#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ১৩
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি
সাতদিন ধরে হসপিটাল এর শুভ্র বিছানায় শুয়ে আছে মারশিয়াদ।সেদিন রাতে গাড়ির সামনে থেকে ইনশিরাহ কে সরিয়ে নিজেও সরতে চেয়েছিলো মারশিয়াদ।কিন্তু তার আগেই গাড়ির সাথে বাম পায়ে পায়ে ধাক্কা লেগে পড়ে যায় রাস্তার পাশেই।সেখানে একটা ইটের কোনার অংশ গেথে যায় মারশিয়াদ এর মাথার পিছনের অংশে।অনেক ব্লিডিং হয়।ভয়ে আড়ষ্ট ইনশিরাহ কল করে শিহরণ করে।
সার্জারির প্রয়োজন হয় মারশিয়াদ এর।এখন অনেকটা সুস্থ।বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে।শিহরণ তার পাশেই একটা চেয়ারে বসা।ইনশিরাহ দেয়াল ঘেষে একটা কাউচে বসা।তীক্ষ্ম দৃষ্টি তার মারশিয়াদ এর দিকে।সেখান থেকে উঠে এসে তপ্ত কন্ঠে বলল–
“কি দরকার ছিলো এইসব করার তোমার!!!
যদি কিছু হয়ে যেতো তোমার!!!
“তুমি আছো তো।কিছু কি হতে দিতে আমার!!
যে রক্তের পরিচয় তুমি মানো না আজ সেই রক্ত দিয়ে আমাকে বাঁচালে।”
ইনশিরাহ তাচ্ছিল্যের সাথে বলল—
“হুম।ঠিকই বলেছো।এখন তোমার বিশুদ্ধ রক্তের সাথে আমার দূষিত রক্ত মিশে গেছে।এখন চাইলেও তার পরিশুদ্ধতা তুমি করতে পারবে না।”
মারশিয়ার এক দম ছেড়ে নীরাস ভঙিতে বলল—
“আমি কখনো তোমাকে তেমন ভাবি নি।আমি তোমাকে আপনের চেয়েও আপন ভেবেছি।”
ইনশিরাহ প্রদৃপ্ত কন্ঠে বলল—
“চুপ করো তুমি।আর কখনো আসবে না তুমি আমার সামনে।আই হেট ইউ।আই হেট ইউ অল অফ ইউ।”
ইনশিরাহ ত্রস্ত পায়ে প্রস্থান করে সেখান থেকে।মারশিয়াদ এর বুক চিরে বেরিয়ে আসে এক দীর্ঘশ্বাস।ওর বাংলাদেশে থাকার একমাত্র কারণ ইনশিরাহ।ও কোনো মতেই ওকে একা ছাড়তে চায় না।লোক লাগিয়ে রেখেছে ওর পিছনে।কোথায় যায়,কী করে ইত্যাদি ইত্যাদি।
শিহরণ হালকা কন্ঠে বলল–
“তোদের মধ্যে এই স্বত:স্ফূর্ত যুদ্ধ কবে থামবে??
“যেদিন শিরা মেনে নিবে আমাকে।”
“আমার মনে হয় না।”
“নাহ।ও উপরে যতটা কঠোর ভিতরে তার চেয়ে দ্বিগুন নরম।মেয়ে মানুষ মোমের মতো।বুঝলি!!
এখন বল আমার ডিসচার্জ কবে হবে??
“আর দু একটা দিন রেস্ট নে।আমি দেখছি।”
“শিরার এর দিকে খেয়াল রাখিস।যতক্ষন আমি এখানে।”
“হুম।”
“ওই গাধা দুইটা কোথায়??
নিশ্চয়ই এ কয়েকদিন ধরে বাসায় যায় নি??
“হ্যাঁ।ইনশিরাহ এর সাথে এখানেই ছিলো।একটু আগেই বিদায় করলাম।”
“কপাল গুনে বন্ধু পেয়েছি।”
মারশিয়াদ হালকা হাসে।নির্লিপ্ত হাসি।
,
,
,
আশফিক কে নিয়েই ঘরে ফিরে আজরাহান।ড্রয়িং রুমে চোখ পড়তেই জ্বলে উঠে আজরাহান।ছেলেপক্ষ এসেছে প্রহর কে দেখতে।আজরাহান লম্বা কয়েকটা পা ফেলে ছেলেটার সামনে যায়।ছেলে আর ওর মা এসেছে প্রহর কে দেখতে।উত্তেজিত কন্ঠে আজরাহান বলল—
“কী হচ্ছে এখানে এইসব??কে আপনি??
কুহেলিকা এই ভয়টাই পাচ্ছিলো।তিনি চেয়েছিলেন আজরাহান আসার আগেই যেনো সব কিছু মিটে যায়। কুহেলিকা দাড়িয়ে ধীর কন্ঠে বলল–
“তুমি তোমার ঘরে যাও।এখানে তোমার কোনো কাজ নেই।”
আজরাহান ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে।সেন্টার টেবিলে থাকা ফ্লাওয়ার ভাসটা নিয়ে ধড়াস করে ফেলে।ঝনঝন করে ভেঙে পড়ে সেইটা।ধুম করে ছেলেটার পোলো শার্ট এর কলার চেপে বলে–
“মেয়ে পাস না!!
বের হ বাড়ি থেকে।আর কোনোদিন যদি এই বাড়ির দুই কিলোমিটার এর আগেপাছে দেখি তাহলে এই যে চশমা লাগিয়ে দিন দুনিয়া দেখিস তখন এইটা দিয়েও কাজ হবে না।চোখ দুটি উঠিয়ে নিবো তোর।”
ছেলেটার গলা ধরে এক ধাক্কা মেরে বলল–
“ভাগ এখান থেকে।”
ছেলেটার মা ভয় পেয়ে যান আর শাসিয়ে যান কুহেলিকা কে।
তারা চলে যেতেই কুহেলিকা ঝাঝিয়ে উঠেন।আর বলল—
“এইসব তুমি কী শুরু করলে??
তোমার অসভ্যতা দিন দিন বেড়েই চলছে।”
“আমি তো জন্ম থেকেই অসভ্য।আর এইটাই তোমার জীবনের সবচেয় জঘন্য সত্য।”
“আজরাহান!!
আজরাহান কোনো প্রতিত্ত্যুর করে না।ঘাড় ঘুরাতেই দেখে প্রহর শ্যাওলা রঙের একটা থ্রি পিচ পড়ে মাথায় ঘোমটা টেনে দাড়িয়ে আছে।আজরাহান তড়িৎ গতিতে গিয়ে ওর হাত টেনে ওকে নিয়ে প্রহর এর ঘরে চলে যায়।কুহেলিকা পা বাড়াতেই শান্ত কন্ঠে তাকে থামতে বললেন সানোয়ার আহমেদ।স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন–
“সময় দাও ওকে।”
কুহেলিকা সন্দিহান কন্ঠে বলল—
“আপনি কী বলছেন আপনি জানেন!!
আজরাহান যদি এখন কিছু করে বসে??
আশফিক নরম গলায় কুহেলিকার কথার পিঠে বলল–
“আজরাহান এতোটা নিচে কখন ই নামবে না।ট্রাস্ট হিম।”
প্রহর কে ঘরে এনে দরজা আটকে দেয় আজরাহান।আক্রোশে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে প্রহর কে।চোখ মুখ ভয়ে কুচকে উঠে প্রহর এর।ছলছল করতে থাকে চোখ।আজরাহান ওর মুখ ডুবিয়ে দেয় প্রহর এর গলায়।শিরশির করে উঠে প্রহর এর ভেতরকার সত্ত্বা।এক হাতে আজরাহান এর বুকের কাছে আর অন্য হাতে ওর ঘাড়ের কাছের শার্ট খামছে ধরে।আজরাহান দগ্ধ কন্ঠে বলল—-
“কেনো ছেড়ে যেতে চাস তুই আমাকে??
তুই ভাবলি কী করে তোকে আমি যেতে দিবো এই বাড়ি ছেড়ে!!
প্রহর কম্পনরত কন্ঠে বলল—
“রাহান ভাইয়া!!
প্রহর এর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে শীতল অশ্রু।আজরাহান ওর ঠোঁট দিয়ে তা শুষে নেয়।আর বলল—
“আমি তোকে কোথায় যেতে দিবো না।তোর মন,শরীর,সত্ত্বা সবকিছুর উপর শুধু আমার অধিকার।আমাকে বিয়ে করবি না,তাহলে সেখানে অন্য পুরুষের কথা ভাবলি কী করে তুই!!!
শেষের কথা গুলো বেশ জোরেই বলে আজরাহান।কেঁপে উঠে প্রহর।প্রহর কে ছেড়ে দাড়ায় আজরাহান।ঝরঝর করে ঝরছে প্রহর এর অশ্রুবারি।
আজরাহান এর শিরা উপশিরায় চলছে হিংস্রতা যেনো এখনই সব শেষ করে দিবে।ফেপে উঠেছে মস্তিষ্কের দুই পাশের রগ।বুকের বাম পাশের যন্ত্র টা বেপোরোয়া ভাবে কম্পিত হচ্ছে।নিজের দু হাতে চুল টেনে ধরে আজরাহান।দু হাত কোমড়ে কিছুক্ষন রেখে নামিয়ে নেয়।দ্যুতি বিচ্ছুরিত চোখে প্রহর এর দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল—
“কেনো বুঝিস না তুই আমার ভালোবাসা!!!কেনো বুঝিস না তুই যে আমি এক মুহুর্তও বাচবো না তোকে ছাড়া।আর কী করে বোঝাবো তোকে আমি??
হু হু করে উঠে প্রহর।নির্বিকার ভাবে বলল–
“রাহান ভাইয়া!!!
আজরাহান আবারও ক্ষীপ্র হয়ে উঠে।দু হাতে প্রহর এর গাল চেপে ধরে বলল—-
” কেনো,এতো কিসের জ্বালা তোর??
শরীরের জ্বালা উঠেছে!!আমাকে বলতি।নিভিয়ে দিতাম তোর সব জ্বালা।”
আজরাহান নিজের অধর চেপে ধরে প্রহর এর কপোলের(গাল)এর সাথে।হিসহিসিয়ে আবার বলল–
“আজকের পর যদি আমাকে ছাড়া অন্য কোনো ছেলের কথা ভাবিস তাহলে তুই ভাবতেও পারবি না আমি তোর সাথে কী করব!!
তোর এই পাথরের মনে ভালোবাসার ফুল আমার নামেরই ফুটবে।”
আজরাহান দরজা খুলে চলে যায়।দেয়াল ঘেষে নিচে বসে পড়ে প্রহর।দু হাটু তে মাথা ঘুজে ঝড়াতে থাকে শ্রাবনের ধারা।
আজরাহান বাইরে এলে আরেক দফা তেতে উঠে কুহেলিকা।বিক্ষিপ্ত কন্ঠে বলল–
“কি করেছিস তুই ওর সাথে??
“রেপ করি নি।”
“আজরাহান!!
“অনেক হয়েছে মা।কি ভেবেছো তুমি!!
তুমি ওর বিয়ে দিবে আর আমি চুপ করে থাকবো।ভুল ভাবলে মা।
আজকের পর যদি আর কোনো ছেলে এই বাড়িতে প্রহর এর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে সে কিন্তু আর জীবন নিয়ে ফিরে যেতে পারবে না।আর তোমাকেও মানুষকে বলে বেড়াতে হবে তোমার শুধু এক ছেলে আর এক মেয়ে।মাইন্ড ইট।”
সানোয়ার আহমেদ বেজায় শান্ত।তার শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শীতল অনুভুতি।তিনি তার ছেলেকে চিনেন।কিন্তু তিনি নিরুপায়।আজরাহান কে কিছু বলার তার নেই।কারণ তিনি ভালো করেই জানেন আজরাহান কতোটা পজেসড প্রহর এর প্রতি।আর বজ্রকঠিন রাগ যেকোনো সময় কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে।
আশফিক বুঝতে পারে সিচুয়েশন কন্ট্রোলের বাইরে চলে যাচ্ছে।তাই জোর করে আজরাহান কে নিয়ে আবারও বাইরে চলে যায়।সানোয়ার আহমেদ নরম পা ফেলে নিজের ঘরে চলে যায়।সানায়া তার নিজের ঘরে পা বাড়ায়।সে জানতো এমন কিছুই হবে।কারণ খবরটা সেই ই দিয়েছে আজরাহান কে।
কুহেলিকা স্থবির হয়ে দাড়িয়ে আছে।আজরাহান যেমন ধীর গতির কচ্ছপের মতো শান্ত ঠিক তেমন ক্ষীপ্র গতির বাঘের মতোই হিংস্র।ছোটবেলা থেকে যা চেয়েছে যে কোন কৌশলে তা আদায় করে নিয়েছে।হোক তা বুদ্ধির জোর বা শক্তির।
কুহেলিকা সেদিন প্রহর এর ঘরে ওদের দুজনকে একসাথে দেখতে পায়।আর আজরাহান ওর জন্য কতোটা উন্মাদ তা এই বাড়ির কারো আড়াল নয়।প্রহর এর সাথে আজরাহান এর সম্পর্কও অনেক গভীর তা তিনি জানেন।কিন্তু প্রহর কখনো তাকে বলে নি যে আজরাহান ওর সাথে কখনো খারাপ কিছু করেছে।
প্রহর কে ডেকে বিয়ের কথা বলতেই সাফ মানা করে ওর পক্ষে কিছুতেই আজরাহান কে বিয়ে করা সম্ভব না।তাই তিনি চেয়েছেন কোনোমতে প্রহর কে কোনো ভালো ছেলের হাতে তুলে দিতে।যাতে ও এই বাড়ি থেকে দুরে থাকে।আজরাহান যদি রাগের বসে কিছু করে বসে!!!!
,
,
,
পার্কের বেঞ্চিতে বসে আছে আশফিক আর আজরাহান।রাগে গা রি রি করছে আজরাহান এর।উষ্ণ ধোয়া বের হচ্ছে যেনো ওর শরীর থেকে।আশফিক শীতল কন্ঠে বলল—
“এইসব কী শুরু করেছিস তুই!!!
বড় মা এমনটা করেছেন তো কিছু ভেবেই করেছেন।”‘
“কে কী ভাবলো তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না।মা কী করে পারলো এইসব করতে!!
মা কি জানে না আমি প্রহর কে ভালোবাসি???
“জানে।কিন্তু তবুও,,,
“আমি কিছু জানতে চাই না।ও আমার শুধুই আমার।ওর উপর শুধু আমার অধিকার।”
“তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছিস প্রহর তোদের কাছে আমানত।”
“আমানত মাই ফুট!!
ওকে খাইয়ে দাইয়ে কী অন্য পুরুষের সাথে রাত কাটানোর জন্য বড় করেছি!!
“আজরাহান!!
বিহেভ ইউর সেল্ফ ইয়ার।”
“আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু হিয়ার এনিথিংক।আই জাস্ট ওয়ান্ট হার।এট এনি কস্ট।”
চলবে,,,
(বিঃদ্রঃ
কমেন্টস কী করা যায় না??
হয়তো ভালো লাগে না😞😞)