“স্যার,এদেরকে কী এখানেই রেখে যাবো,নাকী আমাদের ডেরায় নিয়ে যাবো??
সামনে থাকা চল্লিশ উর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তি কে প্রশ্ন করলেন লোকটি।
কালো কোর্ট,প্যান্ট পরিহিত ব্যক্তিটি তার দাড়ি,গোফ এর ভিতর থেকে পাতলা অধর হালকা প্রসারিত করে নির্মল হাসলেন।ভারী কন্ঠে বললেন—
“নাহ।এদের এখানেই যা করার করো।লাশ এমনভাবে গুম করবে যেনো কেউ এক টুকরোও খুজে না পায়।”
তার কথা শুনে সামনে হাত,পা বাধা অবস্থায় পড়ে থাকা পাঁচজন ব্যক্তির অন্তর কেঁপে উঠে।ক্রন্দনরত হয়ে আকুতি করতে থাকে।তাতে করে কোনো লাভ হয়নি।
হিউম্যান ট্রাফেকিং বর্তমান বিশ্বের এক উদীয়মান সমস্যা।২০১৩ সালের পর থেকে প্রতি বছর ৩০ শে জুলাই বিশ্ব মানব পাচার বিরোধী দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।এই দিনের মূল লক্ষ্য
পাচারে শিকার ব্যক্তিদের অধিকারগুলো প্রচার ও সুরক্ষা করা।তারপরও বেপরোয়া হারে এর পরিমান বেড়েই চলছে।বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ অনুসারে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমনকালে মোট ১০৬ জন পুরুষ,৩২ জন নারী ও১২ জন শিশু আটক করা হয়।
এছাড়াও রয়েছে আরও বিভিন্ন অপরাধ যেমন স্মাগলিং,ড্রাগ সাপ্লাইজ ইত্যাদি কাজে জড়িত ব্যক্তিদের কাছে এক ভয়ংকর নাম ” দ্যা ব্ল্যাক শ্যাডো”।যার অস্তিত্ব শুধু রাতের অন্ধকারেই বিচরণ করে।
আজও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাউকে বিয়ের প্রলোভন,কাউকে কাজের কথা,কাউকে আবার প্রেমের ফাঁদে ফেলে জন বিশেক মেয়েকে তুলে আনা হয়েছিলো।যাদের কে আজই সীমান্ত পার করে অবৈধভাবে বহির্বিশ্বে পাঠানো হবে।আর তার খবর পায় “দ্যা ব্ল্যাক শ্যাডো” নামের সেই সংস্থা।
সংস্থাটির হেড সেখানের একটি চেয়ারে বসে নির্দেশ করে যাচ্ছে।পাহাড় আর জঙ্গলে ঘেরা উচু জায়গায় একটা ঝুপড়ি।আর এখানেই এনে রাখা হয়েছে সেই মেয়েদের।তাদের সবার বয়সই ১৫ এর নিচে।
হেড তার লোকদের বললেন যেনো সব মেয়েদের তাদের ঠিকানা জিঙ্গেস করে বাসায় ফেরার ব্যবস্থা করে। আবছা অন্ধকার ঘরে একটাই লাইট।তার আলোতেই চিক চিক করছে সেই কালো কোর্ট,প্যান্ট পড়া ব্যক্তির চোখ।চেয়ারে বসে একটা টুলের উপর পা তুলে দুহাতের আঙ্গুল গুলো একে অপরের মাঝে ভাজ করে নিয়ে তাতে মাথা হেলান দিয়ে বসে আছে।কিছুক্ষন পর একটা লোক এসে তার কানের কাছে কিছু একটা বললেন।হেড উঠে দাড়ালেন।শান্ত পায়ে পাশের ঘরে গেলেন যেখানে মেয়েদের রাখা হয়েছিলো।ইতিমধ্যেই সব মেয়েদর সেখান থেকে বের করে নেওয়া হয়েছে।কিন্তু একটি মেয়ে এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে।বয়স এগারো কী বারো হবে।গায়ে একটা হাটু সমান ফ্রক।চুল গুলো এলোথেলো।ফর্সা চামড়া কেমন যেনো বিবর্ন হয়ে আছে।হেড সেখানে থাকা দুজন লোক কে যেতে বললেন।ধীর পায়ে মেয়েটির কাছে এগিয়ে গেলেন।হেড যতই এগিয়ে আসছে মেয়েটি ততই নিজেকে ঘুটিয়ে নিচ্ছে।জড়সড় হয়ে একটা ডিম্বাণুর মতো হয়ে রয়েছে।
হেড দেখতে পেলেন মেয়েটি পাশেই ফ্লোরে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ।তিনি বুঝতে পারলেন,মাতৃত্বের স্বাধ আস্বাদনের প্রথম স্তর অতিক্রম করছে সে।কিন্তু পরিস্থিতি তার বিপরীত।যতই সে দেখছে মেয়েটি ক্ষনকাল পর পর কেঁপে কেঁপে উঠছে।এক শীতল প্রশান্তিময় কন্ঠে মেয়েটি মাথা তুলে তাকায়।
“ভয় পেয়োনা।
এটা স্বাভাবিক।”
কেনো যেনো তার কোন কথাই মেয়েটির বোধগম্য হলো না।তিনি কাউকে কল করে মেয়েটির হাতে মোবাইল দিলেন আর বললেন মনোযোগ দিয়ে শুনতে।মোবাইলের অপর পাশের নারী কন্ঠ বেশ কিছু সময় তাকে নারী দেহের নির্ধারিত সময়ের পরিবর্তনের বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন।
হেড একটা রুমাল তার হাতে দিয়ে আপাতত ব্যবস্থা করতে বললেন।মেয়েটি হালকা পায়ে স্থির হয়ে সেখান থেকে উঠে ওয়াশরুমে যায়।এরই মধ্যে বাইরে প্রবল বর্ষন শুরু হয়।মুষলধারে বৃষ্টি পড়ায় ঝুপড়ির ছনের মধ্য দিয়ে পানি টুপ টুপ করে ভিতরে পড়ছে।বৃষ্টির সাথে সাথেই হিম শীতল হাওয়া বইতে থাকে।মেয়েটির কম্পন যেনো আরো বেড়ে যায়।হেড তার গায়ের কোর্ট খুলে মেয়েটির গায়ে জড়িয়ে দেয়।স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকে মেয়েটি।হঠাৎ বজ্রপাতের আওয়াজে ঝাপটে ধরে মেয়েটি হেড কে।আর কাপতে থাকে।সেই বৃষ্টিস্নাত রাত পার হয় এভাবেই।
সকালে ভোরের সূর্য উকি দিতেই তা এলোমেলো ভাবে ছুয়ে যায় মেয়েটিকে।সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছে হেড।মেয়টিকে শান্ত কন্ঠে হেড জিঙ্গেস করে—
“কি নাম তোমার??
মেয়েটি একটা ফাকা ঢোক গিলে।ফ্যাকাশে দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে দেখে তার সামনে থাকা মানুষকে।আপন না হয়েও যে আপনের চেয়ে বেশি করেছে তার জন্য।কম্পিত স্বরে বলে–
“প্রপ্রহহহরর।”
“প্রহর??
প্রহর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।একটা কাগজে কিছু একটা লিখে প্রহর এর হাতে দেয়।প্রহর এর সাথে থাকা মেয়েরা তাদের নিজেদের ঠিকানা বলায় ওদের সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।কিন্তু প্রহর কিছুতেই তার ঠিকানা বলে না।
প্রহর এর হাত ধরে ওকে বাইরে নিয়ে আসে হেড।এক নির্মল,শান্ত,শীতল হাওয়া মূহুর্ত্তেই ছুয়ে যায় তাদের।সারারাত বৃষ্টিতে ভিজে পরিবেশ সেজেছে নতুন রঙে।ঝুপড়ির আশেপাশের বুনো গাছগাছালি থেকে এখনো টপ টপ করে পড়ছে পানি।কর্দমাক্ত পিছলে যাওয়া সামনের পাহাড়ি রাস্তা।দু ধারে বড় বড় গামারি,সেগুন গাছ।হেড প্রহর কে নিগূঢ় ভাবে দেখলেন।এক অদ্ভুত মুগ্ধতা প্রহর এর ওই বাচ্চা বাচ্চা মুখে।কিছুক্ষন তাকিয়ে তিনি স্মিত হাসলেন।গলার স্বর হালকা সজীব করে বললেন—-
“প্রহর,দেখো
এই #বৃষ্টিস্নাত_ভোর এর সজীবতার মতো তোমার জীবনেরও নতুন ভোরের সূচনা হবে।”
হেড তার সাথের একজন কে বললেন প্রহর কে একটি নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌছে দিতে।আর প্রহর এর হাতে একটি কাগজ দিয়েছিলেন যাতে প্রহর এর কোনো সমস্যা না হয়।
লোকটির সাথে কিছুটা পথ এগিয়ে যেতেই হেড প্রহর কে পিছু ডাকলেন।
“প্রহরিনী!!!!
প্রহর এক শীতল দৃষ্টিতে ফিরে তাকালো।
হেড তার অধর প্রসারিত করে মৃদু হাসলেন আর নরম গলায় বললেন—-
“ভালো থেকো।”
প্রহর এর শরীরে এক প্রশান্তি ভর করলো।দুই বার মৃদুভাবে চোখের পাপড়ি বন্ধ করে আবার খুলে হেড কে দেখলেন।এক মায়া তার ওই লালচে বাদামী চোখে।প্রহর প্রখরভাবে তা দেখতে লাগলো।তার মনে হতে লাগলো এক বট বৃক্ষের ছায়ার আচ্ছাদন থেকে সে দূরে বহুদূরে চলে যাচ্ছে।
আদৌ কী এই মানুষটার সাথে তার আর কখনো দেখা হবে????
,
,
,
তিন বছর পর,,,,
কুহেলিকা আহমেদ।আধুনিক গৃহিনীদের মতোই চৌকস।তাই তো এক হাতে সামলে নেন পুরো পরিবার।বয়স পঁয়তাল্লিশ উর্ধ্ব হলেও চেহেরায় এখনো লাবন্যতার ছড়াছড়ি।এক মগ কফি বানিয়ে ট্রে তে করে তা তুলে দিলেন পাশে দাড়ানো প্রহর এর হাতে।মিষ্টি করে হালকা হেসে বললেন—
“যা,এইটা আজরাহান কে দিয়ে আয়।”
প্রহর খুট করে এক ঢোক গিলে নেয়।ঠোঁট দুটো উল্টিয়ে বলে—
“আমি!!!
“কেনো??
“তুমি জানো না,আমাকে দেখলেই ঝাড়ি মারে।”
কুহেলিকা পাশ ফিরে প্রহর এর দিকে তাকালেন।স্মিত হেসে বললেন–
“তুই কী কখনো ওকে ছেড়ে দিস???
প্রহর ফিক করে হেসে দেয়।কারন এই ঘরের অর্ধেক কর্তৃত্ব ওর হাতেই।শুধু আজরাহান কেই বশে আনতে পারে না।
প্রহর হালকা পায়ে সিড়ি ভেঙে উপরে আসে।আজরাহান এর ঘরের দরজা খোলাই ছিলো।দু হাত দিয়ে ট্রে ধরাতে মাথা দিয়ে হালকা ধাক্কা দেয় দরজায় প্রহর।নরম পায়ে ভিতরে এসে এদিক ওদিক তাকাতেই ওর চোখ পড়ে ব্যলকনি তে।সদ্য শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে আজরাহান।শরীরের নিম্নাংশে পড়েছে ব্ল্যাক কালারের ট্রাউজার।ভেজা চুলে টাওয়েল ঘষতে থাকে।প্রহর ধ্যানের মতো তাকিয়ে থাকে।আজরাহান এর ধবধবে শুভ্র পিঠে এখনো মুক্তোর দানার মতো পানি জমে আছে।তা দেখেই যেনো প্রহর মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।ওর মনে হচ্ছে যেনো শরতের কাশফুল তার নরম স্পর্শ ওর সমস্ত দেহে বুলিয়ে যাচ্ছে আর সে তা পরম আবেশে অনুভব করছে।এক সম্মোহিনী দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে আজরাহান কে।আজরাহান ঘাড় ঘুরাতেই ওকে দেখতে পায়।ভ্রু কুচকে ঠোঁটের কোন বাকায়।ব্যলকনি থেকে ঘরে পা বাড়ায়।আজরাহান যতই কাছে আসতে থাকে প্রহর বুক ধুকধুক করতে থাকে।আজরাহান এর শুভ্র বিশাল বক্ষদেশের ঠিক বামদিকে হৃদযন্ত্রের উপরের সেই কালো তিল যেনো এক মুহুর্তেই ঘায়েল করে প্রহর কে।নিঃশ্বাস আটকে যায় তার স্বরনালী তে যেনো এখনই সে মরে যাবে।উফ!!!
কাবার্ডের কাছে আসতেই আজরাহান থামে।মাথার টাওয়েল টা ঘাড়ের উপর রেখে কাবার্ড খুলে কাপড় বের করতে থাকে।চোখ বাকিয়ে প্রহর কে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু নাচিয়ে বিরক্তিসূচক কন্ঠে বলে—
“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো??
জীবনে ছেলে মানুষ দেখিস নি???
প্রহর ভেঙচি কাটে।ঠোঁট কামড়ে শান্ত স্বরে বলে–
“বয়েই গেছে আপনাকে দেখতে।”
আজরাহান কাপড় নামিয়ে বিছানায় রাখে।টাওয়েল টা মেলে দিয়ে আসে ব্যলকনিতে।ভিতরে এসে বিছানায় রাখা শার্ট নিয়ে তা গায়ে জড়ায় আর স্বাভাবিক কন্ঠে বলে—
“তাকিয়ে তো এভাবে আছিস যেনো গিলে খেয়ে নিবি!!
প্রহর শুকনো ঢোক গিলে।মুখে স্বীকার না করলেও আজরাহান যা বলেছে তা মিথ্যে নয়।এই লোকটাকে কেনো যেনো ওর স্টবেরি মনে হয়।আর ইচ্ছে হয় যে একবারেই গিলে নেই।
মুখে বিরক্তিভাব স্পষ্ট করে কপট রাগ দেখিয়ে বলে–
“আমার তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই যে আপনাকে দেখবো।ছোট মা বলেছে আপনাকে কফি দিতে তাই এসেছি।”
“টেবিলের উপর রাখ।”
“নাহ।”
আজরাহান ঘুরে তাকায়।জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে ভ্রূ কুঞ্চি করে গলার স্বর তীক্ষ্ণ করে বলে—
“কেনো??
“ছোট মা বলেছে কফি আপনার হাতে দিতে।”
আজরাহান বিব্রতবোধ করে।প্রহর এর কাছে এগিয়ে এসে ওর হাত থেকে ট্রে নিতে গেলে প্রহর এর হাতে হালকা স্পর্শ লাগতেই ও ট্রে ছেড়ে দেয়।ঝনাৎ করে কফির মগ নিচে পড়ে যায় আর গরম কফি আজরাহান এর হাতে।অবশ্য এতোক্ষনে অনেকটা ঠান্ডা হয়ে গেছে।
প্রহর শশব্যস্ত হয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে পানি নিয়ে আসে।আজরাহান তাতে হাত ডুবিয়ে দেয়।প্রহর কাদো কাদো হয়ে বলে–
“আমি ইচ্ছে করে করি নি রাহান ভাইয়া।”
আজরাহান চোখ খিচে প্রহর এর দিকে তাকায়।শক্ত কন্ঠে বলে–
“এখানে কান্নার কিছু হয়নি।”
পানি থেকে হাত উঠিয়ে আবার বলে–
“পানিটা ফেলে দিয়ে আয়।”
প্রহর পানি ফেলে এসে দেখে আজরাহান ভাঙা টুকরো গুলো ট্রে তে উঠিয়ে নিচ্ছে।প্রহর উঠাতে গেলেই আজরাহান ওর হাত চেপে বলে–
“হাত কেটে যাবে তোর।আমি করছি।”
প্রহর নিগূড়ভাবে পর্যবেক্ষন করে আজরাহান কে।আজরাহান ওর কাজের ফাকেই বলে—
“তোর বয়স কত রে??
প্রহর ঠোঁট দুটো বাকিয়ে বলে–
“পনেরো।”
আজরাহান মাথা উঠিয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে—
“আরেকটু বড় হলি না কেনো তুই!!!
প্রহর বিস্মিত হয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলে–
“মানে??
“কিছু না।আর এভাবে হুট হাট করে আমার ঘরে আসবি না।”
প্রহর উঠে দাড়ায়।তীক্ষ্ণ স্বরে ঠোঁটের কোন চেপে বলে–
“কেনো!!
আপনার উদাম হয়ে হাটতে সমস্যা হয়???
আজরাহান উঠে দাড়ায়।শান্ত ভঙিতে স্বাভাবিক হয়ে বলে–
“যা এখন এখান থেকে।আমার দেরি হচ্ছে।”
প্রহর আজরাহান এর হাত থেকে ট্রে নিয়ে হাটা ধরে।দরজার কাছে গিয়ে আবার থমকে দাড়ায়।পিছন ফিরে বলে—
“আপনি আমাকে আর কখনো এভাবে ছোবেন না।এরপর যদি এর চেয়ে বড় কিছু পড়ে যায় আমার কিন্তু কোনো দোষ নেই।”
আজরাহান ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকে ওর যাওয়ার পানে।
,
,
,
একটা কালো প্যান্ট আর অফ হোয়াইট শার্ট এ ফরমাল লুক জাস্ট নজরকাড়া লাগছে আজরাহান কে।নিজের বাইকে এসে বসতেই তাতে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসে পড়ে প্রহর।
খেমটা মেরে উঠে আজরাহান।
“ডিঙি নৌকা,নাম বলছি।নাম।”
প্রহর চোখ বড় বড় করে ঝাঝালো কন্ঠে বলে–
“সমস্যা কী আপনার??
” আজ থেকে বাবার সাথে যাবি তুই।”
প্রহর ভ্রু কুটি করে বলে–
“কেনো??
“আমি আজ থেকে তোকে নিয়ে যাবো না।”
“সারাদিনে তো এই একটাই কাজের কাজ করেন।আমাকে স্কুলে দিয়ে আসা।এখন সেইটাও করতে পারবেন না।কী করে খাবেন জীবনে???
“কী বললি তুই??
আজরাহান গলা উচিয়ে ওর মা কে ডাকতে ডাকতে বাড়ির ভিতরে আসে।প্রহর ও ওর পিছু পিছু এসে সানোয়ার আহমেদ এর পিছনে লুকোয়।
কুহেলিকা স্বাভাবিক কন্ঠে বলে–
“বাড়িতে ডাকাত পড়েনি আজরাহান।এভাবে চিৎকার করার মানে হয় না।”
“ডিঙি নৌকা, কে আজ থেকে বাবা নিয়ে যাবে।”
কুহলিকা বিরস কন্ঠে বলে—
“কেনো??
“ও আজকাল বড্ড বেশি কথা বলে।”
“তুমি কী কম বলো!!
একজন প্রফেসর এর আদৌ কী এই ধরনের আচরণ মানায়??
কুহেলিকার কথায় আজরাহান নীরাস হলেন।ব্যঙ্গাত্নক কন্ঠে বললেন–
“নিজের ছেলেকে বানালে ডোবা,আর পরের মেয়েকে বানালে বাড়ির শোভা!!!
কুহেলিকা স্মিত হাসলেন।আর বললেন–
“বাহ্!!চমৎকার।
তোমার তো কবি কবি ভাব মনে হচ্ছে আজরাহান।অবশ্য এইটা নতুন কিছু নয়।ছোটাবেলা থেকে একবার সিঙ্গার,একবার গিটারিস্ট,একবা আইনস্টাইন ও হতে চেয়েছিলে।শেষ পর্যন্ত হলে একজন কলেজ প্রফেসর।এখন আবার কবি হবে বলে মনে হচ্ছ।”
কুহেলিকা একবার আজরাহান কে আপাদমস্তক দেখলেন।হাসি হাসি মুখে বললেন—
“তাহলে এখন থেকে পাঞ্জাবী ভালো হবে তোমার জন্য।এক কাজ করো সামান এর কিছু পাঞ্জাবী আছে।ভেবেছিলাম কোনো অসহায়,বস্ত্রহীন মানুষকে দিয়ে দিবো।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেগুলো তোমার চেয়ে ভালো কেউ কাজে লাগাতে পারবে না।”
কুহেলিকার কথা শেষ হতেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠে প্রহর।
দাঁত কিড়মিড় করে আজরাহান।এই মেয়েটা যখন থেকে এসেছে এই ঘরে দুই পয়সারও কেউ দাম দেয় না আজরাহান কে।আর ওই ডিঙি নৌকা তো একদম ই না।
“মা,সত্যি করে বলোতো আমি কী সত্যিই তোমার ছেলে??
কুহলিকা স্বাভাবিক ভাবে গিয়ে কাউচে বসলেন।একবার আজরাহান এর দিকে তাকিয়ে বললেন–
“এইবার তো বুঝেছো,প্রহর তোমার থেকে কতোটা বুদ্ধিমতী।
ও নিশ্চয়ই এই ধরনের অহেতুক প্রশ্ন কখনো করতো না।”
আজরাহান কপালের ভাজ স্পষ্ট করে বলে–
“আমি বুঝিনা এতো সহানুভূতি কেনো তোমাদের ওর জন্য??
কুহেলিকা বেশ কিছুক্ষন চুপ করে আবার বললেন—
“একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে না পেড়ে হৈ হুল্লোড় করে বাড়ি মাতিয়ে রাখলে সেটা নিশ্চয়ই ভালো দেখায় না।”
প্রহর এর হাসি থামার নাম নেই।অনবরত মুক্তোর মতো ঝড়ছে।
“ডিঙি নৌকা কে তোমার বাচ্চা মনে হয়!!!
আজ বিয়ে দিলে কাল দুই বাচ্চার মা হবে।”
“তাহলে তো হলোই।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রহর কে বিয়ে দিয়ে বিদায় করো মা।”
সানায়ার কথায় রুষ্ট হয় আজরাহান।রাশভারী কন্ঠে বলে—
“ওর এখনো বিয়ের বয়স হয়নি।”
কুহেলিকা ওদের দুজনকে বললেন—
“ওর বিয়ে নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না।আমরা আছি তা ভাবার জন্য।তোমরা নিজেদের নিয়ে ভাবো।”
এই ঘরের সবচেয়ে শীতল রক্তের প্রানী সানোয়ার আহমেদ।তার সকাল সন্ধ্যার সকল কাজের একটাই কাজ তা হলো প্রহর কে সামনে বসিয়ে সেই “দ্যা ব্ল্যাক শ্যাডো” এর কাহিনি শোনা।অবসর প্রাপ্ত সানোয়ার বাড়িতেই বেশিরভাগ সময় কাটান।
আজরাহান বিরক্ত বোধ করলো।এই মেয়েটা ওর জীবনটা একদম দুধ ছাড়া চা বানিয়ে ছেড়েছে।বিরস মুখভঙ্গী করে আবার নিজের বাইকে গিয়ে বসে।পিছনে ভারী কিছু বুঝতে পেরে তাকিয়ে দেখে প্রহর আবার ও ওর পিছনে এসে বসেছে।
“আবার কেনো এলি??
“প্লিজ রাহান ভাইয়া স্কুলের জন্য দেরী হয়ে যাচ্ছে।”
আজরাহান চোখ গরম করে বলে—
“ঠিক হয়ে বস ডিঙি নৌকা।আর একটা কথা বলবি একদম ফেলে দেবো বাইক থেকে।”
প্রহর অনেক কষ্টে হজম করে আজরাহান এর কথা।কারণ স্কুলের জন্য লেট হয়ে যাচ্ছে।নাহলে ওর কথার দাঁত ভাঙা জবাব প্রহর এর জিহ্বার ডগায় অলওয়েজ রেডি ফর হার টার্গেট।
ভাবতে ভাবতে মুচকি হাসে প্রহর।
চলবে,,,
#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ১
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি
(বিঃদ্রঃ
নাহ।এইটা কোনো সিক্যুয়েল বা সিজন না।সম্পূর্ন নতুন প্লট।অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি এর সব চরিত্র আসবে।কিন্তু নতুন রুপে।হ্যাপি রিডিং ☺☺)