#বিবর্ণ_জলধর
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৩৫
_____________
দরজার কপাট খুলে যেতে আষাঢ়কে দেখে বিস্ময়ে বিহ্বল হয়ে গেল মিহিক। ভিতরে নোয়ানা স্তব্ধ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও দরজা খোলার সাথে সাথে চোখের জল মুছে নিতে ভোলেনি সে। ভাবতেই পারেনি আষাঢ় এভাবে গট করে দরজা খুলে দেবে। নোয়ানার অন্তরে ভয়ের কাঁটা বিঁধে আছে। মিহিক কী ভাববে এখন?
“তুমি এখানে কী করছো?” বিস্ময়ের ঝর্ণা ঝরে পড়লো মিহিকের গলায়।
আষাঢ়ের ঠোঁটে দুরন্ত হাসি। এক কদম এগিয়ে এসে, মিহিকের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসালো সুরে বললো,
“তোমার বোনের সাথে প্রেম করছিলাম।”
মিহিকের চোখ বিস্ময়ে জ্বলে উঠলো। তার এই বিস্ময়ে গর্জিত মুখ দেখে হাসলো আষাঢ়।
মিহিক বার কয়েক চোখের পলক ফেললো। আষাঢ় মজা করছে কি না সেটাতেই তার দ্বিধা হলো। কিছু না বলে ক্ষণকাল চেয়ে রইল আষাঢ়ের দিকে। আষাঢ় নিজেকে কাটিয়ে নিলো, অধরে দুরন্ত হাসি দীর্ঘস্থায়ী রেখে চলে গেল সে। মিহিক তাকালো নোয়ানার দিকে।
নোয়ানার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো বোনের দৃষ্টিগত হয়ে। মিহিক সরু দৃষ্টিতে দেখলো। ধরে নিলো আষাঢ় মজা করেছে, কিন্তু দরজা আটকে নোয়ানার রুমের ভিতর কী করছিল? মিহিক দোটানায় পড়ে গেল, আসলেই কি আষাঢ় মজা করেছে? না কি ব্যাপার অন্যকিছু? সে দরজা ডিঙিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। নোয়ানার কাছে এসে কেমন সন্দ্বিগ্ন নিচু কণ্ঠে বললো,
“তোর আর আষাঢ়ের মাঝে কিছু চলছে না তো?”
মিহিকের প্রশ্নে নোয়ানার অন্তঃকরণে হাজারো যুদ্ধের সংগঠিত হলো। হৃদয়ের কম্পমান ধ্বনি বোনের কাছ থেকে যথাসম্ভব গোপন রাখতে চাইলো সে। কতটুকু সক্ষম হলো জানে না। হৃদয়ে যা-ই চলুক, বাইরে তাকে স্বাভাবিক থাকতে হবে। না হলে তার অস্বাভাবিকতায় বাকি সকলের স্বাভাবিকতাও নষ্ট হয়ে যাবে।
নোয়ানা ঠোঁটে হাসির রেখাপাত টানার চেষ্টা করে বললো,
“…’কিছু চলছে’ মানে? কী বলছো আপু? ওনার সাথে কী চলবে আমার? ভুল ভাবছো তুমি।”
কথাগুলো দুরুদুরু বুকে বললো নোয়ানা। কণ্ঠের তাল টালমাটাল। কথাটুকু কতটা বিশ্বাস করাতে সক্ষম হলো?
“যদি কিছু না চলে তাহলে রুমের দরজা বন্ধ করে কী করছিলি দুজন? শিওর? ওর সাথে প্রেম প্রেম কিছু নেই?”
“অবশ্যই, প্রেম প্রেম কিছুই নেই ওনার সাথে। উনি তো তোমার সাথে মজা করার জন্য এটা করেছে। তোমাকে আসতে দেখেই উনি রুমের দরজা বন্ধ করেছিল, আর কিছু না।”
মিহিককে চিন্তিত দেখালো।
নোয়ানা সন্দিহান, মিহিক কি বিশ্বাস করবে?
মিহিকের নোয়ানার কথাটা বিশ্বাস হলো। আষাঢ় তো এমনই। কিন্তু মজা করার জন্য ছেলেটা এমন করবে?
“হুম, বুঝলাম। কিন্তু এখানে আমার সাথে যদি তোর শ্বশুর বাড়ির কেউ আসতো তখন? সবাই হয়তো লিভিং রুমে আছে, এদিকে কেউ আসবে না। কিন্তু বড়ো আন্টি আর সামিয়া আপু যদি এসে পড়তো হুট করে? কী ভাবতো তারা?”
নোয়ানার হৃদয় স্বস্তিতে প্রশান্তি পেল। যাক বিশ্বাস করেছে মিহিক। বললো,
“সেটা তোমার দেবরের সাথে বুঝো গিয়ে। এমন বেক্কল কেন উনি সেটা তো তুমি ভালো জানো।”
“থাক, কিছুই বলবো না ওকে। এমনিতেই বাড়িতে গার্লফ্রেন্ড আসার পর বেচারা একেবারে চুপসে গিয়েছিল। আচ্ছা বাদ দিই এখন এসব। এখনও সাদামাটাভাবে বসে আছিস কেন তুই? এনগেজমেন্ট কার্য সম্পন্ন করতে তো আর রাত্রি দশটা বানিয়ে ফেলতে পারি না। দ্রুত সাজগোজটা কমপ্লিট করে নে। আমি আসছি।”
মিহিক বেরিয়ে গেল রুম থেকে। নোয়ানা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মিহিকের যাওয়ার পানে।
আষাঢ় কারিবকে নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছে। এখানে থাকার আর ধৈর্য নেই তার। চোখের সামনে তো আর নাঈমের সাথে নোয়ানার এনগেজড দেখতে পারে না সে। জানে নোয়ানা নাঈমের সাথে এনগেজমেন্টের পালা সেরে ফেলবে। তার কথা মতো এনগেজমেন্ট বন্ধ করবে না। এখন এনগেজমেন্ট করবে না বলে ঝামেলা তৈরির মতো বোকামি কখনো করবে না নোয়ানা।
শ্রাবণ দরজার নিকটে দাঁড়িয়ে ছিল একা একা। এত মানুষের ভিতর থাকতে অস্বস্তি হচ্ছে। মিহিককে দেখতে পাচ্ছে না অনেকক্ষণ হলো। কোথায় গেলেন উনি? চোখ গিয়ে পড়লো পশ্চিম দেয়াল সংলগ্ন জানালার দিকে। তার মতো সিনথিয়াও একা একা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। সিনথিয়ার মুখখানিও শুকনো।
আষাঢ় আর কারিব শ্রাবণের সামনে থেকেই যাচ্ছিল, শ্রাবণ তা লক্ষ্য করেই বলে উঠলো,
“কোথায় যাচ্ছিস তোরা?”
কারিব উত্তর দিলো,
“আমরা বাড়ি চলে যাচ্ছি শ্রাবণ ভাই।”
“কেন? আংটি বদল তো এখনও হয়নি। এনগেজমেন্ট ফাংশনে এসে আংটি বদল না দেখে চলে যাবে কেন তোমরা?”
“যাওয়াটাই উচিত হবে ব্রো। এটা তো তোমার শ্বশুর বাড়ি, তুমি থাকো। আমার শ্বশুর বাড়ি হয়ে গেলে তারপর না হয় তোমার থেকেও লং টাইম থাকবো।”
আষাঢ় কথা বাড়ালো না। পা বাড়িয়ে দিলো বাইরে।
শ্রাবণ বোকাভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইল। আষাঢ়ের কথা বোধগম্য হলো না তার। কী বললো আষাঢ়?
______________
এ বছর এত বৃষ্টি হচ্ছে কেন? সকাল থেকে বৃষ্টির প্যানপ্যান শুরু হয়ে একটানা বিকেল পর্যন্ত চলছে। গাছপালা, রুক্ষ শহর বৃষ্টির পরশে উল্লাসে মেতে উঠেছে যেন।
কারো বুকে আবার এই বাদল দিনের বৃষ্টির মতোই কষ্ট বর্ষণ হচ্ছে। পুরোনো সকল স্মৃতি মানসপটে উন্মোচিত হচ্ছে। একলা থাকলেই কষ্টগুলো ভীষণভাবে আঁকড়ে ধরে। এখনকার কষ্টও বড়ো নির্মম। শুধু পার্থক্য হলো এখন কষ্ট সহ্য করার এবং এটা চেপে রাখার ক্ষমতা আছে। আগে কষ্ট সহ্য করার এত নিদারুণ ক্ষমতা ছিল না। নোয়ানা কাচের জানালা দিয়ে বাইরের বৃষ্টি মুখর প্রকৃতিতে তাকিয়ে ছিল নিষ্পলক। নিষ্পলক চোখে পানি জমে ঝাপসা করে দিলো দৃষ্টি। রিংটোনের শব্দে ধ্যান ভেঙে যায় তার। চোখের পলক পড়তেই অশ্রু গড়ায় চোখ থেকে।
সে চোখ মুছে ফোনের দিকে এগিয়ে যায়। ফোন হাতে নিয়ে হৃদয়ে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলো। চোখ চলে যায় হাতের অনামিকায়, আরেকবার হিমেল নামটার উপর। কল রিসিভ করে কানে লাগলো সে। মৃদু কম্পিত গলায় বললো,
“হ্যালো!”
ওপাশটা নীরব। যেন ফোনের ওপাশে কোনো মানব নয়, আছে নিস্তব্ধ এক রাজ্য। যেখানে মানুষের নিঃশ্বাসও ত্যাগ হয়নি কখনো। ওপাশের মানব নীরব রইল, এই নীরবতা ভাঙিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছা হলো না নোয়ানার। নীরব মানবের সাথে সঙ্গ দিয়ে সেও নীরব মানবীর পরিচয় বহন করলো। কাটলো কিছু মুহূর্ত। এই নীরবতা আর কতক্ষণ স্থায়ী হবে?
নোয়ানা নীরবতার দেয়াল ভেঙে বললো,
“কিছু যখন না-ই বলবেন তাহলে ফোন করেছেন কেন? ফোন করে ঠিক করেননি। আর কখনো ফোন করবেন না।”
নোয়ানা এটুকু বলে কল কাটতে উদ্যত হলো।
ওপাশের নীরব মানব কথা বলে উঠলো,
“কল কেটে দিয়ো না নোনা।”
নোয়ানা থামলো। সে কল কাটতে নিলেই টের পায় কী করে আষাঢ়? অনুধাবন শক্তি এত প্রখর? এই প্রখর অনুধাবন শক্তি দিয়ে কি হৃদয়ও বুঝে ফেলে?
“তোমাকে সময় দিয়েছিলাম সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য, সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত কি হয়েছো?”
“আমার সিদ্ধান্ত একই এবং সঠিক। দয়া করে আমাদের বিয়ের মাঝে কোনো হট্টগোল করবেন না আপনি।”
আষাঢ় হেসে উঠলো। এ হাসির শব্দ মর্মস্পর্শী! নোয়ানার হৃদয়ে গুড়ুম গুড়ুম করে মেঘ ডেকে সংঘর্ষ হলো। বিকট শব্দ করে হলো বজ্রপাত, হৃদয় হলো বিদ্যুৎপিষ্ট।
“তুমি ভাবছো কীভাবে আমি তোমার আর নাঈমের বিয়েতে হট্টগোল করবো? কী বলেছিলাম আমি? এনগেজমেন্ট হয়েছে ভালো কথা, এটা কিছুতেই বিয়ে পর্যন্ত গড়াবে না। যেটা বিয়ে পর্যন্তই গড়াবে না, সেখানে আমি বিয়েতে হট্টগোল করবো কীভাবে? পারবো সেটা করতে? আমি তো শুধু আমার হৃদয়ের সাথে হট্টগোল করছি। তুমি এই হট্টগোল বন্ধ না করলে, এটা আরও মারাত্মক হবে। তুমি কি তাই চাও?”
“আমি শুধু চাই আমার বিয়েটা ভালোয় ভালোয় হয়ে যাক।”
“হবে না, এমন চাওয়া পুষে রেখো না। হিমেল ইসলামের মানুষ এমন অহেতুক চাওয়া প্রকাশ করলে সেটা ভালো দেখায় না।”
“কল কাটছি আমি।”
“যদি বলি কেটে দিয়ো না?”
“তারপরও কাটবো।”
“কিন্তু আমি এমনটা চাইছি না। তোমার সম্মতি নিয়েই এই বিয়ে স্টপ করতে চাচ্ছি। কিন্তু তুমি যদি না বোঝো…”
ফোন বিপ বিপ শব্দ করে জানান দিলো কল কেটে গিয়েছে। আষাঢ় কান থেকে ফোন সরিয়ে বিড়বিড় করে উঠলো,
“বিরক্তিকর মেয়ে! এত বিরক্তিকর মেয়েটাকে কেন ভালোবাসি আমি?”
“সেটাই আমার প্রশ্ন, কেন ভালোবাসো তুমি?”
পিছনে একটা মেয়েলি কণ্ঠ শুনতে পেয়ে চমকে তাকালো আষাঢ়। একটু ভয় পেয়েছে সে।
সিনথিয়া বললো,
“নোয়ানাকে কেন ভালোবাসো? তোমাকে ভালোবাসে অথচ অন্য একটা ছেলের সাথে এনগেজড করেছে! এমনকি তাকে বিয়েও করবে বলছে। এসবের পরও ওর জন্য পাগল থাকছো কী করে?”
“কী করে পাগল থাকছি, কেন পাগল থাকছি সেটা আমি বুঝবো। তোমাকে আগেও বলেছি আমাকে নিয়ে এত ভাবতে হবে না তোমার। নিজের ভাবনা ভাবো আর ইন্ডিয়া চলে যাও। আমার মতো প্লে-বয়কে বিয়ে করার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দাও।”
“না দিলে কী হবে?”
“দিতে হবে। এটাই তোমার জন্য ভালো হবে।”
সিনথিয়া দ্বিরুক্তি না করে তাকিয়ে রইল ক্ষণিক। অতঃপর দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজার নিটকে থেমে হঠাৎ পিছন ফিরে বললো,
“তুমি আসলে নিজের ভালো ভাবছো, আমার ভালো না।”
আষাঢ় হঠাৎই রেগে গেল। রাগে থমথমে কণ্ঠে বললো,
“আমি সবার ভালোই ভাবী। যদি সকলের ভালো নিয়ে চিন্তা না-ই করতাম তাহলে এতদিনে অনেক কিছু ঘটে যেত। তুমিও বর্তমানে আমাদের বাড়িতে থাকতে না। সবার ভালো ভাবী বলেই চুপচাপ আছি। ধৈর্য ধরে আছি কবে তুমি নিজ ইচ্ছাতে এই বিয়েতে অমত করে চলে যাবে।”
“সেই তো তুমি সবার দিকটা চিন্তা করলেও আমার দিকটা চিন্তা করছো না! আমার চলে যাওয়ার অপেক্ষায় আছো। আমি এই বিয়ে নাকোচ করে চলে গেলে তুমি সকলের কাছে ভালো থাকবে। কিন্তু যদি তুমি বলো এই বিয়ে করবে না, তাহলে তোমার মা-বাবা মনে কষ্ট পাবে। বাহ, তোমার চিন্তা ধারাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি আমি। তোমার সকল চিন্তাই নিখুঁত।”
আষাঢ় ক্ষুদ্রতম নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বললো,
“যাও সিনথিয়া।”
“কথা তো ছিল তোমাকে বিয়ে না করে যাব না। ভুলে গেছো সেটা?”
“কিন্তু আমি তো তোমার নই। অনেক আগেই আমার টিউলিপ ফুল আমাকে রেজিস্ট্রি করে নিয়ে গেছে। আমি এখন সম্পূর্ণ তার।”
“তাহলে আমিও রেজিস্ট্রি করে তোমাকে আবার আমার কাছে নিয়ে আসবো।”
আষাঢ় হাসলো। শান্ত গলায় বিরক্ত, ক্ষিপ্রতা মিশিয়ে বললো,
“সাইকো!”
“বার বার সাইকো বলে ভুলটা তুমিই করো। তোমার মাথায় রাখা উচিত, সাইকোরা কিন্তু সব পারে।”
আষাঢ় চোখ তুলে তাকালো। সিনথি একটুখানি হাসলো। কী মিষ্টি হাসি! তবে আষাঢ়ের রক্তের প্রতি রঞ্জায় রঞ্জায় বিরক্তের স্রোত প্রবাহিত করলো এই হাসি।
________________
ঘড়ির কাটা তখন বিকেল চারটার ঘরে। শ্রাবণের তন্দ্রা ভাঙলো। বাইরে এখনও বৃষ্টি ঝরে যাচ্ছে। বৃষ্টি দেখে ঘুমিয়েছিল, উঠেও সেই বৃষ্টিই দেখছে আবার। তবে মিহিককে দেখছে না। ঘুমানোর আগে মিহিককেও দেখেছিল সে। তাহলে ঘুম থেকে জেগে বৃষ্টির মতো মিহিককেও কেন দেখতে পেল না? শ্রাবণের মন কঠিন অভিযোগ তুললো। মনের কোণে জমলো অভিমান। কীসের উপর অভিমান জানে না, শুধু অভিমানী একটা অনুভূতি হচ্ছে তার। অনুভূতিগুলো ইদানিং বড্ড অন্যরকম আচরণ করে।
শ্রাবণ বাড়িতে খোঁজ চালালো মিহিকের। কোথাও দেখতে পেল না। বৃষ্টি চলছে। বৃষ্টির মাঝে কি উনি বাইরে গিয়েছেন? রুমে এসে কল দিলো মিহিককে। বাবার বাড়ি গিয়েছে কি না যাচাই করছিল, কিন্তু যাচাই করার উপায় পেল না। মিহিকের ফোন রুমের ভিতরে বেজে উঠলো। আশ্চর্য! বাড়িতে নেই, মোবাইল ফেলে রেখে কোথায় গিয়েছে? শ্রাবণের চিন্তা চিন্তা ভাব উদিত হলো। চিন্তিত মনোভাব নিয়ে লিভিং রুম পার হওয়ার সময় রুপালির সাথে দেখা হলো।
“মিহিক কোথায় জানো?” প্রশ্নটা করেই ফেললো রুপালিকে।
রুপালি ত্যাড়া চোখে তাকিয়ে বললো,
“আবারও ঝগড়া করছো দুইজন?”
“না খালা, আমি তো ঘুমিয়েছিলাম, ঝগড়া করলাম কখন? আর আমাদের মাঝে ঝগড়া হয়ও না কখনো।”
“ঝগড়া না হলে মিহিক ছাদে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইছে কেন একলা একলা?”
শ্রাবণ ললাটে ঈষৎ ভাঁজ ফেললো। সকল জায়গা খোঁজা হলেও ছাদে গিয়ে একবার দেখা হয়নি। বললো,
“উনি ছাদে? এই বৃষ্টির মাঝে ছাদে কী করছে? বৃষ্টিতে ভিজছে? আবারও জ্বর বাঁধাতে চায়?”
শ্রাবণ রুপালির উত্তরের অপেক্ষা করলো না। পা বাড়ালো সিঁড়ির দিকে।
ছাদের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে দেখলো মিহিক বৃষ্টিতে ভিজছে না, রুফটপে যায়নি সে। কংক্রিটের ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে আছে। তবে বৃষ্টির অজস্র ফোঁটা ছিটকে এসে তাকে ভিজিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় রত হয়েছে। শ্রাবণ মিহিকের নিকটে এগিয়ে এলো। অবাক তো হলো তখন, যখন দেখলো মিহিকের নেত্র থেকে জলের ধারা গড়িয়ে পড়ছে কপোল বেয়ে। শ্রাবণ অবাক চিত্তে বলে উঠলো,
“আপনি কাঁদছেন মিহিক?”
(চলবে)