বৃষ্টিস্নাত ভোর পর্বঃ২

0
7188

#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ২
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

প্রহর কে স্কুল থেকে দূরে মোড়ের দিকে নামিয়ে দেয় আজরাহান।প্রহর এর স্কুলের নাম AB স্কুল এন্ড কলেজ যার প্রাথমিক,মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শাখার সন্নিবেশ।আজরাহান এই কলেজেরই উচ্চ মাধ্যমিক শাখারই একজন প্রফেসর।প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শাখার ক্লাস তেমন করা হয় না যদি না প্রক্সি ক্লাসের প্রয়োজন হয়।প্রহর কে নামিয়ে দিতেই ছোট বাচ্চাদের মতো কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ঘোরদৌড় কারন তার ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।

আজরাহান রোজ ওকে মোড়ে নামিয়ে দেয়।কারন ও চায় না কলেজের কেউ জানুক ওদের মধ্যে ঘরোয়া কোনো ব্যাপার আছে।প্রহর যেতেই বাইক দাড় করিয়ে পাশের চায়ের দোকানে বসে আজরাহান।ওর ক্লাস শুরু হতে দেরি আছে।চায়ের দোকানের বেঞ্চ এ বসে চা ওয়ালা মামা কে বলে এক কাপ রঙ চা দিতে।বিপরীতে চা ওয়ালা মামা এক মৃদু হাসি উপহার দিলো তাকে।হেসে হেসে বলল–

“কী মামা!!
অনেক দিন পড়ে আইলেন??

আজরাহান স্মিত হেসে বলল–

“এতোদিন কলেজ বন্ধ ছিলো,তাই এদিকে আর আসা হয়নি।”

“হা।তাই তো পোলাপান দের দেখা যাইতো না।”

আজরাহান খানিক ভেবে নিজের মোবাইল হাতে নেয়।স্ক্রল করতে থাকে।সামনে কিছু মানুষের আওয়াজ শুনে তাকাতেই দেখে দুটো ছ্যাচড়া টাইপের ছেলে একেক করে একেক দোকানে গিয়ে দোকানদারদের থেকে কিছু নিচ্ছে।আজরাহান সেদিকেই অক্ষি নিবদ্ধ রেখে কর্ণপাত করে চা ওয়ালা মামার দিকে আর বলল–

“এরা কারা মামা??

চা ওয়ালা কিছুটা বিরক্তিমাখা কন্ঠে বলল–

“আর বইলেন না মামা।এলাকায় নতুন পাতি মাস্তান।চান্দা তোলে।রোজ পঞ্চাশ ট্যাহা কইরা দেওন লাগে।”

আজরাহান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়।কপালের মাঝ বরাবর ভাজ করে বলল–

“এই যুগে চাঁদা।এখনো আছে নাকি!!

আজরাহান এর কথা শেষ হতে হতে ছেলে দুটো সেখানে এসে দাড়ায়।চিকন ড্যালড্যাল শরীর।গলার হাড় যেনো এখনই বের হয়ে আসবে।একজনের মুখের বামপাশে কাটা দাগ।অপর জনের মুখভর্তি দাড়ি।চা ওয়ালা ওদের দেখেই তার টুপলি থেকে পঞ্চাশ টাকা বের করে হাতে দিতে গেলে তাতে বাধা দেয় আজরাহান।ছেলে দুটোর অগ্নিদৃষ্টি।আজরাহান বেজায় শান্ত।পকেটে দু হাত দিয়ে ওদের সামনে নিরুত্তাপ হয়ে দাড়িয়ে আছে।আজরাহান স্বাভাবিক ভঙিতে বলল–

“আজ থেকে আর কেউ চাঁদা দিবেনা।আল্লাহ দুটো হাত দিয়েছে কাজ করে খাও।অন্যের ওপর জুলুম কেনো??

ওদের মধ্যে একজন চড়া গলায় বলল–

“এই কেরে তুই??

“এই দেশের সচেতন নাগরিক।তোদের মতো আবর্জনার পরিষ্কারক।
আজকের মতো যা।কাল থেকে আর যেনো না দেখি।”

ওরা দুজন একে অপরকে তাকিয়ে দেখে।একজন আজরাহান এর গায়ে হাত তুলতে গেলেই কেউ একজন তার হাত টেনে ধরে একটা চড় মারতেই ছিটকে নিচে পড়ে।ব্যক্তিটিকে দেখেই অধর প্রশ্বস্ত করে আজরাহান।এক চড়ে কাবু একজন।অন্যজনের কলার ধরে ব্যক্তিটি নরম গলায় বলল–

“আজ ফার্স্ট টাইম।তাই ছেড়ে দিলাম।আর কোনোদিন যদি ওর গায়ে হাত দেওয়ার কথা ভাবিস আর এই এলাকায় এইসব নাটক করতে দেখি সোজা উপরে যাবি।
যা এখান থেকে।”

ব্যক্তিটি ওর গলা ছেড়ে এক ঝাকি দেয়।ভয়ে কাচুমাচু ছেলে দুটো উঠেই দৌড়।
আগন্তুক ব্যক্তিটি এইবার আজরাহান এর দিকে ফিরে তাকায়।অধর প্রসারিত করে হালকা হেসে এক উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয় দুজন।একে অপরকে ছেড়ে দাড়াতেই উচ্ছলিত কন্ঠে আজরাহান বলল–

“তুই!!
এইসময়??

মারশিয়াদ তার অধরের কোনে হালকা হেসে বলল–

“হুম।আমি।কেনো??

“তোর না আরো একমাস পরে ফেরার কথা!!
কাজ শেষ ওখানের??

“নাহ।”

“তাহলে??

মারশিয়াদ ওর গাড়ি থেকে একটা কাগজ বের করে আনে।আর তা আজরাহান এর হাতে দেয়।আজরাহান চোখ বড় বড় করে তা দেখে।প্রজ্জ্বলিত চোখে বলল–

“ইটস আ বিগ নিউজ!!

“হ্যাঁ।গত সপ্তাহে ই বিল পাশ হয়েছে।এইবার দাদুর নামে হসপিটাল টা অবশেষে হচ্ছে।”

“কংগ্রেস !!
তা তুই ফিরলি কবে??জানা লি না যে??

“কাল।
আর সারপ্রাইজ ছিলো তাই।”

আজরাহান একটু অবাক হয়ে বলল–

“তুই জানলি কী করে আমি এখানে??

“তোর বাসায় গিয়েছিলাম।আনটি বলল তুই কলেজে।তাই এলাম।আর আসতেই পেলাম তোকে তোর চিরচেনা রূপে।
ঝামেলা না করলে কী তোর ভালো লাগে না???

“বাদ দে এইসব।
চা খাবি??বস।”

“না।কাজ আছে।
ডক্টর বাবুর কী খবর?কল করলাম মোবাইল অফ।”

“ও সিম চেঞ্জ করেছে।”

“ও আচ্ছা।এক কাজ কর আজ ওদের নিয়ে বাসায় আয়।অনেক দিন আড্ডা দেওয়া হয় না।”

“ওকে।”

মারশিয়াদ চোখ বাকিয়ে হাসে।আজরাহান ভ্রু ক্রটি করে বলল–

“হাসিস কেনো??

“তোর গার্লফ্রেন্ড এর কী খবর রে”‘

আজরাহান ব্যঙ্গাত্নক আওয়াজ করে বলল–

“কথা হয় না অনেকদিন।”

“বুঝলাম না,তোর মতো ছেলে কে ঘোল খাইয়ে দিলো!!

কথা শেষ হতেই মারশিয়াদ হো হো করে হেসে দেয়।আজরাহান নিরস স্বরে বলল–

“একবার ভাইয়ার বিয়ে টা হতে দে।ওকে ত এতো সহজে আমি ছাড়ছি না।”

মারশিয়াদ হাসতে হাসতে ওর কাধে হাত দিয়ে বলল–

“আচ্ছা।
এখন আমি যাই।রাতে আসিস ওদের নিয়ে।”

“হুম।”

মারশিয়াদ যাওয়ার পর বাইক চালিয়ে কলেজে আসে আজরাহান।নিচে বাইক পার্ক করে দোতালা সিড়ি বেয়ে উঠতেই সামনে পড়ে নুরাইসা।এ কলেজেরই দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।আজরাহান কে দেখেই বিব্রত হয়।ওকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে ও সামনে গিয়ে দাড়ায়।নুরাইসা একটু সড়ে এসে পা বাড়াতেই আজরাহান আবারও ওর সামনে এসে দাড়ায়।নুরাইসা অপ্রস্তুত হয় আজরাহান এর এহেন কাজে।সে আর নড়চড়া না করে স্থির হয়ে দাড়ায়।মাথাটা উচু করে আজরাহান এর দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলল–

“কী সমস্যা আপনার??

আজরাহান নিগূঢ়ভাবে তাকিয়ে থাকে।পকেটে দু হাত দিয়ে নুরাইসার দিকে হালকা ঝুকে বলে–

“কেমন আছেন,হোয়াইট মারমেইড??
এতোদিনে একটা খবরও নিলেন না??এটা কিন্তু ভারী অন্যায়!!!

নুরাইসা ঝাঝিয়ে উঠে।গলার স্বর উচু করে বলল–

“আপনি আমাকে এই নামে ডাকবেন না।”

“তো কী বলে ডাকবো!!
“জেলিফিস নাকি গিরগিটি??

“দেখেন,আপনি কিন্তু,,,

“আমি তো দেখতেই চাই।আপনি দিচ্ছেন কোথায়??

“সরেন এখান থেকে।যেতে দিন আমাকে।”

আজরাহান দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল–

“রাগলে কিন্তু আপনাকে হোয়াইট না একদম রেড মারমেইড লাগে!!

“দেখেন আমি যা করেছি তার জন্য আমি আপনাকে সরি বলেছি।তবুও কেনো এমন করছেন আপনি??

“আপনি সরি বলেছেন কিন্তু আমি তো মেনে নেই নি হোয়াইট মারমেইড।দোষ করবেন আবার সরি বলবেন।দিস ইজ নট ফেয়ার।”

“তাহলে কী করবেন আপনি??

“যা আপনি বলেছেন তা সত্য করবো।”

নুরাইসা রাগে লাল হয়ে যায়।ওর চোখে জল টলমল শুরু করে।সেদিন না হয় ভুল করে ও সবার সামনে এমন একটা কান্ড করে ফেলেছে।কিন্তু এই লোকটা তখন থেকে ওর পিছনে পড়ে আছে।যেখানে না সেখানেই শুরু হয়ে যায়।নুরাইসা তীক্ষ্ম কন্ঠে বলল–

“আপনি একটা অসহ্যকর শয়তান।”

আজরাহান গা দুলিয়ে হেসে উঠে।হাসি থামিয়ে নুরাইসার আরো কাছে এসে কানের কাছে হিসহিসিয়ে বলল–

“শয়তান হতে পারি,কিন্তু অসহ্যকর নয়।আমাকে সহ্য করার ক্ষমতা আপনার আছে,মারমেইড।”

নুরাইসা ক্ষীপ্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।ওর মনে হচ্ছে এই লোকটাকে এখনই দোতালা ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিতে।কিন্তু সে নিরুপায়।তার একটা না বুঝে করা ভুলের সাজা আজও এ লোকটা দিয়ে চলছে।কিন্তু এইবার নুরাইসা একে সত্যিই ধাক্কা মেরে সিড়ি দিয়ে হুরহুর করে নেমে যায়।আজরাহান ঠোঁটের কোন বাকিয়ে হাসতে থাকে।

“আসাসালামু আলাইকুম স্যার।”

পিওন এর কথায় আজরাহান ফিরে তাকায়।মৃদু হেসে বলল–

“কিছু বলবেন??

“প্রিন্সিপ্যাল স্যার আপনাকে যেতে বলেছে।”

আজরাহান চোখের ইশারা করে মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি দেয়।প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর রুমের সামনে আসতেই আজরাহান বলল–

“মে আই কাম ইন স্যার।”

ভিতরে বসা লোকটি ভারী কন্ঠে বললেন–

“ইয়েস মাই বয়।”

আজরাহান ভিতরে গিয়ে তাকে উষ্ণ সম্মোধন করলেন।নাবীন খান।বয়স পঞ্চাশের বেশি হলেও মুখে তার এখনো সেই অমায়িক ছাপ রয়েছে যাতে করে দেখলেই বোঝা যায় রক্ত টগবগা যুবক বয়সে কতোটা সুদর্শন ছিলেন তিনি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি রাজনীতিতেও সোচ্চার ছিলেন।এখনও তার প্রতাপ সেখানে লক্ষনীয়।আজরাহান এর চরিত্র আর ব্যবহার এ তিনি বরাবরই মুগ্ধ।তাই অনেকটা সমীহ করে তাকে।আজরাহান ও তাকে শিক্ষকের সেই আসনে বসিয়েছেন যেখান থেকে একজন শিক্ষক নিজেকে গর্বিত মনে করেন।মুখে হাসি হাসি ভাব নিয়ে বললেন–

“কী খবর ইয়্যাং ম্যান??
একদম ভুলেই গেলে।”

আজরাহান হালকা হেসে বলল–

“নো ওয়ে স্যার।তা কী করে সম্ভব!!
আপনি তো আমার জীবনের লক্ষ্যের একমাত্র পথ প্রদর্শক।”

নাবীন খান ঈষৎ শ্বাস নিলেন।আজরাহান এর কথায় তিধি অদ্ভুত তৃপ্ততা অনুভব করলেন।আর বললেন–

“তাহলে এই বন্ধের মধ্যে একবারও বাসায় এলে না কেনো??

“বিয়ের আগেই আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে সময় অসময়ে যাওয়া টা বেমানান মনে হয়।”

“কথাটা ভুল বলো নি।
তা তোমার ইয়্যাং স্টার ভাই কী আজ আসবেন??

“নাহ।ও শহরের বাইরে।আজ সন্ধ্যায় ফিরবে।”

“দ্যাটস গুড।”

নাবীন খান তার টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা আর্টিকেল দিলেন আজরাহান কে।আজরাহান তা ভালো করে দেখলো।ইশারায় সম্মতি জানায় নবীন খান কে।

“ডোন্ট ওয়ারী স্যার।উই আর অলওয়েজ উইথ ইউ।”

“আই নো।
এই জন্যই আমি নিশ্চিন্ত।বিয়েটা হলেই কাজ টা শুরু করতে হবে।”

“ওকে স্যার।
আমার ক্লাস আছে।আসি।”

“ওকে,মাই বয়।আই এম ওয়েটিং ফর দ্যা গুড নিউজ।”

“শিউর স্যার।”
,
,
,
বাইক দাড় করিয়ে দেয়াল এ হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে আজরাহান।একটু পর পর শার্টের হাতা উঠিয়ে ঘড়ি দেখছে।পথিমধ্যেই হাপাতে হাপাতে দৌড়ে আসে প্রহর।আজরাহান ঠোঁট চেপে বলল–

“এতো দেরি করলি কেনো ডিঙি নৌকা??

প্রহর বড় বড় শ্বাস টেনে বলল—

“কোথায় দেরি করলাম!!
ছুটি হতেই দৌড়ে এলাম।”

“আচ্ছা।ওঠ বাইকে।”

“নাহ।”

“কেনো??

“খিদে পেয়েছে আমার।আমি খাবো তারপর বাড়ি যাবো।”

“তুই কী রাক্ষস।বাসায় গেলেই তো খাবি।এখন আবার কিসের খাওয়া!!!

“বললাম তো খিদে পেয়েছে।আপনি গেলে চলেন না হলে দাড়ান।আমি খেয়ে আসি।”

“টাকা কোথায় পেলি??

“ছোট আব্বু দিয়েছে।”

অগত্যা আজরাহান ওকে নিয়ে একটা ছোট ফাস্টফুড এর দোকানে বসে।কিছুক্ষন বসতেই প্রহর হাত দিয়ে টেবিলে আওয়াজ করতে থাকে।আজরাহান বিরক্ত হয়ে বলল—

“এই তুই কী ছোট!!
বাচ্চাদের মতো এমন করছিস কেনো??

“আমার কী দোষ।হাত নিশপিশ করছে।”

প্রহর একটু ঘুড়ে তাকিয়ে দেখে লাল টি শার্ট আর ক্যাপ পড়া দুটো ছেলে অন্য একটা টেবিলে খাবার দিয়ে যাচ্ছে।হালকা উচু গলায় ডেকে প্রহর বলল–

“এই যে ভাইয়া,,,,

বলে হাত দিয়ে ইশারা করে ওকে কাছে ডাকে।ছেলেটি ওর পাশে এসে আন্তরিকতার সাথে বলল–

“কী খাবেন মিস??

প্রহর মাথা নাড়িয়ে বলল—

“মিস নয় আপু বলেন।”

আজরাহান অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে ভাবে এই মেয়ের কোনো ভয় নেই।চেনা-অচেনা,জানা -অজানা, ছোট- বড় কারো সাথে কথা বলতে দ্বিতীয়বার ভাবে না।মনে আছে না সংশয় না কোনো দ্বিধা!!

প্রহর বলতে থাকে–

“দুটো চিকেন ফ্রাই,দুটো বার্গার আর দুটো কোল্ড ড্রিংস।”

আজরাহান চোখ গোল গোল করে বলল–

“এই তুই কী রাক্ষস??
এতো কিছু কেনো??

প্রহর শান্তভাবে বলল–

“কেনো!!
আপনি খাবেন না।ও আচ্ছা।”

প্রহর আবার সার্ভিস বয় এর দিকে তাকিয়ে বলল–

“ভাইয়া,আপনি তাহলে আমি যা অর্ডার করেছি তা সব একপিস করে নিয়ে আসেন।”

“একপিস আনবে কেনো!!
আমি খাবো না??

প্রহর রাগাম্বিত কন্ঠে বলল–

“রাহান ভাইয়া,আপনি কী দুই মুখো সাপ??
এক মুখে কতো কথা বলেন??

সার্ভিস বয় এক গাল হেসে বলল–

“ভাইয়া,আপনার বোন কিন্তু অনেক বুদ্ধিমতী।”

আজরাহান কপাল ভাজ করে উত্তেজিত কন্ঠে বলল–

“এই কে বলেছে ও আমার বোন??

ছেলেটি নীরস কন্ঠে বলল—

“এই যে আপনাকে ভাইয়া বলল!!

আজরাহান আরেকটু গলা চওড়া করে ভ্রু কুঞ্চি করে বলল—

“ভাইয়া বললে কী বোন হয় নাকি!!
বউ হয় আমার।যা এখান থেকে।”

ছেলেটি মিটি মিটি হাসতে থাকে।

“আপনি আমাকে বউ বললেন কেনো??

“তোর মতো ডিঙি নৌকা কে আমি কেনো বিয়ে করবো??

“ইশশশ!!
আমি মনে হয় আপনার মতো বজরা কে বিয়ে করবো!!!

আজরাহান আর কথা বাড়ায় না।এই মেয়ের সাথে সে পারবে না।
সার্ভিস বয় ওকে খাবার দিয়ে যায় আর ঠোঁট চেপে হাসি আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে যা আজরাহান এর দৃষ্টি অগোচর হয় না।
প্রহর নিজ মনে খেতে থাকে।আজরাহান নিস্পলকভাবে ওকে দেখতে থাকে। কী মায়া ওর ওই মুখে তা ও জানে না।তিন বছর আগে যখন ওদের বাড়িতে প্রহর আসে একদম বিমর্ষ,বিধ্বস্ত ছিলো।হাটু সমান একটা ফ্রক পড়া।যার অদ্যোপ্রান্ত এক বাচ্চা পুতুল যেনো।ওর হাতেই ছিলো একটা চিঠি যাতে ওকে দেখে শুনে রাখার নির্দেশ দেওয়া ছিলো।আজরাহান বুঝতে পারে না ” দ্যা ব্ল্যাক শ্যাডো” ওদেরকেই কেনো বেছে নিলো প্রহর এর দেখা শোনার জন্য।হা,এটাও ঠিক যে সানোয়ার আহমেদ ওই অদৃশ্য মানবের অনেক বড় ফ্যান।শুধুমাত্র তাই বলে!!!!!!

প্রহর এর নিষ্পাপ চেহারা ওর ব্যবহার ওর আদুরে কাজ ওর পাগলামো ধীরে ধীরে বাড়ির সবাইর মন কেড়ে নেয়।সকলের শান্তচিত্তের এক অশান্ত পায়রা সে।ভালোবাসার কুড়ে ঘরের এক জ্বলন্ত প্রদীপ শিখা।

কিন্তু আজরাহান এর জন্য সেই ভালোবাসার সংজ্ঞা একটু আলাদা।যা সে নিজেও জানে না।এক অপরিমেয়,অবর্ণনীয়,অবাঞ্চিত, অপ্রত্যাশিত,অপরিণত ভালোবাসা না কি ভালোলাগা যা ব্যাখ্যাতীত। যার উত্তর সে খুজে বেড়ায় তার তরুন সত্ত্বার সেই গভীরে লুকানো হৃদয়ের মনিকোঠায়।আজরাহান এর ভাবনার ছেদ পড়ে ওর মোবাইল এর রিংটোন এ।রিসিভ করে ওপাশের ব্যক্তিটি কে জানায় মারশিয়াদ এর আসার খবর।আর এতেই চকচক করে উঠে প্রহর এর চোখ মুখ।আজরাহান মোবাইল রাখতেই উচ্ছসিত কন্ঠে প্রহর বলল–

“জান ভাইয়া এসেছে??

আজরাহান নাকের ডগা ফুলিয়ে বলল–

“তাতে তোর কী??

“আরে আমার জন্য গিফ্ট আনবে তাই।দেখলেন না গতবার আমার জন্য টেডি নিয়ে এসেছিলো।”

“এই, তুই এতো ছ্যাঁচড়া কেনো রে??

“ছ্যাঁচড়ামির কী দেখলেন!!
কেউ গিফ্ট দিলে নিতে হয়।মানুষ যাকে ভালোবাসে তাকে গিফ্ট দেয়।আর জান ভাইয়া তো আমাকে ভালো,,,,

প্রহর এর কথা শেষ হওয়ার আগেই আজরাহান চেয়ার থেকে উঠে ওর নরম গাল দুটো চেপে ধরে বলল–

“কীসের ভালোবাসা রে!!!
আর একবার বললে খবর আছে।”

আজরাহান ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।আর প্রহর বলল —

“আমার বার্গার!!!

“কোনো দরকার নেই তোর বার্গার খাওয়ার।”

আজরাহান তটস্থ পায়ে গিয়ে কাউন্টারে বিল পে করে প্রহর কে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।
প্রহর ওর হাত ছাড়িয়ে ঝাকি মেরে বলল–

“এমন করছেন কেনো??

“আর একবার যদি ওর কথা বলিস একদম মুখে স্ট্যাপলার মেরে দিবো।”

“ইশশশ!!
আমি মনে হয় চুপ করে থাকবো।আপনার শরীরে বিচুটি পাতা লাগিয়ে দিবো।”

আজরাহান দাঁত,মুখে খিচে থাকে।এই মেয়েকে কন্ট্রোল করা বড্ড কষ্ট হবে।কিন্তু,যে করেই হোক ওকে এই ক্ষমতা অর্জন করতেই হবে।যে কোনো কিছুর মূল্যে।

চলবে,,,

(বিঃদ্রঃ
গল্প কী ভালো লাগে না😓😓???
কমেন্টস করে জানান🙂🙂)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here