বৃষ্টিস্নাত ভোর পর্বঃ১২

0
5401

#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ১২
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

আজরাহান প্রহর কে ক্লাস শেষে আজ বাসায় নিয়ে যায়নি।ওকে নিয়ে যায় স্কুল থেকে কয়েক কিলোমিটার
দূরে ঝিলের পাড়ে।প্রহর বারকয়েক তাকে প্রশ্ন করেছিলো কিন্তু আজরাহান জবাব দেয় নি।
ঝিলের ধারেই ঘাসের উপর পা বিছিয়ে বসেছে প্রহর।ঝিলের পানির একপাশে সুয়ারেজ লাইন।তাই ওরা অন্যপাশে গিয়ে বসেছে।
ঝিলের সাথেই কিছু গাছ লাগানো।সায়াহ্ন বেলার এই সময়টায় সূর্যের রশ্মি অনেকটা কমে গিয়ছে।গাছপালা থাকায় মৃদুমন্দ পবনের ঢেউ প্রহর এর সামনের ছোট ছোট চুলগুলো উড়িয়ে নিচ্ছে।শীতের আমেজ শুরু হয়ে গেছে।তাই বাতাসে একটা হীম হীম ভাব রয়েছে।ঝিলের একদম কাছের ঘাস গুলোতে হলুদ,সাদা আরো বেশ কয়েক রঙের ফুল ফুটেছে।একটু পর পর দমকা একটা হাওয়া এসে সবকিছু একদম শীতল করে দেয়।
প্রহর এর বেশ লাগছে।এমনিতে আজরাহান ওকে একা কোথাও যেতে দেয় না।আজ নিজ থেকেই ওকে নিয়ে এসেছে।বাতাসের শো শো আওয়াজে আজরাহান এর বলা কথা গুলোও অদ্ভুতভাবে শোনায়।আজরাহান নদীর পানির দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করে শান্ত কন্ঠে বলল—

“আমাকে ভালো লাগে না তোর??

প্রহর আজরাহান এর ক্ষীন দৃষ্টি দিয়ে বলল–

“লাগে।”

“কতোটা??

প্রহর বাচ্চাদের মতো দু হাত প্রসারিত করে বলল–

“এতোটা।”

“আর মারশিয়াদ কে ভালো লাগে??

“লাগে।”

আজরাহান কন্ঠের গভীরতা বাড়িয়ে বলল–

“একজন মানুষের দুইজন মানুষকে কী করে ভালো লাগতে পারে!!!

“কেনো!!
একজন এর দুটো ড্রেস ভালো লাগতে পারে না??

আজরাহান ঘাড় ঘুড়িয়ে প্রহর কাছে মুখ এনে বলল–

“মানুষ আর ড্রেস এক??
ড্রেস চাইলেই বদলানো যায়।ভালোবাসার মানুষকে কী চাইলেই বদলানো যায়??

প্রহর নিজের গলার স্বর নরম করে নেয়।স্বাভাবিক কন্ঠে বলল—

“জানি না।”

আজরাহান আবার সোজা হয়।দু হাতে ভর দিয়ে সামনের ওই দূরে অক্ষি নিবদ্ধ করে বলল—

“আমি তোর সাথে যা করি তুই কী মারশিয়াদ কেও তাই করতে দিবি???

প্রহর এর বুকটা দুরু দুরু করতে শুরু করে।নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে।কেমন যেনো ঝিমঝিম করে উঠে তার শরীর।বড্ড ক্লান্ত লাগছে নিজেকে।হাত পা বিবশ মনে হচ্ছে।সমস্ত বাধা ডিঙিয়ে উঠে দাড়ায় প্রহর।বিরস কন্ঠে বলল–

” আমার ভালো লাগছে না রাহান ভাইয়া।আমি বাসায় যাবো।”

প্রহর ঘাসের উপর থাকা ব্যাগটা উঠিয়ে কাঁধে নেয়।ঘুরে দাড়িয়ে পা বাড়ায়।আজরাহান হালকা পায়ে গিয়ে ওর সামনে দাড়ায়।দৃঢ় কন্ঠে বলল–

“আমার প্রশ্নের উত্তর আমি পাই নি প্রহর।”

“আমি বাসায় যাবো।”

“আগে বল,দিবি সে অধিকার মারশিয়াদ কে??

“কেনো পাগলামো করছেন আপনি??
আমি বাসায় যাবো।ছোট মা চিন্তা করবে।”

আজরাহান তাচ্ছিল্যের সাথে বলল—

“এখন ছোট মার জন্য চিন্তা হচ্ছে!!
এই তোর সমস্যা কী বলতো!!কেনো আমার প্রশ্নের জবাব দিস না??

“আমি জানি না।”

“কি জানিস তুই!!
মারশিয়াদ কে যদি তুই,,,

“মামা,রোমান্টিক সিন চলতাছে মনে হয়!!!

আজরাহান ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে ওর বামপাশেই চার পাঁচটা ছেলে এসে জড়ো হয়েছে।দেখেই বোঝা যায় ড্রাগ এডিক্টেড।লাল চোখা জোড়া দিয়ে বিশ্রিভাবে তাকিয়ে আছে।গালের দুই পাশের চোয়াল অনেকটা দেবে গেছে ভিতরে।আর বকের মতো সরু হাত দিয়ে গালের এক পাশ চুলকে যাচ্ছে আর জিহ্বা বের করে অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করছে।
আজরাহান আবার চোখ নিবদ্ধ করে প্রহর এর দিকে।ছেলে গুলো কে দেখেই নিজের স্কার্ফ টেনে যথাসম্ভব ঢাকার চেষ্টা করে নিজেকে প্রহর।আজরাহান ভারী কন্ঠে বলল–

“ঝামেলা করিস না।যা এখান থেকে।”

ওদের মধ্যে একজন নোংরা ভাবে হেসে বলল–

“মামা মনে হয় বহত ক্ষেইপ্যা আছেন,মামী রাগ করছে নাকি!!
অবশ্য এই বয়সে একটু আকটু রাগ তো করবোই।আমরা আছি তো রাগ ভাঙানোর লাইগা।কী রে কী কস তোরা।”

হো হো করে বিশ্রিভাবে হেসে উঠে ছেলেগুলো।আজরাহান দাঁতে দাঁত নিষ্পেষন করে ঠোঁট কুচকে একটা চড় বসিয়ে দেয় ওর গালে।কিন্তু চড়টা ওর গালের সাথে সাথে কানের উপর গিয়েও লাগে।ধড়াস করে নিচে পড়ে ছেলেটি আর কান দিয়ে স্মিত ধারায় গড়িয়ে পড়ে রক্ত।আজরাহান চোয়াল শক্ত করে রুষ্ট কন্ঠে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল—

“ওর শুধু কান ফাটিয়েছি আর এক মিনিট যদি এখানে কেউ দাড়িয়ে থাকিস সবগুলোকে হসপিটালে পাঠাবো।”

আজরাহান এর বলিষ্ঠ কন্ঠ আর ওর রাগান্বিত মুখ অবয়ব দেখে ছেলে গুলো কোনো মতে সেখান থেকে উঠে পড়ে চলে যায়।
প্রহর দ্বিগবিদ্বিগ শূন্য হয়ে আজরাহান এর ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে।আজরাহান ওর দিকে তাকাতেই প্রহর কম্পনরত কন্ঠে বলল—

“কেনো মারলেন ওই লোকটাকে??
যদি কিছু হয়ে যেতো।”

আজরাহান ওর হাত চেপে ওকে একদম নিজের কাছে নিয়ে ওর মুখের সামনে বলল—

“ওর ভাগ্য ভালো শুধু ওকে থাপ্পড় মেরেছি ওর কলিজাটা বের করে নেয়নি।”

প্রহর আজরাহান এর হাত সরিয়ে রাগী কন্ঠে বলল–

“আপনি কী পাগল!!এভাবে কেউ কাউকে মারে???

আজরাহান কঠিন কন্ঠে হিসহিসিয়ে বলল—

“আমি ছাড়া অন্য কেউ তোর দিকে তাকালে তার জান নিয়ে নিবো আমি।”

প্রহর উদভ্রান্তের মতো চেয়ে থাকে আজরাহান এর দিকে।
,
,
,
বাসায় ঢুকতেই কুহেলিকা একগাদা প্রশ্ন জুড়ে দেন।কোথায় ছিলো??কেনো গেলো??বলল না কেনো??
আজরাহান বিরক্ত হয়।কোনো কথারই প্রতিত্ত্যুর সে করে না।কুহেলিকা তেতে উঠেন।খালি কন্ঠ চড়িয়ে বললেন—

“সমস্যা কী তোমার!!আমার কথার জবাব কেনো দিচ্ছো না তুমি??

আজরাহান নিরব,শান্ত।কন্ঠে নমনীয়তা ঢেলে বলল–

“কোথাও পালিয়ে যায় নি।”

“আজরাহান!!

আজরাহান নরম দৃষ্টি রাখে কুহেলিকার চোখে।কুহেলিকা গাঢ় কন্ঠে প্রহর কে বলল–

“তুই ঘরে যা।”

প্রহর মাথা নিচু করে পা বাড়ায় নিজের ঘরে।কুহেলিকা আজরাহান এর সামনে এসে ধীর গলায় বলেলেন—

“কী শুরু করেছো এইসব তুমি??
দেখো আজরাহান আমি যেমন তোমাদের তিন জনের মা ঠিক তেমন প্রহর এর ও মা।এই বাড়িতে তোমাদের যেমন অধিকার প্রহর এরও তাই।তাই ওর অমতে কিছুই হবে না।”

আজরাহান ঠোঁটের কোনে দীপ্ত হাসি দিয়ে বলল—

“জানি।যদি ওর মত কে গুরুত্ব না দিতাম তাহলে এতোদিনে ও আমার বাচ্চার মা হয়ে যেতো।”

কুহেলিকা হালকা গলার স্বর উচু করে বললেন—

“আজরাহান!!!!

“প্লিজ মা।এইসব নিয়ে কথা বলতে একদম ভালো লাগছে না আমার।”

আজরাহান দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে নিজের ঘরে চলে যায়।কুহেলিকা এধার ওধার ভেবে নিজেকে শান্ত করেন।তার এই ছেলেকে সে কোনোভাবেই বুঝতে পারে না।

নিজের ঘরে এসে বেডের পাশে চেয়ারের উপর ব্যাগ টা ছুড়ে ফেলে বিছানায় বসে প্রহর।ঘেমে নেয়ে একাকার।বিছানা থেকে উঠে ফ্যানের সুইচ টা অন করে আবার বসে।পা দুটো ঝুলিয়ে ধুপ করে শুয়ে পড়ে বিছানার উপর।অনবরত ঘুরতে থাকা ফ্যানের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর নিজের মুখ।কেমন যেনো ফ্যাকাশে।আজরাহান এই রুপ প্রহর আগে কখনো দেখে নি।আজরাহান রাগী সে জানে।কিন্তু রেগে গিয়ে কাউকে এভাবে মারতে সে কখনো তাকে দেখে নি।প্রহর এর বুকটা ধড়াস ধড়াস করছে।মস্তিষ্কের উপরিভাগে ভীষন যন্ত্রণা করছে।চোখের দুই পাশে কেমন যেনো চিন চিন করছে।প্রহর চোখ বুঝে নেয়।কিছুক্ষনের মধ্যেই তার চোখ লেগে যায়।কতক্ষন ঘুমিয়েছিলো মনে নেই।নিজের গলায় উষ্ণ হাওয়া ভেজা স্পর্শে নড়েচড়ে উঠে প্রহর।চোখের পাল্লা যেনো খুলতেই চায় না।নিদ্রাপরী আজ তাকে জেকে ধরেছে।কিছুক্ষনের মধ্যেই প্রহর আরো গভীরভাবে ওর শরীরে কারো উষ্ণ স্পর্শ অনুভব করে।এক মাতাল করা ঘ্রান ওকে জড়িয়ে ধরেছে।বন্ধ চোখেই প্রহর ওর হাত উচু করতেই কারো অস্বিত্ব টের পায়।ফট করে চোখ খুলে প্রহর।আতঙ্কিত কন্ঠে বলল—

” আপনি???

আজরাহান ওর উপর থেকে সরে পাশেই দু হাত ভাজ করে দিয়ে তার উপর শোয়।আর বলল–

“হ্যাঁ,আমি।”

প্রহর উঠে বসে।গোল গোল চোখ করে বলল–

“এখানে কেনো এসেছেন আপনি??

আজরাহান হালকা মাথা ঘুরিয়ে লল–

“তোক দেখতে ইচ্ছে হলো তাই।”

“আপনাকে না বলেছি এভাবে আমাকে ছোবেন না।”

“তো কিভাবে ছোবো বলে দে।”

“আপনি যান এখান থেকে।”

“না গেলে কী করবি??

“আমি ছোট মা কে ডাকবো।”

“ডাক।আমিও তো চাই তুই মা কে ডাক।তাহলেই তো আমার আর তোর বিয়েটা দিবে।”

“আপনার কী এইসব ছাড়া আর কিছু মাথায় আসে না???

“আসে।ফুলসজ্জা,হানিমুন,ফ্যামিলি প্ল্যানিং।ওসব বিয়ের পরে ভাববো।”

“উফ !!!
জানতো এখান থেকে।”

“একটা কথা বলবো তোকে??

“নাহ।”

“একটাই বলবো সত্যি।”

প্রহর কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে বলল–

“বলেন।”

আজরাহান বিছানা থেকে শরীরের একপাশ উঠিয়ে কনুইতে ভর দিয়ে প্রহর এর কানে কিছু একটা বলতেই প্রহর এর গাল দুটো লজ্জায় লাল হয়ে যায়।আজরাহান কে এক ধাক্কা দিতেই ও আবার বিছানায় ধম করে পড়ে।আর হা হা করে হাসতে থাকে।প্রহর কপট রাগ দেখিয়ে বলল—

” আপনি আসলেই একটা খবিশ।করবো না আমি আপনাকে বিয়ে।করবো না করবো না করবো না।”

“তুই করবি তোর ঘাড় করবে।তোকে না আমি অনূঢ়া রাখবো না কুমারী।”

“রাহান ভাইয়া!!!
আপনি আসলেই একটা শয়তান।যান এখান থেকে।”

আজরাহান প্রহর এর হাত ধরে টেনে ওকে নিজের বুকের উপর শোয়ায়।পাশ ফিরে ওকে ওর পাশেই শুইয়ে দেয়।প্রহর এর মুখের উপরের চুল গুলো ওর কানের পিছনে ঘুজে দেয়।নরম কন্ঠে আজরাহান বলল—

“এতো কিসের রাগ তোর আমার উপর??

প্রহর বিবশ কন্ঠে বলল–

“আপনি ওই লোকটাকে কেনো মারলেন ওভাবে!!
আর একজন সাধারন মানুষের হাতে এইরকম শক্তি!!!

আজরাহান নিজেকে আরো কাছে নিয়ে যায় প্রহর এর।ওর চোখের দিকে অক্ষি নিবদ্ধ করে বলল–

“আমাকে তোর সাধারন কেনো মনে হয়।অসাধারনত হতে পারি!!!

প্রহর গভীরভাবে তাকিয়ে থাকে আজরাহান এর চোখে।লালচে বাদামী এই চোখে যে কারো ঘোর লেগে যেতে পারে।কী গভীর এই চোখ!!!
যেনো এক মুহুর্তেই সব ভুলিয়ে দিবে।হারিয়ে দিবে অন্য জগতে।
প্রহর নিস্পলকে তাকিয়ে আছে আজরাহান এর চোখে।এই চোখখখ!!
সে আগেও একবার দেখেছে।কিন্তু কোথায়???
,
,
,
খাবারের প্লেটে হাত দিয়ে বসে আছে মারশিয়াদ।আজরাহান ওর সামনেই বসে খেয়ে যাচ্ছে।আজ ডিনার এর দাওয়াত ওদের শিহরণ এর বাসায়।চিন্তিত মুখ আর ব্যাকুলতায় কেমন যেনো বিষন্ন মারশিয়াদ।শিহরণ জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে বলল–

“খাবার সামনে নিয়ে বসে আছিস কেনো??

“আশফিক আসে নি কেনো??

“বলল ওর কাজ আছে তাই।”

“তাহলে আমাদের আসতে কেনো বললি??

“এইটা কেমন কথা!!
ওর কাজ থাকতেই পারে।তাই বলে কী তোরা আসবি না।”

মারশিয়াদ উঠে দাড়ায়।আজরাহান মুখে এক লোকমা দিয়ে এখনো গিলতে পারেনি।মারশিয়াদ কে উঠে দাড়াতে দেখে টুস করে না চিবিয়েই তা গিলে নেয়।আর বলল–

“কোথায় যাচ্ছিস তুই??

“আশফিক এর বাসায়।কাল থেকে ও আমার কল রিসিভ করছে না।”

আজরাহান অর্ধ খাওয়া রেখেই উঠে যায় আর বলল–

“আমিও যাবো।”

নির্ধা টেবিলের পাশেই দাড়িয়ে ছিলো।ওদের এইসব দেখে ভ্রু কুচকে অভিমানি কন্ঠে বলল—

“আমি এতো কষ্ট করে রান্না করলাম আর আপনারা না খেয়েই চলে যাচ্ছেন।দিস ইজ নট ফেয়ার জান ভাইয়া।”

“সরি ভাবী।যাওয়া টা জরুরী।”

আশফিক দের বাসায় আসতে আসতে প্রায় পৌনে এগারো টা বেজে যায়।ডোর বেল শুনে ওর মা দরজা খুলে।ওদের দেখেই ঈষৎ অবাক হয় আর বলল-

“তোমরা এতো রাতে??

“আশফিক কোথায় কাকিমনি??

আশফিক এর মা কিঞ্চিৎ অধর প্রশস্ত করে বললেন–

“আজকাল কাকমনি কে একদম মনে পড়ে না।”

আজরাহান হালকা হেসে বলল–

“আসলে সময় হয় না কাকিমনি।”

মারশিয়াদ কে দেখে বললেন–

“জান তো আমাদের ভুলেই গেছো একদম।”

মারশিয়াদ অধর কোনে হেসে বলল–

“সরি আনটি।আপনজনদের কখনো ভোলা যায়!!

“হয়েছে হয়েছে আর মধু মেখে কথা বলতে হবে না।আশফিক ঘরেই আছে।যাও।”

ঘরে গিয়ে দেখে আশফিক চিৎপটাং হয়ে শুয়ে আছে।মারশিয়াদ কে দেখে ঝাঝিয়ে উঠে বলল–

“কেনো এসেছিস এখানে??

মারশিয়াদ শান্ত কন্ঠে বলল—–

“তুই আমার কল কেনো রিসিভ করছিস না?[

“”তুই যা আমার চোখের সামনে থেকে।”

“আগে বল কী হয়েছে??

এইবার আশফিক বেশ চেচিয়ে উঠলো।কেউ যেনো ওর চোখে জ্বলা আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে।জোরালো কন্ঠে বলল—

“কিসের সম্পর্ক তোর ইনশিরাহ এর সাথে??
কী করিস রাত বিরাতে ওর সাথে?

আজরাহান ভ্রু কুচকায়।মুখে বিস্ময়ের ছাপ।মারশিয়াদ শান্ত,শীতল।হঠাৎ করেই হা হা করে বিছানায় শুয়ে পড়ে।আজরাহান ও মুখ চেপে হেসে উঠে।যেনো গড়গড়ি খাওয়ার অবস্থা ওর।মারশিয়াদ হাসি থামিয়ে শান্ত,দৃঢ় কন্ঠে বলল—

“সম্পর্ক,
হুম সম্পর্ক।ওর সাথে আমার গভীর সম্পর্ক।কিন্তু সেই সম্পর্ক তোর আর আমার মাঝে দেয়াল তৈরি করার জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়।আমি জানি তুই ওকে ভালোবাসিছ।আমার দিক থেকে এই ধরনের জটিলতা মুক্ত তুই।
এইটা অন্য কথা যে আমি ছাড়াও আরো কেউ আছে!!!

আশফিক আড়চোখে আজরাহান এর দিকে তাকাতেই আজরাহান ঠোঁট কামড়ে বলল—

“আমার দিকে তাকাচ্ছিস কেনো!!
আমার এইসব শিরনি মিরনি তে কোনো ইন্টারেস্ট নাই।”

আশফিক উত্তেজিত হয়ে আবার বলল—

“তাহলে বলছিস না কেনো কীসের সম্পর্ক??

মারশিয়াদ উঠে বসে।বিরস চাহনি তার।স্বাভাবিক কন্ঠে বলল—

“সে অধিকার সে আমাকে দেয় নি।তুই ওর কাছ থেকে জেনে নিস।”

আশফিক কিছুটা শান্ত হয়ে বসে।ও জানে মারশিয়াদ এর মেয়েদের প্রতি তেমন আগ্রহ নেই।আর ও কখনো মিথ্যেও বলে না।আশফিক বলল–

“খেয়েছিস??

“নাহ।”

“তাহলে বস।আমি মাকে খাবার দিতে বলছি।”

আজরাহান শশব্যস্ত হয়ে বলল–

“তুই কি এই রাতের বেলা আমাকে মেরে গুম করতে চাস??

আজরাহান এর কথায় মারশিয়াদ ঠোঁট চিপে হাসতে থাকে।আশফিক কপাল ভাজ করে বলল–

“মা মোটেও এতো খারাপ রান্না করে না।”

“ভাই মাফ চাই।আমার এতো তাড়াতাড়ি মরার শখ নাই।
এখনো বিয়ে শাদী করা বাকি আমার।তারচেয়ে চল নির্ধারণ এর বাসায় যাই।নির্ধা ভাবীর হাতের রান্না আহ!!!

আশফিক কিছুটা রাগ দেখালেও আজরাহান এর কথা মিথ্যে নয়।

শিহরণ এর বাসায় এসে চারবন্ধু একসাথেই খেতে বসে।বাহ্যিক দিকে ওদের সবার মধ্যে পাহাড়সম পার্থক্য হলেও মনের দিকে চার শরীর এক আত্না।মারশিয়াদ এর মোবাইল টুং করে উঠে।একটা মেসেজ দেখেই চিন্তিত মুখে হুড়মুড়িয়ে চলে যায়।
,
,
,
অন্ধকারে ভেজা মাটির এক মিষ্টি গন্ধ।বাঁশের বেড়া মোড়া একটা স্যাঁতসেঁতে কবরের পাশে বসে হাউমাউ করে কাঁদছে ইনশিরাহ।রাত প্রায় বারোটার ওপার।নিস্তব্ধ,সুনসান কবরের বাতাস ভারী হয়ে উঠছে ইনশিরাহ এর কান্নার আওয়াজ এ।কবরস্থান এর আশেপাশেরই কুকুরের ভয়ংকর আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।মারশিয়াদ গাড়ী থামিয়েই ত্রস্ত পায়ে এসে ইনশিরাহ কে ধরে।জ্বলে উঠে ইনশিরাহ।বলল–

“কেনো এসেছো এখানে??
কেনো????

“শিরা,,কী পাগলমো করছো।এতো রাতে এখানে কেনো এসেছো???

“ছাড়ো আমায়।ছাড়ো।”

ডুকরে কেঁদে উঠে আবার ইনশিরাহ।প্রজ্জ্বলিত চোখে উন্মাদের মতো এসে মারশিয়াদ এর ব্লেজার খামছে ধরে বলল–

“কেনো মারলে তোমরা আমার মাকে??
কেনো কেড়ে নিলে তাকে আমার কাছ থেকে??কী অপরাধ ছিলো তার??

“শান্ত হও,শান্ত হও শিরা।তোমার এই অপূরনীয় ক্ষতি আমি কোনোদিন পূরন করতে পারবো না।কিন্তু তোমাকে আমি কখনো একলা ছাড়বো না।”

“চাই না আমার তোমার সাহায্য।চাই না।চলে যাও তুমি।আর কখনো আসবে না।আই হেট ইউ।আই হেট ইউ ফরএভার।”

ইনশিরাহ দৌড়ে কবরস্থান থেকে বেড়িয়ে যায়।মারশিয়াদ ওর পিছু পিছু যায়।ডাকতে থাকে ওর নাম ধরে।কিন্তু তা কর্নকুহর হয় না ইনশিরাহ এর।চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে।উদভ্রান্তের মতো এলোমেলো ভাবে হাটায় কখন যে রাস্তার মাঝে এসে পড়েছে বুঝতেই পারে নি।মুহুর্তেই একটা প্রাইভেট কার উড়িয়ে চলে যায়।চিৎকার দিয়ে উঠে মারশিয়াদ।

রাস্তায় পাশেই পড়ে যায়।একটু একটু করে রক্ত পড়তে থাকে মাথার পিছনের অংশ থেকে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here