বিলম্বিত_বাসর #পর্ব_১৫

#বিলম্বিত_বাসর
#পর্ব_১৫
#Saji_Afroz
.
.
.
মায়ের ডাকে তার রুমে এসে বসলো আয়ান।
ফাতেমা বেগম তার উদ্দেশ্যে বললেন-
লামিয়ার বাসায় কাল সকালেই যাবো আমরা। আকদের বিষয়ে কথা বলতে হবে। লামিয়াকে বল, কাল আমরা তাদের বাসায় যাচ্ছি।
-জ্বী।
.
কিছুটা সংকোচবোধ করেই ফাতেমা বেগম জিজ্ঞাসা করলেন-
লামিয়ার সাথে সুখে থাকবিতো?
-হঠাৎ এই প্রশ্ন?
-এমনিতেই। আচ্ছা যা, লামিয়াকে বিষয়টা বলে ঘুমিয়ে পড়। রাত হয়েছে।
.
.
.
-এতো রাইতে তুমি এহানে কি করো?
.
মোরশেদার ডাকে ঘোর কাটলো আদুরের। রান্নাঘরের পাশেই একটা বড় বারান্দা আছে। সেখানটাই পিড়ি পেতে আনমনে বসে আছে সে।
মোরশেদার প্রশ্নে ঘোর কাটলে জবাব দিলো-
কিছুনা খালা। কিছু বলবেন?
-লামিয়া মাইয়াডা কি তোমার মতন হইবো?
-আমার মতো কেমন?
-তোমার মতো লক্ষী।
-আমি লক্ষী?
-হো।
-লামিয়া আরো বেশি লক্ষী হবে। দেখেননি? কিভাবে আয়ানের জন্য ছুটে এসেছে লোকলজ্জা ভুলে?
-মাইয়াগো লজ্জাশরম থাকন ভালা। এই মাইয়ার যে নাই তা আমি ভালাই বুঝছি।
-খালা! আপনি একদম লামিয়ার পিছে লাগবেন না বললাম। মেয়েটা ভদ্র, ভালোও। সবচেয়ে বড় কথা সে আয়ানকে অনেক বেশিই ভালোবাসে। এটাতেই আমাদের খুশি হবার দরকার নয় কি?
-আমি এহন খুশি ফুশি হইবার পারতাছি না। বিয়ার পরেই নাহয় দেখমু।
.
মোরশেদার কথা শুনে হেসে উঠলো আদুরে।
ভ্রু জোড়া কুচকে মোরশেদা বললো-
পুকুরপাড়ের পাশেই এই বারান্দা। এতো রাইতে এহানে থাকা ঠিকনা। ঘরে যাও।
-কেনো? ভুতে ধরবে?
-এতো কথা কও কেন তুমি! নিজের ঘরে যাও দেহিনি।
.
পিড়ি ছেড়ে দাঁড়িয়ে আদুরে বললো –
হু যাচ্ছি।
.
.
.
আয়ানের মুখে আকদের কথা শুনে লামিয়া চিন্তিত স্বরে বললো-
বাবা মানবে নাকি আমি ঠিক বলতে পারছিনা।
-না মানার কি আছে! তার মেয়েকে তো আর ঘরে তুলে আনছিনা। সেটা আমি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পরেই আনবো৷
-তাহলে বিয়েটা তখন করলেই হয়।
-না হয়না৷ তোমাকে নিয়ে রিক্স নিতে চাইছিনা একটা দিনের জন্যও আর…
.
থেমে গেলো আয়ান।
লামিয়া উৎসুক কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো-
আর?
-বুঝছোনা?
-নাতো।
-আকদটা হলে তোমাকে কাছে পাবার লাইসেন্সও পেতাম।
-বিয়ের আগেই কাছা পাওয়া?
-আকদ মানেই বিয়ে পাগলী।
-তার মানে আকদ হলেই বাসর হয়ে যাবে?
-হুম!
.
দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে লামিয়া বললো-
খুব শখ তাইনা তোমার বাসর করার?
-অনেক।
-করাবো তোমাকে বাসর।
-মানে কি! বাসর হবেনা আমাকের আকদের পরেও?
-হবেতো, তবে হবে বিলম্বিত বাসর!
-হু দেখা যাবে। এমন লুক দিবোনা নিজেই তুমি বলবা, বাসর করো বাসর করো।
.
কথাটি শুনেই উচ্চশব্দে হেসে উঠলো লামিয়া। তার সাথে যোগ দিলো আয়ানও।
.
.
.
রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিশ্বরোড মোড়ে বিখ্যাত এক রেস্টুরেন্টে বসে আছে আবেশ ও আদুরে।
আজ সারাদিন তাদের অনেক ঘুরাঘুরি হলো।
চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে
শিবগঞ্জ গিয়েছে তারা। সেখান থেকে অটোতে করে কানসাট বাজারে। কানসাট বড় আমের বাজার ঘুরে দুজনে ভ্যানে চড়ে গেলো কানসাট জমিদারবাড়ি। বাড়িটি দূর থেকেই দেখতে হলো কারণ বাড়িটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
কিছুসময় সেখানে কাটিয়ে
একটা অটো ভ্যান রিজার্ভ ভাড়া করে ছোট সোনা মসজিদ গেলো দুজনে। খুব সুন্দর মসজিদের কারুকার্য। সেখান থেকে আবেশ তাকে নিয়ে গেলো তাহখানা আর পাশেই ছিলো তিনগম্বুজ মসজিদ।
এতো সব জায়গায় আবেশের সাথে ঘুরাঘুরি এই প্রথম করেছে আদুরে।
মনের মাঝে একটা আনন্দ কাজ করলেও বেশ ক্লান্তিও লাগছে তার।
আবেশ তার দিকে তাকিয়ে বললো-
কিছু খাবে চা এর সাথে?
.
হাতে থাকা মগে চুমুক দিলো আদুরে। কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললো-
না, ক্ষিদে নেইতো।
কানসাট থেকে যে আমগুলো নিয়ে দিয়েছো বাসায় গিয়ে খাবো বসে বসে।
-চাপাইনবাবগঞ্জ এর এতো আম খাও তাও আমের প্রতি এতো লোভ তোমার।
.
বলেই হেসে উঠলো আবেশ।
তার মুখের দিকে তাকিয়ে আদুরে বললো-
আচ্ছা আবেশ? আমরা এতোক্ষণ একসাথে ছিলাম। কিন্তু তুমি একটাবারের জন্যও আমার হাত ধরোনি। ইচ্ছে হয়না তোমার?
.
কিছু না ভেবেই আবেশ বললো-
সব ইচ্ছে তাড়াতাড়ি পূরণ করতে নেই।
.
আবেশের কথার মানে বুঝে উঠতে পারলোনা আদুরে। কিন্তু এখন যে তার নিজের ঘুমের খুব প্র‍য়োজন তা ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারলো সে।
চা টা শেষ করে আবেশের উদ্দেশ্যে বললো-
বাড়ি পৌছে দাও। ঘুম পাচ্ছে। তোমাকেও তো যেতে হবে আবার?
-হুম।
.
২বছর আগের কথা ভেবে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললো আদুরে।
প্রেমের আগে আবেশের এসব কর্মকান্ড বোঝা গেলেও বিয়ের পরে আবেশের এমন ব্যবহারের কারনটা বোধগম্য নয় আদুরের।
আবেশ যদি তাকে এই বিষয়ে কিছু জানাতে আগ্রহী না হয় তবে সেও জানতে চাইবেনা। এমন একটা প্রতিজ্ঞা করে চুপচাপ শুয়ে পড়লো সে আবেশের পাশে।
.
.
.
কইগো তোদের হলো?
.
ফাতেমা বেগমের ডাকে রুমের ভেতর থেকে শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে চেঁচিয়ে আদুরে বললো-
জ্বী মা। আরেকটু….
.
সকাল থেকে কোনো কথা হয়নি আদুরের আবেশের সাথে। এবার সে আবেশের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো-
এদিকে এসে আমার শাড়ির কুচিগুলো ঠিক করে দাও।
.
আবেশ ভেবেছে আদুরে তার উপর রেগে থাকবে। এমন স্বাভাবিক ব্যবহার সে আদুরের কাছে আশা করেনি।
আবেশের কাছে কোনো জবাব না পেয়ে আদুরে বললো-
রোমান্স করতে ডাকছিনা। কুচি ঠিক করতে ডাকছি।
.
মিনমিনে স্বরে আবেশ বললো-
আমি আসলে…
-পারোনা?
-হুম।
-শিখিয়ে দিবো। আসো।
.
বাধ্য ছেলের মতো আদুরের পাশে এসে শাড়ির কুচিতে হাত দিলো আবেশ।
মুচকি হেসে আদুরে বললো-
শাড়ির কুচি ঠিক করতে হলেও একটা জামাই চাই!
.
.
রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই আয়ানের দেখা পেলো আদুরে ও আবেশ।
দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে আদুরে বললো আয়ানের উদ্দেশ্যে –
আজ যেতে পারছোনা কি হয়েছে? খুব তাড়াতাড়ি বউ আনতে যাবে।
.
লাজুক হাসি দিলো আয়ান।
ফাতেমা বেগম তাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন-
চলো বের হওয়া যাক। উনারা নিশ্চয় অপেক্ষা করছেন আমাদের জন্য।
.
.
.
লামিয়ার বাবার কাছে ফাতেমা বেগম আকদের প্রস্তাব রাখতেই তিনি নীরব হয়ে গেলেন। হয়তোবা চিন্তায় পড়ে গেলেন তিনি!
ফাতেমা বেগম তার দিকে তাকিয়ে বললেন-
হঠাৎ আপনাকে এমন একটা প্রস্তাব দিয়ে চিন্তায় ফেলে দিলাম তাইনা? আপনি ভেবেই সিদ্ধান্ত জানান।
-ভাবাভাবির তো কিছু নেই।
.
লামিয়ার বাবার গম্ভীরমুখে কথাটি শুনে খানিকটা ঘাবড়ে গেলেন ফাতেমা বেগম। ছেলে এখনো ছাত্র বলে কি এই প্রস্তাবেও রাজী হবেন না তিনি!
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here