#বিবর্ণ_জলধর
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৩৬
_____________
মিহিকের নেত্র কোটর থেকে জল গড়াচ্ছে। এটা কোনো কষ্টের অশ্রু নয়, অহেতুক অনিবার ঝরে পড়া চোখের জল। যার কিছুটা অংশে সুখী ভাব মিশে আছে। এমনটাই তো প্রত্যাশা ছিল তার। ভালো একজন স্বামীর! অবশেষে বোধহয় তার স্বামী পূর্ণ রূপে ভালো হচ্ছে। মানুষটার মাঝে নিজের জন্য অনুভূতিও উপলব্ধি করে। এমন মিষ্টি কিছুর উপলব্ধি দ্বিতীয় কিছু কি হয়? প্রশ্নটা বিস্তীর্ণ বায়ু মন্ডলে মেলে দিলে বাতাসের সাথে বাতাসের সংঘর্ষ হয়ে উত্তর আসে, ‘না হয় না’।
বৃষ্টির ঝিমঝিম শব্দের সাথে মিশ্রিত তিনটি শব্দের পুরুষালি কণ্ঠের প্রশ্নটা এসে কড়া নাড়ে মিহিকের কর্ণে,
“আপনি কাঁদছেন মিহিক?”
মিহিক চমকে পাশে তাকায়। এক জোড়া চোখ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। মিহিক চোখের জল মুছে না। অবাক চিত্তে প্রশ্ন করলো,
“আপনি কখন এসেছেন?”
“আপনি কাঁদছেন কেন? কী হয়েছে?” উৎকণ্ঠা হয়ে প্রশ্ন করলো শ্রাবণ।
মিহিক দৃষ্টি সরিয়ে সম্মুখে তাকিয়ে বললো,
“এমনিই, আমি অকারণেও কাঁদি।”
মিহিকের কণ্ঠ স্পষ্ট, স্বাভাবিক।
শ্রাবণের মন থেকে বিস্ময় কাটে না,
“অকারণে কেউ কাঁদে শুনেছেন কখনো? কী হয়েছে বলুন।”
মিহিক অশ্রু ল্যাপ্টানো চোখে আবার তাকালো। ধারালো গলায় বললো,
“যদি বলি অনেক কিছু হয়েছে তাহলে কী করতে পারবেন আপনি?”
শ্রাবণ মিইয়ে যায়। মিনমিনে কণ্ঠে উত্তর দেয়,
“না পারি কিছু করতে, শুনতে তো পারি অন্তত। শোনার অধিকার তো আমার আছে।”
মিহিক তাকিয়ে থাকলো। কিছু বললো না, ভাবনাও বিস্তৃত হলো না।
ক্ষণিকের নীরবতা কাটিয়ে বললো,
“আমার চোখের অশ্রু মুছে দেওয়া কি আপনার দায়িত্ব না?”
শ্রাবণ অপ্রস্তুত হয়ে যায়। এক মুহূর্তের জন্য তার অন্তঃকরণে প্রশ্ন উন্মোচিত হয়। এটা কি তার দায়িত্ব? স্বামীদের ঠিক কী কী দায়িত্ব থাকে? শ্রাবণ জানে না। তবে মনে হলো স্ত্রীর চোখের জল মুছে দেওয়া একটা দায়িত্বই বটে।
সে ব্যস্ত হয়ে হাত বাড়ালো মিহিকের চোখের দিকে। মিহিক তাৎক্ষণিক থামিয়ে দিয়ে বললো,
“থাক, আপনাকে আর চোখের অশ্রু মুছে দিতে হবে না।”
বলে মিহিক দুই হাত দিয়ে চোখ মুছে নিয়ে তাকালো। শ্রাবণের চেহারা হতভম্বের মতো। ফ্যালফ্যাল দুটি অক্ষি। আবারও একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি ঘটালো সে,
“কেন কাঁদছিলেন আপনি?”
মিহিক কপালে বিরক্তির ভাঁজ ফেলে বললো,
“বললাম না? কোনো কারণ নেই, অহেতুক কেঁদেছি।”
“এমন কথা কোনোদিনও শুনিনি।”
“আজ একই সাথে শুনলেন এবং দেখলেন তো? খুশি এবার?”
“আপনি আজব!”
মিহিক শব্দ করে হাসলো। অন্যমনা হয়ে হাত বাড়ালো শীতল বৃষ্টি কণায়। বৃষ্টিতে ভিজলে কি জ্বর আসবে? আসবে, এটা নিশ্চিত!
“বৃষ্টিতে ভিজবেন শ্রাবণ?” হঠাৎই মিহিকের থেকে এমন একটা প্রশ্ন পেয়ে অবাক হলো শ্রাবণ। যদিও এটা স্বাভাবিক প্রশ্ন। বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টিতে ভেজার কথা তো উঠতেই পারে। সে প্রত্যুত্তর করলো,
“না।”
মিহিক হাতটা বৃষ্টিতে বাড়িয়ে রাখলো। শ্রাবণের দিকে চেয়ে বললো,
“না কেন? বৃষ্টিতে ভিজলে অসুস্থ হয়ে যাবেন সেই শঙ্কা? আপনি কেমন শ্রাবণ? আপনার নামেই না বৃষ্টি জড়িত? তাহলে বৃষ্টিতে ভিজতে এত ভয়?”
“ভয় না, আমি এমনিই ভিজবো না।”
“ভিজতে হবে।”
“আশ্চর্য! যখন আমি বলছি ভিজবো না, তখন আপনি আমায় জোর করতে পারেন না। এটা অন্যায়।”
“আমি আপনার স্ত্রী। আপনার সাথে সকল অন্যায় করা ন্যায্য আমার। আমি যা খুশি তা-ই করতে পারি।”
বলে মিহিক আজব একটা কাণ্ড ঘটালো। অকস্মাৎ বৃষ্টিতে বাড়িয়ে রাখা হাতটা দিয়ে শ্রাবণের এক হাত ধরে শ্রাবণকে ঠেলে রুফটপে বৃষ্টির মাঝে নামিয়ে দিলো।
বৃষ্টির শীতল পরশ শ্রাবণকে ভিজিয়ে দিলো ক্ষণিকেই। মিহিক মুচকি হাসতে লাগলো।
শ্রাবণ কিছুটা অসহ্য কণ্ঠে বললো,
“এটা আপনি কী করলেন মিহিক? আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন? আমি তো পড়েও যেতে পারতাম!”
শ্রাবণ ছাউনির নিচে আসার জন্য পা বাড়ালো। কাছে আসলেই মিহিক শ্রাবণের বুকে এক হাত ঠেকিয়ে বাধা দিয়ে বললো,
“উহু, বৃষ্টিতেই ভিজুন কিছুক্ষণ। দেখতে ভালো লাগছে।”
শ্রাবণ মিহিকের বাধা পেরিয়ে আর ছাউনির নিচে গিয়ে বৃষ্টি থেকে আড়াল হলো না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মিহিকের হাস্য আভা বদনখানি দেখলো। মিহিকের মতো সেও ঘটিয়ে বসলো আজব একটা কান্ড। আচমকাই তার বুকে ঠ্যাকানো মিহিকের হাতটায় হ্যাঁচকা টান দিয়ে মিহিককে ছাউনির নিচ থেকে নিয়ে এলো নিজের নিকটে। বৃষ্টি নিজ ছোঁয়াতে ভিজিয়ে দিলো মিহিকের কালো কেশ।
শ্রাবণ মৃদু মিষ্টি হেসে বললো,
“এখন দৃশ্যটা আরও ভালো লাগছে।”
মিহিক শ্রাবণের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে দ্রুত পায়ে এসে ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে রাগান্বিত সুরে বললো,
“এটা আপনি কী করলেন? আপনি জানেন, বৃষ্টিতে ভিজলে আমার জ্বর আসে?”
চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বিরক্তিতে শব্দটা উচ্চারণ করলো মিহিক,
“ধ্যাত!”
অন্যদিকে ঘুরে দ্রুত সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো সে। এক পা এগোতেই পিছন থেকে দুটি হাত নিজ আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরলো হঠাৎ তাকে।
থমকে যেতেই হলো মিহিকের, হৃদপিণ্ড গলার কাছে এসে শ্বাস রুদ্ধ করে দিলো।
পিছনের মানুষটি বললো,
“আপনার কমনসেন্সহীন জ্বরটাকে বিতাড়িত করুন মিহিক। শ্রাবণ নামের মানুষের জীবনসঙ্গিনী হয়েছেন, বর্ষণসঙ্গিনী না হলে ব্যাপারটা কেমন হবে?”
সে একটু থেমে আবার বললো,
“অবশ্য কমনসেন্সহীন জ্বরটা থাকলেও মন্দ হয় না। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যখন বুকে ঢলে পড়েছিলেন, ভালোই ছিল সেটা।”
মিহিকের হাঁসফাঁস লাগছে, তড়িৎ গতিতে ছুটছে হৃদয়। গলা শুকিয়ে আসছে। লজ্জায় একটুখানি হয়ে যাচ্ছে তার মুখ। কোনো মতে শুকনো একটা ঢোক গলা বেয়ে নামিয়ে বললো,
“ছাড়ুন শ্রাবণ।”
“না।”
“…’না’ মানে? ছাড়ুন।”
“আমি আপনার স্বামী, আপনাকে জড়িয়ে ধরাটা আমার ন্যায্য। এটা অন্যায় নয়।”
মিহিকের হৃদয় ছটফট করছে। এমন শ্রাবণকে তো সে আর দেখেনি, এই প্রথম দেখছে। ভালো হতে হতে কি উনি খারাপের শীর্ষে পৌঁছে যাচ্ছেন? মিহিক দুই হাত দিয়ে শ্রাবণের হাতের বাঁধনটা আলগা করে এক প্রকার পালিয়ে যাওয়ার ন্যায় দ্রুতগামী পা ফেলে ছুটতে লাগলো।
ক্ষণিকের জন্য শ্রাবণের চোখে তার লজ্জাবতী স্ত্রীর চেহারাখানা হালকা একটু ধরা দিলো। শ্রাবণ নিজ অবস্থানে স্থির দাঁড়িয়ে থেকে অস্ফুট স্বরে বললো,
“বোকা কি শুধু আমি একা? আপনিও কম বোকা নন মিহিক!”
__________________
বিকেলের পড়ন্ত আলো ছড়িয়ে আছে। কমলা রঙের কী সুন্দর বিকেল! আষাঢ়ের কাছে বিকেলের এই মনোরম সৌন্দর্য ধরা পড়ছে না। সে দেখছে সব বিবর্ণ। চোখের তারায় রঙিন সকল কিছু বিবর্ণ রূপে ধরা দিচ্ছে! বাড়ির সামনের লাল ফুলের গাছটাও কী রঙিন, কী অপরূপ! কিন্তু তার কাছে এ সবকিছুই ফ্যাকাশে, সব কিছু!
বাড়ির গেট খুলে আকাঙ্ক্ষিত মানুষটার পদচারণ পড়লো বাইরে।
আষাঢ় গাড়ির উইন্ডো থেকে দেখছে কারিব এগিয়ে যাচ্ছে নোয়ানার দিকে।
নোয়ানা কারিবকে দেখে থামলো। একপলক গাড়ির দিকে তাকিয়ে ভিতরে আসনকৃত আষাঢ়কেও দেখে নিলো। সে চায়নি আষাঢ়ের সামনে পড়তে। এখন কারিবকে অগ্রাহ্য করে চলে যাওয়াটাও বেয়াদবি। নোয়ানা দাঁড়িয়ে রইল।
“পড়াতে যাচ্ছেন?” নিকটে এসে প্রশ্ন করলো কারিব।
নোয়ানা গম্ভীর মুখে উত্তর দিলো,
“হুম।”
“কিন্তু আপনার তো এখন আমাদের সাথে যেতে হবে।”
“আপনাদের সাথে যেতে হবে মানে?” কপালে ঈষৎ ভাঁজ ফেলে বললো নোয়ানা।
“আমরা ওই ওদিকটায় যাচ্ছি, আপনিও চলুন।”
নোয়ানা গাড়ির দিকে তাকায়। গ্লাসের ভিতর থেকে আষাঢ়কে দেখে। এটা যে আষাঢ়ের কারসাজি এটা গোপনীয় কিছু নয়। নিজে না এসে কারিবকে পাঠিয়ে আজ নিজের ব্যবহারে নতুন মাত্রা আনছে না কি? নোয়ানা চোখ ফিরিয়ে এনে বললো,
“স্যরি কারিব ভাই, আমার হাতে সময় নেই। এমনিতেই আজ দেরি করে ফেলেছি। আমি আসছি।”
নোয়ানা পা বাড়ালে কারিব থামিয়ে দিলো। বললো,
“বেশি সময় লাগবে না, মাত্র কয়েক মিনিট। তারপর আমরা আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌঁছে দেবো।”
আষাঢ় গাড়িতে বসে কারিব আর নোয়ানার কথাবার্তা পরিলক্ষিত করছিল। দুজনের মাঝে যেন হ্যাঁ-না বোধক বিবাদ তৈরি হচ্ছে। এখানে বসে থেকে শান্ত মস্তিষ্কে এটা দেখার আর ধৈর্য হলো না তার। দরজা খুলে ফট করে গাড়ি থেকে নামলো সে। সোজা এগিয়ে এসে থামলো কারিব আর নোয়ানার কাছে। কাঠ স্বরে নোয়ানাকে বললো,
“চলো।”
নোয়ানা কিছুটা রাগান্বিত। আষাঢ় কী মনে করে তাকে সেটাই বুঝলো না আজ পর্যন্ত। যখন তখন এসে হুকুম জুড়ে দেয়। নোয়ানাও বরফ শীতল কণ্ঠে বললো,
“আমার হাতে সময় নেই।”
“তোমার হাতে ব্যাপক সময় আছে। চলো।”
“নেই সময়।”
আষাঢ় কারিবের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি ঝরিয়ে বললো,
“এই মেয়েটা আপোষে কোনোদিনও কথা শোনে না, কোনোদিনও না!”
ক্ষুব্ধ চোখে নোয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো,
“এই মেয়ে তোমাকে কি মারধর করে নিতে হবে?”
আষাঢ়ের কথায় নোয়ানার হৃদয় গুঁড়িয়ে আসে। তবুও কঠিন গলায় বললো,
“আপনার এরকম ব্যবহার দেখতে দেখতে আমি তিক্ত।”
“আর তোমার কাছ থেকে এত অবাধ্য ব্যবহার পেতে পেতে আমি বিরক্ত।”
আষাঢ় গাড়ির কাছে এগিয়ে এসে পিছনের দরজা খুলে দিয়ে বললো,
“এসো।”
নোয়ানা অসহায় বোধ করে। একবার কারিবের দিকে তাকায়। কারিবের মুখ ভাবনাহীন দেখাচ্ছে। চোখ ফিরিয়ে নেয় আবারও আষাঢ়ের দিকে। বললো,
“আমি বললাম তো আমার সময় নেই। আমি আপনার মতো অফুরন্ত সময় নিয়ে ঘুরি না। আমার জীবন আপনার মতো এত নিশ্চিন্তের নয়।”
বলে নোয়ানা যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। গেলও কয়েক পা। কিন্তু আর যাওয়ার ভাগ্য হলো না। আষাঢ় তীব্র বেগে ছুটে এসে পথ রুদ্ধ করলো।
“এই অবাধ্য-হার্টলেস মেয়ে, মার খেতে চাও তুমি? চলো বলছি। না হলে কিন্তু আমার এই কঠিন হাত তোমার নরম গালে রক্ত জমাট বাঁধিয়ে দেবে। আমি কিন্তু প্রচণ্ড রেগে আছি। মেরেও বসতে পারি।”
নোয়ানা অন্যদিকে মুখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
“সন্ত্রাসীদের মতো আচরণ!”
আষাঢ় তুচ্ছ হাসলো,
“তাহলে ভেবে দেখো তুমি কেমন, আমাকে সন্ত্রাসী পর্যন্ত বানিয়ে ছাড়ছো।”
নোয়ানা কিছু বললো না।
“যাবে না?”
আষাঢ়ের প্রশ্নে নোয়ানা কটমট চোখে তাকালো এবার। আষাঢ়কে অতিক্রম করে যে যাওয়ার সৌভাগ্য হবে না সেটা বুঝতে পারলো। গটগট করে তাই এগিয়ে গেল গাড়ির দিকে। পিছনের আসনে উঠে বসলো।
কারিব সটান দাঁড়িয়ে সব প্রত্যক্ষ করছিল। আষাঢ় হঠাৎ তার দিকে তাকিয়ে বললো,
“মেয়ে মানানো সহজ নয় কারিব। তোমার ভাবির জন্য ভাবনা ক্রমশ ভুল প্রমাণিত হচ্ছে।”
আষাঢ় এবং কারিব সামনের আসনে বসলো। পিছনে নোয়ানা মুখ কালো করে বসে আছে। অমানিশার ছটা লেগেছে কুসুমকোমল মুখটিতে। এই মুখ দেখে হৃদয়ে তোলপাড় হচ্ছে। আষাঢ় ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে নোয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে। কারিব গাড়ি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে গন্তব্যের দিকে। আষাঢ়ের দৃষ্টি নোয়ানার হাতে গিয়ে স্থির হলো। দৃষ্টি মূলত নোয়ানার অনামিকায় থাকা এনগেজমেন্ট রিংয়ের উপর। রিংটার দিকে কিছুক্ষণ অপলক তাকিয়ে থেকে সে দৃষ্টি নিলো নোয়ানার কালোপূর্ণ মুখে। বললো,
“এই আংটি কি তুমি নিজে খুলবে? না কি আমার খুলে ছুঁড়ে ফেলতে হবে?”
নোয়ানার কালো মুখ ফ্যাকাশে হয়ে এলো। চোখ তুলে তাকালো আষাঢ়ের দিকে। হৃদয়ে সহসাই তৈরি হলো দুর্নিবার ক্লেশ ঝঞ্ঝা। এক হাত দিয়ে অন্য হাতের অনামিকা ঢেকে বললো,
“পাগলামির একটা সীমা থাকা উচিত।”
“তুমি নিজেই সীমাহীন, আমি কী করে আমার পাগলামির সীমা রাখি?”
আষাঢ় ঘাড় ফিরিয়ে সোজা হয়ে বসলো। কারিবকে হুকুম করলো,
“গাড়ি সোজা কাজী অফিসের দিকে নিয়ে চলো।”
আষাঢ়ের বলা ‘কাজী অফিস’ কথাটা নোয়ানার বক্ষস্পন্দন স্তব্ধ করে দিলো। দু চোখে অপ্রতিভ আভা ঠিকরে উঠলো। ফ্যাকাশে মুখ হলো আরও মলিন। মলিন মুখে ভয়েরা আর্তনাদ করে উঠে ভয়ার্ত আননের রূপ নিলো। দমবন্ধকর ভাবে সে বললো,
“…’কা…কাজী অফিস’ মানে?”
আষাঢ় আবারও তাকালো নোয়ানার দিকে।
আষাঢ়ের দু চোখে চেয়ে নোয়ানার মনোরাজ্যে দ্বিধার দলের সংঘর্ষ হলো। আষাঢ়ের দু চোখে ধোঁয়াশা, অনিশ্চিতয়তা। এ চোখে চেয়ে কোনো লাভ নেই। দু চোখ দেখে ঠাহর করা যাচ্ছে না কিছু।
আষাঢ় নোয়ানার দ্বিধা-ভয়ে থমথমে চেহারাতে গভীর দৃষ্টি রেখে বললো,
“তুমিই তো বলেছো, আমার পাগলামির কোনো সীমা নেই। এখন এই সীমাহীন পাগলামি তো আমি বিয়ে পর্যন্ত না নিয়ে গিয়ে থামাতে পারি না। আমায় বিয়ে করবে না টিউলিপ?”
নোয়ানার দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে আসছে। অবিশ্বাস, দ্বিধা, ভয়, বিস্ময় গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরেছে। এই আলিঙ্গনের বাঁধন ছিঁড়ে আষাঢ়ের কথার আসল মর্মার্থটুকু ধরতে পারছে না। আষাঢ় কি মজা করছে? না কি সিরিয়াসলি বলছে? আষাঢ়ের মুখে এই মুহূর্তে তো কোনো ঠাট্টাচ্ছল্য চিহ্ন খুঁজে পাচ্ছে না।
(চলবে)
______________
(বি. দ্র. আগামী ২৫ তারিখ আমার পরীক্ষা। ৩০ তারিখে শেষ হবে। এ ক’দিনে গল্প দেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না।)