#বিভাবতীর_জীবন
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্বঃ১০
–” অতিত ধুয়ে কি পানি খাবো আমি? বিয়ে করতে অতিত লাগে?”
বিভা চমকে গেল,এই লোক কি কথা সব সময়ে এমন ভাবেই বলেন?আর বললেও সব জায়গায় এমন করে উত্তর দিতে হবে? কথায় কোন রসকস কিছুই নেই।
বিভা যেন কিছুটা দমে গিয়েছিল ফাইয়াজের কথায় পরে নিজেকে কিছুটা দমিয়ে বলল –
–” অতিত ধুয়ে পানি খাবেন না, খুব সুন্দর একটা কথা বলেছেন। অতিত দিয়ে কি করবেন? যেখানে সংসার করতে দুজন মানুষের মনের ভাব লাগে। সংসার গুছিয়ে রাখতে মনের মিল হওয়া লাগে। কিন্তু এটাও ঠিক অতিত টা কিন্তু আসলেই লাগে। আর এই অতিত টাকেই হয়তো প্রত্যেকেই বিয়ের আগেই জানতে চায়। প্রত্যেকটা ছেলে চাইবে তার স্ত্রী ভালো কোন মেয়ে হোক। প্রত্যেকটা মেয়ে চাইবে তার স্বামী ভালো হোক। হবু স্বামী স্ত্রীদের নিয়ে তাদের মনে একটা আলাদা অনুভূতি থাকে। সবাই চায় তার সঙ্গি বা সঙ্গিনী বেটার হোক বা সবচেয়ে ভালো হোক।”
–” লিসেন, আমি তো দরদাম করছি না, জিনিসটা আসলেই কত দাম, কত দিয়ে বিক্রি করবেন তাতো নয়। যে জিনিসটার আগে কোন আঘাত লেগেছিল কিনা। কত বছর এটা দোকানে পরেছিল কজন ধরেছে কিছু বলেছি? আমি বিয়ে করবো। আমার একজনকে ভালো লেগেছে বলেই তো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। সো এখানে এত কিছু জানার তো তেমন কিছু দেখছি না।”
–” ডাঃ ফাইয়াজ আপনি খুব স্ট্রেইট কথা বলতে পছন্দ করেন। ভেরি গুড, কিন্তু আমাকে আমার ব্যাপারে কথা ও তো বলতে দিবেন। আমার মনে হলো তাই আমি বলবো।
এভাবে ফোনে কথা বলে লাভ নেই, কাল আপনি আমার সঙ্গে দেখা করছেন ব্যাস । ”
–” আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যখন বলছেন দেখা না হয় করলাম। তো বলুন কোথায় দেখা করতে পারি ?”
–” আপনি কোথায় দেখা করতে চান? আপনার যেহেতু ব্যাস্ততাটা বেশি।”
–” ব্যাস্ততটা শুধু আমার একার না আপনার ও আছে। তাই আমি একাই বলবো তা নয় আপনিই বলুন কোথায় দেখা করতে হবে?”
–” মধুমতি লেকের পাড় আসতে পারবেন?”
–” আপনাদের বাড়ির পিছনে?”
—” হুম,”
–” ও আচ্ছা, কখন দেখা করবো?”
–” সকালবেলায় পারবেন?”
–” কয়টা?’
–” এই ধরুন সাতটায়,”
–“আমি বরং ছয়টায় দেখা করি, সকালে আমাকে জগিংয়ে বের হতে হয়। একসাথে দুটো কাজ হলো।”
–” আচ্ছা ঠিক আছে,”
_______________________________________
সূর্যদয়ের পর আকাশটা বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ঘোলা আকাশ একদম পরিষ্কার হয়েগেছে। ঢাকার এই জনজীবনে খোলামেলা পরিবেশ খুব একটা দেখা যায় না।ফ্ল্যাটের বারান্দায় দাড়ালে রোদের লুকিয়ে চুরিয়ে আসা কিছু আলোক রশ্মি মাঝে মাঝে চোখে পরলে ও সব সময় তা দেখা যায় না। ফাইয়াজ তৈরী হয়েই এয়ার ফোনের কড দুটোকে কানে ঢুকিয়ে, জগিংয়ের জন্য ট্র্যাকস্যুট পরে একেবারে তৈরি হয়ে নিল। বের হতে নিলে মায়ের সঙ্গে দেখা। প্যারালাইসিসে আক্রান্ত ফাহিমা বেগম তখন হুইল চেয়ারে বসে ঘাড় কাত করে হাতে তজবি নিয়ে বসেছেন।
ফাইয়াজ সালাম দিয়ে বলল।
–” আমি বাহিরে যাচ্ছি আম্মু, ফুফি আম্মুকে দেখে রেখো। ফিহাকে ঘুম থেকে উঠতে দেখলে বলো ও যেন আজ কলেজ মিস না দেয়।”
ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় ফাহিমা বেগম ডেকে উঠলেন ছেলেকে।
কথা একদম স্পষ্ট বলতে পারেন না তবুও সেই গলায় বলে উঠলেন –
–” গাড়ির চাবি নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস এত সকালে ?”
ফাইয়াজ নিজের হাতের চাবিটাকে দেখে হেসে বলে উঠল-
–“একটা জায়গায় যাচ্ছি, ফিরতে খুব বেশি দেরী হবে না। যাবো আর আসবো ঠিক আছে। এত টেনশন করো না।”
–” ও,”
ফিহা সকাল সকাল উঠেছিল ফাইয়াজের হাতে চাবি দেখে বলে সামনে দাড়িয়ে বলল-
–” ভাইয়া তুই এখন এইভাবে এই বেশে বেড় হবি?”
–“এভাবে বেড় হবো নাতো কিভাবে বেড় হবো? লুঙ্গি পরে বেড় হতে হবে আমাকে? জগিং করতে গেলে তো ট্র্যাকস্যুট পরেই বেড় হতে হয় জানি, অন্যকিছু তো পরতে হয় জানতাম না আমি ।”
–” আম্মু তোমার ছেলেকে কিছু বলবা? আমি জিজ্ঞেস করেছি কি? আর সে কি উত্তর দিচ্ছে। আমি কি জানি তুই গাড়ি নিয়ে জগিং করতে যাবি? গাড়ি নিয়ে যে কেউ জগিং করতে যায় আমি তা জানি? এই জন্যই তো প্রশ্ন করলাম কোথায় যাচ্ছিস আর কেন যাচ্ছিস। প্যাচাঁলি একটা, এর কপালে বউ থাকবে না দেখো মা । তুই দেখিস তোর বউ ও তোর মত হবে,বেয়াদব ছেলে !”
ফাহিমা বেগম অবস্থা বেগতিক দেখে, ডেকে উঠলেন দুজনকে।
–” কি শুরু করেছিস দুজন? ফিহা সকাল সকাল এত কথা বাড়াচ্ছিস কেন? যা নিজের ঘরে যা। আর ফাইয়াজ তুই না কোথায় যাবি যা সেখানে।”
–” হুম যাচ্ছি,
গাড়িটি নিয়ে বিভাদের বাড়ির পিছনের মধুমতি লেক এ চলে এলো। লেকের পাশে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকায় সেখানকার পার্কি প্লেস এ রেখে সে কিছুটা সামনে এগিয়ে এসে একটি বেঞ্চে বসে পরল। কিছুটা সময় পার হওয়ার পর দেখল সামনের একজন রমণীকে এখানে খুব দ্রুত হেটে আসতে। সেদিকে তাকিয়ে দেখল খুব স্নিগ্ধ রুপে পৌষের সকালে চাদর জড়িয়ে একরাশ খোলা চুলে একটি রমণী আসছে। পৌষের হালকা কুয়াশায় সুন্দরী রমণীটি তারদিকেই আসছে মনে হয়। ফাইয়াজ নিজের ঘোলাটে চশমাটা তুলে আবার মুছে নিয়ে দেখল সত্যিই একটি মেয়ে আসছে এখানে। কুয়াশায় মুড়ানো সকালটা তার কাছে যেন আরও একরাশ মুগ্ধতা ঘিরে ধরল। মেয়েটি সামনে এসে দাড়িয়ে সালাম দিল। ফাইয়াজ যেন হুট করে আছড়ে পরল একদম মাটিতে। জট করে তাকিয়ে দেখে ও মা এত সেই সুন্দরী!
–” দুঃখিত ফাইয়াজ সাহেব, আপনাকে এমন সকাল সকাল এভাবে বিরক্ত করার জন্য। আমি চাইনি আপনাকে এভাবে ডেকে আনতে। আপনি হয়তো ভাবছেন ডেকে না এনে মোবাইলেই বলা যেত কথাগুলো, কিন্তু, সত্যি বলতে মোবাইলে সব কিছু বলা যেত না। ”
–” হুম হয়তো, আপনি যেহেতু ডেকেছেন বুঝেই ডেকেছেন। যা বলতে চান ইতস্তত না হয়ে বলতে পারুন আমাকে। তার আগে চলুন এক কাপ চা খেয়েনি!”
–” আমি খাবো না, প্লিজ আমার জন্য চা না নিলেই ভালো হয়, আপনি নিলে নিতে পারেন।”
–” আচ্ছা চা খেতে হবে না, পান করুন। চা তো আর খাওয়া যায় না সকাল সকাল পান তো করতে পারেন।
এরকম শীতের সকাল আর কত আসবে বলুন? মাঘ আসছে আসছে আবার আপনি সকাল সকাল স্নান করে এসেছেন ঠান্ডা কিন্তু বেশ আছে।”
বিভা ফাইয়াজের রসিকতা মাখা আবদার আর না করতে পারল না। সেখানকার একটি টঙ্গের দোকানে দুজনে মিলে বেঞ্চে বসে পরল।”
দুজনে মিলে দু কাপ চা নিয়ে বসে পরল।
ফাইয়াজ চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বলল-
–” তা বলুন আপনার সেই কথা, মানে অতিত যার জন্য ডেকেছেন আপনি।”
–” আমি কথা খুব একটা বাড়াতে চাই না খুব সংক্ষিপ্তে শেষ করতে চাই। আমার একজনের সঙ্গে আড়াই বছরের সম্পর্ক ছিল। আড়াইটা বছর আমি আর সে, আমরা দুজন চুটিয়ে প্রেম করেছিলাম। দুজনের মধ্যাকার সম্পর্কটা ছিল খুব গভীর। একজন অন্যজনকে ছাড়া কিছুই বুঝতাম না।
একদিন হুট করে সে বলে উঠল তোমার পরিবার তো আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবে না বিভা, তখন আমরা কি করব? আমি ও তখন অনেক ভেবে দেখলাম সত্যিই তো এই জিনিসটা তো আমি আগে ভাবিনি। খুব তো দুজন মানুষ দুজনকে মন দিয়ে ফেললাম দুজন গভীরে ডুবে গেলাম। এখন এই সম্পর্কের পূর্ণতা নাহলে আমরা ও তো বাচঁতে পারব না। দেখুন কি আবেগ আমার সেই সময়ে আমি ভাবতাম তাকে ছাড়া বাচঁতে পারব না।” তাচ্ছিল্যমাখা গলায় বিভা বলতে লাগল।
–” তারপর কি হলো? পালিয়ে বিয়ে করেছেন?”
বিভা সামন্য ভ্রু কুচকে আবার নিজেকে সামলে নিয়ে বলল –
–” হুম পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম, আমাদের একটা ছোট্ট সংসার ছিল। সুখ ও ছিল তবে ক্ষণস্থায়ী!”
–” দীর্ঘস্থায়ী কেন হলো না সেই সুখ?
–” আমার সেই প্রাক্তনের মতে আমি চরিত্রহীন। অন্যের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল। আমার ওরসজাত সন্তান নাকি তার নয়!”
–” হুম তারপর তার সঙ্গে বিচ্ছেদ?”
–“হুম,”
–” তাহলে বাচ্চাটি কার কাছে ?”
–” সে নেই,”
চলবে।