ, আরও বয়ফ্রেন্ড। তবে এ নিয়ে আমার তাদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। আমি বয়ফ্রেন্ড হিসেবে অত ভালো নই। নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে অন্য একটা বয়ফ্রেন্ড রাখতেই পারে তারা। ওটা ব্যাপার নয়। যদিও তারা আমার কাছ থেকে নিজেদের বয়ফ্রেন্ডের ব্যাপারটা গোপন রেখেছে। কিন্তু এতে সুবিধা করতে পারেনি। তারা না জানালেও আমি ঠিকই জানি। কী নাম বয়ফ্রেন্ডের, কোথায় থাকে, কী করে সবই জানি। এটা তারা জানে না। আমি যে তাদের দ্বিতীয় বয়ফ্রেন্ডের কথা জানি এটা আমিও গোপন রেখেছি তাদের কাছ থেকে।”
“আপনার গার্লফ্রেন্ডরা দেখছি আপনার মতোই সাংঘাতিক!”
আষাঢ় বৃহত্তর শ্বাস ফেলে বললো,
“হ্যাঁ সাংঘাতিক আছে বটে। তবে আমার ভেরোনিকা একেবারে স্বচ্ছ। আমার প্রিয় ভেরোনিকার আমি ছাড়া কেউ নেই। বেচারি আমাকে মন দিয়ে ভালোবাসে। আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো বয়ফ্রেন্ড রাখেনি সে। এ জন্যই তাকে আমি এত বেশি পছন্দ করি। মেয়েটা খুব ভালো, বুঝলে? ঠিক যেন আকাশের বুকে টিমটিম করে জ্বলতে থাকা একটি তারা। তুমি বিয়ে করবে ভেরোনিকাকে?”
কারিব চমকে ওঠে,
“আমি? কী বলছেন আষাঢ় ভাই? আপনার গার্লফ্রেন্ডকে আমি বিয়ে করবো? নাউযুবিল্লাহ!”
আষাঢ় হেসে বললো,
“তোমার জন্য আমি বিদেশ থেকে বউ নিয়ে আসবো কারিব। ভেরোনিকা কিন্তু খারাপ নয়। চাইলে চান্স নিতে পারো। আমাকে যতটা ভালোবাসে, তার চেয়ে দ্বিগুণ ভালোবাসবে তোমায়। আমি তো ওকে ভালোবাসি না, কিন্তু তুমি ভালোবাসবে। তোমাকেও তাই হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসবে। বিয়েটা কিন্তু করতে পারো।”
“বাদ দেন, এসব শুনতে ভালো লাগছে না।”
“ভেরোনিকা আমার খুব প্রিয়, আর প্রিয় বলে তাকে কষ্ট দিতে আমার কষ্ট হবে। তাই চাইছি তোমার সাথে ওর বিয়েটা হোক। আমি কিন্তু এটা মজার ছলে বলছি না, সিরিয়াসলি বলছি। ভেবে দেখো।”
আষাঢ়ের মাথা মাঝে মাঝে ভূতের বশে চলে যায় কি না নিশ্চিত না কারিব। আষাঢ় মাঝে মাঝে আজব সব কথা বলে। কিন্তু আজ যা বললো তা তো সব কিছুর ঊর্ধ্বে ছিল। কারিব শিওর আষাঢ়ের মাথা ঠিক নেই এই মুহূর্তে। ঠিক থাকলে এমন কথা বলতো না। সে হন্তদন্ত হয়ে বললো,
“রূপ খালাকে শরবত বানাতে বলি আপনার জন্য। শরবত খেলে একটু প্রশান্তি আসবে মনে। ঠিক হয়ে যাবে সব।”
কারিব সময় নষ্ট না করে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল। আষাঢ়ের ঠোঁটের বাঁকা হাসিটা দৃষ্টিগোচর হলো না তার।
রুপালিকে পেল কিচেনে। ম্যাংগো আইসক্রিম তৈরি করছে সে। জুন আবদার করেছে ম্যাংগো আইসক্রিম খাবে। কারিব তাড়া দিয়ে বললো,
“দ্রুত এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিয়ে লেবুর শরবত বানিয়ে দাও খালা।”
রুপালি ভ্রুতে ভাঁজ ফেলে তাকায়। চাহনিতে বিরক্ত মিশ্রিত। ক্ষিপ্র গলায় বললো,
“আমারে খালা বলে ডাকলি ক্যান?”
কারিব রুপালির কথায় কর্ণপাত না করে বললো,
“আষাঢ় ভাইয়ের শরবত খাওয়া প্রয়োজন, বানিয়ে দাও তো তাড়াতাড়ি।”
রুপালিও কারিবের কথা গ্রাহ্যে না নিয়ে বললো,
“আমারে তুই খালা ডাকবি না। আপা বলবি, আপা। তোরে আগেও বলে দিছি না আপা করে বলবি?”
“দেখো খালা, ছেলেমানুষি করো না। সবাই তোমাকে খালা বলে ডাকে। আমি কেন তোমাকে মাঝখান থেকে আপা বলে ডাকবো? তুমি কি আর ‘আপা’ ডাকের বয়সী আছো?”
“তুই আমারে বয়স শিখাস? তোর বয়স কত? আমি হলে তোর থেকে বেশি জোর পাঁচ-ছয় বছরের বড়ো হতে পারি।”
কারিবের মুখ বিশালকায় হাঁ হলো। পাঁচ-ছয় বছর? রুপালি এইমাত্র যা বললো তা শোনার ভুল ছাড়া আর কী?
রুপালি হুকুম করে বললো,
“আপা বলে ডাক।”
কারিবের বেজায় রাগ হলো এবার।
“দেখো খালা, তোমাকে আপা বলে ডাকতে পারবো না। বেশি আপা আপা করলে আষাঢ় ভাইয়ের মতো দাদি ডাকা শুরু করবো।”
“কী বললি?”
“যা শুনেছো তাই।”
কারিব সরে পড়লো কিচেন থেকে। রুপালির সাথে আরও কথা বাড়ালে ঝগড়া লাগতে পারে। প্রায়শই তার আর রুপালির মাঝে এমন ঝগড়া ঝগড়া ভাব উদ্বেল হয়। তবে ঝগড়া লাগার আগে সে কেটে পড়ে।
রুপালি কিচেনে দাঁড়িয়ে কটমট করে বললো,
“শয়তানের ছুডু ভাই। কার লগে থাকে দেখতে হইবো না? আষাঢ়ের লাহান খচ্চর। আসলে আষাঢ় খচ্চরপনা ওর থেকেই শিখছে।”
_________________
মিহিককে অফিস যাওয়ার সময় খাটে শোয়া দেখেছিল, এসেও সেই খাটেই দেখলো। তবে আজকে সারাদিন যে খাটে শুয়ে থেকে পার করেনি তা পোশাকের পরিবর্তন দেখে বোঝা যাচ্ছে। গোসল, খাওয়া-দাওয়া করেছে নিশ্চয়ই। তবে অবেলায় শুয়ে থাকার কারণটা বুঝতে পারছে না শ্রাবণ। মিহিককে কখনও এরকম শুয়ে থাকতে দেখেনি সে। খুব তো খাটে ঘুমাবে না বলে জেদ করছিল, তাহলে এখন ঘুম বাদেও বিছানায় শুয়ে থাকছে কীভাবে এতক্ষণ?
শ্রাবণ কিচ্ছুটি না বলে শাওয়ারের জন্য ওয়াশরুমে ঢুকলো। পাছে আবার মিহিক রাগ করে, সেজন্যও বলেনি কিছু। শাওয়ার নিলো অনেক সময় নিয়ে। শাওয়ার নিতে নিতে রুমকির কথা ভাবলো। রুমকিকে কাল থেকে ফোনে পাচ্ছে না। রুমকির ফোন এখনও সুইচ অফ। রুমকির এমন আচরণই বলে দিচ্ছে রুমকি কতটা রাগ। রুমকির রাগ ভাঙানোর প্রয়োজন অনুভব করছে, কিন্তু কীভাবে ভাঙাবে সেটা হলো বিষয়। কথা, দেখা না হলে কি আর কারো রাগ ভাঙানো যায়? দেখুক, কবে রুমকির রাগ পড়ে।
শাওয়ার থেকে বের হয়ে মিহিককে বিছানাতেই আবিষ্কার করলো। মেয়েটার আজ কী হলো বুঝতে পারছে না। ঘুমাচ্ছে তো? না কি এমনি চোখ বুজে আছে? শ্রাবণ জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। বাইরে বিকেলের পড়ন্ত আলো। জানালা ডিঙিয়ে রোদ্র আলো ঘরে প্রবেশ করেছে। শ্রাবণ তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। এখান থেকে পিছন ফিরে তাকালো একবার মিহিকের দিকে। মিহিক ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে। মুখ দেখতে পাচ্ছে না। শ্রাবণ কিছু বলার তাগিদ অনুভব করলো। বললো,
“ঘুমাচ্ছেন না কি আপনি?”
মিহিকের সাড়া শব্দ নেই। শ্রাবণের মনে হলো না যে মিহিক ঘুমাচ্ছে। শুনতে পেয়েছে হয়তো তার কথা। আবার বললো,
“আপনার কি শরীর খারাপ? অসুস্থ বোধ করছেন?”
মিহিক নিরুত্তর। শ্রাবণের একটু চিন্তা হলো। রাগী-জেদি মেয়েটা এরকম নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে! শ্রাবণ এগিয়ে এলো। বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে মিহিকের কপালে হাত রাখতে চাইলে মিহিক হুট করে তার হাত ক্যাচ করে নিলো। ভেসে এলো ক্লান্ত কণ্ঠস্বর,
“প্লিজ! বিরক্ত করবেন না শ্রাবণ। চলে যান রুম থেকে।”
মিহিক শ্রাবণের হাতটা সরিয়ে দিলো।
“ও, তাহলে জেগে আছেন? ভেবেছিলাম ঘুমাচ্ছেন। অসুস্থ না কি আপনি?”
“আমি অসুস্থ হলে আপনার কী? যান এখান থেকে।”
“আপনি অসুস্থ?”
“না। বিরক্ত করবেন না আর। যান তো।” ক্লান্তি আর বিরক্তি মেশানো কণ্ঠ মিহিকের।
শ্রাবণ বললো,
“খাট দখল করেছেন, এখন আবার রুমও একা দখল করতে চান? এটা ভারি অন্যায় হবে।”
“আমি তো আপনার খাট দখল করিনি, আপনি নিজে জেদ করে খাট আমার নামে লিখে দিয়েছেন।”
মিহিকের ক্লান্ত স্বরের কথা ভালোই লাগছে শ্রাবণের। কেমন এক নিভু নিভু ভাব মিহিকের গলায়। শ্রাবণ হেসে বললো,
“দুপুরে খেয়েছেন?”
“আপনার কী মনে হয়? না খেয়ে আপনার জন্য বসে আছি?”
“সে সৌভাগ্য কি আর আমার আছে? তবে বউ মানুষ তো, না খেয়ে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতেও পারতেন।”
কথাটি কীভাবে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল জানে না শ্রাবণ। তবে বলে বেশ অসহ্যকর অবস্থায় পড়লো সে। মনে হলো, কথাটা বলা তার পাপ হয়েছে। যদিও মিহিক এর কোনো প্রত্যুত্তর করেনি। তবুও নিজে এক অসহ্য অস্বস্তিতে শেষ হতে লাগলো। দ্রুত সরে এলো খাটের কাছ থেকে। ভেজা তোয়ালে নিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। এমন প্রায়শই হয়। অজান্তে তার মুখ থেকে আজব সব কথা বের হয়। শ্রাবণ টের পায়, ইদানিং তার অনুভূতি কেমন তালগোল পাকাচ্ছে। আর এই তালগোলে অনুভূতিতে মিহিকের অস্তিত্ব স্পষ্ট টের পায় সে।
__________________
আষাঢ়ের শিরা-উপশিরা রাগে দপদপ করছে। চোয়াল শক্ত হয়ে উঠছে। এই মুহূর্তে তার দৃষ্টি বাইনোকুলারের ভিতর দিয়ে পাশের বাড়ির উঠোনে। কী অসহ্যকর দৃশ্যপট! কে এই ছেলে?
পাশের বাড়ির উঠোনের দৃশ্যপটে দেখা যাচ্ছে একটা সুন্দর ফর্সা ছেলের সাথে হাস্য, বাক্যরত নোয়ানা। আষাঢ়ের মনে হচ্ছে তার অন্তর দহন হচ্ছে। তিলে তিলে পুড়ছে তার হৃদয়। তার মন বলছে এই ছেলের সাথে নোয়ানার প্রেম প্রেম ভাব আছে। হাসি আর কথা বলার ধরণ দেখে এটাই মনে হচ্ছে তার।
কারিব এই সময়ে আষাঢ়ের রুমে এসেছিল জুস এবং ম্যাংগো আইসক্রিম নিয়ে। আষাঢ় দরজা খোলার শব্দ পেয়ে বুঝে নিলো কারিব এসেছে। সে ডাকলো,
“কারিব, এদিকে আসো তো একটু।”
কারিব এগিয়ে এলো। আষাঢ়ের দৃষ্টি অনুসরণ করলো।
“আমি যা দেখতে পাচ্ছি, তুমি কি তা দেখতে পাচ্ছ?”
“হ্যাঁ, দেখছি তো। টিউলিপ ভাবি একটা ছেলের সাথে কথা বলছে।”
“ছেলে নয় কারিব। আমার পেইন। ওই ছেলেটা আমার পেইন। ওই ছেলেটা নোয়ানার বয়ফ্রেন্ড।”
কারিব বিস্মিত হয়ে তাকালো আষাঢ়ের মুখে।
“বয়ফ্রেন্ড? আপনি শিওর? আপনি থাকতে ভাবি কেন অন্য বয়ফ্রেন্ড রাখবে?”
“সেটাই তো আমার প্রশ্ন। আমি তো তার এক প্রেমিক আছি, তাহলে কেন তার অন্য প্রেমিক লাগবে? আমি এর হিসেব চাইবো।”
আষাঢ় ঘুরে দাঁড়ালো। হাতের বাইনোকুলার রেখে, ঝড় গতিতে পা বাড়ালো নোয়ানাদের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কারিব তড়িঘড়ি করে ছুটলো পিছন পিছন।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই এসে নোয়ানাদের বাড়ি পৌঁছলো তারা। বাড়ির ভিতর ঢুকতে হলো না, গেটের কাছে দেখা হলো নোয়ানা আর সেই সুন্দরের সাথে। বোধহয় ছেলেটা বিদায় নেবে এখন।
নোয়ানা হঠাৎ আষাঢ় আর কারিবকে দেখে ঘাবড়ে গেল। আষাঢ় উত্তেজিত। কী বলা, বা কী করা উচিত বুঝলো না। ভাবতে সময় নিলো কয়েক সেকেন্ড। তারপর হাসি মুখে শান্ত ভাবে প্রশ্ন করলো,
“ভাইটি কে?”
প্রশ্ন শান্ত হলেও প্রশ্নকারী ক্ষিপ্ত।
নোয়ানার বেজায় রাগ হলো। ঠোঁটের কোণে স্পষ্ট লেগে রয়েছে তার বিরক্ত। শক্ত গলায় উত্তর দিলো,
“কাজিন। চাচির বোনের ছেলে।”
কেটে গেল আষাঢ়ের ভিতরের ক্ষিপ্ততা, উত্তেজনা। অধরের কোণে ফুঁটলো হাসি। হঠাৎই সে হাত বাড়ালো ছেলেটার দিকে।
“আসসালামু আলাইকুম ভাই। পাশের বাড়িতে থাকি আমি। এ বাড়ির আবার আত্মীয়ও হই। আপনার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো। কী নাম আপনার?”
আষাঢ়ের ফটাফট কথার জবাবে অপ্রস্তুত মনে হলো ছেলেটাকে। সে অতৎসংলগ্ন হাত বাড়িয়ে করমর্দন করে বললো,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আমি নাঈম মাহমুদ।”
আষাঢ়ের ভিতরের ক্ষিপ্রতা আবার জেগে উঠলো। চকিতে তাকালো সে নোয়ানার দিকে। নাঈম? ‘ন’?
আষাঢ় দৃষ্টি ফিরিয়ে আনলো। এখানে দাঁড়ানোর ধৈর্য হলো না আর। সে কিছু না বলে পা বাড়ালো বাড়ির উদ্দেশ্যে। কারিব পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“কী বুঝলেন আষাঢ় ভাই?”
“ভুল হয়েছে আমার। ছেলেটা নোয়ানার বয়ফ্রেন্ড নয়। সম্পর্কে ভাই হয়।”
“কিন্তু আপন ভাই তো নয়। বয়ফ্রেন্ড হওয়ার সুযোগও তো নিতে পারে।”
“সুযোগ নিয়ে আর কী লাভ? তোমার টিউলিপ ভাবির মন তো আমার কাছে পড়ে রয়েছে। সুযোগ নিয়েও ফায়দা করতে পারবে না। যাক গে, ভাবছি হবু বউকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাব আজ। বেচারির সাথে বড্ড রুড আচরণ করছি আমি। এত রুড আচরণ করা উচিত নয়। শত হলেও সে আমার হবু বউ। আজকে তুমিও থাকবে সাথে। বাংলাদেশের রাস্তা-ঘাটে গাড়ি ড্রাইভ করতে ইচ্ছা হয় না আমার। তিনজন মিলে ঘুরবো।”
আষাঢ় আর কারিব বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলে চোখ সরিয়ে আনলো নোয়ানা। শুনতে পেল নাঈমের কণ্ঠ,
“লোকটা বড়ো আজব!”
নোয়ানা মন থেকে না হলেও একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
“হুম, একটু আজব আছে।”
নাঈমও মৃদু হেসে বললো,
“ঠিক আছে, আসি তাহলে। পরে দেখা হবে আবার।”
নোয়ানা প্রত্যুত্তরে হাসলো শুধু।
নাঈম বাইক নিয়ে এসেছে। একটুর ভিতরই বাইক নিয়ে চোখের অদৃশ্য হয়ে গেল সে। নাঈম কখনো মুখ ফুঁটে না বললেও নোয়ানা জানে নাঈম তাকে পছন্দ করে। এটা বোধহয় শুধু সে না, বাড়ির সকলেই জানে। আর তারা যে নাঈমের সাথে ওর বিয়ে সংক্রান্ত কিছু ভাবছে সেটাও একটু একটু টের পায়। নোয়ানা কবির সাহেবের বাড়ির গেটের দিকে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আর কিছু আপন না হলেও দীর্ঘশ্বাসটা তাকে বার বার আপন করে নেয়। সে মনে মনে আষাঢ়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
‘আমাদের দেখা হওয়াটা একটা ভুল হিমেল। আপনার সাথে দেখা না হওয়ায় যতটা খারাপ লাগতো, তার থেকে অনেক বেশি কষ্টে আছি আপনার সাথে দেখা হওয়ার পর। আপনার সাথে দেখা হওয়া নিয়ে মাঝে মাঝে খুশি হই, আবার হঠাৎই কষ্ট অনুভব করি। আমাদের দেখা না হওয়াটাই উচিত ছিল আসলে। কারণ, অনুভূতিটা আগের থেকে অন্যরকম হয়েছে এখন। আর এটাই বেশি যন্ত্রণাদায়ক।’
(চলবে)