বৃষ্টিস্নাত ভোর পর্বঃ১১

0
5444

#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ১১
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

প্রায় এক ঘন্টা শপিংমল এর সামনে দাড়িয়ে আছে কুহেলিকা আহমেদ।ছেলেটার উপর সে কোনোভাবেই ভরসা করতে পারে না।কল করেও পাওয়া যাচ্ছে না।রিসিভ করছে না আজরাহান।কুহেলিকা হাসফাস করছেন।বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার কপালে।বুকের ভিতর কেমন যেনো ধুম ধুম করছে।পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলেন আজরাহান আসছে।গিয়েই এক ঝাড়ি ওকে।আজরাহান মুচকি হাসে।

ওদের রিক্সার সামনেই একটা গাড়ী কে অন্য একটা গাড়ি ধাক্কা দিতেই ঝনঝন করে ভেঙে পড়ে তার কাঁচ।আর তা নিয়েই গন্ডগল শুরু হয়।আর তা কাটিয়ে উঠতেই এতোটা সময় লাগে।ওদের সুস্থ অবস্থায় দেখেই কুহেলিকার প্রানপাখি পাখা ঝাপটানো বন্ধ করে।

প্রথমেই নন্দিতার জন্য বিয়ের শাড়ি পছন্দ করা হয়।প্রায় কয়েকটা দোকান ঘুরে তারপর পছন্দ অনুযায়ী শাড়ি পায় নন্দিতা।আজরাহান একটু পর পর নুরাইসার পাশে গিয়ে দাড়ায়।ও যতবারই ওকে ইগনোর করার চেষ্টা করে আজরাহান নাছোড়বান্দা।বিরক্ত হয়ে নুরাইসা নন্দিতা কে বলে অন্য দোকানে যায়।আজরাহান ওদের সাথেই দাড়ানো।অতিষ্ঠ লাগছে তার।এভাবে এক পল্টন মেয়েদের মাঝে নিজেকে কেমন খাপছাড়া মনে হচ্ছে।
আজরাহান প্রহর এর পাশে গিয়ে দাড়ায়।আর বলল—

“পছন্দ হয়েছে না আমি করে দিবো।”

প্রহর ভেঙচি মেরে বলল–

“জ্বী না।লাগবে না।আপনি নিজের কাজ নিজে করেন।”

“তো কী লাগবে??

আজরাহান দুষ্টামির ছলে প্রহর এর কানে কিছুটা একটা বললে প্রহর ওকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে বলল–

“সরেন এখানে থেকে।খবিশ কোথাকার।”

আজরাহান গা দুলিয়ে হেসে উঠে।কুহেলিকা প্রহর এর হাতে দুই তিনটা ড্রেস দিয়ে ওকে ট্রাই করতে বলে।ট্রায়াল রুমের কাছে যেতেই আজরাহান আগেই ভিতরে ঢুকে পড়ে।প্রহর থম মেরে বাইরেই দাড়িয়ে থাকে।এই লোকটা আসলেই অসভ্য!!
মিনিট তিনেক পর আজরাহান বাইরে বেরিয়ে আসে।প্রহর কপট রাগ দেখিয়ে বলল–

“আপনি ভিতরে গেলেন কেনো??

“চেক করতে।আজকাল শপিংমল গুলোর ট্রায়াল রুম গুলোতে হিডেন ক্যামেরা থাকে।তাই চেক করলাম।”

“আপনি তো বুঝলেন তাহলে আমি বুঝবো কী করে??

“তাহলে শোন,,,,,
১. ট্রায়াল রুম বা টয়লেটে ঢুকে প্রথমেই খুব ভালভাবে দেখে নিতে হবে চারপাশ। বিশেষ করে হ্যাঙার, কাঠের দেওয়ালের খাঁজ ইত্যাদি।
২. এরপর যেতে হবে আয়নার কাছে। আয়নায় চোখ ঠেকিয়ে দাঁড়াবি। আলো যাতে আয়নার উপরে না-পড়ে, এমনভাবে দেখবি। যদি উল্টোদিকে অন্য কোনও ঘর বা দেওয়াল দেখতে পাস বুঝবি কোনো গন্ডগোল আছে।
৩. পারলে সব আলো নিভিয়ে ফেলবি। তারপর ফোনের ফ্ল্যাশ বাল্ব বা টর্চ জ্বালিয়ে আয়নায় ফেলবি। আয়নার উল্টো দিক দেখা গেলে বুঝবি ক্যামেরা তোকে দেখছে।
৪. দরজায় যেভাবে আঙুলের গাঁট দিয়ে টোকা দিস, সেভাবে আয়নার গায়ে টোকা দিবি ফাঁপা শব্দ হলে বিপদ নিশ্চিত।
৫. শেষ পরীক্ষা। আয়নায় আঙুল ছোঁয়াবি। আঙুল আর প্রতিফলনের মধ্যে দূরত্ব থাকলে বুঝবি ক্যামেরা রয়েছে।

বুঝলি ডিঙি নৌকা???

“হুম।”

“যা এখন।”

আজরাহান চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে নুরাইসা মেয়েদের ব্যক্তিগত জিনিসের একটা দোকানে কিছুটা একটা দেখেছে।অধর কোনে বাকা হেসে সেদিকেই পদযুগল বাড়ায়।

“মারমেইড,পিংক কালার কেনো আপনাকে সব কালারেই মানাবে।”

আজরাহান কে দেখেই অপ্রস্তুত হয় নুরাইসা।হাতে থাকা জিনিসগুলো পিছনে লুকায়।শুকনো কন্ঠে বলল—

“এখানে কেনো এসেছেন আপনি??

“আপনাকে দেখতে এলাম।
শুধু কী পিংক কালারই পড়েন অন্য কালারও তো ট্রাই করতে পারেন!!!

নুরাইসা দাঁত মুখ খিচে ধরে।বড্ড বিরক্ত লাগছে তার।এই লোকটা এমন কেনো।শুধু গায়ের রঙ সুন্দর হলেই মন সুন্দর হয় না।নুরাইসা হতাশ হয়।বিবশ কন্ঠে বলল—

“মেয়েদের পার্সোনাল জিনিস নিয়েও আপনার সমস্যা !!!

আজরাহান ওর দুইগাল ফুলকো করে নুরাইসার কপালের কাছে গিয়ে ওর সামনে উড়ে আসা চুলগুলোয় ফুঁ দেয়।আজরাহান এর উষ্ণ ফুঁ তে শিরশির করে উঠে নুরাইসার শরীর।
আজরাহান মৃদু হেসে বলল–

“আপনার আর আমার মধ্যে পার্সোনাল কিছু আছে না কি!!

দোকানে বসা লোকগুলো ওদের এই কথাবার্তায় ঠোঁট চিপে হাসছে।নুরাইসা হাতে রাখা জিনিস গুলো ধপাস করে রেখে গজগজ করে দোকান থেকে বেরিয়ে যায়।

হাটতে হাটতে আজরাহান এর গুষ্ঠি উদ্ধার করে।বিড়বিড় করতে করতে হ্যান্ডব্যাগ এ কিছু একটা রেখে সামনে দিকে হাটতে থাকে আর তখনই ধাক্কা খেয়ে পড়তে গেলে ওকে নিজ বাহুতে আবদ্ধ করে মারশিয়াদ।অবাক করা কন্ঠে নুরাইসা বলল–

“জান আপনি!!!!

“জ্বী।”

মারশিয়াদ ওকে সোজা করে দাড় করায়।কপাল কুচকে আছে নুরাইসার।মুখে বিরক্তির ভাব।নাক চোখ কেমন লালচে।মারশিয়াদ বলল—

“রেগে আছেন মিষ্টি??

নুরাইসা হালকা কন্ঠে বলল—

“উহু।”

“তাহলে??

“কিছু না।কেমন আছেন আপনি??

“ভালো।এখানে কেনো??

“শপিংমল এ কেনো আসে মানুষ??

মারশিয়াদ মুচকি হাসে।আর বলল–

“অনেকে ঘুরতেও আসে।”

“আপুর বিয়ে তাই।”

“ও আচ্ছা।তো দাওয়াত দিবেন না???

“তুই এখানে??

আজরাহান কে দেখে মৃদু ভ্রু কুচকায় মারশিয়াদ।আজরাহান ওদের কাছে এসে দাড়ায়।নুরাইসা কে বলল–

“এখানে কী করছেন মারমেইড??

নুরাইসা প্রতিত্ত্যুর করে না।বরফ হয়ে দাড়িয়ে থাকে।মারশিয়াদ হুট করেই আজরাহান কে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে বলল–

“এটাই বুঝি তোর গার্লফ্রেন্ড??

আজরাহান নিরুত্তাপ।মারশিয়াদ ওকে ছেড়ে অধর বাকিয়ে হাসে।আর বলল—

“তো সামান ভাইয়ার বিয়ে ওনার বোনের সাথে ঠিক হয়েছে??

“হুম।”

চকিতে নুরাইসা বলল–

“আপনি তাকে চিনেন??

মারশিয়াদ ছোট্ট করে হেসে বলল—

“উই আর বোসম ফ্রেন্ড।”

“হু।”

নুরাইসা ঠোঁটে ভেঙচি কাটে।

আজরাহান শক্ত কন্ঠে বলল—

“আগে বল তুই বর পক্ষ না কি কনে পক্ষ??

“অবিয়াসলি বর পক্ষ।এতো সুন্দর বেয়াইন থাকতে কনে পক্ষ হতে যাবো কেনো!!
আচ্ছা আমি যাই তাহলে পরে কথা হবে।
আসি মিষ্টি।”

“হুম।”

মারশিয়াদ যেতেই আজরাহান দীপ্ত কন্ঠে বলল—

“আমার মতো উল্টা পাল্টা কিছু যদি ওর সাথে করেন তাহলে আপনার দাঁত ভেঙে ফেলবো।”

“জান মোটেও আপনার মতো না।”

“ও আচ্ছা,তাই নাকি!!
তো প্রেম পিরিতি আশিকপানা শেষ হলে চলেন।সবাই ওয়েট করছে।”
,
,
,
ঘামার্ত শরীর এলিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে আজরাহান।চোখ নিভু নিভু করছে।শার্টের এর কলারটা হালকা ছড়িয়ে ফ্যানের দিকে অক্ষি নিবদ্ধ করে আছে।
হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই নিচে নেমে আসে।সানায়া কাউচে জিনিসপত্র রেখে দেখছে সব ঠিক আছে কিনা!!
আজরাহান বলল–

“আমার ব্রেসলেট টা কোথায় রে??

“ওটা তো প্রহর এর ব্যাগে।”

“ওর কাছে দিলি কেনো??

“আরে ব্যাগে জায়গা ছিলো না তাই।গিয়ে নিয়ে আসো ওর কাছ থেকে তাহলেই তো হয়।এতো কথা বলার কী দরকার!!

আজরাহান ওর মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলল–

“বেশি কথা বলিস তুই।”

আজরাহান ধীর পায়ে প্রহর এর রুমে আসে।প্রহর ঘরে নেই।ভিতরে ঢুকতেই এক লম্বা নিঃশ্বাস টেনে নেয়।কেমন যেনো মিষ্টি গন্ধ নাকে লাগে তার যেমনটা প্রহর এর শরীরের।
প্রহর অনেক পরিপাটি।নিজের ঘরের সমস্ত কিছু সুন্দর করে সাজিয়েগুছিয়ে রাখে।যখন যেখানে যা দরকার সেখানেই তা রাখে।পড়ার টেবিলে দুপাশ করে বই সাজানো আর মাঝখানে একটা ফ্লাওয়ার ভাস রাখা।রোজ তার ফুল বদল করে রাখে প্রহর।আগে বিছানার দুইপাশে দুটো বড় টেডি ছিলো।যখন থেকে রেগুলার নামাজ পড়া শুরু করেছে তখন থেকে সেগুলো আলমিরাতেই বন্ধি।পড়ার টেবিলের পাশেই আলমিরা।দরজা দিয়ে ঢুকতেই ডান দিক বরাবর ছোট্ট বারান্দা।তার পাশেই ওয়াশরুম।প্রহর এর বিছানার মাঝ বরাবর বামদিকে একটা বড় জানালা।স্নিগ্ধ চাঁদের আলো প্রায়ই পসরা সাজিয়ে বসে।প্রহর বিছানায় বসে তা অপলক দৃষ্টিতে অবলোকন করে।

আজরাহান টেবিলে দেখতে পায় এক গ্লাস পানি রাখা।শপিংমল থেকে আসার পর পানি খাওয়া হয়নি।গলাটা কেমন উসখুস করছে।তাই আর কিছু না ভেবে গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে গিলতে থাকে।কয়েক ঢোক ভিতরে যেতেই আজরাহান এর পুরো পাকস্থলি নাড়া দিয়ে উঠে।কোনো রকম হাত দিয়ে মুখ চেপে দৌড়ে ওয়াশরুমে যায়।বেসিন এ গিয়ে গরগর করে বমি করতে থাকে।কিছুক্ষন যেনো ওর কাছে মনে হলো পৃথিবীর জোড়া ঘূর্ণিঝড় ওর পেটেই শুরু হয়েছে।পেটের থাকা শেষ অংশবিশেষ পর্যন্ত বের হয়ে গেলেই আজরাহান কিছুটা স্বতন্ত্র হয়।বুকের উঠানামা কমেনি।দুইহাত বেসিন এর দুইপাশে রেখে হাপাতে থাকে।আর তখনই ওর চোখ যায় বেসিনের সামনে লাগানো মিরর এ।ও দেখতে পায় প্রহর বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।হাতে অর্ধ পরিহিত কামিজ।আজরাহান চট জলদি চোখ নামিয়ে নেয়।এর মধ্যেই ও শুনতে পায় কুহেলিকা প্রহর কে ডাকতে ওর ঘরে এসেছে।আজরাহান বিচলিত হয়ে পড়ে।তড়িঘড়ি করে ওয়াশরুমের দরজা লক করে প্রহর এর মুখ চেপে ধরে।অন্যদিকে তার নজর নেই এখন।ভয় আর লজ্জায় সংকুচিত হয়ে পড়ে প্রহর।আজরাহান নরম কন্ঠে বলল—

“ডিঙি নৌকা প্লিজ চিৎকার দিস না।মা জানলে আমাকে এখনই ঘর থেকে বের করে দিবে।প্লিজ।”

আজরাহান এমনভাবে মুখ চেপে ধরেছে প্রহর কোনো শব্দ করতে পারে না।অবিরতভাবে চোখের পলক ফেলে যাচ্ছে।কুহলিকা বলল–

“প্রহর কোথায় তুই??

প্রহর হালকা গোঙানি দিয়ে উঠে।আজরাহান ধীরভাবে ওর মুখের উপর থেকে হাত সরায়।অনুরণন হয় প্রহর পুরো শরীরে।কম্পনরত কন্ঠে বলল–

“আাআমিইই এএখাআনে ছোট মা।”

কুহেলিকা বুঝতে পারে প্রহর হয়তো চেঞ্জ করছে।তাই কথা না বাড়িয়ে বললেন–

“কাপড় বদলানো হলে আমার ঘরে একটু আছিস।”

“আচ্ছা।”

আজরাহান স্বস্তির নিঁশ্বাস ফেলে।প্রহর এর দিকে চোখ যেতেই নিজেই ভ্যাবাচাকা খেয়ে যায়।দ্রুত ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে।”

লম্বা লম্বা শ্বাস টেনে নিঃশ্বাসের গতিবিধি ঠিক করছে আজরাহান।প্রহর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ঝাঝিয়ে উঠে বলল—

“” এইটা কী ধরনের অসভ্যতা রাহান ভাইয়া!!

“এই আমি কী ইচ্ছে করে করেছি।পানিতে কী মিশিয়েছিলি তুই??

প্রহর দেখে টেবিলে রাখা পানির গ্লাস খালি।বলল–

“ওগুলো তো ফিটকিরির পানি আপনি কেনো খেলেন??

“আমি কী জানি!!
জীবনটাই আমার এখন শেষ হয়ে যেতো।”

এইবার প্রহর ফিক করে হেসে দেয়।আর বলল–

“আপনি আসলেই গাধা।”

“আর তুই গাধি।”
,
,
,
রাতে খাওয়ার টেবিলে বসেছে সবাই।আজরাহান নিজ খাওয়ায় ব্যস্ত।সামান বারকয়েক আজরাহান এর দিকে তাকিয়ে দেখলো।তারপর বলল—

“তোর সাথে আমার কথা আছে।”

“কানপুরে হরতাল লাগাইনি।তুমি বলো আমি শুনছি।”

“তোর বাকা কথা বলার স্বভাব আর গেলো না।”

“কথা আবার বাঁকা হয় না কি!!
এক কাজ করো ক্লাস ফোরের জ্যামিতি বই থেকে সরল রেখা আর বক্র রেখা কাকে বলে পড়ে নিও।”

সামান কপাল ভাজ করে ক্ষীন চোখে তাকায়।এই ছেলের সাথে কথায় পারবে না।তাই সে বলল–

“আমি আমার স্যার এর সাথে কথা বলেছি।তোর সব সার্টিফিকেটও দেখিয়েছি।সে খুব খুশি হয়েছে আর তোর প্রতি ইন্টারেস্টেডও।””

“কেনো মেয়ে বিয়ে দিবে আমার কাছে!!
বলবে আমার এখন বিয়ে শাদী তে ইন্টারেস্ট নেই।”

“এইসব কী ধরনের কথা আজরাহান!!!

কুহেলিকা ছেলের কান টেনে বললেন—

“ভাই কী বলছে সেইটা না শুনে এতো কথা কেনো বলো তুমি??

“আহ!!!
ছাড়ো মা শুনছি।লাগছে আমার।”

কুহেলিকা কান ছেড়ে কঠিন কন্ঠে বললেন–

“সামান এর কথা শেষ না হওয়ার আগে আর একটা কথাও বলবে না তুমি।”

আজরাহন চোখ নামিয়ে দুইপাশে মাথা হেলায়।সামান বলল–

“তোর জন্য চাকরির ব্যবস্থা করেছি।কাল গিয়ে স্যারের সাথে দেখা করে আছিস।”

আজরাহান সোজা বলল–

“সম্ভব না।”

সামান উৎসুক কন্ঠে বলল—

“কেনো??

“এইসব জব টব আমার দ্বারা হবে না।অন্যের গোলামী আমি করতে পারবো না।”

“গোলামি মানে!!
এখন কী করছিস??

” ওইটা আমার স্বাধীনতা।ওসব তোমার মতো গোড়ায় গলদ বুঝবে না।”

“আজরাহান!!!

“শান্তি তে খেতেও দিবে না নাকি!ধ্যাত।”

আজরাহান ওর প্লেট হাতে নিয়েই উঠে চলে যায়।কুহেলিকা রুষ্ট কন্ঠে সানোয়ায আহমেদ কে বললেন–

“দেখলেন আপনি কতো বড় অসভ্য হয়েছে??

“এখানে অসভ্যতার কী আছে।যার যার নিজস্ব পছন্দ আছে।ওর যদি ভালো না লাগে ও করবে না।”

“আপনার জন্যই ছেলেটা এতো বাড় বেড়েছে।কোনো অন্যায় করলেও আপনার মুখ দিয়ে তার বিরুদ্ধে একটা কথাও বের হয় না।”

সানোয়ার আহমেদ কিছুক্ষন নির্বিকারভাবে তাকিয়ে থাকলেন।তারপর বললেন–

“যা বলার তো তোমরাই বলো।কখনো কী ছেড়ে দিয়েছো ওকে!!!

সামান চোয়াল শক্ত করে তিক্ত কন্ঠে বলল—

“বাবা,সবসময় তুমি ওর সাপোর্ট কেনো করো??

সানোয়ার আহমেদ সুদীর্ঘ শ্বাস নিলেন আর বললেন—

“তোমরা ভালো করেই জানো ওকে আমি কেনো কিছু বলি না।আর আজরাহান কখনো এমন কোনো কাজ করেনি যে ওকে আমার কিছু বলতে হবে।”

সানোয়ার বিরস মুখে খাওয়া শেষ না করে হাত ধুয়ে উঠে গেলেন।কুহেলিকা তাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তিনি হাতের ইশারায় তাকে থামতে বললেন।

আজরাহান এর বাবা ওর মধ্যে এখনো নিজের বাবার ছায়া দেখতে পান।আজরাহান এর দাদা সেকালে তাদের এলাকার একজন বলিষ্ঠ পুরুষ ছিলেন যিনি অন্যায় কে কখনো প্রশয় দেন নি।এক কথার মানুষ ছিলেন তিনি।কুহেলিকা কে তিনি এক অনাথ আশ্রম থেকে এনেছিলেন।যুবতী হওয়ার পর বাড়ীর সকলের বিপক্ষে গিয়ে তিনি সানোয়ার আহমেদ এর সাথে তার বিয়ে দেন।কারণ বাইরে কারো উপর তিনি এই অনাথ মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভরসা করতে পারছিলেন না।ভদ্রলোক যেদিন মারা যান সেদিনই আজরাহান এর জন্ম।এক দিকে শোকের ছায়া অন্যদিকে খুশির আমেজ।কোনটা ছেড়ে কোনটাকে মেনে নিবেন।তাই সানোয়ার আমহেদ নিজের বাবার নামেই ছেলের নাম রাখলেন।তাই তো আজরাহান এর বাকী দুই ভাইবোন থেকে ওর নাম আলাদা।
,
,
খাওয়া শেষ করে প্রহর আসে আজরাহান এর রুমে।দেখে খালি ঘরে পায়চারী করে মোবাইলে কথা বলছে আজরাহান।প্রহর কে দেখে কথা শেষ করে লাইন কেটে দেয়।প্রহর কপট রাগ দেখিয়ে বলল–

“বড় ভাইয়ার কথা কেনো শুনেন না আপনি??

আজরাহান ওকে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে ওর নাকে নাক ঘষে।কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল–

“ওই জব নিলে আমাকে সারাদিন তোকে ছাড়া থাকতে হবে।ওসব আমার দ্বারা হবে না।”

আজরাহান কপাল সরিয়ে প্রহর এর গালে টুপ করে একটা চুমু খায়।প্রহর শান্ত কন্ঠে বলল–

“তাহলে কী সারাজীবন মেয়েদের স্কুলে প্রফেসরগিরি করবেন??

আজরাহান ওকে ছেড়ে বিছানায় গিয়ে বসে।ল্যাপটপ টা অন করে ওর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল—

“নাহ।বিয়ের পর ছেড়ে দিবো।”

“কেনো??

“তখন তো তুই সারারাত আমার সাথে থাকবি।”

“আপনি আসলেই একটা খচ্চর।”

“সে তোর যা মনে হয়।”

“এই জন্যই নুরাইসা আপুকে এইসব বলেন!!

“কী বলেছি??

প্রহর ঠোঁট বাকিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ভাবে বলল—

“মারমেইড,,
আপনাকে পিংক কেনো সব কালারেই ভালো লাগবে।”

“একদম ওই মেয়ের কথা আমার সামনে বলবি না।আস্ত ফাজিল মেয়ে।”

“আপনি বুঝি ভালো!!!!
তাই মেয়েদের ব্যক্তিগত জিনিস নিয়ে ফাজলামো করেন!!!

“আর ইউ জেলাস!!!

“মোটেও না।”

“তাহলে বিয়ে কর আমাকে।”

“করবো না,করবো না,করবো না।”

আজরাহান দাঁতে দাঁত চেপে বলল—

“তবে রে,,,.

“ভ্যা।”

দরজা খুলেই সিড়ি দিয়ে গড়গড়িয়ে নামে প্রহর।আজরাহান সেখানে দাড়িয়ে থাকে।হাসি হাসি মুখে বলল—

“পাগলি আমার।”
,
,
,
ঘসসস করে থামে মারশিয়াদ এর গাড়ী।মুখে বিরস হাসি টেনে বলল—-

“যাও,আর একদম কোনো কাজ না।হাত মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়বে।বাকি কাজ কাল করবে।”

“তোমাকে এতো চিন্তা করতে হবে না।”

“জানি।তুমি নিজের খেয়াল রাখতে পারো।”

“তোমার মা কেমন আছে???

“যদি বলতে আমার মা কেমন আছে তাহলে বেশি খুশি হতাম।”

ইনশিরাহ শক্ত কন্ঠে বলল–

“সে আমার মা নয়।আর তুমি জানো সেই সম্পর্ক আমি জলাঞ্জলি দিয়েছি।”

“ওকে ওকে কুল নাউ।যাও অনেক রাত হয়েছে।গুড নাইট।”

ইনশিরাহ মারশিয়াদ থেকে বিদায় নিয়ে ওর ফ্ল্যাটের কাছে আসতেই দেখে আশফিক দাড়ানো।আবছা আলোয় তার রাগী চেহারা স্পষ্ট।তিরিক্ষি কন্ঠে বলল—

“কি করছিলে মারশিয়াদ এর সাথে??

“কি বলতে চাও তুমি??

“বুঝতে পারছো না!!
পুরুষ বিদ্বেষী ইনশিরাহ এখন রাত বিরাতে পর পুরুষে আসক্ত হচ্ছে আর সে না কি কিছুই বুঝতে পারছে না।”

ইনশিরাহ গলা চড়িয়ে বলল–

“আশফিক!!!

“কি করবে তুমি!!পাঁচ বছর তোমার পিছনে আঠার মতো লেগে আছি সেদিকে তোমার ভ্রুক্ষেপ নেই আর এখন!!
আজরাহান ঠিকই বলেছে,ওই মারশিয়াদ সব থালাতেই ঢু মারতে চায়।শালা নারীখোর!!

আশফিক এর কথা শেষ হতেই সপাৎ করে ওর গালে এক চড় বসিয়ে দেয় ইনশিরাহ।রুদ্ধশ্বাসে বলল—

“আর একটা বাজে কথা বলবে না জান এর নামে।কার সাথে তুলনা করে ওকে!!
তোমরা দুই ভাই ওর নখেরও যোগ্য না।একদম নিজেদের ওর সাথে তুলনা করবে না।আর কী বললে,আজরাহান!!
ওর তো কৃতজ্ঞ থাকা উচিত জানএর প্রতি।অবশ্য ওর থেকে এইটা আশা করা যায় না।বাই দ্যা ওয়ে আজকের পর আমাদের মাঝে কোনো পার্সোনাল সম্পর্ক থাকবে না শুধু প্রফেশনাল থাকবে।”

ইনশিরাহ আর এক মুহুর্তও দাড়ায় না।চলে যায় সেখান থেকে। আশফিক এর শিরা উপশিরা টগবগ করে ফুটতে থাকে।বাড়ীর বড় গেইটায় ধুম করে এক লাথি মেরে চলে যায়।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here