#বিভাবতীর_জীবন
#লেখিকাঃতামান্না
পর্বঃ১৫
-” আমি নাহয় তাকে ক্ষমা করে দিব। আমার অনাগত সন্তান হত্যার জন্য তাকে কি করব? সে যে আমার বাচ্চাটাকে মারতে স্বরযন্ত্র করেছিল?”
আলমগীরকে বিভা পুরো ঘটনা খুলে বলতে লাগল।
সব শুনে আলমগীর কোন কথাই বলতে পারল না।
আলমগীরের মনে হলো কোন জায়গায় সে ও তো দোষী।
সবুজ যখন বিয়ে করে কোথাও থাকার ব্যবস্থা করতে পারছিল না আলমগীর নিজে তখন নিজের ছোট্ট ভাড়ার একটি বাসায় থাকতে দিয়েছিল। আলমগীরের মনে হচ্ছিল সেদিন যদি সবুজকে সে বিভার জীবনে ঢুকতে আগেই বাধা দিত অন্তত মেয়েটার জীবনটা নষ্ট হতো না।
আলমগীর বিভার হাত ধরে বলল –
–” বোন এই ভাইটার ভুল গুলো মাফ করে দিস!”
–” আপনি বারবার নিজেকে ছোট করছেন কেন ভাইয়া? আপনি নিজেকে দোষ দিবেন না। যা হয়েছে ভুলে যান।
সবুজকে বলে দিবেন আমি ভালো আছি, কোন পরপুরুষের সঙ্গে আমি জীবনে জড়াইনি। আমি কোন বাজারের পণ্য নই, পণ্য যদি হতাম তার সঙ্গে বিয়ে করতাম না এমনিতেই ওর সঙ্গে কিছুদিন সম্পর্ক রেখে আরেকজন ধরতাম।”
কথাগুলো বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বলতে লাগল বিভা যেন কিছুই হয়নি তার মাঝে।
______________________________
হাসপাতালে এসেছে বিভা,আজ মিলির ডেলিভারি ডেট।
রেজওয়ান একটু আগে এসেছে, বেচারা ঘেমে নেয়ে একদম একাকার। মিলির মেয়েটাকে বিভা নিজের কোলে বসিয়ে দিয়ে সেদিকে চেয়ে রইল।
রেজওয়ান অফিসের ঘেমে যাওয়া শার্ট পরেই অফিসের কলিগ আর আত্মীয়দের কাছে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছে। স্ত্রীর চিন্তায় কতটা কাতর সে! রেজওয়ানের বস খুব একটা ভালোমানুষ নন এটা বিভা জানতো রেজওয়ান একদিন হেসে বলেছিল-” স্যার হচ্ছে একটা কীট বা বলতে পারো যার কোন বোধ নেই। আজ সত্যিই বিভা তাই দেখল নাহলে একজনের স্ত্রীর ডেলিভারি ডেট তখন কেন তিনি তাকে এভাবে আটকে দিবে? অদ্ভুত সব কর্মকান্ড করে মানুষ। কিভাবে নির্বোধের মত কাজ করে ভেবে পায় না সে।
প্রায় ঘন্টা খানেক পর ওটি থেকে বেরিয়ে এসেছেন ডাঃ তানজুম কোলে নিয়ে এসেছেন রেজওয়ান ও মিলি জুটির দ্বিতীয় সন্তান। ছেলে সন্তান শুনেই রেজওয়ান চোখের পানি মুছে সবাইকে ফোন করিয়ে জানিয়ে দিল। কত আনন্দের মুহূর্ত আজ। দ্বিতীয়বার বাবা হওয়ার সুখে কিছুক্ষণ বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগল।
বিভার কাছে দিতেই বিভা বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে নিল।
নরম তুলতুলে হাত পা ছড়িয়ে বাচ্চাটা নিজের জানান দিচ্ছে। চোখ দুটো এখনও বন্ধ তার।
রেজওয়ান বিভাকে একপাশে ডাক দিয়ে নিয়ে দাড় করাল। কিছুটা দূরে যেন হাসপাতালের লোকজনদের অসুবিধা না হয়। এরপর বাবুর কানে নিজেই আজান দিতে লাগল।
আজান দিতে দিতে চোখের পানি মুছতে লাগল।
এক সময় তার ও জন্ম হয়েছিল, কত সাধণার পরে তার বাবা-মা তাকে পেয়েছিল। তার বাবা ও তার কথা শুনে আবেগে আপ্লুত নিশ্চয় হয়েছিল। আজান দিয়েই কোলে নিয়ে নিল সে তারপর চুমু দিতে লাগল পাশে থাকা মেয়ে রিজাকে কাছে টেনে বলল –
–” মামনি এটা তোমার ভাই, ভাইকে ওয়েলকাম বলো!”
রিজা ভাইয়ের হাত ধরে উৎসাহ পেয়ে ভাইকে ধরাধরি করতে চাইল। কিছুক্ষণ কাটানোর পর, মিলির ওয়ার্ডে চলে এলো মিলির জ্ঞান ফেরেনি। ছোট্ট বাবু ও তখন ঘুমিয়ে ছিল। বিভা সারাদিন এখানেই ছিল তাদের সঙ্গে।
মামী এসেছিল তবে আবার বাসায় চলেগেছেন বিভা তাকে পাঠিয়ে দিয়েছে কারন এখন বাসায় অনেক কাজ।
এখানে থাকলে এসব ঝামেলায় অসুস্থ হয়ে পরবেন।
বিভার খুব ভালোই কাটলো আজ দিনটা একেবারে সুন্দর একটা দিন।
_________________________________________
–” কিরে কেমন আছিস তুই?”
–‘ এইতো চলছে দিনকাল।”
–” তো কেমন চলছে ডাক্তারের সঙ্গে তোর দিনকাল?”
–‘ এমনভাবে বলছিস যেন ডাক্তারের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক আছে।”
—” না নেই, এই যে ডাক্তার গাড়ি করে বাড়ি দিয়ে যায়।
বাড়িতে চা খেয়ে যায়। গম্ভীর ডাক্তার আবার মাঝে মাঝে তোমারে একা পেলে দুই চারটা জোক্স মারে মানে রসিকতা করে এইগুলা কি রসবোধ প্রেমিকের লক্ষণ না?”
–” তুই একটু বেশি বুঝিস, কোথা থেকে কোথায় চলে যাস না বুঝতেই পারিনা তোদের মতিগতি।”
–” ডং করিস না? সব বুঝে ও এখন কিছুই বুঝতে পারিস না? মনেমনে যে তোমার ও কিছু আছে এটা মুখ ফুটে বলতে হবে না গো বান্ধবী! সব বুঝি বুঝলা!”
–” কচুঁ বুঝিস!”
–” যা কচুঁই বুঝি তোর মত বলদা গার্ডেন নই। আচ্ছা শুন আমরা সবাই মিলে ঘুরতে যাচ্ছি তুই যাবি?”
–” কোথায়?”
–” এমনি কক্সবাজার যাবো সবাই মিলে ভাবলাম তোকে ও বলে দেখি। কি বলিস তুই কি যাবি? গেলে বলেদিস আমি সব রেডি করে নিব।”
–” আচ্ছা দেখি, কি করা যায়।”
–” আচ্ছা শুন আরেকটা জিনিস আমার মাথায় এখন এসেছে বুঝলি? ”
–‘ কি?”
–” ডাক্তারকে বলে দেখবি? আমাদের সঙ্গে একসঙ্গে ঘুরতে যাবে নাহয়।”
—” তাকে কেন?”
–” এতে তার চালচলন সব দেখতে পারবি। সে সত্যিই মানুষ হিসেবে কেমন তাও বুঝতে পারবি।”
–” এটা অবশ্য ঠিক বলেছিস, কদিনই বা কথা হয়েছে। ”
–” হুম বলে দেখিস, ”
উর্মির সঙ্গে কথা বলে বিভা কিছুক্ষণ হাসলো মেয়েটার মাথায় এই ধরনের কুটিল বুদ্ধিগুলোই বেশি ঘুরে।
বিভা ফেসবুকে স্ক্রল করছিল আজকে সে ডে দিয়েছিল মিলির বাবুটার একটা ছবি আর সঙ্গে তার ও ছবি।
অনেকে লাভ রিয়েক্ট, কেয়ার রিয়েক্ট দিয়েছে সঙ্গে অনেকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। ডাঃফাইয়াজ ম্যাসেজ দিলেন খালামনি হয়েগেলেন, খালু হবে কে?”
–” খালুর চিন্তা বাদ দেন!”
–” কেন কেন?”
–” কারন, খালামনি হিসেবেই ভালো আছি খালু জুটাতে গেলে বিয়ে করতে হবে অতএব এইসব টপিক বন্ধ!”
–‘ আচ্ছা বন্ধ করলাম।”
বিভা ফাইয়াজের একটা স্টোরি দেখল যা তার আইডিতে আছে অনেক আগের। স্টোরিতে ছিল ফাইয়াজ একটা কঙ্কালকে জড়িয়ে ধরে ছবি তুলেছে। আর সেই ছবির ক্যাপসনে দিয়েছে আমার বন্ধু বুদ্ধু! মেডিক্যাল লাইফে আমি সিঙ্গেল ছিলাম না আমার সঙ্গে বদ্ধু ও ছিল।
বিভা সঙ্গে সঙ্গে নক দিল।
–” এটা আপনার বন্ধু?”
–” হ্যা,”
–” এই কঙ্কাল আপনার বন্ধু? আর সিঙ্গেল ছিলেন না মিঙ্গেল ছিলেন মেডিক্যাল লাইফে এর জন্য?”
–” ইয়েস, বদ্ধুর বডিটা একটা মেয়ের বডি। বিশ্বাস হয়না একবার আমার বাসায় আসবেন আমি আপনাকে বুঝিয়ে দেব সব।”
–” ওকে নিয়ে আপনি বসে বসে গল্প করতেন?”
–” অবশ্যই কেন নয়? আচ্ছা আপনাকে আমি একটা গল্প বলি অনেক দিন আগের কথা মানে আমি তখন সবে মেডিক্যালে চান্স পেয়েছিলাম। বুদ্ধুকে কিনে এনেছিলাম ওর বডি পার্টস নিয়ে গবেষণায় কাজে লাগানোর জন্য।
দিনরাত এক করে পড়তে হতো আমাকে। তো একদিন পড়তে পড়তে গল্প করছিলাম বুদ্ধুর সঙ্গে। সেদিন আমার ছোটচাচি বেড়াতে এসেছিলেন আমাদের বাসায় আর আমাকে দেখেছিলেন গল্প করতে। এরপর উনি ইতিহাস গড়েছিলেন সেদিন।
–“ওমা! ভাবী তোমার ছেলে পাগল হয়েগেছে, এই রাত বিরাতে কঙ্কালের সঙ্গে বসে বসে কথা বলছে। এ ছেলের মাথা খারাপ হয়েগেছে!”
আমি আর বদ্ধু কথা বলছিলাম নিজেদের মধ্যে এর মধ্যেই কোথা থেকে চাচিআম্মা এসে দেখলেন এই বিষয়টা!
আর চিৎকার করে ডাকতে লাগলেন মাকে সেদিন থেকে তাদের মতে আমি আদপাগল!
চলবে।