বিভাবতীর জীবন পর্বঃ১৬

0
2907

#বিভাবতীর_জীবন
#লেখিকাঃতামান্না
পর্বঃ১৬

আমি আর বদ্ধু কথা বলছিলাম নিজেদের মধ‍্যে এর মধ‍্যেই কোথা থেকে চাচিআম্মা এসে দেখলেন এই বিষয়টা!
আর চিৎকার করে ডাকতে লাগলেন মাকে সেদিন থেকে তাদের মতে আমি আধপাগল! একা একা কঙ্কালের সঙ্গে কথা বলি। আমি অস্বাভাবিক!

–” হা, হা, আসলেই ডাক্তার মশাই আপনি সত‍্যিই আদপাগল! বিভার আদপাগল বলার কারনে ফাইয়াজ হতাশ সুরে বলে উঠল –

–” হ‍্যা আমি তো আদপাগলই, পাগল হয়ে ঘুরতে হবে দুদিন পর। কেউ আমাকে সুস্থ আর স্বাভাবিক ভাবে না।”

–” আসলেই খুব দুঃখের ব‍্যাপার! যদি কেউ কাউকে সুস্থ স্বাভাবিক না ভাবে আর কি!”

–” আপনি আমাকে নিয়ে মজা করছেন?”

–” না একদম তা নয়,”

–” এটাই,”

–” আরে অত সিরিয়াস হচ্ছেন কেন? আমি তো দুষ্টুমি করছিলাম আপনার সঙ্গে। আচ্ছা আপনি কিন্তু বলেননি কেন আপনি এই কঙ্কালটির নাম বুদ্ধু দিয়েছেন?”

–” বুদ্ধু দেওয়ার প্রথম কারন – আমি এত এত কথা বলার পর ও চুপ করে শুনে যেত তাই বেচারীর নাম তাই দিলাম।”

–” ও মানে এর আসল কোন কারন নেই! যাইহোক কিভাবে বুঝলেন বডিটা মেয়ের?আর কি করে পেলেন?”

–” ফার্স্ট বডিটা আমি বলেছিলাম এটা দিয়ে গবেষণা করি এটা ঠিক নয় ম‍েডিক‍্যাল স্টাডিতে অবশ‍্যই এর একটা অবদান আছে। আমাদের পড়তে হলে মানব দেহের প্রায় প্রত‍্যেকটা পার্ট নিয়ে পড়তে হয়। এই যে – Skull, cranium, mandible,cervical vertebrae, thoracic vertebrae, ”

—” ডাক্তার সাহেব আমার কথা শুনন এত এত পার্টস বললে মাথানষ্ট হয়ে যাবে আমার।”

–” আরে শুনন, এতটা বিরক্ত হবেন না আর এত পার্টস বা এর ডিটেলস বলছি না যাস্ট কিছুটা আপনার বুঝার সুবিধার্থে বলছি।এগুলো হচ্ছে মাথার খুলির অংশ এগুলো পার্টে পার্টে খুলে আমাকে প্রতিদিন নিয়ে যেতে হতো। আর বুদ্ধুকে আমি একটা সিনিয়র ভাইয়ের থেকে কিনেছিলাম।
আর বুদ্ধু মারা গিয়েছে প্রায় বিশ বছর আগে। আর যতটুকু মনে হয় বুদ্ধু কোন বেওয়ারিশ বা এ জাতীয় কোন লাশ ছিল যার সৎকার করার কোন উপায় ছিল না”

—” আর শুনতে পারছিনা আমার গা টা ছমছম করছে। সত‍্যিই আমি পুরোই অবাক হয়েগেছি। ডাক্তার সাহেব আপনি অস্বাভাবিক !”

–” কেন?”

–” একটা মৃত মানুষের বডির সঙ্গে কি করে এত কথা বলতে পারেন? আমি তো মনে করেছিলাম প্লাস্টিক বডি কিন্তু এটা সত‍্যিই একটা মানুষের বডি? তাও এতটা সহজে কি করে পেলেন?”

–” এই দেশে প্লাস্টিকের বডির থেকে মানুষের বডির দাম সস্তা বুঝতে পেরেছেন মিস বিভাবতী? আর এত এত স্বাভাবিক মানুষের ভীড়ে দুয়েকজন অস্বাভাবিক মানুষ থাকতেই পারে মিস বিভাবতী! ”

–” হুম, আচ্ছা একটা কথা ছিল। যার জন‍্য ফোন করেছিলাম আপনাকে আমি।”

–‘ বলুন,”

–‘ আমি আর আমার বান্ধবী উর্মি মিলে কক্সবাজার বেড়াতে যাচ্ছি। যদিও অনেক আগে গিয়েছিলাম তারপর ও আবার যাচ্ছি। উর্মি বলেছিল আপনাকে জিঞ্জেস করতে আপনি যাবেন কিনা তার জন‍্য। আপনি ও কি আমাদের সঙ্গে যাবেন?”

–” কক্সবাজার গেলে আপনি খুশি হবেন? আপনি যদি বলেন তাহলে আমি অবশ‍্যই প্রস্তুত।”
বিভা একদম চুপকরে গেল কি উত্তর দিবে এই প্রশ্নের?
তবুও হেসে বলল –

–” ফাইয়াজ সাহেব আমাদের মধ‍্যে একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে। সেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক থেকে যদি বলি তাহলে বলবো আপনি আসলে আমি অবশ‍্যই খুশি হবো।
আর আপনি আসবেন ও আমাদের সঙ্গে আশা করি আমার কথাটা আপনি রাখবেন। ”

–” তাহলে তো ফেলে দেওয়া যাবে না,রাখতেই হবে। এ যে ফেলে দেওয়ার মত কথা নয় বিভাবতী বলেছে আর ডাক্তার শুনবে না? বিভাবতীর কথায় যে তীরের ফলা ন‍্যায় ছুড়লে বুকে বিধতে সময় লাগে না!”

–” খুব বেশি কথা বলেন ডাক্তার সাহেব!” বলেই বিভা চুপ করেগেল। অপর প্রান্ত থেকে শুনা যাচ্ছে ডাক্তার ফাইয়াজের প্রাণখোলা হাসি। ফাইয়াজ উচ্চ স্বরে হেসে যাচ্ছে। এই মানুষটার এত রুপ?
কিভাবে চলে সে? বাহিরে গম্ভীর ভিতরে এত সারল‍্য আর রসিক?
___________________________________

সকাল সকাল এক কাপ চা বানিয়ে ড‍্রয়িংরুমে বসলেন বিভার মা। পত্রিকায় তখন বিশেষ আর নতুন সব চমক প্রদ ঘটনা পড়ছিলেন বিভার বাবা। দেশের ঘটনা গুলো পড়তে পড়তে পুরো বিরক্ত তিনি। কিসব ঘটছে আজকাল
এখানে খুন ওখানে ধর্ষণ!
সহধর্মিনীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন –

–” কিসব হচ্ছে দেখেছো?”

–” হুম পরিস্থিতি একদম বেগতিক!”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি চোখের চশমা টা খুলে দেখলেন চা নিয়ে বসে আছেন তার স্ত্রী। চা দেখে হেসে বলে উঠলেন চা নিয়ে আসেছো দাও দাও বড্ডো চায়ের তেষ্টা পেয়েছে!
চায়ে চুমুক দিয়ে ভাবুক ভঙ্গিতে বলে উঠলেন –

–” পৃথিবীটা সত‍্যিই কেমন অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছে আপডেট হয়তো হচ্ছে সবকিছুর। কিন্তু মানুষের চিন্তাধারা আর আপডেট হচ্ছে না! কেন বলতো? কারন মানুষ আর আগের মত ব্রেইন খাটাচ্ছে না! বিবেক দিয়ে মানুষ কিছুই করছে না শুধু আপডেটই হচ্ছে চিন্তা বা চেতনা জিনিসটাকে কাজে লাগাচ্ছে না!”

বিভা এসে চুপটি করে বসে পরল বাবার পাশে। মশিউর সাহেব কথা বলতে বলতে মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে বলে উঠলেন –

–” কিছু বলবে?”

–” হুম, উর্মির বলেছিল কিছুদিনের জন‍্য কক্সবাজারে যাবে। আমাকেও সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চাইছে।
তাই ভাবলাম তোমাকে জানিয়ে দেখি। কি বলো কক্সবাজার যাবো?”

–” সঙ্গে আর কেউ যাচ্ছে? দেখো আমার তো কোন সমস‍্যা নেই,তুমি যথেষ্ট ম‍্যাচিউর তবে আমি ভয় করছি সমাজ নিয়ে! কি হচ্ছে দেখছো তো? সাবধানে যাওয়ার কোন ব‍্যবস্থা থাকলে যেতেই পারো, আমি তোমাকে কোন বাধা দিব না।”

—” তা নিয়ে চিন্তা করো না বাবা উর্মি আর ওর পরিবার থেকে ওর ভাইবোনরা যাচ্ছে। এইতো কয়েকদিন থাকবো।”

–” আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে যেতেই পারো। থাকার ব‍্যাবস্থা কোথায় করেছো? না করতে হবে? আমার বন্ধু রশীদকে তো চিনো? রশীদের নিজিস্ব রিসোর্ট আছে সেখানে থাকতে চাইলে ব‍্যাবস্থা করে দিতে পারি।
রশীদের রিসোর্টটা বেশ সেইফ তোমাদের জন‍্য। রশীদের রিসোর্টটা বেশ সুন্দর নতুন হোটেলে নিজেদের মত থাকতে হয়তো পারবে না কিন্তু রিসোর্টটা বেশ সুন্দর এবং একান্তে সবার সঙ্গে সময় কাটাতে পারবে।”

–” কবে যাবে কিছু ভেবেছিস? উর্মি তোকে বলেছে কবে যাবে?”

–” উর্মি বলেছে যাবে, তবে কবে বা কখন যাবে তা তো বলেনি। দেখছি আজ কথা বলবো।”

–” শপিং করতে ও তো হবে নাকি?”

–” হুম,”

–” তাহলে শপিং করার ব‍্যবস্থা করে নেও।”

বেশ কয়েকদিন পর ______

উর্মি আর বিভা একসঙ্গে বসেছে। উর্মির ভাই উমায়ের বসেছে একদম বাসের একদম সামনের সীটে। উমায়েরের পাশে বসেছে ফাইয়াজ। গাড়িতে তখন কিছুটা খুনশুটিতে মশগুল ছিল উর্মি আয বিভা। স্কুল থেকে কলেজ লাইফ একসঙ্গে কেটেছে তাদের। কত স্মৃতি একসঙ্গে কেটেছে তাদের।

ফাইয়া সামনের সীট থেকে এসে দাড়ালো তাদের সামনে এসে বলল –

—” আপনাদের কোন সমস‍্যা হচ্ছে না তো?”

–” না,”

–” আচ্ছা, কোন খাবার? মানে ধরুন কোন সমস‍্যা হচ্ছে নাতো?”
উর্মি এবার ও আগ বাড়িয়ে বলল না ভাইয়া।
ফাইয়াজ সেদিকে হেসে উত্তর দিল –

—” সমস‍্যা থাকাটা কোন ব‍্যাপার না,তবে সমস‍্যা সমাধান করা ফরজ! কি বলুন তো নতুন বউ আর নতুন জামাইয়ের কোন সমস‍্যাই ঠিক থাকেনা। যখন তখন অনেক সমস‍্যা থাকে।
উর্মি বিভার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বুঝিয়ে দিল ফাইয়াজ আসলে কি বুঝাতে চাইছে। বিভা লজ্জায় কিছুটা মাথা নিচু করে রইল। এই লোকটা মনে হচ্ছে মানুষের সামনেই প্রেমের পর্ব শুরু করে দিবে। পাশেই উর্মির বোন তাদের দিকে চেয়ে মিটিমিটি হেসে চলেছে।

চলবে।
গ্রামে এসেছে প্রায় তিনবছর পর। নেটওয়ার্ক বা এমবি একদমই ছিল না আজ এমবি কিনে আর ভিপিএন কানেক্টিং করে গল্প দিয়েছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here