বৃষ্টিস্নাত ভোর পর্বঃ১৯

0
4931

#বৃষ্টিস্নাত_ভোর
#পর্বঃ১৯
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

জানালার কাঁচ ভেদ করে এক পসলা চাঁদেশ্বরীর প্রভা এসে পড়ছে প্রহর এর মুখে।ছোট্ট একটা রেষ্টুরেন্টে এর কোনার টেবিলে উত্তর মুখী হয়ে বসেছে প্রহর।হালকা হালকা শির শির হীমেল বাতাস তাই জানালা বন্ধ করে দেওয়া।কিন্তু কাচ গলিয়ে চন্দ্রকিরণ তার দ্যুতি ছড়াতে কার্পন্য করে না।আর চাঁদের আলোয় যেনো আরো মায়াময় লাগে প্রহর কে।বাচ্চা মানুষের মতো ফোর্ক এ পেচিয়ে চাউমিন খাচ্ছে প্রহর।আজরাহান ওর সামনেই বসা।নিজের প্লেটে চামচ নিয়ে ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে আছে।প্রহর ভ্রু ক্রুটি করে বিরস গলায় বলল–

“এভাবে বসে আছেন কেনো??
বাসায় যেতে হবে না!!

আজরাহান প্রতিত্ত্যুর করলো না।ফিকে হেসে নিচের দিকে তাকিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।প্রহর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে ভেঙচি কেটে ডানপাশে তাকাতেই হকচকিয়ে উঠে।ধড়াম করে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ায়।আজরাহান চামচ মুখে দিতেই প্রহর কে দাড়াতে দেখে চোখ তুলে উৎসুক গলায় বলল–

“কিরে দাড়ালি কেনো??

প্রহর স্বাভাবিক কন্ঠে বলল–

“আপনি বসেন আমি আসছি।”

দ্রুতগতিতে সেখান থেকে সরে বড় বড় পা ফেলে রেষ্টুরেন্টের একদম সামনের দিকে বামে চলে যায়।সেখানের টেবিলে ওর বয়সি একটা মেয়ে আর ওর থেকে বছর চারেক বড় একটা ছেলে বসে আছে।প্রহর সেখানে গিয়ে মূর্তির মতো দাড়িয়ে চোখে লাভা নিয়ে রাগাম্বিত স্বরে বলল—

“হিমি!!
তুই এখানে কী করছিস??

মেয়েটি সচকিত হয়ে তাকায়।দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে বলল–

“তুতুই !!
এএএখাআনে।”

“হ্যাঁ আমি।
তুই এতো রাতে এখানে কী করিস!!আর সাথে এইটা কে??

পাশ থাকা ছেলেটি মাথা নিচু করে বসেছিলো।কারণ প্রহর ভালো করেই ছেলেটি কে চিনে।প্রহর টেবিলে হাত রেখে একটু নিচু হয়ে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে একরাশ বিস্মিত গলায় বলল—

“রিশাদ ভাইয়া আপনি??

রিশাদ একটা বড়সড়ো ফাঁকা ঢোক গিলে নেয়।কাতর নয়নে প্রহর এর দিকে তাকায়।চোখ পিট পিট করতে থাকে।
প্রহর আবারো সংক্ষোভ গলায় বলল–

“আপনি,,আপনি এখানে কী করছেন ওর সাথে??
আর হিমি তুই এতো রাতে রিশাদ ভাইয়ার সাথে কী করছিস??

আজরাহান বিব্রতবোধ করে।এই মেয়ে আজ ওকে ডোবাবে।চেয়ার ছেড়ে সামনে এগিয়ে আসে।প্রহর কে বলল–

“কী হচ্ছে এখানে??

প্রহর উদ্বেলিত গলায় বলল–

“দেখেন না রাহান ভাইয়া,,হিমি রিশাদ ভাইয়ার সাথে কী করছে!!

আজরাহান ভ্রু কুচকে শান্ত কন্ঠে সংশয় নিয়ে বলল–

“কী করছে মানে??

প্রহর সমুচ্ছল গলায় ঠোঁট বাকিয়ে বলল–

“কী করছে আবার প্রেম করছে।”

হিমি কুটুস করে এক ঢোক গিলে নেয়।প্রহর কে হিমি ভালো করেই চিনে।এই মেয়ের কথায় বাধা নেই।যখন যা দেখবে তা নিয়ে সউচ্ছ্বলিত হয়ে বলবেই।কথায় আছে”যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যাে হয়।প্রহর এর না আছে লোকের ভয় না কথার।রিশাদ সেই যে মাথা নিচু করেছে আর উঠায় নি।ওর শুধু মনে হচ্ছে”ধরনী দ্বিধা হও”।
আজরাহান সপ্রতিভ হয়ে তাকায় হিমির দিকে।শান্ত এবং গভীর গলায় বলল–

“এতো রাতে এখানে কী করছো হিমি??আর এই ছেলেটা কে??

হিমি আর প্রহর একই ক্লাসেই পড়ে।আজরাহান প্রায়ই ওদের প্রক্সি ক্লাস নেয়।তাই চিনতে বিলম্ব হয়নি।হিমি উদাস দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আজরাহান এর দিকে।আজরাহান এর কথার সুতো ধরে প্রহর অবিচল ভাবে বলল–

“আরে রিশাদ ভাইয়া কে চিনেন না!!সে তো আমাদের স্কুলের সামনের যে বয়েজ কলেজ আছে সেখানে পড়ে।রোজ স্কুল ছুটির পর দেখি গেইটের সামনে এসে দাড়িয়ে থাকে।”

আকাশ ভেঙে পড়লো যেনো রিশাদ এর মাথায়।মনে হচ্ছে সবকিছু ছেড়েছুড়ে এখনই ভৌদৌড় লাগায়।কিন্তু সামনে তো বিশাল পাহাড়!!

আজরাহান দ্বিধান্বিত গলায় বলল–

“হিমি এইবার তুমি কিছু বলবে!

হিমি বেচারীর বেহাল দশা।মনে হচ্ছে।এখনি ফ্লোর ভেঙে তার ভিতরে ঢুকে যেতে।আহত কন্ঠে বলল–

“আসলে ও আমার ভাই।”

হিমির কথা শেষ হতেই প্রজ্জ্বলিত গলায় প্রহর বলল–

“মিথ্যে বলছিস কেনো!!হীমেল ভাইয়া কে আমি চিনি না মনে হয়!!

আজরাহান গাঢ় দৃষ্টি রাখে প্রহর এর দিকে।স্বাভাবিক গলায় বলল–

“আরেকটা কথা বলবি না তুই।যা ওখানে গিয়ে বস।”

প্রহর চোখের কোন ক্ষীন করে ঠোঁট বাকায়।সবার দিকে চোখ ঘুরিয়ে একবার দেখে নিজের টেবিলে গিয়ে বসে।আজরাহান রিশাদ এর পাশের চেয়ারে বসে।হিমি আর রিশাদ এখনো স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে।আজরাহান ওদের চোখের ইশারায় বসতে বলে।ধীর,শান্ত গলায় আজরাহান বলল–

“দেখো হিমি,তুমি এখনো অনেক ছোট।আমার ছোট বোনও তোমার চেয়ে অনেক বড়।তুমি আমার কাছে ওর মতোই।তাই স্যার নয় একজন বড় ভাই হিসেবে বলছি,,
তোমাদের এই বয়সটাই এমন যে সবকিছুই নতুন মনে হয়।আর নতুন জিনিষে মানুষের কৌতুল জন্মলগ্ন থেকে।অনুসন্ধিৎসা মানুষের একটি জন্মগত গুন।
এই বয়সটা আমাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়।আমরা যখন কাদামাটি দিয়ে কোনো জিনিস তৈরি করি সেক্ষেত্রে মাটি যতক্ষন নরম থাকে আমরা আমাদের ইচ্ছেমতো তার রুপ দিতে পারি।ঠিক তোমাদের এই বয়সটাও তেমন।এই বয়সে করা একটা ছোট্ট ভুলের মাশুল আমাদের আগামী চল্লিশ বছরের জীবনকে বদলে দিতে পারে।তাই আমাদের ভেবেচিন্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়।আর যেহেতু এই বয়সে আমরা নিজেরা সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারি না তাই আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু আমাদের বাবা,মা তাদের অনুসরন করতে হয়।তাদের করা আদেশ,উপদেশ,নিষেধ মেনে চলতে হয়।পৃথিবীতে এই দুজন মানুষই তো আছে যারা নিঃস্বার্থভাবে সারাজীবন আমাদের ভালো চায়।তার বিনিময়ে কী চায় বলোতো!!
শেষ বয়সে একটু সুখ।আর আমরাই দিতে পারি তা আমাদের কাজের মাধ্যমে।

ভালোবাসা পাপ নয়।কিন্তু তার জন্য সঠিক সময়,সঠিক মানুষের প্রয়োজন।আমাদের আগে সে যোগ্যতা অর্জন করতে হয়।আর তার জন্য আমাদের আগে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে।ভালো মন্দের তফাৎ বুঝতে হবে।
জানোতো নিজের ভালো পাগলও বুঝে।আর আমরা তো বিবেকসম্পন্ন মানুষ।তাই আমাদের নিজের ভালো বুঝতে হবে।আশা করি আমার কথা বুঝতে পেরোছো।”

হিমি অনেকটা নিরস গলায় বলল–

“সরি স্যার।”

“ইটস ওকে।ভুল মানুষেরই হয়।তা দোষের নয়।কিন্তু ভুল থেকে যদি শিখতে না পারি তাহলে সেইটা দোষের।বাসায় যাও।অনেক রাত হয়েছে।”

আজরাহান ওর এক হাত রিশাদ এর ঘাড়ে রেখে বলল–

“ভয় পেয়ো না।ভয় কে করতে হবে জয়।ওকে পৌছে দিও।আর লেখাপড়ায় মনোযোগ দাও।আল্লাহ এর উপর ভরসা রাখো।দ্যা অলমাইটি নেভার ডিসএপয়েন্টস অ্যানিওয়ান।প্রেম,ভালোবাসার জন্য অনেক সময় পাওয়া যাবে।তার আগে ভালোবাসার মানুষটির জন্য নিজেকে গড়ে তুলো।কীসের ভরসায় সে তোমাকে তার জীবনে জায়গা দিবে!!
শেষ সময় পারবে তো তার সঙ্গী হতে!!”

হিমি নির্লিপ্তদৃষ্টি তাকিয়ে হজম করছিলো আজরাহান এর কথা।কথা শেষ হলেই হালকা দম নেয় হিমি।সহজ কন্ঠে বলল–

“একটা কথা বলবো স্যার??

“হুম।”

“প্রহর এর সাথে আপনার কী সম্পর্ক??

আজরাহান একগাল হেসে বলল–

“তোমার সাথে তোমার রিশাদ ভাইয়ের যে সম্পর্ক।”

আজরাহান উঠে চলে যেতেই করুন দৃষ্টিতে তাকায় হিমি রিশাদ এর দিকে।আজরাহান এর কথায় লাল হয়ে উঠে গাল দুটো।

আজরাহান চেয়ারে গিয়ে বসতেই প্রহর ঠোট বাকিয়ে চোখ আবদ্ধ করে নিজের খাওয়ায়।আজরাহান জিঙ্গাসু কন্ঠে বলল–

“কী সমস্যা তোর??

“আপনার কী সমস্যা!!এইটুকু একটা মেয়ে আসছে প্রেম করতে!!

“তাতে তোর কী??

“ওর কী প্রেম করার বয়স হয়েছে না কী!!
আর আপনি জানেন না প্রেম করা হারাম!!

আজরাহান গভীর দৃষ্টিতে তাকায় প্রহর এর দিকে।চেয়ারে হেলান দিয়ে আরাম করে বসে।শান্ত এবং গাঢ় গলায় বলল–

“তাহলে আমাকে দিয়ে কেনো পাপ করাচ্ছিস!!কেনো বিয়েতে সম্মতি দিস না তুই??

প্রহর ওর এক চোখের ভ্রু উচিয়ে ক্ষীন কন্ঠে বলল–

“আপনাকে কে মানা করেছে বিয়ে করতে!!করেন বিয়ে।আপনার পিছনে তো মেয়েদের লাইন লেগে আছে।যে কোন একজন কে করে নিন।”

আজরাহান কন্ঠের গভীরতা বাড়িয়ে বলল–

“আমি তোর কথা বলেছি।”

“সমস্যা কি আপনার!!একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছেন কেনো আপনি!!
জানেন বাল্য বিবাহ আইনত দন্ডনীয় অপরাধ!!

আজরাহান চেয়ার থেকে পিঠ উঠিয়ে হাতের আঙ্গুল গুলো ভাজ করে একে অন্যের ভিতর রেখে টেবিলের উপর রাখে।অধর কোনে হাসি টেনে বলল–

“নবী কারীম (সা) যখন আয়েশা(রা) বিয়ে করে তখন তার বয়স ছিলো মাত্র সাত বছর(মতবিরোধ থাকতেত পারে)। আর তুই ফিফটিন প্লাস।আর তোকে বাচ্চা কোনদিক দিয়ে লাগে।ঠোঁটের আগায় তো আগ্নেয়গিরি নিয়ে ঘুড়িস।”

প্রহর আড়চোখে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল–

“আপনি কী আমাকে খেতে দিবেন??

“খা।খেয়ে যদি তোর একটু বুদ্ধি হয়।”

,
,
,
পিচঢালা রাস্তা ঘুটঘুটে অন্ধকার।বিশাল থালার মতো আকাশের বুক চিড়ে উদীয়মান চন্দ্রভানু রুপালি জ্যোস্নায় আশপাশ পূর্ন আলোকিত করে রেখেছে।পথ একদম স্পষ্ট।আজরাহান আর প্রহর বাড়ির সামনে এসে দাড়িয়েছে।গড়িতে প্রায় পৌনে এগারো।আজরাহান ওর দুই হাতের ব্যাগগুলো প্রহর এর হাতে দেয়।আর বলল–

“এগুলো নিয়ে বাসায় যা।”

প্রহর ভ্রু কুচকে তীক্ষ্ম গলায় বলল–

“কেনো!!আপনি যাবেন না??

“না।”

“কোথায় যাবেন আপনি??

আজরাহান আচমকায় প্রহর এর কোমড় জড়িয়ে ওকে নিজের কাছে টেনে নিয়।প্রহর কে কিছু বলার সময় না দিয়ে টুপ করে ওর ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে নেয়।দুই হাত ব্যাগ ভর্তি বলে প্রহর ঠায় আজরাহান এর বুকের সাথে মিশে আছে।চোখে মুখ কুচকে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে প্রহর, বলল–

“এইটা কী হল??

“রিটার্ন পেমেন্ট।এই যে তোকে এতো কিছু খাওয়ালাম আর কিনে দিলাম তার রিটার্ন পেমেন্ট।তুই তো নিজে দিবি না তাই আমি নিজেই নিয়ে নিলাম।
এখন বাসায় যা।আর মা কে বলবি আমি আজ রাতে ফিরবো না।”

“ওওও আচ্ছা।তাই আমাকে ঘুষ দেওয়া হচ্ছে।
কোথায় যাবেন আপনি??

“মারশিয়াদ এর বাসায়।”

প্রহর উৎসুক গলায় বলল–

“কেনো??

“কাজ আছে।
তুই এতো কথা কেনো বলিস রে।একদম চুপ।”

“একশবার বলবো।আমার মুখ দিয়ে আমি কথা বলবো তাতে আপনার কী??

“বেশি কথা বললে একদম…।

“কী করবেন?

“কামড়ে দিবো তোকে।”

“সরেন।”

আজরাহান ওর নাক ডুবিয়ে দেয় প্রহর এর গলায়।সাথে নিজের অধরের শীতল স্পর্শ ছুইয়ে দিতে থাকে।প্রহর দম আটকে স্থির হয়ে যায়।আজরাহান ওর গলা থেকে মুখ উঠিয়ে ঘাড়ে গুজে দেয়।দুইহাত দিয়ে নিজের সাথে আরো আড়ষ্ট করে প্রহর কে।ওর কানের কাছে নরম সুরে বলল–

“বাবা কে বলিস কাল তোকে স্কুলে দিয়ে আসতে।আর সাবধানে যাস।”

প্রহর কে ছেড়ে দাড়ায় আজরাহান।বলল–

“বাসায় যা।”

প্রহর প্রদীপ্ত চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে আজরাহান এর দিকে।কেনো যেনো ওর একদম যেতে ইচ্ছে করছে না।ওদের মাথার উপরের ঠিক বামপাশে চাঁদ তাকিয়ে আছে।যেনো ওদেরকেই দেখছে।টিপ টিপ তারা গুলো জ্বলছে।চাঁদের আলোয় আরো রহস্যঘন মনে হচ্ছে আজরাহান এর ঠোঁটের স্মিত হাসি।আজরাহান একটু ঝুকে বলল–

“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো??
মেরে ফেলবি না কী আমাকে!!আমি তো এমনেই মরে আছি তোর হৃদয়ের গহীনে।”

প্রহর চোখ নামায়। উল্টো ঘুড়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।কেনো যেনো প্রতিটি কদমের সাথে ওর পা সেখানে আটকে যায়।বেশ কিছুসময় পর বাড়ির গেইটে পৌছায় প্রহর।আজরাহান এখনো সেখানে দাড়িয়ে আছে।গলার স্বর উচু করে বলল–

“রেড রোজ!!!

প্রহর উচ্ছ্বসিত হয়ে পেছন ফিরে তাকায়।চাঁদের আলোয় আজরাহান এর ফর্সা মুখটা এখনো প্রহর স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।আজরাহান এক গাল হেসে উচ্ছলিত গলায় বলল–

” জেল,জরিমানা,ফাঁসি যাই ই হোক।বিয়ে কিন্তু আমি তোকেই করছি মনে রাখিস।আর সেইটা বাল্য বিবাহই।আর তুই যদি রাজী থাকিস জেলেই করবো আমাদের ফুলসজ্জা আমার কোনো সমস্যা নেই।”

প্রহর চোখের কোন ক্ষীন করে ঠোঁট বাকিয়ে ভেঙচি কাটে।

“ভ্যা।”

দ্রুতপায়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে প্রহর।উজ্জ্বল আলোয় আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকায় আজরাহান।বুক ফুলিয়ে একটা লম্বা শ্বাস নেয়।স্নিগ্ধ চাঁদের আলোয় আজকের রাত আরো স্নিগ্ধ মনে হচ্ছে আজরাহান এর কাছে।বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কত বিচিত।কোটি কোটি মাইল দুরের ওই চাঁদও কী অবিরত প্রক্রিয়ায় রোজ নিয়ম করে তার আলোর পসরা নিয়ে বসে।অবলীলায় ছড়িয়ে পড়ে দ্যুতি।আজরাহান সোজা হয়ে দাড়ায়।অস্ফুট ভাবে বলল–

“মাই লিটল হার্ট,,
কালো মেঘে ঢাকা প্রবল বর্ষার এক অন্ধকার রাতের পরে #বৃষ্টিস্নাত_ভোর প্রকৃতিতে যে নতুন ভোরের সূচনা নিয়ে আসে ঠিক তেমনভাবে তোর জীবনের সকল অন্ধকার দুর করে আমি তোকে এক নতুন ভোর উপহার দিবো।তোর জীবনের সকল গ্লানি,অবসাদ,কষ্টের অবসান ঘটাবো।তোর নতুন জীবনের সারথি হবো।”

আজরাহান ঘুড়ে পথ চলতে থাকে।ধীম ধীম পায়ে।কিছুক্ষনের মধ্যে মিলিয়ে যায় তার ছায়া অন্ধকারে।

ডোরবেল বাজতেই দরজা খুলে কুহেলিকা।প্রহর কে একা দেখেই বিস্মিতভাবে তাকিয়ে বলল–

“তুই একা কেনো!!আজরাহান কোথায়??

প্রহর শান্ত ও স্বাভাবিক ভাবে বলল–

“রাহান ভাইয়া,জান ভাইয়ার বাসায় গিয়েছে।আজ রাতে ফিরবেনা।”

“ওও তাই এতো নাটক করা তার।এই আজাইরা রাহান কখনো ঠিক হবে না।”

প্রহর ফিক করে হেসে দেয়।কুহেলিকা গাঢ় গলায় বলল–

“আর হাসতে হবে না তোকে।খেয়েছিস কিছু??

প্রহর দু বার মাথা ঝাকিয়ে হা সূচক সম্মতি দেয়।

“তাহলে ফ্রেশ হয়ে গিয়ে শুয়ে পড়।”

“আচ্ছা।”

নিজের ঘরে গিয়ে ধপাস করে বিছানায় বসে প্রহর।মাথাটা ঝিম ঝিম করছে।ক্লান্ত,শ্রান্ত দেহ বিছানায় এলিয়ে দিতেই ভার হয়ে আসে।প্রহর এর চোখ দুটো আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে আসে।আজ সারাদিন হওয়া ঘটনা গুলো ভাবতে থাকে।আজরাহান এর বলা কথা গুলো এখনো প্রহর এর কানে বাঝতে থাকে।এক প্রশান্তিময় অনুভুতি হচ্ছে প্রহর এর।আনমনেই নিজের হাত আনে পেটের উপর।অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে।যা ব্যাখ্যাতীত,অবর্ননীয়।
,
,
,
সকালে ঘুম থেকে উঠে কুহেলিকা বেশ অশান্ত।ঘরময় পায়চারী করছে আর লাগাতার কল করে যাচ্ছে আজরাহান কে।ওই পাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠে একটা মেয়ে বারবার বলছে””সরি আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এই মুহূর্তে বন্ধ আছে।অনুগ্রহ পূর্বক একটু পরে আবার ডায়াল করুন।ধন্যবাদ।”কুহেলিকার চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ।সানায়া বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছে।আজ এনজিও তে যাবে।সেখানে একটা নতুন মেয়েকে আনা হয়েছে গতকাল।মেয়েটাকে তারই আপন চাচাতো ভাই রেপ করেছিলো।কিন্তু পরে অস্বীকার করে।মেয়টার বাবা মা অনেক কষ্টে মেয়েটার বিয়ে দেয়।কিন্তু ওই যে কপালের লিখন যায় না খন্ডন।বিয়ের প্রথম রাত্রেই স্বামী বুঝতে পারে মেয়ে ভার্জিন নয়।তাই পর দিন ই তাকে বাবার বাড়ি ফেরত পাঠানো হয়।বাবা মা কে যখন সব জানানো হয় তারা এবং আত্নীয় স্বজন এমনকি পাড়াপড়শিরাও মেয়েটার দিকেই আঙুল তুলে।বাধ্য হয়ে নিজের ঘরেই কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে মরার চেষ্টা করে।কিন্তু তাও হয়নি।মেয়েদের না কি কই মাছের প্রান।
সত্বিত্তের পরীক্ষা শুধু মেয়েদেরই কেনো দিতে হয়!!
ছেলেদের কেনো নয়??

কুহেলিকার চোখে মুখে চিন্তার রেখা।সানায়া উদ্বিগ্ন গলায় বলল–

“কী হয়েছে মা??

কুহেলিকা হতাশ আর সংশয়মিশ্রিত গলায় বলল–

“সেই কখন থেকে আজরাহান কে কল করে যাচ্ছি।মোবাইল টা আন রিচেবল বলে যাচ্ছে।ছেলেটা কোথায় গিয়েছে কে জানে!!

প্রহর স্কুলের জন্য একদম রেডি।কাধেঁ ব্যাগচাপিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে কুহেলিকা কে চিন্তিত দেখে স্বাভাবিক গলায় বলল–

“তুমি এতো চিন্তা করো না।রাহান ভাইয়া ঠিক সময় চলে আসবে।”

কুহেলিকা নিশ্চল গলায় সানায় কে বললেন–

” এই তুই জান কে কল করে দেখতো ও কী বলে!!

সানায়া টেবিলের উপর থেকে একগ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে গিলে নেয়।ফিকে গলায় বলল—

“লাভ নেই।জান কে আমি সকালেই কল করেছি।তার মোবাইল ও বন্ধ।”

“আশফিক কে কল করে দেখ।”

“কাকি মা বলল না আশফিক ভাইয়া তার বন্ধুর বিয়েতে নড়াইল গিয়েছে ভাইয়ার বৌভাত এর আগের দিন।সে কী করে জানবে!!!

কুহেলিকা একরাশ হতাশা নিয়ে কাউচে বসলন।নিরস কন্ঠে বললেন–

“এই ছেলেগুলো কে নিয়ে আর পারি না।কখন,কোথায় কী করে কে জানে!!
এখন প্রহর কে স্কুলে নিয়ে যাবে কে!সারারাত ঘুমাতে পারেনি তোর বাবা।বাতের ব্যথাটা বেড়েছে।একটু আগেই চোখ মুদলো।”

“তোমার চিন্তা করতে হবে না।আমি নিয়ে যাচ্ছি প্রহর কে।তুমি বরং বাবা কে বলো ক্লাস শেষে ওকে নিয়ে আসতে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।সাবধানে যাস।”

“চল প্রহর।”

“হুম।”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here